আজকে আমার অনেক প্রিয় একটি প্রোডাক্ট সম্পর্কে বলব। আমার স্কিন হচ্ছে এমন সেনসিটিভ যাতে প্রায় কিছুই ছোঁয়ানো যায় না। স্যুট না করলে সাথে সাথে ব্রণ উঠে যায়। সাথে সাথে অয়েলিনেস এর সমস্যা তো আছেই। তো আমি সবসময় খেয়াল রাখি যেন আমার সব কসমেটিক আমি যেসব উপাদানে সেনসিটিভ সেগুলো ছাড়া ফর্মুলেটেড হয়। আর এজন্যই খুব ভালোভাবে প্রোডাক্টের যত রিভিউ নেটে পাওয়া যায় সব না পড়ে কখনই কিছু কিনি না।
সেনসিটিভ স্কিন হওয়ার জন্য সবসময় অ্যালোভেরা আমার স্কিনে বেশ ভালো কাজ করে। তাই ন্যাচারাল অ্যালোভেরা ইউজ করার পাশাপাশি কসমেটিক অ্যালো জেল (অবশ্যই যেগুলো কোন আর্টিফিশিয়াল কালার ছাড়া ফর্মুলেটেড) সেগুলো প্রায়ই কিনি এবং ইউজ করি। আর ন্যাচারস রিপাবলিক ৯২% সুদিং অ্যালো জেল ঠিক তেমনি একটি প্রোডাক্ট।
এটা বিখ্যাত কোরিয়ান ড্রাগস্টোর ‘ন্যাচারস রিপাবলিক’ এর বেস্ট সেলিং প্রোডাক্ট। বাংলাদেশে এটা এখন পাওয়া যাচ্ছে জানতে পেড়ে সাথে সাথেই আমি কিনে ফেলেছি। সেটা প্রায় ৪ মাস আগের কথা। তো আজ বলব এই মাল্টিপারপাস ৯২% অ্যালো জেল আমি কীভাবে ইউজ করেছি।
দামঃ
বাংলাদেশে এটা ১০০০ টাকা করে পাওয়া যায়। প্রতি জারের সাইজ ৩০০ মিলি। পরিমানে প্রচুর!
কোথায় পাবেন?
একটি কি দুটি অনলাইন কোরিয়ান কসমেটিক শপে আমি এটা প্রথম দেখেছি। এছাড়া এখন ‘স্যাফায়ার’ এর রাইফেলস স্কয়ার এবং যমুনা ফিউচার পার্ক ব্রাঞ্চ থেকে আপনি নিজে দেখে কিনতে পারবেন অথবা ওয়েবসাইট থেকে ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন।
কীভাবে ইউজ করবেন?
আগেই বলেছি এটা একটা মাল্টিপারপাস জেল। এতে ঠিক ৯২% পিওর অ্যালোভেরা আছে, এবং বাকিটা অ্যালকোহল, প্রিজারভেটিভ ইত্যাদি। ন্যাচারস রিপাবলিকের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া ছবিটা নিচে দিয়ে দিলাম-
দেখতেই পাচ্ছেন, এখানে এই জেলের বিভিন্ন ইউজের কথা বলা আছে। তো এর মধ্যে আমি যতভাবে এটা ইউজ করেছি এবং কেমন রেজাল্ট পেয়েছি দেখুন-
১।ময়েশ্চারাইজার হিসেবে-
এভাবে এই জেলটা ইউজ করতেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালোলাগে। এতে অল্প মেনথল থাকায় মুখে দেয়ার সাথে সাথে একটু ঠাণ্ডা লাগে। এতে করে আমার স্কিনে কোন র্যাস/ লালছে ভাব থাকলে সেটা বেশ কমে আসে। তাছাড়া স্কিনে নতুন র্যাস/ হোয়াইট হেড উঠছে টের পেলেও আমি জেলটা ফ্রিজে ঢুকিয়ে ঠাণ্ডা করে মুখ ধুয়ে হাল্কা করে মাখিয়ে নেই। র্যাস ওঠার আগেই চুলকানি/ রেডনেস চলে যায়। এতে কোন অয়েল বেসড উপাদান না থাকায় এটা আমার অয়েলি স্কিনে দেয়ার কিছুক্ষন পড়েই একদম ম্যাট হয়ে মিশে যায়।
কোন আর্টিফিশিয়াল কালার ছাড়া একেবারে স্বচ্ছ অ্যালো জেল।
২। ফেস মাস্ক হিসেবে-
উইকে ৩-৪ বার ঠাণ্ডা করা অ্যালো জেল আমি মাস্ক হিসেবে ইউজ করি। বেশ অনেকটা জেল নিয়ে আমি ধোয়া পরিস্কার মুখে লাগিয়ে নেই এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলি। মাঝে মাঝে ঘরে তৈরি অন্যান্য মাস্কেও মেশাই। আবার মাঝে মাঝে স্কিনে ব্রণ থাকলে রাতে ঘুমানোর আগে একটু মোটা করে স্লিপিং মাস্কের মত লাগিয়ে নেই। সকাল নাগাদ ব্রণের রেডনেস এবং ইরিটেশন কমে যায়। ফোলা ভাবও কমে।
৩। আই মাস্ক হিসেবে-
আমার ২য় পছন্দের উপায়, এই জেলটা ইউজ করার। আমার চোখের চারপাশের মাসল অনেক টায়ার্ড। সারাদিন টান টান লাগে। স্পেসালি পিসির দিকে তাকিয়ে থাকলে/ বাইরে রোদ থেকে আসলে। তখন আমি অনেকখানি ঠাণ্ডা অ্যালোভেরা জেল মোটা লেয়ার করে চোখের চারপাশে লাগিয়ে রাখি। এটুকু বলতেই হবে যে সারাজীবন চোখে শসার কুচি দিয়েও যে চোখের টান টান ভাব দূর করতে পারিনি ফার্স্ট ঠাণ্ডা অ্যালো জেল দিয়ে সেটা পেরেছি!!
