Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

কেমন হবে বয়সভেদে শিশুদের ত্বকের যত্ন?

$
0
0

বাড়িতে নতুন সদস্যের আগমন হলে তাকে ঘিরে সবার আনন্দের সীমা থাকে না। সবার সব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু যেন হয়ে থাকে ওই ছোট্ট শিশুটি। খাওয়া ও ঘুমের পাশাপাশি শিশুদের ত্বকের যত্ন নিয়েও হতে হবে বিশেষভাবে সচেতন। আজকের ফিচারে আপনাদের জানাবো বয়সভেদে কীভাবে শিশুদের ত্বকের যত্ন নিবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত।

নবজাতকের ত্বকের যত্নে যা করতে পারেন

নবজাতকের ত্বক এমনিতেই বেশ সংবেদনশীল হয়ে থাকে। তাই তাদের ত্বকের যত্নে মেনে চলুন এই বিষয়গুলো-

১) নবজাতকের বয়স ১৫ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের তেল, লোশন বা পাউডার লাগানো ঠিক নয়। ১৫ দিন বয়স পার হওয়ার পর শিশুর ত্বকে জলপাই তেল (olive oil) লাগানো শুরু করতে পারেন। তবে সেটিও দিনে এক থেকে দুইবারের বেশি নয়। জলপাই তেলের বদলে নারকেল তেলও লাগানো যেতে পারে।

২) শিশুকে জন্মের তিন দিনের মধ্যে গোসল করানো ঠিক নয়। যেসব শিশু পূর্ণ গর্ভকাল পেরিয়ে জন্মেছে, তাদের এক দিন পর পর গোসল করানো যেতে পারে। তবে যেসব শিশু পূর্ণ গর্ভকাল পার হওয়ার আগেই জন্মেছে অথবা যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তাদের সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন গোসল করাতে হবে। গোসলের আগে বা পরে তেল মালিশ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

৩) শীতে নবজাতকের চুল কাটা একেবারেই উচিত নয়। মূলত জন্মের ২ থেকে ৩ মাস পার হলে চুল কাটানো উচিত।

নবজাতকের ত্বকের যত্ন

৪) শিশুর জন্মের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে কিছু র‍্যাশ উঠতে দেখা যায়। এটিকে অনেকে মাসি-পিসি রোগ বলে থাকেন। এতে ভয় পাওয়াার কিছু নেই। ধীরে ধীরে এই র‍্যাশ ভালো হয়ে যায়।

৫) জন্মের কিছুদিন পর নবজাতকের ত্বকে একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে দেখা যায়। নবজাতকের ত্বকে ছোট ছোট গোটা (যেগুলোতে পুঁজ জমে থাকে) দেখা দিলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, এ সমস্যার চিকিত্সা শুরু করতে দেরি হলে পরবর্তী সময়েতে পুরো শরীরে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে গিয়ে শিশু মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

৬) নাভি পাকলে অর্থাত নাভি থেকে পুঁজ পড়লে, দুর্গন্ধ ছড়ালে কিংবা নাভির চারপাশ লাল হয়ে গেলে চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না। নাভিতে এমন মারাত্মক সংক্রমণ এড়াতে শিশুর জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একবার ৭.১% ক্লোরহেক্সিডিন দ্রবণটি নাভিতে লাগিয়ে দিতে হয়।

৭) শিশুদের ত্বক খুবই সংবেদনশীল ও নরম। সংক্রমণ বা অ্যালার্জি-জাতীয় সমস্যায় খুব দ্রুত আক্রান্ত হয়। আর শিশুদের সাধারণ খোসপাঁচড়া থেকেও কিডনি রোগ, বাতজ্বরের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

৮) শিশুর কাপড়চোপড় নরম ম্যাটেরিয়ালের হতে হবে। এমনকি উৎসব অনুষ্ঠানের জন্যও হালকা সুতির কাপড়ই সবচেয়ে নিরাপদ। কাপড় বেশি আঁটসাঁট হওয়া উচিত নয়। কারণ আলো-বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে ঘাম আটকে থাকে এবং বিভিন্ন চর্মরোগ হয়।

