ঘরে একটি পোষা কুকুর মানে পরিবারে নতুন সদস্য যুক্ত হওয়া। ঘরজুড়ে তার ছোটাছুটি, খেলা করা কিংবা সঙ্গ দেয়া সবই বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আবার পোষা প্রাণী মানেই যে শুধু সঙ্গ দেয় তা কিন্তু নয়, এক সময় সে হয়ে ওঠে আমাদের প্রিয় বন্ধু। তবে এই ছোট্ট বন্ধুকে বাড়িতে আনলেই কিন্তু হবে না, প্রথম থেকেই তার জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ একটি পরিবেশ। নতুন পরিবেশ আর মানুষের সঙ্গ পেয়ে আপনার আদরের কুকুরছানা যেন ভয় না পেয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পোষা প্রাণীর মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কিছুটা সময় দরকার হয়। তবে ঘরে খুব সাধারণ কিছু পরিবর্তন এনেই পোষা কুকুরের জন্য তৈরি করতে পারেন স্বস্তির পরিবেশ। প্রতিটি কুকুর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করলেও সাধারণ কিছু বিষয় সব কুকুরের জন্য একইরকম। সেই বিষয়গুলোই জানাবো আজকের ফিচারে।
পোষা কুকুরের জন্য স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করবেন যেভাবে
নতুন পরিবেশের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া
ঘরে নিয়ে আসার পর প্রথম দিকে কুকুরছানা নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে রাখতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। তার ভয় কাটানোর জন্য চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়া যায়। যেমন- বাড়ির চারপাশ, কোথায় লিটার বসানো আছে বা পটি করানো হবে, কোথায় তাকে হাঁটতে নিয়ে যাবেন সেই জায়গাগুলো কিছুটা চিনিয়ে নিন। এতে করে কুকুরছানার সাথে সময় যেমন কাটবে, তেমনই সেও তার নতুন আবাস এবং পরিবারের সদস্যদের চিনতে শুরু করবে।
ঘরে আনার পর প্রথম থেকেই সে যেন সুস্থির থাকে এমন একটি পরিবেশ দিতে হবে। খুব বেশি জাঁকজমক আয়োজন, অতিরিক্ত উৎসাহ, বারবার তার কাছে আসা কিংবা চিৎকার চেঁচামেচি ছোট কুকুরটির মাঝে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। অতি উৎসাহের কারণে অনেকেই বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেন প্রথম দিনেই। এই কাজটি না করাই ভালো। প্রথম দিন থেকে শুরু করে অন্তত সপ্তাহখানেক কুকুরছানাকে নিজের মতো থাকতে দিলে সে ধীরে ধীরে সবার সাথে সহজ হতে পারবে।
কুকুর কী বোঝাতে চাচ্ছে সেটি বোঝার চেষ্টা করুন। সে আপনার আদর চাচ্ছে কিনা, আপনার সাথে খেলতে চাচ্ছে কিনা, অথবা পটি করার জন্য জায়গা খুঁজছে কিনা বিষয়গুলো বুঝুন। অর্থাৎ কুকুরের আচরণের দিকে ভালো করে খেয়াল করুন। ঘরে কোথায় তার জন্য লিটার বক্স রাখা আছে, কোথায় সে ঘুমাবে জায়গাগুলো চিনিয়ে দিন।
খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা
ঘরে নিয়ে আসার পর কুকুর যদি খেতে না চায়, তাহলে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আগের পরিবেশে সে কীভাবে খেতো চেষ্টা করুন সেটা জানার। এতে খাওয়ানো কিছুটা সহজ হবে। যদি জানা না যায়, তাহলে নতুন অভ্যাসের সাথে তাকে অ্যাডজাস্ট করে তুলুন। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে খেতে দিন। আজকে এক সময়, কালকে অন্য সময় এমন যেন না হয়। প্রথম দিন থেকেই তাকে বুঝতে দিন সব সময় এই নির্দিষ্ট সময়েই খাবার খেতে হবে। বাড়তি না দিয়ে কুকুরের বয়স অনুযায়ী যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই খেতে দিন। ডগ ফুড, মাংস, ভাত যাই দিচ্ছেন পরিমাণমতো দিতে হবে। খাবারের সাথে সাথে খেয়াল রাখবেন, কুকুরটি যেনো পর্যাপ্ত পানি পান করে।
ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা
