চুল পড়ার সমস্যা কম বেশি আমরা সবাই ফেইস করি। আজকাল বিভিন্ন কারণে হেয়ার ফল প্রবলেম একটু বেশিই বেড়ে গেছে। চুলের যত্ন নিয়ে আমরা কিন্তু এখন বেশ সচেতন। ‘অ্যান্টি হেয়ার ফল শ্যাম্পু ইউজ করছি, চুলে প্যাক লাগাচ্ছি; তাও চুল পড়া সেভাবে কন্ট্রোলে আসছে না!’ এই কমপ্লেইনটা অনেকেই করেন। হতে পারে ইন্টারনাল কোনো কারণে এক্সেস হেয়ার ফল হচ্ছে। কিন্তু আপনি সেই কারণটা খুঁজে বের করতে পারছেন না। প্রোপারলি হেয়ার কেয়ার করার পরও চুল পড়া কেন কমছে না, এর পেছনে কোন কোন ফ্যাক্টর দায়ী, চলুন সেগুলো আজ জেনে নেই।
চুল পড়ার কোন ফ্যাক্টরগুলো দায়ী
দৈনিক একজন সুস্থ সবল ব্যক্তির ৫০-১০০টা করে চুল পড়া স্বাভাবিক। চুলেরও স্বাভাবিক জীবনচক্র আছে, একটা পর্যায়ে চুল ঝরে যায়। আনহেলদি লাইফস্টাইল ও শারীরিক কন্ডিশনের জন্য অস্বাভাবিক হারে চুল পড়তে পারে। ছেলে মেয়ে সবাই-ই এই প্রবলেমটা ফেইস করে! কেন এমন এক্সেস হেয়ার ফল হচ্ছে সেই কারণটা খুঁজে বের করতে হবে। বিস্তারিত জেনে নিন আজকের ফিচারে।
স্ট্রেস
শারীরিক বা মানসিক যেকোনো ধরনের স্ট্রেস হেয়ার ফলের প্রবলেম বাড়িয়ে দিতে পারে। চুলের বৃদ্ধি চক্রের ৪টি স্টেজ বা পর্যায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথম ৩টি স্টেজ হলো অ্যানাজেন, ক্যাটাজেন ও টেলোজেন, যেগুলো হেয়ার গ্রোথের সাথে সরাসরি রিলেটেড। আর লাস্ট স্টেজ, অর্থাৎ অ্যাক্সোজেনে পুরানো চুল ঝরে যায়। অল্প বয়সে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস বেড়ে গেলে অ্যাক্সোজেন ধাপটা আগে আগে চলে আসে। তাই চুল পড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে।
হরমোনাল ইমব্যালেন্স
শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে চুল পড়া বেড়ে যায়। প্রোপারলি হেয়ার কেয়ার করার পরও যখন চুল পড়া কন্ট্রোলে আসে না, তখন বুঝতে হবে ইন্টারনাল কোনো ইস্যু এর পেছনে দায়ী। হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে অনেক সময় অল্প বয়সে মাথার তালুতে টাক পড়ে যায়। অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনের কারণে এই ধরনের হেয়ার প্রবলেম দেখা দেয়।
ক্রাশ ডায়েট
পুষ্টিকর খাবার-দাবার আপনাকে সুন্দর ও সুস্থ চুল দিতে পারে। কিন্তু ক্রাশ ডায়েটের ফলে যদি আপনার পুষ্টির ঘাটতি পূরণ না হয় তাহলে এটি শরীরের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যকেও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করবে। যেমন চুল পড়া, তালুতে টাক দেখা যাওয়া, চুল পাতলা হওয়া ইত্যাদি। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে আপনার ডায়েটে প্রোটিন, জিংক, বায়োটিন ও আয়রন জাতীয় খাবার রাখুন।
জেনেটিক্যাল ইস্যু
কখনও কখনও জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেকের মাথার তালুতে টাক পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় যে ফ্যামিলির সবারই চুল পাতলা, অল্প বয়সেই সব চুল পড়ে গেছে! এক্ষেত্রে তেমন কোনো সল্যুশন নেই। তবে প্রোপার টেক কেয়ার ও নিউট্রিশন আপনাকে সুস্থ ও সুন্দর চুল দিতে পারে।
দূষণ বা পল্যুশন
অতিরিক্ত চুল পড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আশেপাশের দূষণ। আপনি যদি কোনো দূষিত শহর বা এলাকায় থাকেন, বা আপনার এরিয়ার সাপ্ল্যাই পানি যদি দূষিত হয় তাহলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। বাইরের পল্যুশন থেকে চুলের সুরক্ষার জন্য মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করতে পারেন।
প্রেগনেন্সি ও পোস্ট প্রেগনেন্সি
