‘এক্সফোলিয়েশন’ শব্দটি শুনলে স্কিন কেয়ারের কথাই সবার আগে মাথায় আসে, তাই না? কিন্তু আজকে আমি লিখবো স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন নিয়ে। কি একটু অবাক হচ্ছেন? হওয়ারই কথা! অনেকের কাছে এই টার্মটি নতুন, আবার অনেকের কাছে ব্যাপারটা এমন, ‘আমি তো প্রায়ই স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন করি, আপনি করেন না?’ অনেকে হয়তো ভাবছেন যে হেয়ার কেয়ার করা মানে তো অয়েল ম্যাসাজ করা, শ্যাম্পু বা হেয়ার প্যাক দেওয়া। স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন এর আবার কী দরকার? তাই সব কনফিউশন দূর করতে এই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক!
স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন আসলে কী?
আমাদের বডি যে ন্যাচারালি ডেড সেলস রিপ্লেস করে এটা তো আমরা সবাই জানি। ফেইস, বডির স্কিনের জন্য এক্সফোলিয়েশন যেমন দরকার, তেমনি আমাদের স্ক্যাল্পের জন্যও এটা প্রযোজ্য। এই ডেড সেলসের পাশাপাশি অয়েল, ডার্ট এগুলা জমে মাথার ত্বকে একটা লেয়ার ক্রিয়েট করে, সেক্ষেত্রে এক্সফোলিয়েশন ডিপলি ক্লিন করে স্ক্যাল্পকে হেলদি রাখে। শুধু ডিপ ক্লিনিং না, আরও বেনিফিটস আছে এর! চলুন জেনে নেই।
১. নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে
শ্যাম্পু আমাদের হেয়ার সারফেস ক্লিন করে। কিন্তু আপনি খেয়াল করবেন অনেক সময় শ্যাম্পু করার পরও পুরোপুরি কিন্তু স্ক্যাল্প ক্লিন হয় না। কিছু না কিছু ডেড সেলস বা ড্যানড্রাফ থেকেই যায়। তাই ডিপ ক্লেনজিংয়ের জন্য স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন জরুরি। আর যখন স্ক্যাল্প ক্লিন থাকে, সেটা হেয়ার গ্রোথের জন্য স্যুইটেবল একটা এনভায়রনমেন্ট ক্রিয়েট করে। পাশাপাশি এক্সফোলিয়েশনের ফলে মাথার তালুর ব্লাড সার্কুলেশন ইম্প্রুভ হয়, যেটা হেয়ার গ্রোথের জন্য সহায়ক।
২. ড্যানড্রাফ, ইচিনেস ও ড্রাইনেস দূর করে
স্ক্যাল্প ফ্লেকি হয়ে যাচ্ছে? ড্যানড্রাফ কিছুতেই কমছে না? এগুলো স্ক্যাল্পের বেশ কমন কন্ডিশন! এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে ড্যানড্রাফ ক্লিন হয়, স্ক্যাল্পের ড্রাইনেস দূর হয়। অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুতে সাময়িকভাবে খুশকি কমে, কিন্তু স্ক্যাল্প প্রোপারলি ক্লিন করতে এই মেথডটি আপনাকে ফলো করতে হবে। এছাড়া এতে ইচিনেসও কমে আসে।
৩. স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েল ব্যালেন্স করে
হেয়ার সেবাম বা স্ক্যাল্প অয়েল যেটা ন্যাচারালি আমাদের সবারই থাকে, সেটা যদি বেশি পরিমাণে রিলিজ হয় তখন স্ক্যাল্প অয়েলি বা চিটচিটে হয়ে যায়। এই অয়েল লেভেল কন্ট্রোলে রাখতে এক্সফোলিয়েটর সাহায্য করে।
৪. হেয়ার প্রোডাক্টসের ইফেক্টিভনেস বৃদ্ধি করে
ক্লিন স্ক্যাল্পে হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস (যেমন- তেল বা হেয়ার প্যাক) ইউজ করা উচিত। কারণ স্ক্যাল্প যদি ময়লা থাকে তাহলে সেখানে বিভিন্ন প্রোডাক্টস অ্যাপ্লাই করার পর সেটা তো স্ক্যাল্পে ভালোভাবে পৌছায় না! বরং ডার্টের সাথে জমে পুরু লেয়ার ক্রিয়েট করার মাধ্যমে স্ক্যাল্পের ক্ষতি করে, যার ফলাফল অতিরিক্ত চুল পড়া। তাই এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে যেহেতু মাথার ত্বক ভালোভাবে ক্লিন হয়, এতে হেয়ার প্রোডাক্টসের ইফেক্টিভনেস বৃদ্ধি পায়।
ঘরোয়া হেয়ার স্ক্রাব
ব্রাউন সুগার স্ক্রাব
যা যা লাগবে-
- ২ টেবিল চামচ ব্রাউন সুগার
- ২ টেবিল চামচ কোকোনাট/ অলিভ অয়েল
ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে ব্রাউন সুগার মিক্স করে মাথার ত্বকে স্ক্রাবিং করুন। ব্রাউন সুগার স্ক্যাল্পের এক্সেস সেবাম কন্ট্রোলে বেশ ইফেক্টিভ, পাশাপাশি এটি স্ক্যাল্পকে হাইড্রেটেড রাখে। ৪০ সেকেন্ড জেন্টলি ম্যাসাজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ও কফি স্ক্রাব
যা যা লাগবে-
- ২ টেবিল চামচ ক্যারিয়ার অয়েল
- ১ টেবিল চামচ কফি পাউডার
- ২/৩ ড্রপ টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রোপারটিজ থাকায় কফি সেলফ কেয়ারে বেশ বেনিফিসিয়াল। আর টি ট্রি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল স্ক্যাল্প একনে প্রিভেন্ট করে। সব উপাদানগুলো মিশিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাপ্লাই করে নিন স্ক্যাল্পে, এবার ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটির স্ক্রাব
যা যা লাগবে-
- ২ চা চামচ মুলতানি মাটি
- ১ চা চামচ আমলা পাউডার
- ১ চামচ মধু
জানলে অবাক হবেন মুলতানি মাটি অয়েলি স্কিনের জন্য তো বটে, অয়েলি স্ক্যাল্পেও দারুণ কাজ করে। যাদের চুল ও মাথার ত্বক খুবই গ্রিজি, সব সময় চিটচিটেভাব থাকে, তাদের জন্য এটি মাস্ট ট্রাই। এতে আমলা পাউডার মিক্স করে নিলে এর ইফেক্টিভনেস আরও বেড়ে যায়। সব উপাদানগুলো একসাথে মিক্স করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে নিন ১ মিনিট। এবার ভালোভাবে ওয়াশ করে ফেলুন।
স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন যেভাবে করবেন
১. প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে আপনার স্ক্যাল্পের ধরন কেমন- ড্রাই, অয়েলি, সেনসিটিভ নাকি নরমাল। অবশ্যই সেটা বুঝে প্রোডাক্ট বা হেয়ার প্যাক সিলেক্ট করবেন।
২. শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে স্ক্রাব অ্যাপ্লাই করবেন। সেকশন অনুযায়ী ভাগ করে করে প্যাক/মাস্ক লাগাতে হবে।
৩. জেন্টলি ও সার্কুলার মোশনে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করবেন। অতিরিক্ত রাব করবেন না, এতে চুল ছিঁড়ে যেতে পারে। সামনে থেকে পিছনে আস্তে আস্তে আঙুলের সাহায্যে ম্যাসাজ করে নিন।
৪. ধোয়ার সময় আঙুল দিয়ে গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত চুল এমনভাবে ক্লিন করুন যাতে কোনো রেসিডিউ না থাকে।
৫. ফাইনালি আবার শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
সতর্কতা
সপ্তাহে একবার স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েট করতে পারেন, তবে যাদের মাথার ত্বকে কোনো কাটা দাগ বা ক্ষত আছে বা সিভিয়ার ইনফেকশন আছে, তারা অবশ্যই এটা এড়িয়ে চলবেন। স্ক্যাল্পে একনে, ইনফ্ল্যামেশন বা ক্ষত থাকলে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকুক, এটা সবারই চাওয়া। চুল সুন্দর রাখতে আমাদের প্রচেষ্টার কিন্তু কমতি থাকে না। এখন সেই চেষ্টার সাথে সাথে আমাদের অভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে। হেলদি লাইফস্টাইলের পাশাপাশি প্রোপার হেয়ার কেয়ার রুটিন মেনটেইন করা খুবই জরুরি। উইকলি হেয়ার কেয়ারে যদি স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েটর বাদ পরে থাকে তাহলে সেটা আজই অ্যাড করুন। অনলাইনে অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক
The post স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন | সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ারে এই স্টেপটি মিস যাচ্ছে না তো? appeared first on Shajgoj.