স্কিন ও হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের নাম বেশ পরিচিত। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ত্বকের কালো দাগ দূর করা, চুল পড়া রোধ করার মতো নানা কাজে এই অয়েলের ব্যবহার রয়েছে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি, পল্যুশন, ফ্রি রেডিক্যালস ইত্যাদি নানা কারণে আমাদের স্কিনে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস যেমন- ফাইন লাইনস, রিংকেলস দেখা দেয়। এই রিংকেলস ও ফাইন লাইনস কমানোর কার্যকরী একটি প্রোডাক্ট হতে পারে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। যদিও এই অয়েল দিয়ে রিংকেলস একদম দূর হয়ে যায় না, তবে এর ভিজিবিলিটি অনেকটাই কমে আসে। আজকের আর্টিকেলে জানাবো স্কিনের রিংকেলস প্রিভেন্ট করতে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে এই অয়েল ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কী?
সুগন্ধীযুক্ত বিভিন্ন গাছ, ফল, পাতা বা কাণ্ড থেকে নির্যাস বের করে যে তেল তৈরি করা হয়, তাকে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল বলে। এই তেলগুলো কেমিক্যাল ফ্রি হয়ে থাকে, ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কোনো ভয় নেই। অ্যারোমাথেরাপিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি রেডিক্যালস নিউট্রিলাইজ করে অর্থাৎ কেমিক্যাল, ধুলাবালি, সূর্যের আলো থেকে আসা বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থেকে স্কিনকে রক্ষা করে। সেই সাথে স্কিনে ফিরিয়ে আনে গ্লো এবং স্কিনকে রাখে হাইড্রেটেড।
রিংকেলস প্রিভেন্ট করতে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
স্কিনের জন্য অনেক বেনিফিট দেয় অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। স্কিন টোন ইভেন করা এবং স্মুথ করা তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও এজিং সাইনস প্রিভেন্ট করতেও এটি হেল্প করে। স্কিনকে ইয়াংগার লুকিং করে তুলতে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল যেভাবে হেল্প করে-
কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনে কোলাজেন প্রোডাকশন ধীরে ধীরে কমে যায়। ফলে ফেইসে ভিজিবল হয় রিংকেলস। অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়িয়ে রিংকেলস এর ভিজিবিলিটি কমিয়ে আনতে হেল্প করে।
স্কিনের ময়েশ্চার ধরে রাখে
ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে গেলে প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিতে পারে। অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে। যার কারণে এজিং সাইনস কম ভিজিবল হয়।
স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়ায়
এই অয়েলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর করে। ফলে স্কিন হয়ে ওঠে ব্রাইট। অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারে শুধু চোখের নিচেই নয়, সেই সাথে কপালে ও ঘাড়েও রিংকেল পড়া রোধ হয়।
অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের বেনিফিটস
অ্যাসেনশিয়াল অয়েল অনেক ধরনের হয়। পারসোনাল ফ্রেগ্রেন্স প্রিফারেন্স অনুযায়ী ও ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিতে পারেন আপনার অয়েলটি। কীভাবে এই অয়েল স্কিনে বেনিফিট দেয় চলুন জেনে নেই-
১) লেমনগ্রাস অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
লেমনগ্রাস অ্যাসেনশিয়াল অয়েলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আছে যা ত্বকের ফ্রি রেডিক্যালগুলোকে নিউট্রিলাইজ করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এতে আরও আছে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, আলফা টোকোফেরল ও গ্লুটাথিওন- যা ত্বকের সান ড্যামেজ সারিয়ে তোলে। সেই সাথে ত্বকের রিংকেল পড়া রোধ করে এবং স্কিন টোন ইভেন করতে হেল্প করে।
২) রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
এতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। রোজমেরি নামক গাছের ফুল ও পাতা থেকে রোজমেরি তেল তৈরি হয়। মূলত ভূমধ্যসাগরের কিছু অঞ্চলে বেড়ে ওঠা এই উদ্ভিদটি প্রসাধন সামগ্রী ও ওষুধ হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস রোধ করে যা স্কিনে রিংকেল হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
৩) ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
ত্বক ও চুলের জন্য ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল বহুকাল ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই অয়েল মূলত ল্যাভেন্ডার ফুলের নির্যাস। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা ত্বকের সানবার্ন, ফাঙ্গাল ইনফেকশন রোধ করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যারোমাথেরাপেটিক প্রোপার্টিজ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। যা স্কিনে বেশ পজিটিভ ইফেক্ট দেয়।
