সকালে কোন খাবার খেয়ে দিন শুরু করছেন তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে আপনার দিনের বাকি অংশ কীভাবে কাটবে। তাই দিনের শুরুতেই আপনি কী খাচ্ছেন সে ব্যাপারে কিছুটা বাড়তি নজর আপনাকে দিতেই হবে। সকালের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস সারাদিনের জন্য আপনার মানসিক ও শারীরিক শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে। তবে খাবার নির্বাচনের পাশাপাশি সঠিক সময়ে খাবার খাওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, কিছু খাবার খালি পেটে খেলে পেটের গণ্ডগোল কিংবা হজমে সমস্যা হয়। আবার কিছু খাবার আপনার শরীরের মেটাবলিজম সহজ করে তুলবে। চলুন জেনে নেই, সুস্থ থাকতে সকালে কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে আর কোনগুলো নয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
সুস্থ থাকতে সকালে কোন খাবারগুলো খাবেন না?
১) সাইট্রাসসমৃদ্ধ ফল
সাইট্রাসসমৃদ্ধ ফল খাওয়া স্বাস্থ্যকর হলেও খালি পেটে মোটেও খাওয়া উচিত নয়। সকালে সাইট্রাস ও উচ্চ আঁশযুক্ত ফল যেমন- কমলা, আনারস, লেবু ও পেয়ারা খাওয়া এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা, উচ্চ ফ্রুক্টোজ ও ফাইবার আপনার মেটাবলিজম স্লো করে দিতে পারে এবং সারাদিন পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
২) বেকারি আইটেম
পেস্ট্রি, কেক ও পিৎজা আমাদের অনেকেরই বেশ পছন্দের খাবার। দিনের অন্য কোনো সময়ে এগুলো খেলে ঠিক আছে। কিন্তু খাবারগুলো যদি আপনার পছন্দের ব্রেকফাস্ট হয়ে থাকে, তাহলে চেষ্টা করুন এগুলো এড়িয়ে চলতে। কেননা, এই খাবারগুলোর খামিরে ইস্ট থাকে। যা সকালে খালি পেটে খেলে পাকস্থলীর ক্ষতি হতে পারে। এমনই আরেকটি বেকারি আইটেম পাউরুটি। এই সবগুলো খাবারেই পেট ফাঁপা ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ঘুম থেকে ওঠার পরপরই বেকারির খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩) কাঁচা সবজি
সবুজ শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী হলেও খালি পেটে কাঁচা সবজি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ শাকসবজিতে থাকা ফাইবার হজম কার্যক্রমকে কঠিন করে তোলে। হজমের এই সমস্যার কারণে আপনি সারাদিন অস্বস্তিতে থাকতে পারেন। সেই সাথে পেট ফাঁপা কিংবা পেট ব্যথাও হতে পারে। আবার সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। এই অ্যাসিড শরীরের জন্য ভালো হলেও খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। আপনার যদি নিয়মিত সালাদ খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে তা সকালে না খেয়ে দিনের বাকি সময়ে খেতে পারেন।
৪) ঝাল খাবার
আমরা অনেকেই ঝাল-মশলাদার খাবার খেতে খুব পছন্দ করি। তবে খালি পেটে বেশি ঝাল আর মশলাদার খাবার খাওয়া আপনার জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে। কেননা, ঝাল খাবারে অ্যাসিডিক বিক্রিয়া হয়ে পেটে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। তাই খালি পেটে মশলাদার খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
৫) চকলেট
বাচ্চা থেকে শুরু করে তরুণ সকলেই চকলেট খেতে খুব পছন্দ করে। তবে খালি পেটে খাওয়ার চিন্তা একেবারেই করবেন না। কারণ খালি পেটে খাওয়ার জন্য শর্করাজাতীয় খাবার একেবারেই উপযুক্ত নয়। আবার অনেকেই ব্রেকফাস্টে প্রোটিন বার খেয়ে দিন শুরু করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে অ্যাসিড-ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। শুধু চকলেট নয়, উচ্চ শর্করাযুক্ত যে কোনো খাবার ও পানীয় খালি পেটে খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
যে খাবারগুলো খালি পেটে খেতে পারবেন
১) ভিজিয়ে রাখা বাদাম ও খেজুর
সারারাত ভিজিয়ে রাখা বাদাম খেলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়। অন্যদিকে খেজুর হজমশক্তি বাড়ায় এবং আমাদের পাকস্থলীর পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে। খেজুরে কোনো প্রকার বাড়তি কোলেস্টেরল ও চর্বি থাকে না। অল্প কয়েকটি খেজুরই আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট এবং এটি খুব সহজে ক্ষুধা মিটিয়ে দেয় বলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। আবার খেজুরে থাকা আয়রন হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতাও বাড়ায়।
২) তরমুজ
তরমুজে বেশকিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তরমুজ খেলে কোনো ক্ষতি নেই। বরং এটি আমাদের শরীরকে সারাদিনের জন্য হাইড্রেটেড রাখতে এবং পরিপাক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখবে। সেইসাথে ফুসফুস সুস্থ রাখতে কিংবা অ্যাজমা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তরমুজের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও ত্বকের হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে পেতে নিয়মিত এই ফলটি খেতে পারেন। এতে থাকা লাইকোপেন আমাদের স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতিতে সাহায্য করে। শুধু তরমুজই নয়, সকালের খাদ্যতালিকায় আপেল, বেদানা বা কলাও রাখতে পারেন।
৩) চিয়া সিড
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে হেলদি ডায়েট আর লাইফস্টাইলের কল্যাণে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চিয়া সিড। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড অন্তর্ভুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে থাকা ফাইবার, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ম্যাগনেসিয়াম মেজাজ প্রফুল্ল রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এটি ভূমিকা রাখে। এছাড়াও আপনি যদি ত্বককে উজ্জ্বল এবং চুল ও নখ সুন্দর রাখতে চান, তবে আপনার খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড রাখতে পারেন।
৪) পেঁপে
খালি পেটে খাওয়া উপকারী খাবারগুলোর মধ্যে পেঁপে অন্যতম। কেননা পেঁপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। এটি পরিপাকতন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। কম ক্যালরি থাকা সত্ত্বেও মিষ্টি স্বাদের কারণে সুগারের রোগীদের পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। শুধু স্বাস্থ্য সুরক্ষাতেই নয়, চুলের গোড়া শক্ত করতে, চুলের শাইনিং ভাব বজায় রাখতেও এর ভূমিকা রয়েছে। পেঁপে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, যার ফলে আপনি সারাদিন হালকা বোধ করবেন। তাই আপনি সকালে নাস্তার তালিকায় নিশ্চিন্তে পেঁপে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
৫) কিসমিস
বেশিরভাগ মানুষ কিসমিস সাধারণত কাঁচা খেতে পছন্দ করেন। তবে কিসমিস রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে খাওয়া বেশি উপকারী। কারণ পানিতে ভেজানো কিসমিসে থাকে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ও ফাইবার। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, রক্তস্বল্পতা দূর করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মতো বেশ কিছু উপকারও পাওয়া যায় এটি খেলে।
সুস্থ থাকতে সকালে কোন খাবারগুলো খাবেন আর কোনগুলো নয়, সে বিষয়ে তো জানা হলো। নিজের সুস্থতার জন্য কোন খাবারগুলো কখন খেলে শরীরের জন্য ভালো হবে সেটা আগে জেনে নিতে হবে। সেই সাথে খাদ্যতালিকাও ঠিক করতে হবে সেভাবেই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ছবিঃ সাটারস্টক
The post সুস্থ থাকতে সকালে কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে না? appeared first on Shajgoj.