৯) নবজাতক একটু বড় হলে পরিষ্কার ও কুসুম গরম পানি দিয়ে প্রতিদিনই গোসল করানো ভালো। শীতের দিনে প্রয়োজনে এক দিন পর পর গোসল করান। তবে সাবান ও শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার না করলেও চলে। গোসলের শেষে নরম শুকনো সুতি কাপড় দিয়ে দ্রুত ভালোভাবে পানি মুছে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে তাদের শরীরের ভাঁজগুলোতে যেন পানি লেগে না থাকে।

১০) শিশু প্রস্রাব-পায়খানা করার পর যত দ্রুত সম্ভব ভেজা ন্যাপকিন বা ডায়াপার বদলে ফেলা উচিত। কারণ, দীর্ঘক্ষণ ভেজা অবস্থায় থাকলে ন্যাপকিন র‌্যাশ হতে পারে এবং শিশু অস্বস্তিতেও ভোগে।

১১) শিশুর জামাকাপড় বা কাঁথা সাবান দিয়ে ধোয়ার পর পরিষ্কার পানিতে বারবার চুবিয়ে সম্পূর্ণ সাবানমুক্ত করে রোদে বা খোলা হাওয়ায় শুকানো উচিত। কারণ, সাবানের ক্ষার শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তবে হ্যাঁ, শিশুর গোসলের পানিতে বা কাপড় ধোয়ার সময় জীবাণুনাশক রাসায়নিক না দেওয়াই ভালো, কারণ এগুলো ত্বকের স্বাভাবিক উপকারী ব্যাকটেরিয়াকেও ধ্বংস করে।

১২) শিশুরা বারবার হাত মুখে দেয়, তাই সবসময় নখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর কেটে ছোট রাখতে হবে।

১৩) শিশুদের কোমল ত্বকে অ্যান্টিসেপটিক ও বড়দের কসমেটিকস যখন তখন না লাগানোই ভালো। বরং শিশুদের জন্য ফর্মুলেট করা হয়েছে এমন ক্রিম, লোশন ইত্যাদি বেছে নিন।

২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ত্বকের যত্ন

১) এই বয়সের শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। এক দিন পর পর গোসল করালেই শিশুর ত্বক ভালো থাকবে।

২) শিশুর গোসলের জন্য স্বাভাবিক বা কুসুমগরম পানি ব্যবহার করুন। গোসলের পর জলপাই তেল বা শিশুর ত্বকের উপযোগী হালকা কোনো ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগিয়ে দিতে পারেন।

শিশুদের ত্বকের যত্ন

২ থেকে ৭ বছর বয়সের শিশুদের ত্বকের যত্ন

১) বাইরে গিয়ে খেলাধুলা শুরু করা এবং অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের উপযুক্ত সময় এটি। তাই প্রতিবার খেলা শেষে এবং বাইরে থেকে ফেরার পর অবশ্যই হাত-পা পরিষ্কার করিয়ে দিন।

২) খেলার সময় শিশু ঘেমে যাচ্ছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঘাম হলে বা গরম লাগলে ভারী পোশাক খুলে দিন এবং নরম কাপড় দিয়ে ঘাম মুছে দিন।

৩) শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় সাবানও ব্যবহার করা যাবে, তবে সাবানটি হতে হবে শিশুর ত্বকের উপযোগী।

৪) গোসলের পর ভালোভাবে মাথা ও শরীর মুছে শিশুদের উপযোগী লোশন লাগিয়ে দিন।

৮ থেকে ১২ বছরের শিশুর ত্বকের যত্ন

এই বয়সী শিশুরা সাধারণত নিজের যত্ন নিতে শিখে যায়। ঘেমে গেলে শরীর মুছে নেওয়া বা ভারী কাপড় খুলে ফেলা, কুসুম গরম পানিতে গোসল করা, গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা, ত্বকের উপযোগী লোশন বা জলপাই তেল লাগানোর মতো কাজগুলো শিশুকে নিজেই করতে অভ্যস্ত করুন।

এটুকুই ছিলো শিশুদের ত্বকের যত্ন নিয়ে আজকের আলোচনা। সঠিকভাবে শিশুদের ত্বকের যত্ন নিলে ত্বক যেমন ভালো থাকে, তেমনি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও এড়ানো সম্ভব হয়।

লিখেছেন: তাজরিনা রহমান জেনি
চাইল্ড স্পেশালিষ্ট

ছবিঃ সাটারস্টক

The post কেমন হবে বয়সভেদে শিশুদের ত্বকের যত্ন? appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles