হুটহাট আগাম নোটিশ ছাড়াই চুলের যে সমস্যাটা দেখা দেয় তা হলো খুশকি! খুশকির সমস্যায় ভোগেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এ সমস্যা সাধারণত শীতকালে বেশি হয়। তবে বছরের প্রায় পুরোটা সময় এ প্রবলেম ফেইস করতে হয় এমন মানুষও আছে। ড্যানড্রাফ হলে অন্যান্য স্ক্যাল্প প্রবলেমও বেড়ে যায়। যেমন- ইচিনেস, ফ্লেকিনেস, হেয়ার ফল ইত্যাদি। ড্যানড্রাফ কন্ট্রোলে এবং স্ক্যাল্পের বিভিন্ন সমস্যা কমাতে কার্যকর হতে পারে কয়েক ধরনের তেল। এসব তেল ব্যবহারে হেয়ার ড্যামেজ বা স্ক্যাল্প ড্রাই হবে না। ড্যানড্রাফ কন্ট্রোলে এবং স্ক্যাল্পের ইচিনেস সল্যুশনে এমন ৬ ধরনের কার্যকরী অয়েল নিয়েই আজকের আর্টিকেল।
ড্যানড্রাফ কী এবং কেন হয়?
আমাদের মাথার ত্বকে নতুন কোষ তৈরি হয় এবং পুরনো কোষগুলো ঝরে যায়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। পুরাতন কোষগুলো যখন ন্যাচারালি রিপ্লেস হতে পারে না তখন সেগুলো আমাদের স্ক্যাল্পে পাইল আপ হয় এবং ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়। এই ফাঙ্গাস থেকেই খুশকি সৃষ্টি হয়। খুশকি হলে স্ক্যাল্প চুলকায় এবং সাদা গুঁড়ার মতো খুশকি ঝরে পড়ে। সাধারণত শীতকালে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে অনেকের সারা বছর এই সমস্যায় ভুগতে হয়।
যে কারণে ড্যানড্রাফ হয়
- শুষ্ক ত্বক
- নিয়মিত চুল পরিষ্কার না করা
- কোনো নির্দিষ্ট কেমিক্যাল পণ্য ব্যবহার করা
- ম্যালাসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
- সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
ড্যানড্রাফ কন্ট্রোলে কোন তেলগুলো কার্যকর?
ড্যানড্রাফ কন্ট্রোলে অনেক ধরনের শ্যাম্পু আছে। তবে শ্যাম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি অয়েল অ্যাপ্লাই করলেও এই প্রবলেম অনেকটাই কমে আসবে। ড্যানড্রাফ হলে স্ক্যাল্পে ইচিনেসও অনেক বেড়ে যায়। তাই তেল ইউজ করলে স্ক্যাল্পের ড্রাইনেস ও ইচিনেস দুটোই কমে। চলুন জেনে নেই, কোন তেলগুলো ড্যানড্রাফ কন্ট্রোলে অ্যাপ্লাই করতে পারেন-
ক্যারিয়ার অয়েল
১) নারিকেল তেল
নারিকেল তেলের সবচেয়ে বড় বেনিফিট হচ্ছে এটি খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার ধরে রাখে। যার কারণে হেয়ার স্প্লিট ও ফ্রিজি হেয়ারের প্রবলেম কমে আসে। তাছাড়া নারিকেল তেলে থাকা লরিক অ্যাসিড ড্যানড্রাফ রেমেডি হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে স্ক্যাল্পের ইনফ্ল্যামেশন কমাতেও এই তেল বেশ হেল্পফুল।
২) অ্যাভোকাডো অয়েল
স্কিনের জন্য অ্যাভোকাডো অয়েল যেমন উপকারী, তেমনই চুলের জন্যও এর বেনিফিট রয়েছে। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও লিনোয়িক অ্যাসিডের কারণে রিডিউস হয় ড্যানড্রাফ। সেই সাথে কমে আসে স্ক্যাল্পের ড্রাইনেস ও ফ্লেকিনেস।
এই দুটো অয়েল ছাড়াও আরও কয়েক ধরনের ক্যারিয়ার অয়েল আছে। যেমন- জোজোবা, আমন্ড, অলিভ, আরগান অয়েল ইত্যাদি। আপনার প্রিফারেন্স অনুযায়ী যে কোনো অয়েলই ড্যানড্রাফ কমাতে ইউজ করতে পারেন।
অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
১) রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
রোজমেরি নামক গাছের ফুল ও পাতা থেকে রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল তৈরি হয়। মূলত ভূমধ্যসাগরের কিছু অঞ্চলে বেড়ে ওঠা এই উদ্ভিদটি প্রসাধন সামগ্রী ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রোজমেরিতে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক কোয়ালিটি, যার কারণে ড্যানড্রাফের সমস্যা কমে আসে। এছাড়া যে ফাঙ্গাসের কারণে ড্যানড্রাফ তৈরি হয়, সেটি দূর করার জন্য অ্যান্টি ফাঙ্গাল প্রোপার্টিজও আছে এই তেলে।
২) টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
সৌন্দর্যসচেতন মানুষদের কাছে এটি বেশ পরিচিত একটি নাম। টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানে ভরপুর। ড্যানড্রাফ দূর করতে এবং স্ক্যাল্পে সুদিং ফিল দিতে এই তেল বেশ কার্যকর।
৩) লেমনগ্রাস অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
লেমনগ্রাস অয়েল সাইট্রাস ফ্লেভারের একটি পাওয়ারফুল অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। সাধারণত সুগন্ধি ও সাবান তৈরিতে এই অ্যাসেনশিয়াল অয়েলটি ব্যবহার করা হয়। ড্যানড্রাফ রিডিউস করতে এবং ফ্লেক-ফ্রি হেলদি স্ক্যাল্প পেতে এই অয়েল বেশ হেল্পফুল। এতে থাকা অ্যান্টি ফাঙ্গাল প্রোপার্টিজের কারণে এটি ইচি ও ফ্লেকি স্ক্যাল্পের জন্য ন্যাচারাল রেমেডি হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস গ্রো হতেও বাধা দেয়।
৪) পিপারমিন্ট অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ার ওভার গ্রোথের কারণে স্ক্যাল্পে এক্সেসিভ ফ্লেকস হতে পারে। অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টিজ থাকায় এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে পিপারমিন্ট অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। এছাড়া ড্যানড্রাফ দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর।
অ্যান্টি ড্যানড্রাফ অয়েল ট্রিটমেন্ট
অ্যান্টি ড্যানড্রাফ অয়েল তৈরি করার প্রসেসটা খুব ইজি এবং ইউজ করা মোটেও কঠিন নয়। যেভাবে এই তেল বানানো ও ব্যবহার করা যায়-
১) চুলের লেন্থ অনুযায়ী যে কোনো ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে ২/৩ ফোঁটা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্স করে নিন।
২) এবার আঙুল দিয়ে পুরো স্ক্যাল্পে ভালোভাবে তেল অ্যাপ্লাই করুন।
৩) অ্যাপ্লাই করার ১/২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিন।
৪) ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য অ্যান্টি ড্যানড্রাফ অয়েল ট্রিটমেন্টগুলো সপ্তাহে অন্তত ১ বার ব্যবহার করুন।
যা করবেন না
১) তেল ব্যবহারের পর চিরুনি দিয়ে চুল বারবার আঁচড়াবেন না।
২) টাইট করে (যেমন- পনিটেইল অথবা টাইট খোঁপা) বাঁধা থেকে বিরত থাকুন।
৩) যদি চুলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করতে চান, তবে এর পর আলাদাভাবে অন্য কিছু করার প্রয়োজন নেই।
৪) তেল দেওয়ার সাথে সাথে শ্যাম্পু করবেন না। চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগানোর জন্য মাথায় ১-২ ঘন্টা তেল রাখুন।
অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কেনার সময় যে বিষয়গুলো মনে রাখবেন
১) চুলের ধরন ও পারসোনাল ফ্রেগ্রেন্স প্রিফারেন্স অনুযায়ী অ্যাসেনশিয়াল অয়েল সিলেক্ট করতে পারেন। এর সাথে ব্যবহারের জন্য বেছে নিতে পারেন পছন্দের যে কোনো ক্যারিয়ার অয়েল।
২) কেনার আগে অবশ্যই প্রোডাক্টের মেয়াদ দেখে নিন।
ড্যানড্রাফ কন্ট্রোল করার জন্য এই অয়েলের প্রতিটাই কিন্তু বেশ কার্যকর। অ্যান্টি ড্যানড্রাফ অয়েল নিয়মিত ব্যবহারে চুল হবে খুশকিমুক্ত, সিল্কি ও শাইনি। চুলের যত্নে অথেনটিক বিভিন্ন প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন সাজগোজে। এছাড়া এখান থেকে কিনতে পারেন স্কিন কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্টও। অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি যে কোনো প্রোডাক্ট।
ছবিঃ সাজগোজ
The post ড্যানড্রাফ কন্ট্রোলে এবং স্ক্যাল্প ইচিনেসের সল্যুশনে ৬টি কার্যকরী অয়েল appeared first on Shajgoj.