ঘর সাজানোর জন্য দোকান ঘুরে ঘুরে নানা জিনিস কিনলেও হাতে বানানো জিনিসের প্রতি ভালোলাগা অন্যরকম। নানা ধরনের শো পিসের পাশাপাশি ইদানিং ড্রিম ক্যাচার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কী এই ড্রিম ক্যাচার? আর কীভাবেই বা হোম ডেকোরে জায়গা করে নিয়েছে এই আইটেমটি? এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার সাথে সাথে আজকের আর্টিকেলে আমরা শিখবো কীভাবে খুব সহজে অল্প উপকরণ দিয়ে ড্রিম ক্যাচার বানিয়ে নেওয়া যায়।
ড্রিম ক্যাচার কী?
ড্রিম ক্যাচার সকলের কাছে প্রথম পরিচিত হয়ে ওঠে নেটিভ আমেরিকানদের মাধ্যমে। তাদের বিশ্বাস ছিলো ড্রিম ক্যাচার বা স্বপ্ন ধারকে খারাপ স্বপ্ন আটকে গিয়ে সকালের প্রথম আলোয় নষ্ট হয়ে যায়। আর ভালো স্বপ্নগুলো এর জাল ভেদ করে চলে যায়। তাই ড্রিম ক্যাচার ঝোলানো হতো এমন জায়গায় যেখানে ঘুমের সময় মাথা দেয়া হয় এবং সকালে সূর্যের প্রথম আলো এসে পড়ে।
সে যুগ চলে গিয়েছে বহু আগে। যুগের বদলের সাথে সাথে বর্তমানে কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে শৌখিন সকল বয়সী মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ঘর সাজানোর অংশ হয়ে উঠেছে ড্রিম ক্যাচার। সাধারণত কাঠের গোল ফ্রেম, সুতা, রঙিন পালক, পুঁথি দিয়েই ট্র্যাডিশনাল ড্রিম ক্যাচার বানানো হতো। নেটিভ আমেরিকানরা উইলো গাছের ডাল দিয়ে এ গোল ফ্রেম বানাতো। বর্তমানে বিভিন্ন আকারের ফ্রেম, আর্টিফিশিয়াল ফুল, নানারকম চার্ম ইত্যাদি দিয়ে আরো আধুনিক ও নান্দনিকভাবে ড্রিম ক্যাচার সাজানো হয়। স্বপ্ন ধরতে পারুক বা না পারুক একটি ড্রিম ক্যাচার অবশ্যই মনের কোণে এক চিলতে ভালো লাগার দোলা দেয়। আর মন ভালো থাকলে ভালো থাকে শরীরও।
যেভাবে হাতেই বানাবেন ড্রিম ক্যাচার
ড্রিম ক্যাচারের উপকরণগুলো সাধারণত আমাদের বাড়িতেই থাকে। তাই ঘর সাজাতে এই উপকরণটি হাতেই বানিয়ে নেওয়া যায়। চলুন বানানোর নিয়মগুলো জেনে নেই-
যা যা লাগবে
- মোটা সুতা/ উল/ পাটের সুতা/ ম্যাক্রেম দড়ি পছন্দমতো রঙের
- কাঠের/ প্লাস্টিকের গোল ফ্রেম
- চিকন সুতা (পছন্দমতো রঙের)
- পালক/ পুঁথি/ চার্মস
- কেঁচি, আঠা, সুঁচ, রিবন ক্লাম্প
যেভাবে বানাবেন
১) প্রথমে গোল ফ্রেমটি নিয়ে এর যে কোনো একদিকে মোটা সুতা বা উল দিয়ে একটি গিঁট দিন। এবার সুতাটি দিয়ে পুরো ফ্রেম পেঁচিয়ে ফেলুন। শেষ প্রান্তে ভালো করে গিঁট দিয়ে সিকিউর করে নিন। আঠা দিয়ে গিঁটটি আটকে ফেলুন যেন ছুটে না যায়।
২) চিকন সুতা নিয়ে প্রথমে ফ্রেমের সাথে একটি গিঁট দিন। এবার একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব মেপে একবার পেঁচিয়ে নিন। আবারও একই দূরত্ব মেপে পেঁচিয়ে নিন। এভাবে ফ্রেমের সাইজ অনুযায়ী ৬/৮টি বা তার বেশি লুপ তৈরি করতে পারেন। এভাবে পেঁচিয়ে ফ্রেমের সাথে একটি রাউন্ড তৈরি করুন।
৩) একবার পেঁচানো শেষ হলে প্রথম লুপের ভেতর থেকে সুতা ঢুকিয়ে নিন এবং প্রথম লুপের সুতার সাথে লুপ তৈরি করুন একইভাবে। এভাবে পরের কয়েকটি রাউন্ড তৈরি করুন। জায়গা ছোট হয়ে আসলে সুঁচের সাহায্যে সুতা পেঁচিয়ে নিন। এই পদ্ধতিকে স্পাইডার ওয়েব বা মাকড়সার জাল পদ্ধতি বলে।
৪) প্রতিটি লুপের মাঝে একটি করে পুঁথি ঢোকাতে পারেন। মাঝের গোল ফাঁকা স্পেসে ঝুলিয়ে দিতে পারেন ছোট চার্ম অথবা পালক।
৫) পছন্দমতো দৈর্ঘ্য মেপে নিয়ে কয়েকটি চিকন সুতা কেটে নিন। পালকের মাথায় সুতা গিঁট দিয়ে অথবা রিবন ক্লাম্প দিয়ে পালক লাগিয়ে নিন সুতার এক প্রান্তের সাথে। উপরে পছন্দমতো পুঁথি দিয়ে সাজিয়ে নিন।
৬) পালকসহ সুতাগুলোকে গোল ফ্রেমের সাথে গিঁট দিয়ে আটকে দিন। আঠা দিয়ে গিঁটগুলো শক্ত করে নিন। এগুলোর উপর দিকে সুতা দিয়ে ঝোলানোর জন্য একটি লুপ তৈরি করুন।
ব্যস, তৈরি হয়ে গেলো আকর্ষণীয় একটি ড্রিম ক্যাচার। গোল ফ্রেমের এক সাইডে আর্টিফিশিয়াল ফুল লাগিয়ে দিতে পারেন আঠা দিয়ে। নিচে আপনার পছন্দমতো পালক ও পুঁথির বদলে সুতার টাসেল বা পমপমও লাগাতে পারেন। খুব সহজলভ্য এবং হাতের কাছে থাকা অল্প উপকরণ দিয়ে এভাবেই তৈরি করে নিতে পারেন মনের মতো ড্রিম ক্যাচার।
ছবিঃ kaleyann.com
The post অল্প উপকরণ দিয়ে নিজেই বানিয়ে ফেলুন ড্রিম ক্যাচার appeared first on Shajgoj.