স্ট্রেসফুল লাইফস্টাইল, পল্যুশন, ব্যালেন্সড ডায়েটের অভাব – সব মিলিয়ে কমবেশি আমাদের সবারই হেয়ার ড্যামেজ হচ্ছে। চুল পড়া, আগা ফাটা, রাফ হয়ে যাওয়ার মতো প্রবলেমগুলো দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত চুল পাওয়ার জন্য আমরা কত চেষ্টাই না করি! এত কিছু করার পরও হেয়ার ড্যামেজ যেন কিছুতেই রিপেয়ার হয় না। আর তখনই আমরা পার্লারে যেয়ে কেরাটিন, ব্রাজিলিয়ান, প্রোটিনের মতো বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট নেই। এই ট্রিটমেন্টগুলো নিষ্প্রাণভাব কমিয়ে চুলকে করে তোলে প্রাণবন্ত। কিন্তু কিছুটা এক্সপেনসিভ হওয়ায় সব সময় পার্লারের এই সার্ভিসগুলো নেওয়া হয় না। তাই বলে কি চুলের জন্য প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নেওয়া বাদ থাকবে? ডোন্ট ওরি! আজকে আমি আপনাদের জানাবো কীভাবে ঘরে বসেই হেলদি হেয়ার পেতে আপনি নিজেই বানিয়ে নিতে পারবেন হেয়ার প্রোটিন ট্রিটমেন্ট।
চুলের গঠন ও প্রোটিনের গুরুত্ব
প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত জানার আগে চুল কীভাবে গঠিত সেটা একটু জেনে নিতে হবে। আমাদের চুল কেরাটিন নামক এক ধরনের প্রোটিন থেকে তৈরি। চুলের প্রতিটি স্ট্র্যান্ড ডাইসালফাইড বন্ডের মাধ্যমে একত্রিত থাকে। এই বন্ড বা বন্ধনগুলোকে একত্রিত রেখে শক্তিশালী করে তোলার কাজটি করে প্রোটিন। সহজ ভাষায় এটিকে চুলের বিল্ডিং ব্লক বলা যায়। হেলদি হেয়ার পেতে ইম্পরট্যান্ট দুটো ফ্যাক্টর হচ্ছে প্রোটিন ও ময়েশ্চার। এই দুটোর সমন্বয় যদি সঠিকভাবে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার চুল ভালো আছে। যদি প্রোটিনের অভাব থাকে তাহলে চুল ড্যামেজ হয়ে যাবে।
কেন চুলে প্রোটিনের ঘাটতি হয়?
বর্তমানে আমাদের লাইফস্টাইল বেশ স্ট্রেসফুল। আর এর প্রভাব শুধু আমাদের ত্বকে নয়, চুলেও পড়ে। রোদ, ধুলোবালি আর রাসায়নিক বিভিন্ন কেমিক্যালের সংস্পর্শে এসে নষ্ট হয়ে যায় এই প্রোটিন। শুধু এগুলোই নয়, রেগুলার ডায়েটে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার না থাকে তাহলে সে কারণেও চুলে প্রোটিনের ঘাটতি হয়। কারণ শরীর থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করে চুল। যদি শরীরেই পুষ্টি না থাকে, তাহলে চুল কীভাবে ভালো থাকবে? এই ভালো না থাকা থেকেই চুলের আগা ফাটা, রুক্ষ হয়ে যাওয়া, পাতলা হয়ে চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো বেড়ে যায়। চুলে প্রোটিনের ঘাটতি হলেই এই সমস্যাগুলো বাড়তে থাকে।
প্রোটিন ট্রিটমেন্ট কী?
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই ট্রিটমেন্টে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। অর্থাৎ যে উপাদানগুলো চুলে অ্যাপ্লাই করা হয় সেগুলো প্রোটিনে পূর্ণ থাকে। আর এগুলোর সাহায্যেই চুল হয়ে ওঠে মজবুত, চুলের গোড়া হয় শক্ত। প্রোটিন ট্রিটমেন্টকে কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্টও বলা যায়। এটি হেয়ার স্ট্র্যান্ডের কিউটিকল লেয়ারে প্রোটিন অ্যাড করে পরবর্তীতে চুলকে ড্যামেজ হওয়ার হাত থেকে সেইফ করে। হেলদি হেয়ারের জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন খাওয়া জরুরি, তেমনই বাহির থেকেও চুলকে দিতে হবে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট।
কীভাবে বুঝবেন চুলে এই ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন?
