আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা প্রবনতা দেখা যায় যে, অসুখে না পড়লে আমরা ডাক্তারের কাছে যাইনা। কিংবা হালকা মাথা ব্যাথা, গ্যাস্ট্রিক বা অনেক ছোট-খাট মেয়েলি সমস্যা আমরা এড়িয়ে যাই। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের ভেতরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। একেকটা বয়সে একেক ধরনের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনগুলো অবশ্যই লক্ষ করতে হবে। বয়সের প্রতিটা ধাপেই নানা ধরনের সমস্যার সম্ভাবনা থাকে। এই বিষয়গুলো আগে থেকে জানা থাকলে, সেটা সম্পর্কে সচেতন হওয়া সম্ভব হয় এবং আগে থেকে প্রতিকারের উপায় জানা যায়। চলুন তাহলে জেনে নিই সেগুলো।
বয়স যখন বিশের কোঠায়
বিশের কোঠায় বয়স চলে আসলেই আমরা যেন একটা স্বাধীন জগতে চলে যাই। আগের মত বাবা মায়ের শাসন ও থাকে না, আবার সেরকম কোন বড় দায়িত্বও অনেক সময় সবাইকে নিতে হয়না। এসময় মন থাকে উৎফুল্ল, শরীরে থাকে প্রচুর প্রাণশক্তি। অনেকেই এসময় বেশ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রায় চলে যান। কেউ হয়তো করেন অতিরিক্ত মাত্রার ডায়েট, আবার কেউ ভাবেন এইতো সময় ইচ্ছে মত খেয়ে নেয়ার। স্বাস্থের বিষয়টাতো অবহেলা করেনই, উপরন্তু ডাক্তার ও দেখাতে চান না অনেকে। কিন্তু এই সময়টায় জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তন ও প্রিভেনটিভ কেয়ার আপনার পরবর্তী সময়ে অনেক বড় কোন স্বাস্থ্য সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
১) ভ্যাক্সিন: এই বয়সে এসে আপনাকে অনেকগুলো ভাক্সিন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং নিজে নেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই আসে টিটেনাস ভাক্সিন। যদি এখনো না নিয়ে থাকেন, তাহলে দেরি করবেন না। আপনার যদি এখনো চিকেনপক্স না হয়ে থাকে, তাহলে সেটারও ভ্যাক্সিন নিতে পারেন।
২) PAP Smear Test: বয়স বিশ পার হলেই প্রতি তিন বছরে একবার এই টেস্ট টি করানো উচিত, যদি আপনি সারভিক্যাল ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চান।
৩) স্তন পরীক্ষা: এসময় আপনি নিজেই ঘরে বসে এই পরীক্ষাটি করতে পারেন। সাধারন অবস্থার কোন ব্যতিক্রম ঘটলেই শুরুতেই তা অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
এগুলো ছাড়াও আপনার ওজন যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে একবার প্রি-ডায়বেটিস চেক করানোটাও জরুরি।
বয়স যখন ত্রিশের কোঠায়ঃ
এই সময়টায় অনেকেই হয়তো মা হবার কথা ভাবছেন, বা কেউ কেউ মা হয়েও গেছেন। সংসার, অফিস, বাজার সদাই সামলে নিজের কথা ভাববার সময় কোথায় আপনার। কিন্তু তাই বলে কি হয়? সংসারের বাকি মানুষদের ভালো রাখতে চাইলে আগে আপনাকেই তো ভালো থাকতে হবে। তাই জেনে নিন এই সময়ে কোন বিষয় গুলোতে খেয়াল রাখতে হবে।
১) কোলেস্টেরল চেক: ভাবছেন আমি তো মোটা নই, কেন কোলেস্টেরল চেক করাব? কোলেস্টেরল কোন অসুখ নয়। বরং আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখে খানিকটা অনুমান করা সম্ভব যে হৃদ রোগের আশংকা আপনার কতটুকু।
২) থাইরয়েড চেক: খিটখিটে মেজাজ, বাড়তি ওজন, ডিপ্রেশন। ভাবছেন এগুলো সংসারের ঝামেলার কারণে হচ্ছে? মোটেই না। ত্রিশের পর থেকে থাইরয়েড হরমোনে পরিবর্তন শুরু হয়। এই থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন টেস্ট (TSH) এর মাধ্যমে জানতে পারবেন কেন আপনার ওজন বাড়ছে বা কমে যাচ্ছে, কেন কাজের প্রতি অনিহা আসছে, অল্পেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে বা কেন রাতে কোন কারণ ছাড়াই ঘুম হচ্ছে না। এই সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে এই পরীক্ষাটি করাবেন।
৩) ব্লাড প্রেশার চেক: আগে হয়তো কালে ভদ্রে ডাক্তারের বাড়ি গেলে বিপি চেক করতেন, কিন্তু এখন সময় হয়েছে মাসে অন্তত দুবার বিপি চেক করার। তাহলে হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগেই আপনি তার প্রতিকার করতে পারবেন।
বয়স যখন ৪০ এর কোঠায়
এই সময় টাতে একজন মহিলার শরীরে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তাই এসময় থেকে নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মেডিক্যাল চেকাপ করানো উচিত।
১)ম্যামোগ্রামঃ: এসময় সব মহিলারই উচিত একবার স্তন পরীক্ষা করানো। কেননা ব্রেস্ট ক্যান্সার এর ঝুঁকি এসময় বেশি থাকে। যদি আপনার পরিবারের কেউ আগে এই সমস্যায় ভুগে তাহলে দেরি করা একদমই উচিত না।
২) চক্ষু পরীক্ষা: আপনি যদি আগে থেকেই চশমা ব্যবহার করে থাকেন থাহলে তো নিয়মিত চেকাপ করাবেনই। আর যদি চোখের সমস্যা নাও থাকে, তবুও এই পর্যায়ে একবার চোখের চেকাপ আপনাকে পরবর্তীতে ক্যাটারাকট বা গ্লুকোমার মত অসুখের হাত থেকে প্রতিকার পেতে সাহায্য করতে পারে।
৩) ডায়বেটিস: এখনো যদি আপনি আপনার ডায়বেটিস চেক না করে থাকেন, তাহলে আমি বলব ভুল করছেন। কারণ অনেক সময় ডায়বেটিস হয়ে থাকলেও চেকাপ না করার কারনে সেটা আমরা বুঝতে পারিনা, যেটা অনেক বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আপনি যদি হয়ে থাকেন চল্লিশঊর্ধ্ব তাহলে দেরি না করে আজই চেকাপ করিয়ে নিন।
৪) রেকটাল এক্সাম: যদি পায়ুপথে রক্ত যায় তাহলে বুঝতে হবে, এবার সময় হয়েছে রেকটাল এক্সামের। কেননা অবহেলায় তা কোলন কান্সারে রুপ নিতে পারে।
তাহলে আর দেরি কেন? নিজেকে সুস্থ রাখতে চাইলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই বিষয়গুলোতে সচেতন থাকুন। শুধু নিজেই নন। নিজের পাশাপাশি আপনার মা, বোন বা একুশ বছরের মেয়েটিকেও সচেতন করুন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লিখেছেন - মাহবুবা বীথি
ছবি – হেলথ.কম