তীব্র দাবদাহের মাধ্যমে গ্রীষ্মকাল নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। গ্রীষ্মের প্রচন্ড রোদে থাকে উচ্চমাত্রায় আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি, যার কারণে ত্বকে রোদে পোড়া কালচে ছোপ, মেছতা, মেলাজমা থেকে শুরু করে ত্বকের ক্যান্সারও হতে পারে। তাই ডে টাইমে ত্বক সুরক্ষিত রাখতে দরকার হাই এস পি এফ যুক্ত সানস্ক্রিন। তবে সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু ভুল অভ্যাসের কারণে এটি ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা, যার ফলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেও সেভাবে সুফল পাওয়া যায় না। আসুন আজকের ফিচারে জেনে নেই ১০টি ভুল সম্পর্কে যা সানস্ক্রিন ব্যবহারে এড়িয়ে চলতে হবে।
সানস্ক্রিন ব্যবহারে যে ভুলগুলো করা যাবে না
সানস্ক্রিন ত্বকের জন্য কতটা দরকারি তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। স্কিন কেয়ারের মাস্ট হ্যাভ একটি প্রোডাক্ট হচ্ছে সানস্ক্রিন। ডে টাইমে মিনিমাম এস পি এফ ৩০-৬০ আছে এমন সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। এখনকার এই আবহাওয়ায় ঠিকভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরেও অনেকের ত্বকেই সানট্যান পড়ে যাচ্ছে। সানস্ক্রিন ব্যবহারের ১০টি ভুলের কারণে এমন হতে পারে।
১. ভালো ব্র্যান্ডের হাই এস পি এফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা
বলা হয়ে থাকে সস্তার তিন অবস্থা। কিন্তু স্কিন কেয়ারে অনেকে সব থেকে কম বাজেটটাই রাখেন সানস্ক্রিন কেনার জন্য। দামি সিরাম, এসেন্স ইত্যাদি কিনতে আগ্রহী সবাই, কিন্তু সানস্ক্রিনের বেলায় অনেকে কম দামিটাই কিনতে চান। অথচ ত্বকের যত্নে অন্যতম একটি প্রোডাক্ট হচ্ছে সানস্ক্রিন।
একটি ভালো মানের সানস্ক্রিনের ফর্মুলেশন যথেষ্ট জটিল হওয়ায় এর দামটাও কিছুটা বেশি হয়ে থাকে পরিমাণের তুলনায়। নন ব্রান্ডের কমদামি লো এস পি এফ যুক্ত সানস্ক্রিন ঠিকভাবে সান প্রোটেকশন নাও দিতে পারে। তাই সানস্ক্রিন কেনার আগে এর মান যাচাই করে নিন। অবশ্যই ভালো ব্রান্ডের হাই এস পি এফ যুক্ত এবং ত্বকের সাথে মানানসই সানস্ক্রিন কিনতে হবে। আপনার কেনা সানস্ক্রিনটি যেন ইউভি এ ও ইউভি বি থেকে যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে পারচেজ করার ক্ষেত্রে। ও হ্যাঁ, যেকোনো সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন যে সানস্ক্রিনটি আপনার জন্য মানানসই কিনা।
২.যথেষ্ট পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা:
অনেকেই আছেন যারা সানস্ক্রিন প্রতিদিন ব্যবহার করছেন ঠিকই, কিন্তু তা খুবই অল্প পরিমাণে। বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা সানস্ক্রিন অল্প পরিমাণে লাগালেই যথেষ্ট। এই ভুল ধারণার জন্যই প্রতিদিন ভালো ভালো ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরেও ত্বকে ডে টাইমে সান বার্ন হচ্ছে এবং দিন দিন ত্বক কালচে হয়ে পড়ছে। তখন দোষ দিয়ে ফেলছেন ব্যবহৃত সানস্ক্রিনকেই। কিছু সানস্ক্রিন হোয়াইট কাস্ট দেয় বলে অথবা হেভি ফর্মুলার সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেকে অস্বস্তিবোধ থেকেও কম পরিমাণে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করে থাকেন। যদি সানস্ক্রিনের ফর্মুলেশন আপনার পচ্ছন্দ না হয় বা অস্বস্তিবোধ করেন, তাহলে তা বদলে ফেলুন। কিন্তু পরিমাণ মতো সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সম্পূর্ণ মুখ ও গলার অংশ কভার করতে দুই আংগুল পরিমাণ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে,যেটাকে বলা হয়ে থাকে ‘টু ফিংগার রুল’।
৩. ঠোঁটে এস পি এফ যুক্ত লিপবাম ব্যবহার না করা
আমাদের ঠোঁটের ত্বক খুবই পাতলা। তাই খুব সহজেই সান বার্ন হতে পারে। তাই ঠোঁটের জন্য লিপ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। আপনারা এস পি এফ আছে এমন অনেক লিপবাম মার্কেটে পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে নিজের পছন্দের লিপবাম বেছে নিতে পারেন।
৪. সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লিকেশনে অনীহা