আগেই বলেছি, চুল হেলদি রাখতে হলে প্রোটিন ও ময়েশ্চারের ব্যালেন্স থাকা জরুরি। এ দুটো এলিমেন্টের ব্যালেন্সই ঠিক করে চুলের ইলাস্টিসিটি কেমন হবে। আপনার চুলের ইলাস্টিটি কেমন সেটা বোঝার জন্য একটা ছোট্ট পরীক্ষা করা যায়।
ধরুন, আপনার হাতে একটি ইলাস্টিক ব্যান্ড আছে। ব্যান্ডটি টেনে লম্বা করে ছেড়ে দেওয়ার পর যদি সেটি আবার আগের শেইপে ফিরে আসে, তাহলে বুঝতে হবে ব্যান্ডটি ভালো আছে। যদি ছিঁড়ে যায়, তাহলে সেটি ভালো ছিল না বা ইন্টার্নালি ড্যামেজ ছিল। এবার চুলকেও এই ব্যান্ডের মতো ভাবুন।
চুলের স্ট্র্যান্ড নিয়ে বেশি প্রেশার না দিয়ে আলতোভাবে টেনে স্ট্রেচ করে নিন। যদি এ অবস্থায় চুল ছিঁড়ে যায় বা চুল আগের জায়গায় ফেরত না আসে তাহলে বুঝতে হবে চুলের ইলাস্টিসিটি অনেক কম। এর মানে হচ্ছে আপনার চুলে প্রোটিনের প্রয়োজন। এছাড়া চুলের ফ্রিজিনেস, ফ্ল্যাট হয়ে থাকা, আঠালো ভাব থাকা- সবই ইন্টার্নাল ড্যামেজের লক্ষণ। অর্থাৎ চুলে যথেষ্ট প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে। এই ড্যামেজগুলো রিপেয়ার করতেই প্রয়োজন হেয়ার প্রোটিন ট্রিটমেন্টের।
ঘরে বসেই প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নেওয়ার উপায়
চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার করা মানে মেসি হেয়ারেই কোনো ট্রিটমেন্ট অ্যাপ্লাই করা নয়! হেলদি হেয়ার পেতে যে কোনো ট্রিটমেন্ট শুরুর আগে অবশ্যই চুল শ্যাম্পু করে ক্লিন করে নিতে হবে। কারণ এতে প্যাক ভালো কাজ করে।
ঘরোয়া প্রোটিন প্যাক বানাতে যা যা লাগবে
- তিসি ১ কাপ
- ডিম ১টি
- অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ
- টক দই ১/২ কাপ
- অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ২ ফোঁটা
(চুলের লেন্থ অনুযায়ী উপাদানগুলোর পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে)
যেভাবে বানাবেন
- তিসি জ্বাল দিয়ে অ্যালোভেরার মতো জেল বানিয়ে নিতে হবে
- এবার এই মিশ্রণে অ্যাড করতে হবে ডিম, অলিভ অয়েল ও টকদই
- ডিমের স্মেল ভালো না লাগলে ১/২ ফোঁটা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন
যেভাবে অ্যাপ্লাই করবেন
১) প্যাকটি পুরো চুলে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করে নিন। অ্যাপ্লাইয়ের জন্য চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন।
২) এবার চুলে স্টিম নিতে হবে। স্টিম নিলে কিউটিকল ওপেন হয়। যার কারণে প্যাকের নিউট্রিয়েন্টসগুলো ভালোভাবে চুলে অ্যাবজর্ব হয়। ঘরে স্টিম নেওয়ার মেশিন থাকলে ১০ মিনিট স্টিম নিতে পারেন। অথবা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়েও স্টিম নেওয়া যায়।
৩) ১০ মিনিট পর তোয়ালে খুলে শ্যাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল র্যাপ করে রাখুন আরও ১৫/২০ মিনিট।
৪) এবার শ্যাম্পু করে নিন।
৫) যদি চুল বেশি ড্যামেজ হয়ে থাকে তাহলে সপ্তাহে অন্তত ১ বার চুলে এই প্যাকটি অ্যাপ্লাই করুন। ড্যামেজ রিপেয়ার হয়ে গেলে মাসে ১/২ বার ট্রিটমেন্টটি নিতে পারেন।
প্যাকে থাকা উপাদানগুলোর বেনিফিটস
তিসি
তিসিতে আছে ভিটামিন ই, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বিসহ বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান। এই উপাদানগুলো নতুন চুল গজাতে, হেয়ার রুট স্ট্রং করতে, চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে সিল্কি করে তুলতে এবং চুলের ব্রেকেজ প্রিভেন্ট করে।
ডিম
ডিম প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। এতে আরও আছে ভিটামিন এ, ডি ও ই। এই ইনগ্রেডিয়েন্টসগুলো ড্যামেজ থেকে চুলকে রক্ষা করে, চুলকে শুষ্ক হওয়া থেকে আটকায় এবং ময়েশ্চার ধরে রাখে।
অলিভ অয়েল
চুল পড়ার সমস্যাকে কমিয়ে আনতে অলিভ অয়েল বেশ কার্যকর। এতে থাকা অলেয়িক অ্যাসিড চুল পড়ার মাত্রা কমায়। সেই সাথে এই তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ চুলের গোড়াকে রেডিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। চুলে ময়েশ্চার প্রোভাইড করে চুলকে করে তোলে সফট।
টক দই
টক দইয়ে আছে জিংক, ভিটামিন ই, প্রোটিন ও ল্যাকটিক অ্যাসিড। এই উপাদানগুলো চুল সুস্থ রাখতে এবং মাথার ত্বকের নানারকম সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। স্ক্যাল্পের pH ব্যালেন্স করে স্মুথ করে তুলতে টক দইয়ের জুড়ি নেই!
এই তো জেনে নিলেন, ঘরে বসে হেয়ার প্রোটিন ট্রিটমেন্ট একদম সহজ উপায়। এবার হেয়ার ড্যামেজ হলেও পার্লারে ছুটতে হবে না। বিজি লাইফ থেকে নিজের প্যাম্পারিং এর জন্য একটু সময় বের করে নিজেই করে ফেলতে পারবেন ইফেক্টিভ এই ট্রিটমেন্টটি। হেয়ার কেয়ারের জন্য যে কোনো অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন সাজগোজ থেকে। অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম এবং সাজগোজের চারটি আউটলেট- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকেও কিনতে পারবেন নিজের পছন্দের যে কোনো হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার ও মেকআপ রিলেটেড প্রোডাক্ট।
ছবিঃ সাজগোজ
The post হেলদি হেয়ার পেতে নিজেই করে নিন প্রোটিন ট্রিটমেন্ট! appeared first on Shajgoj.