Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3046

৩টি কার্যকরী পদ্ধতিতে সহজেই হবে শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধান

$
0
0

নবজাতক বা ছোট শিশুদের ঘুম নিয়ে অনেক অভিভাবকই চিন্তিত হয়ে থাকেন। অনেকেই অভিযোগ করেন যে বাচ্চার ঘুম খুব কম বা বাচ্চা রাতে ঠিকমতো ঘুমায় না। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা ঘুম একটি শিশুর জন্য স্বাভাবিক। বয়সভেদে এই ঘুমের চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে। শিশুদের ঘুম কখনোই একটানা হয় না বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাঙা ভাঙা ও অসংগঠিত হয়। যদি শিশু দিনের বেলায় একটা বড় সময় ধরে ঘুমায়, তাহলে তার রাতের ঘুমের প্যাটার্নটি অনিশ্চিত হতে পারে। অর্থাৎ, রাতের বেলায় কম ঘুমানো শিশুর জন্য মোটামুটি সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু রাতে না ঘুমানো বা কম ঘুমানো যেমন শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ, তেমন বাবা মায়ের দৈনন্দিন জীবনের রুটিনেও এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধান নিয়েই আজকের ফিচার!

শিশুর ঘুমের সমস্যার প্রধান কারণ 

বাচ্চার রাতে ঘুম না হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে তিনটি কারণ উল্লেখযোগ্য।

  • ক্ষুধা বা অন্য কোনও কারণে ঘুমাতে না পারা
  • কোনও ধরনের শারীরিক অস্বস্তি বোধ করা
  • হঠাৎ মায়ের সান্নিধ্য বা স্পর্শ না পাওয়া

ঘুমের এই শিডিউল-বিপর্যয় মা বাবার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাই শিশুর রাতের ঘুমকে আরও আরামদায়ক ও নিয়মিত করার জন্য আজ আলোচনা করবো কিছু কার্যকরী পদ্ধতি। আশা করি এতে সহজেই সমাধান হবে শিশুর ঘুমের সমস্যার।

ফার্বার পদ্ধতি

ফার্বার পদ্ধতি শিশুকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘুমাতে অভ্যাস করানোর একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি চিলড্রেনস হসপিটালের পেডিয়াট্রিক স্লিপ ডিসঅর্ডার সেন্টারের ডিরেক্টর রিচার্ড ফার্বারের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু নিজে নিজে ঘুমিয়ে পড়তে অভ্যস্ত হয়।

যেভাবে এই পদ্ধতি কাজ করে

এই পদ্ধতিতে শিশুরা নিজে নিজেই কিছু নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড বা ঘটনাকে ঘুমের সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করে এবং রাতে জেগে ওঠার পর আবার ঘুমানোর জন্য একইরকম ঘটনা খোঁজে। যেমন ধরুন, শিশুকে প্রতিরাতে ঘুমানোর জন্য যদি দোল দিতে হয়, বা বুকের দুধ খাওয়াতে হয় তাহলে আপনার শিশু পুনরায় ঘুমানোর জন্য সেই একই জিনিসের অপেক্ষা করবে। ফার্বার পদ্ধতিতেও এভাবে কিছু সুনির্দিষ্ট ঘটনার সাথে শিশুর ঘুমের প্যাটার্নকে সম্পর্কিত করতে হবে।

১) প্রথমে আপনার শিশুকে তার দোলনা বা বিছানায় শুইয়ে শুভরাত্রি বলুন এবং ঘর থেকে বেরিয়ে যান। যদি শিশু কান্না শুরু করে, তবুও ৫ মিনিট বাইরে অপেক্ষা করুন। পাঁচ মিনিট পর ঘরে ঢুকে তাকে দোলনা থেকে না উঠিয়েই শান্ত করুন। তারপর আবার ঘরের বাইরে চলে যান।

২) এবার ১০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন তারপর ঘরে ঢুকে তাকে শান্ত করুন। এভাবে প্রতিবার সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে বাড়িয়ে শিশুকে অভ্যস্ত করুন। এতে করে শিশুর ঘুমের সাথে দোলনা বা বিছানাটি সম্পর্কযুক্ত হয়ে ওঠে আর সে বুঝতে শুরু করে যে তাকে এখানে ঘুমাতে হবে। ফলে কিছুদিন পর শিশু ওই নির্দিষ্ট বিছানায় গেলেই ঘুমিয়ে পড়তে অভ্যস্ত হয়।

ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে ফার্বার পদ্ধতি প্রায় তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে। এই পদ্ধতিতে শিশু ঘুমানোর সময় প্রথম কয়েকদিন কাঁদলেও এতে শিশুর উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।

