আয়রন মেশিন বা স্ট্রেইটনার ব্যবহার নারীর সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না। চুলের সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আয়রন মেশিন। এই একটি টুল হাতের কাছে থাকলেই সময় এবং টাকা দুটোই যেন বেচে যায়। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন? এই হেল্পিং টুলটি আপনার কিছু অসাবধানতা এবং ভুলের ফলে চুলের জন্য ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে! আজ এমন কয়েকটি ভুল তুলে ধরা হল, যা চুল আয়রন করার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়তই করে আসছি। তবে চলুন দেখে নেয়া যাক চুল আয়রন করার সময় যে ভুলগুলো একেবারেই করা যাবে না!
(১) যেকোনো হিট স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পূর্বে চুলে হিট প্রোটেকশন স্প্রে ব্যবহার করতে আমরা ভুলে যাই। এই হিট প্রোটেকশন স্প্রে যেমনি আপনার চুলকে অতিরিক্ত ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাবে ঠিক তেমনি আয়রন করার পর চুলের রুক্ষতা কমিয়ে দিবে।
হিট প্রোটেকশনার ব্যবহার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে
- এই হিট প্রোটেকশন পরিষ্কার এবং আদ্র অবস্থায় চুলে ব্যবহার করতে হবে।
- হিট প্রোটেকশনার ব্যবহারের সময় চুল থেকে অবশ্যই ৩ ইঞ্চি দূরে রেখে স্প্রে করতে হবে।
- চুলের গোড়া থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে একেবারে চুলের আগা পর্যন্ত হিট প্রোটেকশনার স্প্রে করতে হবে।একেবারে চুলের গোড়া তে প্রোটেকশন স্প্রে ব্যবহার করলে চুলে তেলতেলে ভাব চলে আসবে।
- স্প্রে ব্যবহার করার পর কিছুক্ষণ সময় দিন। চুল সেট হয়ে এলে আয়রন করা শুরু করতে পারেন।
বাজারে আপনি সহজেই ট্রেসেমে, প্যান্টিন থেকে শুরু করে ল’রেল ব্র্যান্ডের হিট প্রোটেকশনার ৭৫০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
(২) চুল আয়রন করতে গেলে আমরা প্রায়শই এই মারাত্মক ভুলটি করি। আর তা হল, ভেজা বা আদ্র অবস্থায় চুল আয়রন করা। আয়রন করার সময় যদি পুট পুট শব্দ হয় বা ধোঁয়া উঠতে দেখেন তবে সাথে সাথেই আয়রন করা বন্ধ করে দিন। কেননা চুল স্ট্রেইট হওয়ার বদলে পুরে যাচ্ছে। চুল অবশ্যই শুঁকনো অবস্থায় আয়রন করতে হবে।
(৩) খুব বেশি টেম্পারেচার চুলের জন্য ক্ষতিকর। আয়রন মেশিনটি অনেক বেশি গরম অবস্থায় চুলে প্রেস করলে চুল ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।তবে আপনার চুলের ঘনত্বের উপর নির্ভর করে টেম্পারেচার বাড়াতে পারেন।তবে আপনার চুল যদি পাতলা এবং দুর্বল হয় তবে লো টেম্পারেচারে ২৫০ ফারেনহাইট থেকে ৩০০ ফারেনহাইট। অন্যদিকে আপনার চুল যদি মোটামুটি ঘন হয় তবে মিডিয়াম টেম্পারেচারে ৩৫০ ফারেনহাইট এবং চুলের যদি বেশি ঘন এবং কোঁকরা হয় তবে হাইয়ার টেম্পারেচারে ৩৮০-৪১০ ফারেনহাইট সেটিং দিয়ে নিবেন।
অতিরিক্ত হিট থেকে চুলকে বাঁচানোর এটিই সবচেয়ে সহজ পন্থা।তবে আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে এক্তি চার্ট দেয়া হল-
(৪) তাড়াহুড়োর মধ্যে আমরা অনেক সময় আয়রন করার পর চুল গরম অবস্থাতেই বাঁধা শুরু করি। কিন্তু এই কাজটি একেবারেই করা উচিত নয়। আয়রন করার পর কিচ্ছুক্ষণ সময় দিন যাতে চুল গরম থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তারপরই হেয়ার স্টাইল করে নিতে পারেন।
(৫) আয়রন করার সময় আমরা বেশির ভাগ সময় সমান্তরালভাবে করে যাই যার ফলে চুলের ভলিউম তো আসেই না উল্টো চুল ফ্ল্যাট হয়ে যায়। কাজেই চুলের গোঁড়ার একটু উপরের দিক থেকে নিচের দিকে নেমে আসতে হবে ঠিক ব্যাকব্রাশ করার মতন করে। তবে দেখবেন আপনার ফ্ল্যাট চুলে কেমন সুন্দর ভলিউম চলে এসেছে।
(৬) একসাথে বেশি পরিমাণে চুল আয়রন করতে গেলে বিপাকে পড়তে হয় এবং কাঙ্ক্ষিত স্ট্রেইটনেস আসে না। কাজেই চুলগুলোকে ছোটছোট অংশে ভাগ করে আয়রন করতে হবে।
(৭) আয়রন করার পর আপনি কি আয়রন প্লেটটি পরিষ্কার করেন? যদি না করে থাকেন তবে অবশ্যই করুন। কেননা প্রতিদিন ব্যবহার করার ফলে আয়রন মেশিনে স্টাইলিং এবং প্রোটেকশন প্রোডাক্টের অবশিষ্টাংশ লেগে থাকে কাজেই আয়রন মেশিনটি মনে করে পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে পানি বা লুকওয়ার্ম দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন।
যদিও ফ্ল্যাট আয়রন মেশিন ব্যবহারে চুলের গোঁড়া দুর্বল হয়ে পড়ে এমন ধারণা একেবারে ফেলে দেয়া যাবে না তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করে এই টুলটি ব্যবহার করলে ক্ষতির সম্ভবনা অনেকাংশেই কমে যায়।
লিখেছেনঃ মরিয়ম আখতার
ছবিঃ ওমেনটিপস.কো