আমাদের দেশে শীত মানেই উৎসবের মৌসুম। দেখা যায় প্রায় প্রতি সপ্তাহেই একটা বিয়ের দাওয়াত লেগে আছে। এছাড়াও বিজয় দিবস, ইংরেজি নববর্ষ, পিঠা উৎসব, পিকনিক, বেড়াতে যাওয়া তো আছেই। একে তো ঠাণ্ডা, রুক্ষ আবহাওয়া, তারপর আবার এসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেকাপ, সব মিলিয়ে ত্বকের অবস্থা শোচনীয়। এক অনুষ্ঠানে গেলেন, তো পরের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগেই ত্বকের বারোটা বেজে আছে। কি করে এর হাত থেকে মুক্তি পাবেন? খুব সিম্পল। এর জন্য আপনাকে রোজ পার্লারেও ছুটতে হবে না বা গাদা গাদা টাকা খরচ করে কসমেটিক্সও কিনতে হবে না। মেনে চলতে হবে কয়েকটি সহজ পদ্ধতি।
আজ আলোচনা করবো খুব সহজ কিছু পদ্ধতি, যা আপনি প্রতিদিন চর্চা করতে পারবেন। সেই সাথে যেদিন কোন বিশেষ উপলক্ষ থাকবে সেদিন ত্বকের বাড়তি যত্ন কিভাবে নিতে হবে। কেননা মেকাপের আগে ত্বককে প্রস্তুত করা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি মেকাপ করার পরেও কিছু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। নাহলে পরের অনুষ্ঠানে ত্বকের লাবন্য কিভাবে ধরে রাখবেন? চলুন জেনে নেই তাহলে।
ত্বকের যত্নঃ
প্রথমেই আসি শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিয়ে
১)যাদের ত্বক শুষ্ক তারা এ সময় সাবান জাতীয় কোন কিছু একদমই ব্যবহার করবেন না। খুব মৃদু কোন ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন।
২) এসময় মুখে ভাপ নেয়া যাবেনা। তাহলে ত্বকের স্বাভাবিক তেলটুকুও চলে যাবে। ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইটহেডস এর সমস্যা থাকলে ১৫ দিনে একবার ভাপ নেয়া যেতে পারে।
৩) প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বাদাম তেল দিয়ে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে দিন।
এতো গেলো স্বাভাবিক যত্নের কথা। কিন্তু ত্বকের দীপ্তি বাড়াতে চাই আরেকটু বেশি যত্ন।
১) শুষ্ক ত্বকের জন্য শীতের সবচেয়ে ভালো এবং সহজ ফেসপ্যাক হল মধু ও কাঁচা দুধের মিশ্রণ। কাঁচা দুধ না পাওয়া গেলে গুঁড়া দুধই পানিতে গুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটি চাইলে আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
২) যেদিন আপনার কোন দাওয়াত আছে, সেদিন আপনি আরেকটু বেশি যত্ন নিন। এজন্য লাগবে ২ চামচ বেসন, ১ চামচ টক দই, ১ চামচ মধু। এই প্যাকটি ত্বকের আদ্রতা দেয়ার পাশাপাশি স্ক্রাব হিসেবেও কাজ করবে।
৩) দাওয়াত বা অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে খুব ভালোভাবে মেকাপ তুলুন। এজন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এরপরে একটি কলার পেস্ট,১ চামচ মধু ও এক চামচ টক দই বা দুধের সর মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এরপরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ব্যস পরের অনুষ্ঠানের জন্য আপনি তৈরি। যাদের ত্বক নরমাল তারাও এই প্যাকগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
এবার আসি তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে
১) তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারি যারা, তারা প্রতিদিনের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন মধু ও গোলাপজলের মিশ্রণ। সারা মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। অথবা ২/৩ চামচ টমেটোর পাল্প, ২ ফোঁটা লেবুর রস ও সামান্য মুলতানি মাটি।
২) কোন দাওয়াত বা অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে ১ চামচ মধু, ১ চামচ টকদই ও ১ চামচ মীনা হারবালের চন্দন মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপরে হালকা ঘসে ধুয়ে ফেলুন। প্যাক এর পাশাপাশি স্ক্রাব হিসেবেও কাজ করবে।
৩) অনুষ্ঠান বা দাওয়াত থেকে ফিরে ভালোভাবে মেকাপ তুলে নিন। তৈলাক্ত ত্বক মানেই একনে প্রবণতা। তাই এসময় ত্বককে ভালো রাখতে এই প্যাকটি খুব কার্যকর। ২ চা চামচ পুদিনা পাতা বাটা ও মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর ধুয়ে অয়েল ফ্রি কোন ময়েশচারাইযার লাগিয়ে নিন।
চুলের যত্নঃ
১) চুল ভালো রাখতে তেলের কোন বিকল্প নেই। অন্তত আমি এটাই বিশ্বাস করি। ২/৩ দিন পরপর চুলে তেল লাগান। এক্ষেত্রে চুলের গোঁড়ায় লাগান অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল ও বাদাম তেলের মিশ্রণ। আর বাকি চুলে লাগান অলিভ অয়েল আর নারকেল তেলের মিশ্রণ। সারারাত রেখে পরদিন ধুয়ে ফেলুন।
২) একটি বাটিতে ১ ডিম ও চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী টকদই মিশিয়ে নিন। সারা চুলে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই প্যাকটি আপনি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে পারেন। আর মাসে একদিন এই প্যাকের সাথে মেশান মেহেদি। একই ভাবে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৩) অনুষ্ঠান বা দাওয়াতের দিন চুল ধোয়ার আগে পুরো চুলে লেবুর রস লাগিয়ে রাখুন ৭/৮ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুলে আগে থেকে তেল দেয়া থাকলে শুধু লেবুর রস লাগিয়ে নেবেন। আর তেল দেয়া না থাকলে লেবুর রস ও নারকেল তেলের মিশ্রণ বানিয়ে চুলে লাগান। এতে আপনার চুল উজ্বল ও সিল্কি হয়ে উঠবে।
৩) চেষ্টা করুন হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করতে। আর স্প্রে বা মুজ দিয়ে চুল সেট করলে অথবা স্ট্রেটনার বা কার্লার মেশিন ব্যবহার করলে ফিরে এসে অবশ্যই চুলে ভালো করে তেল লাগাবেন। পরদিন সকালে ১ টি ডিম ও আধা কাপ দুধ মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপরে ধুয়ে কন্ডিশনার লাগান।
এভাবে নিয়ম করে যত্ন নিলে পুরো শীতের মৌসুম আপনার ত্বক থাকবে দীপ্তিময় এবং চুল থাকবেন ঝলমলে। তাহলে আর দেরি কেন, আজ থেকেই শুরু করে দিন যত্ন আর আর হয়ে উঠুন লাবণ্যময়।
লিখেছেন – মাহবুবা বীথি
ছবি – ফটোগ্রাফারস.ক্যানভেরা.কম