৪। বডি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে-
এটা এত লাইট যে ইজিলি গোসলের পর অয়েলি স্কিনে বডি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ইউজ করা যায়। এতে একটুও চিটচিটে ভাব হয় না। কিন্তু যাদের স্কিন অনেক ড্রাই তারা এই ওয়েতে ইউজ করে ভালো ফল পাবেন না কারণ আমার মনে হয় নি এত লাইট জেল ড্রাই স্কিনের নিড ফুলফিল করতে পারবে।
৫।বিভিন্ন হেয়ার প্যাকে-
যেকোনো হেয়ার প্যাকে ইজিলি ১ -২ টেবিল চামচ অ্যালো জেল ইউজ করতে পারবেন। একদম ন্যাচারাল অ্যালোভেরা পাতা থেকে আপনি যে রেজাল্ট পান তেমন ফলই পাবেন। অনেকে ভাবতে পারেন এটা একটা প্রিজারভেটিভ দেয়া কসমেটিক, হোমমেড মাস্কে মেশানো যাবে কিনা। হ্যাঁ, যাবে। এটা খুবই ভারসেটাইল প্রোডাক্ট। আপনার চুলে যদি এমনি অ্যালোভেরা স্যুট করে তবে এই জেলটাও আপনি যেকোনো মাস্কে ইউজ করতে পারবেন।
৬। লিভ-ইন কন্ডিশনার হিসেবে-
গোসলের পর চুলের এক্সট্রা পানি ঝরিয়ে নিয়ে/ চুল একটু শুকিয়ে আসলে, ভেজা ভেজা চুলে আধা চামচ অ্যালো জেলে আধা চামচ পানি মিশিয়ে স্ক্যাল্প ছাড়া শুধু চুলের বডিতে নরমাল লিভ ইন কন্ডিশনারের মত আমি প্রায় ইউজ করি। চুলের ফ্রিজি ভাব, লালচে ভাব এবং ফ্লাই আওয়ে হেয়ার প্রিভেন্ট করে।
এই প্রোডাক্টের যে দিকগুলো আমার ভালো লেগেছে-
- রকমারি ব্যবহার! আমি যেসব ইউজ বললাম এছাড়াও এটাকে সেভিং জেল, হেয়ার জেল, কিউটিকল কেয়ার,মেকাপ রিমুভার অথবা সানবার্ন সুদিং জেল হিসেবে ছেলে মেয়ে সবাই ইউজ করতে পারে। এবং আমি অনেক ব্লগারকে দেখেছি কাঁটা ছেড়ার উপরে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল মলমের মত এটা ইউজ করতে। নরমাল ন্যাচারাল অ্যালো জেলের মতই এটা সব ক্ষেত্রে কাজ করে।
- দাম… এটার পরিমান, কার্যকারিতা চিন্তা করে অন্যান্য বিদেশি কসমেটিকের সাথে তুলনা করলে এটার দাম বেশ কমই বলা যায়।
- আমি সবসময় যখনি টের পাই যে ব্রণ উঠবে/ র্যাস হচ্ছে। মুখের কোন অংশ লাল হয়ে চুলকাচ্ছে… সাথে সাথে মুখ ক্লিন করে এটা মেখে বসে থাকি। এই সময় শুধু এই জেল ছাড়া আর সব কসমেটিক ইউজ বন্ধ করে দেই। এটা প্রতিবারই আমাকে ম্যাজিক দেখায়।
- এর কোন উপাদানই তৈলাক্ত সেনসিটিভ স্কিনের উপরে কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না, সুতরাং যারা অতিরিক্ত সেনসিটিভীটির জন্য মুখে কিছু ইউজ করতে পারেন না, তাদের জন্যই বিশেষ করে আমি এই প্রোডাক্টটি সাজেসট করব।
যা যা মনে রাখবেন-
- আমি খেয়াল করেছি, হাল্কা অ্যালকোহল আর মেনথল থাকার কারণে এটা স্কিনে একদম মিশে যায় এবং স্কিন অনেকক্ষন ড্রাই রাখে। তাই আমার মনে হয় যারা ড্রাই স্কিনের অধিকারী তারা এটা ইউজ করে অতটা ভালো ফল পাবেননা। উলটো এটা ড্রাই স্কিনকে আরও ড্রাই করে দিতে পারে।
- বিশেষ করে মনে রাখবেন, যাদের আলভেরাতে অ্যালার্জি আছে তারা কোনভাবেই এটা ইউজ করবেন না। এটা একেবারেই প্রিজারভ করা ন্যাচারাল অ্যালো জেল। সুতরাং, ন্যাচারাল অ্যালোতে যদি আপনার অ্যালার্জিথাকে, এই প্রোডাক্ট ইউজ করলেও অ্যালার্জিহবে।
আমার রেটিং-
৯/১০, বাড়িয়ে বলছি না। কিন্তু আমার কাছে এটা একটা পয়সা উসুল প্রোডাক্ট। সব মিলিয়ে আমার মত সেনসিটিভ, একনে আর র্যাস প্রন স্কিন যাদের, তাদের এসব ইমারজেন্সি সমস্যা মোকাবেলার জন্য এক কৌটা ন্যাচারস রিপাবলিক অ্যালো জেল হাতের কাছে রাখা মাস্ট … !! আর এটা এত ভাবে ইউজ করা যায়, কোনভাবেই আপনি এটা কিনে পস্তানোর সুযোগ পাবেন না।
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মিম