নতুন বাসায় আসার পর কুকুরছানাটি ক্লান্ত থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। ক্লান্তি দূর করতে কুকুরটির খুব ভালোভাবে ঘুমের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে ক্রেটের ব্যবহার। ক্রেট বা কুকুরের খাঁচা ঘুমানোর জন্য যথেষ্ট উপকারী। এটি কুকুরকে সেইফ ফিল করায়। আদরের কুকুর ছানাটি নিশ্চিন্তে ঘুমালে আপনারও ভালো লাগবে। ক্রেট আপনার বিছানার পাশেই রাখতে পারেন। এতে ঘুম ভেঙে গেলে কুকুরটিও নতুন জায়গা ভেবে ভয় পাবে না। যদি ক্রেট না থাকে তাহলে মেঝেতেই আলাদা বিছানা বানিয়ে দেয়া যায়।
রুটিন তৈরি করা
নতুন কুকুরছানাটিকে প্রথম থেকেই ধীরে ধীরে তার রুটিনে অভ্যস্ত করে নিন। প্রতিদিন সকালে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া, ক্রেটে কতখানি সময় থাকবে, পটি ট্রেইন, দিনে কতবার খেতে দেয়া হবে এর সবটাই তৃতীয় দিন থেকে শুরু করতে পারেন।
কুকুর খুব দ্রুত অভ্যাসের সাথে মানিয়ে নেয়। তাই তাকে কীভাবে রাখবেন, সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্তও দ্রুত নিতে হবে। যদি আপনি চান, কুকুর কখনোই সোফায় বসবে না, ডাইনিং টেবিলে উঠে পড়বে না, তবে প্রথম থেকেই তাকে সেভাবে ট্রেনিং দিন। আগে থেকে অভ্যাস না করালে পরবর্তীতে অভ্যাস বদলানো কঠিন হয়ে উঠবে।
খেলনা দিয়ে খেলা
কুকুরের জন্য বিভিন্ন খেলনা কিনে রাখতে পারেন। এটি আপনার ও কুকুরছানার মাঝে সম্পর্ক সহজ করার ক্ষেত্রে খুবই হেল্প করবে। কুকুরছানা একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে দাঁত দিয়ে বিভিন্ন জিনিস কামড়াতে চায়। বিভিন্ন খেলনা দেয়া থাকলে সে ঘরের জিনিস কামড়ে নষ্ট করবে না।
‘ম্যাজিক অব থ্রি’ রুলস মেনে চলা
দেশের বাইরে কুকুরছানাদের ক্ষেত্রে ‘ম্যাজিক অব থ্রি’ রুলস মেনে চলা হয়। এই রুলস অনুযায়ী-
প্রথম ৩ দিনে- কুকুর আপনার ঘর দেখবে, চিনবে, জানবে। নতুন জিনিসের, নতুন মানুষের গন্ধ নিবে। এক কথায়, কীভাবে তাকে বাড়িতে থাকতে হবে সেটির ছোট একটি ট্রেনিং এর মধ্য দিয়ে সে যাবে।
৩ সপ্তাহে- বাসায় কে আসছে ও যাচ্ছে, প্রতিদিন কখন তাকে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কোন সময়ে খেতে দেয়া হচ্ছে, কোথায় পটি করতে হয় এসব বিষয়ে এই সময়ের মধ্যে বেশ ভালোভাবে সে বুঝে যাবে।
৩ মাসে- আদরের কুকুরছানাটি এবার আপনার ঘরকে নিজের ঘর বলেই জানবে। শুরুতে আপনাকে অবশ্যই খানিকটা ধৈর্য্য ধরতে হবে।
অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নেয়া
কুকুরকে ঠিক কীভাবে, কখন খাওয়ানো দরকার, কীভাবে গোসল করানো হবে কিংবা কীভাবে পটি ট্রেইন করানো যায়, এসব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য দরকার হতে পারে। দ্বিধা না করে কথা বলুন। এতে অল্প সময়ে কুকুরছানার যত্ন সম্পর্কে আপনারও জানা হবে।
ভেটের কাছে নিয়ে চেকআপ করা
বাড়িতে আনার পর যত দ্রুত সম্ভব একজন ভেট অর্থাৎ প্রাণীদের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কুকুরছানাকে দেখিয়ে আনুন। তার কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কিনা চেক করে ভেট জানাবেন সে কেমন আছে। যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এছাড়া কোনো ইনজেকশন দিতে হলে সেটাও দিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
বাড়িতে একটি কুকুরছানা আনা মানে পুরো বাড়ি সে মাতিয়ে রাখবে। যেহেতু ওরা মুখে বলে বোঝাতে পারে না, তাই ওদের আচরণে সব কিছু বুঝে নিতে হবে আপনাকেই। আর তাকে নিজেদের একজন হিসেবে মানিয়ে নেওয়ার পুরো দায়িত্বও পালন করতে হবে। পরিবারের নতুন অতিথিকে নিয়ে আনন্দে কাটুক আপনার সময়।
ছবিঃ সাটারস্টক
The post পোষা কুকুরের জন্য কীভাবে ঘরেই তৈরি করবেন স্বস্তির পরিবেশ? appeared first on Shajgoj.