৪) রোজহিপ অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানে সমৃদ্ধ রোজহিপ অ্যাসেনশিয়াল অয়েল তৈরি হয় গুল্ম জাতীয় গোলাপের বীজ থেকে। এই তেলটি ভিটামিন এ, সি, ই ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণে ফেনোলিক অ্যাসিড রয়েছে যা ইনফ্ল্যামেশন ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করে।
৫) ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েলটির নাম বর্তমানে বেশ পরিচিত। ইলাং ইলাং এক ধরনের হলুদ বর্ণের স্টার শেইপড ফুল। এই ফুলটি কানাঙ্গা গাছে হয়ে থাকে। মূলত উষ্ণমন্ডলীয় কিছু অঞ্চল যেমন – ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় কিছু অঞ্চলে এই ফুল জন্মায়। এই ফুলের নির্যাস থেকে ইলাং ইলাং অ্যাসেনশিয়াল অয়েল তৈরি হয়। রিংকেলস প্রতিরোধে এবং স্কিন ইরিটেশন কমাতে বেশ ভালো কাজ করে এই অয়েলটি।
৬) সুইট অরেঞ্জ অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
কমলার খোসার নির্যাস থেকে তৈরি হয় সুইট অরেঞ্জ অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। আবার কখনো কখনো এই তেল তৈরিতে কমলা গাছের পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়। এই অয়েলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে যা পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। এর নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে রিংকেল পড়া রোধ হয়।
ক্যারিয়ার অয়েল হিসেবে কোন অয়েল ব্যবহার করবেন?
অ্যাসেনশিয়াল অয়েল সরাসরি অ্যাপ্লাই করার চেয়ে ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা বেশি ভালো। এই অয়েলগুলোরও আলাদা বেনিফিটস থাকায় স্কিনে যোগ করে এক্সট্রা ভ্যালু। যে ক্যারিয়ার অয়েলগুলো এক্ষেত্রে ইউজ করতে পারেন-
১) আমন্ড অয়েল
আমন্ড অয়েলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড স্কিন হাইড্রেটেড রাখে, স্মুথ করে এবং স্কিন টোনে পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই অয়েলটি বেশ লাইট ওয়েট বলে স্কিনে সহজেই অ্যাবজর্ব হয়ে যায়। ড্রাই স্কিনের জন্য এটি বেশ ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে।
২) আরগান অয়েল
ত্বকের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে আরগান অয়েল। অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের সাথে মিশে এই অয়েল স্কিনকে ইয়াংগার লুকিং করে তোলে। ড্রাই স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতে, স্কিনের ইনফ্ল্যামেশন কমাতেও এটি হেল্পফুল।
৩) জোজোবা অয়েল
ন্যাচারাল স্কিন ব্যারিয়ার মেনটেইন করতে হেল্প করে জোজোবা অয়েল। এই অয়েলটি নন-অ্যালার্জেনিক বলে আল্ট্রা সেনসিটিভ স্কিনেও ব্যবহার করা যায়।
৪) অ্যাভোকাডো অয়েল
ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে এবং স্কিনের সেল টার্নওভার বাড়ায় অ্যাভোকাডো অয়েল। স্কিনের সানবার্ন কমাতে, একনে প্রিভেন্টে এই অয়েল বেশ হেল্পফুল।
রিংকেলস প্রিভেন্ট করতে অয়েল ট্রিটমেন্ট
১) ২ চা চামচ ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে ২/৩ ফোঁটা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
২) রাতে ঘুমানোর আগে ফেইসে অ্যাপ্লাই করুন।
৩) ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করিয়ে নিন।
৪) সাইট্রাস জাতীয় অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ একটু অসাবধানতায় স্কিন ফটোসেনসিটিভ হয়ে যেতে পারে। সাইট্রাস অয়েল অ্যাপ্লাই করার পর বাইরে যেতে হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। কারণ এই অয়েল সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসলে স্কিন পুড়ে যেতে পারে।
এই তো জেনে নিলেন, রিংকেলস প্রিভেন্ট করতে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কীভাবে কাজ করে। স্কিন কেয়ারে এই অয়েলের ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। একদম ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট বলে স্কিনের জন্য এটি বেশ বেনিফিসিয়াল। বিভিন্ন ধরনের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল পেয়ে যাবেন সাজগোজে। এছাড়া অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকেও কিনতে পারেন।
ছবিঃ সাজগোজ
The post রিংকেলস প্রিভেন্ট করতে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কীভাবে কাজ করে? appeared first on Shajgoj.