সানস্ক্রিন শুধু অ্যাপ্লাই করলেই হবে না, সেই সাথে রিঅ্যাপ্লাইও করতে হবে। ভালো প্রোটেকশন যুক্ত সানস্ক্রিন সর্বোচ্চ ২-২.৫ থেকে ৩ ঘন্টা প্রোটেকশন দিয়ে থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই করতেই হবে। রিঅ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রেও সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। নয়তো স্কিনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে। তবে হ্যাঁ, মেকআপের উপর সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, সেক্ষেত্রে স্টিক বা স্প্রে সানস্ক্রিন বেছে নিতে পারেন।
৫. মেঘলা দিনগুলোতে সানস্ক্রিন স্কিপ করা
অনেকেরই অভ্যাস থাকে মেঘলা দিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার। তারা মনে করেন, যেহেতু সূর্য দেখা যাচ্ছেনা, তাই সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। আকাশ মেঘলা থাকুক বা না থাকুক, ডে টাইমে সানস্ক্রিন ইউজ করা একদম ম্যান্ডেটরি। কেননা মেঘলা দিনেও কিন্তু সূর্য উঠে এবং মেঘের পরত ভেদ করেও ভূপৃষ্ঠে সূর্যের ক্ষতিকর ইইভি এ ও ইউভি বি রশ্নি প্রতিফলিত হয়। তাই মেঘলা দিনেও ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সুতরাং মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৬. বাসায় থাকলে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা
অনেকের ধারণা বাসায় থাকলে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হয় না। কিন্তু ডে টাইমে রোদের আলো সরাসরি অথবা প্রতিফলিত হয়ে ঠিকই ঘরে ঢুকে যায়। তাই বাসায় অবস্থান করলেও সানস্ক্রিন স্কিপ করা যাবেনা।
৭. অন্য প্রোডাক্টের সাথে সানস্ক্রিন মিক্স না করা
সানস্ক্রিনকে অন্য কোনো প্রোডাক্ট, যেমন- ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, মেকআপ আইটেম ইত্যাদির সাথে মিক্স করে ব্যবহার করলে সানস্ক্রিন তার ইফেক্ট ও প্রোটেকশন লেভেল কিছুটা হলেও হারিয়ে ফেলে। তাই ময়েশ্চারাইজার বা সিরাম জাতীয় প্রোডাক্ট যদি ব্যবহার করতে হয়, তবে তা সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে অ্যাপ্লাই করে নিন। এভাবে ব্যবহার করলে সান্সক্রিনের কার্যকারিতা সম্পূর্ণরূপে বজায় থাকবে।
৮. শিশুদের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
শিশুদের ত্বক ও বড়দের ত্বক এক নয়। অনেক সময়েই শিশুদের জন্য উপযুক্ত সানস্ক্রিনে এমন কিছু উপাদান থাকে যা ম্যাচিউর স্কিনে ক্লোজড কমেডোনস তৈরি করতে পারে। তাই নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন বাছাই করুন।
৯. সঠিক ফর্মুলেশনের সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা
শীতের সময় যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে আপনি স্বস্তি পেয়েছেন, গরমে সেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করেই অস্বস্তি লাগতে পারে। তাই গরমের জন্য জেল বেইজড বা ওয়াটারি ফর্মুলার পাতলা কন্সিসটেন্সির সানস্ক্রিন বাছাই করুন। এছাড়াও গরমের সময় ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত, যেগুলো ঘামের সাথে সহজে ত্বক থেকে মুছে যাবেনা।
১০. অতিরিক্ত রোদে শুধু সানস্ক্রিনের উপরেই ভরসা করা
ত্বক কে সুরক্ষিত রাখতে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতেই হবে, তবে এর পাশাপাশি তীব্র রোদের সময় সরাসরি রোদ অ্যাভয়েড করতে হবে। রোদের মধ্যে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে অথবা স্কার্ফ, হ্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
এই তীব্র গরমে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে এবং ত্বকের সমস্যা কমাতে অবশ্যই সানস্ক্রিনের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন সঠিক পদ্ধতিতে। তাহলেই দেখবেন ত্বক ভালো রাখতে পারবেন। যেকোনো অথেনটিক মেকআপ, স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্টসের জন্য আমি সবসময়ই সাজগোজ এর উপর ভরসা রাখি। আপনারাও ভিজিট করুন সাজগোজের ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ফিজিক্যাল স্টোরে। সাজগোজের বেশ কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। এ শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ারে ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টারে অবস্থিত। এই শপগুলোর পাশাপাশি চাইলে অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকেও কিনতে পারেন আপনার দরকারি বা পছন্দের সব প্রোডাক্টস।
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ
The post সানস্ক্রিন ব্যবহারে এড়িয়ে চলুন এই ১০টি ভুল appeared first on Shajgoj.