বেবি ডেলিভারির পর চুল পড়ার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে হুট করে। এটা খুবই স্বাভাবিক, তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রেগনেন্সিতে ও বাচ্চার জন্মের পর হরমোনাল ভারসাম্য পরিবর্তিত হয় বলে তখন চুল বেশি পড়ে। হরমোনের লেভেল আগের অবস্থায় ফিরে গেলে আবারও নতুন চুল গজাবে।
প্রোটিনের ঘাটতি
আমরা সবাই জানি যে চুল প্রোটিন দিয়ে তৈরি। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী প্রোটিন ইনটেক না হলে চুলে একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট তো পড়েই! আপনার যদি দীর্ঘদিন ধরে চুল পড়ার সমস্যা থেকে থাকে; তবে দুধ, পনির, দই, মাছ, ডিম নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন।
অ্যানিমিয়া
শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন নারী রক্তস্বল্পতায় ভোগেন এবং এর ফলে তাদের অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়ে। অ্যানিমিয়া থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ডায়েটে ভিটামিন সি ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
থাইরয়েড
থাইরয়েড হরমোন নরমাল রেঞ্জে না থাকলে চুল অস্বাভাবিকভাবে পড়তে থাকে। বিশেষ করে নারীদের থাইরয়েডের সমস্যা বেশি হয়। তাই যদি এক্সেস হেয়ার ফলের সমস্যা হয়, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হোন যে আপনার থাইরয়েড লেভেল ঠিক আছে কিনা।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বা ইনফেকশন
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, স্ক্যাল্প ইনফেকশন এবং কিছু রোগের কারণেও চুল পড়ে যায়। যেমন- সোরিয়াসিস, একজিমা, এলোপেসিয়া এবং এই জাতীয় স্কিন ডিজিজ। পল্যুশন, ঘাম, জীবাণু এগুলো স্ক্যাল্প থেকে প্রোপারলি ক্লিন না হলে ইনফেকশনের চান্স থাকে। তাই বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে শাওয়ার নিন এবং ডেইলি স্ক্যাল্প ক্লিন করুন।
PCOS
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এখন খুবই কমন। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অতিরিক্ত ওজন, অনিয়মিত মাসিক, চুল পড়া, ফেইসে অবাঞ্ছিত লোম এগুলো PCOS এর লক্ষণ। তাই এই ধরনের কোনো সমস্যা ফেইস করলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এগুলোর মাধ্যমে PCOS কন্ট্রোলে আনা যায়।
মেডিসিনের সাইড ইফেক্ট
ওষুধ শরীরে অ্যাডজাস্ট না করার কারণে এবং কিছু কিছু ওষুধের সাইড ইফেক্টে চুল ঝরে যায়। ক্যান্সারের ট্রিটমেন্টে কেমোথেরাপি দেওয়া হলে সেটার কারণেও চুল পড়ে। যেকোনো মেডিসিন লং টার্মের জন্য নিতে হলে সেটার সাইড ইফেক্টগুলোও জেনে নিন।
অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো
খুব বেশি প্রেশার দিয়ে আঁচড়ানোর ফলে খুব সহজেই চুল দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো ভালো অভ্যাস নয়। কাঠের বা মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন, এতে সহজে জট ছাড়াতে পারবেন, স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালনও ভালো হবে। ভেজা অবস্থাতে চুল আঁচড়ালে হেয়ার ফলের চান্স বেড়ে যায়, কারণ এই সময় চুলের গোড়া নরম ও নাজুক থাকে।
প্রোপারলি হেয়ার কেয়ার করার পরও যাদের চুল পড়ার সমস্যা কিছুতেই কন্ট্রোলে আসছে না, তারা এই বিষয়গুলো একটু খেয়াল করে দেখবেন। সুন্দর চুল আপনার কনফিডেন্স লেভেলকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই নিজের প্রতি একটু যত্নশীল হোন। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ৪টি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) ও সীমান্ত সম্ভার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক
The post প্রোপারলি হেয়ার কেয়ার করার পরও চুল পড়া কেন কমছে না? appeared first on Shajgoj.