অসুবিধা

শিশুর কান্না সহ্য করা যদি আপনার পক্ষে কঠিন হয় তবে এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে সুবিধা পাওয়া আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। কিছু শিশু ফার্বার পদ্ধতিটিতে সাড়া দেয় না। যদি আপনার শিশু ১৫ দিনের মধ্যে এটিতে সাড়া না দেয়, তবে আপনাকে অন্য পদ্ধতি বেছে নিতে হবে।

নির্দিষ্ট সময় পর জাগিয়ে তোলা

১) এই পদ্ধতিতে প্রথমে এক সপ্তাহের জন্য আপনার শিশুর ঘুমের প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করতে হয়। শিশু যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে, সেই সময়ের প্রায় ১৫ মিনিট আগে তাকে জাগিয়ে তুলুন।

২) ধীরে ধীরে এই সময় বৃদ্ধি করুন, যেন শিশুর ঘুমের সময়কাল দীর্ঘ হয় এবং রাত জাগা কমে যায়। এই পদ্ধতিতে শিশু কান্নাকাটি কম করে এবং বাচ্চার ঘুমানো ও জেগে ওঠার প্যাটার্নের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে।

৩) বাচ্চাকে জাগিয়ে তুলতে গিয়ে নিজে দ্বিধাগ্রস্থ হবেন না। বেশিরভাগ বাবা-মা শান্তভাবে ঘুমাতে থাকা বাচ্চাকে জাগিয়ে তুলতে মন থেকে সায় পান না। এই পদ্ধতিটি কিছুটা সময় সাপেক্ষ। এটি কার্যকর হতে প্রায় তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। সুতরাং, অধৈর্য হয়ে পড়বেন না।

পারিবারিক বিছানায় ঘুমানোর পদ্ধতি

শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধানে এই পদ্ধতিটি আমাদের দেশে খুবই সাধারণ। এই পদ্ধতিতে শিশু প্রতি রাতে বাবা মায়ের সঙ্গে ঘুমায়। এতে শিশু নিরাপদ বোধ করে। ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠলেও শিশু বাবা-মাকে তার পাশে দেখতে পায় এবং স্বস্তি বোধ করে। এই পদ্ধতিটি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সুবিধাজনক। সেই সাথে এটি শিশুর নিরাপত্তা ও শান্তির অনুভূতি বাড়ায়।

অসুবিধা

অনেক সময় বাবা মায়ের মাঝে শোয়ার কারণে শিশুর দমবন্ধ লাগতে পারে। বিছানা যথেষ্ট প্রশস্ত না হলে ঘুমে বিঘ্নতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হলে প্রশস্ত বিছানা হতে হবে যেন সবাই আরামের সাথে ঘুমাতে পারে।

এসব পদ্ধতির পাশাপাশি শিশুর ঘুম নিয়মিত করতে কিছু সাধারণ টিপস ফলো করতে পারেন।

টিপস

১। একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে শিশুকে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম পাড়ান যাতে সে একই সময়ে ঘুমাতে অভ্যস্ত হয়।

২। ঘুমানোর আগে শিশুর পেট ভর্তি রয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করুন। শিশু যেন পেটে ক্ষুধা নিয়ে না ঘুমায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

৩। সন্ধ্যায় শিশুকে বিভিন্ন খেলায় ব্যস্ত রাখুন, যেন রাতে গভীর ঘুম হয়।

৪। মাঝরাতে আপনার শিশু জেগে উঠলে তাকে কোলে না তুলে বরং আদর করে পিঠে চাপড় দিয়ে বা মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আবার ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করুন।

শিশুর ঘুমের প্যাটার্ন রাতারাতি রুটিনে আনা সম্ভব নয়। শিশুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য এখানে আলোচিত প্রতিটি পদ্ধতির কার্যকারিতাই সময় সাপেক্ষ। তাই শিশুর ঘুমের ধরন বুঝতে এবং তার প্রয়োজন অনুযায়ী পদ্ধতি বেছে নিতে সময় দিন। ধৈর্য ধরে, ধাপে ধাপে শিশুর জন্য একটি নিরাপদ ও আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, প্রতিটি শিশুই আলাদা। তাদের জন্য যে পদ্ধতিটি কার্যকর হবে, সেটি খুঁজে পেতে সময় লাগতেই পারে। এজন্য শিশুকে কোনও ধরনের চাপ প্রয়োগ করবেন না। অভিভাবক হিসেবে আপনার ভালোবাসা, যত্ন ও সহানুভূতিই আপনার শিশুর ঘুমের সমস্যা দূর করে একটি সুন্দর রুটিন গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

ছবি- raisingchildren.net, .parents.com

লেখা-

ডা: তাজরিনা রহমান জেনি

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

The post ৩টি কার্যকরী পদ্ধতিতে সহজেই হবে শিশুর ঘুমের সমস্যার সমাধান appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3046

Trending Articles