মানুষের মন পরিবর্তনশীল। এই তো মন ভাল আর মুহূর্তেই ডুবে যাবে দুঃখের সমুদ্রে।অনেক কারনেই বিষণ্ণতা কিংবা মন খারাপ নামক রোগেভুগে থাকেন মানুষ। পারিবারিক সমস্যা, সম্পর্ক জনিত সমস্যা, কাজে সমস্যা কিংবা অনেকে আবার কোন কারণ ছাড়াই প্রতিনিয়ত মানুষ বিষণ্ণতায় পড়ছেন। এটি আপাতদৃষ্টিতে খুব বেশি ক্ষতিকর মনে না হলেও এই মন খারাপের সুদূর প্রসারী ফলাফল মোটেই ভালো নয়। বরং এর মধ্য দিয়েই আত্নহত্যা, নেশার দিকে এগিয়ে যাবার মতো ভয়ংকর জিনিসের সাথে জড়িয়ে পড়ে মানুষ। তাই মনের দিকে নজর দেওয়াটা সত্যিই খুব জরুরী। নিজের ভালো রাখবে কিছু মনের ব্যায়ামের বৃত্তান্ত জেনে নিন আজঃ
- শুরুটা হোক দিনের শুরু থেকেই। দিনের শুরুতেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করুন । মনে মনে বলুন আজকের দিনটি অনেক ভালো যাবে, কিংবা যত সমস্যাই আসুক মানসিক শক্তি রাখবো সমস্যা জন্য করার- এমন প্রত্যয়ই আপনাকে অনেকখানি ফুরফুরে হয়ে উঠতে সাহায্য করবে নিঃসন্দেহে।
- পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেক মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অবিচ্ছেদ্য অংশের সঙ্গে প্রতিদিন কিছু সময় কাটান। একেবারে চাপমুক্ত হয়ে তাঁদের সাথে হাসুন, কথা বলুন প্রানভরে। এতে করে জীবনের অনেক কঠিন সমস্যা হয়তো দিকনির্দেশনা পেতে পারে।
- প্রতিদিনের শত ব্যস্ততার মাঝে শুধুমাত্র নিজের জন্য আলাদা করে কিছুটা সময় রাখুন। তা হতে পারে সকাল, দুপুর কিংবা রাত যেকোন সময়। সময়টা ব্যয় করুন একেবারে নিজের ইচ্ছেমতো।
- মন ভালো রাখাড় মোক্ষম এক উপায় হয়ে উঠতে পারে রান্না-বান্না। মন খারাপ লাগছে? হাতের কাছে যা আছে তাই নিয়ে লেগে পরা যায় এক-আধটু রান্নার কাজে। রন্ধনশিল্প মন ভালো করার একটি আদর্শ উপায় বলে মানেন বহু মনোবিজ্ঞানী। আর সে খাবার যদি হয় প্রিয় কোন মানুষের কথা ভেবে, তবে দেখবেন নিজের হারানো উদ্যম ফিরে পাচ্ছেন নিমিষেই।
- বই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু। মন খারাপের এক বিকেলে হাতে তুলে নিতে পারেন সেকালের রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার বই, কিংবা প্রিয় হুমায়ূণ আহমেদের একটি উপন্যাস কিংবা নিজের পছন্দের অন্য কোন বই। নিজেকে কল্পনা করুন সেই বইয়ের প্রিয় একটি চরিত্র হিসেবে। কিছুক্ষনের জন্য ডুব দিন সেই গল্পের সাগরে। মন ভাল না হয়ে যাবে কোথায়?
- সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো আমাদের পুরো পৃথিবীকে এক জায়াগায় নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে অনেকভাবে। তাই একা একা না থেকে নিজের দুঃখগুলো ভাগাভাগি করে নিন নিজের আপনজনের সাথে। এতে নিজের কষ্ট অনেকখানি লাঘব হতে পারে। নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় পরিজনের সাথে সময় কাটাতে পারেন। এতে করে আপনার কঠিন সময়গুলোতে তারাই হয়তো আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে।
- বিভিন্ন গবেষকদের মত অনুযায়ী, শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় যা ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। তাই শরীরচর্চা নিজেকে বিষন্নতামুক্ত রাখার এক ভালো উপায় হয়ে উঠতে পারে।
- হাসি মহৌষধ বলে অনেকেই মনে কর থাকেন। ব্যাপারটি কিন্তু ঠুনকো নয়। ত মন খারাপেও একচিলতে হাসি আপনার সব দুঃখ কমিয়ে দিতে পারে। তাই প্রতিদিন কিছুটা হলেও প্রাণখুলে হাসতে চেষ্টা করুন। কষ্ট কমে যাবে নিঃসন্দেহে।
- কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন? শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও এটি ঠিক যে নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা মন ভালো করতে সাহায্য করে অনেকাংশেই। তা হতে পারে প্রয়োজনীয় কিংবা নিজের শখের কেনাকাটা। আবার অনেকসময় প্রিয়জনদের জন্য কেনাকাটাও মন ভালো করে দিতে পারে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম শারীরিক ও মানসিক অবসাদ কাটিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে। সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদ আপনি একেবারে দূর করে ফেলতে পারেন একটা ফ্রেশ ঘুম এর মাধ্যমে। তবে যততুকুই ঘুমান না কেনো সেটা যেনো সম্পূর্ন দুশ্চিন্তছাড়া এবং প্রশান্তিমূলক হয়।
- ইয়োগা, মেডিটেশন মনকে সবল এবং সুস্থ রাখার অন্যতম উপাইয়।যখন কিছুতেই নিজেকে শান্ত করা যায়ণা তখন সাহায্য নিতে পারেন ইয়োগা কিংবা মেডিটেশনের।
লিখেছেন – জান্নাতুল ইসলাম শিখা
ছবি – ফটোগ্রাফারস.ক্যানভেরা.কম