কিছু কর্মজীবী মানুষের জন্য নাইট শিফটে কাজ করা অনিবার্য, বিশেষ করে রোস্টার বেসিসে যারা ডিউটি করেন। Journal of Occupational and Environmental Medicines এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন ২০০০ এরও বেশি মানুষ রাতে কাজ করার জন্য বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা ফেইস করেন। হেলথ নিয়ে কনসার্ন না হলে দীর্ঘ সময় ধরে নাইট শিফটে ডিউটি করতে করতে শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পারে এবং এটি অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একে বলা হয় শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার। এক্ষেত্রে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি ফিট থাকতে কী করা যেতে পারে, সেটাই আজ আপনাদের জানাবো।
শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ কী কী?
- মনোযোগের অভাব
- ইরিটেশন
- অল্পতেই রেগে যাওয়া
- ঘুমের অভাব বা অল্প ঘুম হওয়া
- চুল পড়া
- মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা
জীবিকার জন্য অনেকেই রাত জেগে কাজ করেন, এটা খুবই সিম্পল একটা বিষয়। যেমন কল সেন্টার, টেলিকম, ই-কমার্স কোম্পানি এমন অনেক অর্গানাইজেশন আছে, যেখানে নাইট শিফটে ডিউটি থাকে। অনেকে আবার রাতে ওয়ার্ক ফ্রম হোমও করেন। আপনার মনে হতে পারে, রাতে কাজ করাটা শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের উপরে প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা এই শিফটে কাজ করতে আগ্রহী কিংবা তাদের জীবনযাত্রাতে এই টাইম সিডিউল কোনো ইমপ্যাক্ট ফেলে না! আসলে মানসিকভাবে মেনে নিলে কোনো কাজেই আপনি বোরিং ফিল করবেন না।
নাইট শিফটে ডিউটি থাকলে করণীয়
যেহেতু আপনি প্রকৃতির উল্টো নিয়মে চলছেন, আপনাকেও কিছু জিনিস ব্যালেন্স করে চলতে হবে। নাইট শিফটের জব হোল্ডারদের জন্য দারুণ কিছু টিপস থাকছে আজকের ফিচারে। চলুন জেনে নেই তাহলে।
১) ঘুমের রুটিন ফিক্স করে নিন
দেখা যায় নাইট ডিউটির কারণে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সুযোগ হয় না, তাই দিনের বেলায় একটানা অন্তত ৬ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করে নিন। আপনার ঘরটি যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন ও নিরিবিলি হয় সেটুকু নিশ্চিত করুন, যাতে করে আপনি শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। দিনের বেলায় ফিক্সড টাইমে ঘুমানোর অভ্যাস না করলে আপনার হেলথ ইস্যু হতে পারে। উইকেন্ডে বা ছুটির দিনগুলোতে রিল্যাক্স থাকার ট্রাই করুন, বিশ্রাম নিন বা ক্রিয়েটিভ কোনো কাজ করুন।
২) স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন
শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার এর একটি সাধারণ লক্ষণ হলো চুল পড়া। সপ্তাহে ২/৩ দিন অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন, এতে চুলের গোড়াতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, চুল পড়া কমে আসবে। নারকেল তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্স করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করলে রিল্যাক্স ফিল করবেন, ঘুম ভালো হবে। সেই সাথে হেয়ার প্রবলেম থেকেও রিলিফ পাবেন।
৩) স্ট্রেস নিবেন না
কাজের প্রেশার থাকলেও ধীর স্থির হয়ে টাস্কগুলো কমপ্লিট করুন। কাজের শেষে আবারও রিচেক দিন যে কিছু মিসিং হলো কিনা! মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে রেগুলার ইয়োগা করুন। আপনি প্রতিদিন কয়েক মিনিট সিম্পল ও বেসিক ইয়োগাগুলো করতে পারেন, যেমন বজ্রাসন বা প্রাণায়াম। এগুলো আপনাকে স্ট্রেস থেকে দূরে রাখবে এবং কাজে মনোযোগ ধরে রাখতেও সাহায্য করবে। নাইট শিফটে ডিউটি শেষ করে শাওয়ার নেওয়ার আগে এই সিম্পল ইয়োগাগুলো করে নিতে পারেন। এরপর নাস্তা করে ঘুম! দেখবেন এতে আপনার মন ও শরীর দু’টোই ভালো থাকবে।
৪) ডিনার করুন সময়মতো
সাধারণত, আমরা রাতের খাবার খেয়ে আমাদের দিনটি শেষ করি এবং ঘুমাতে যাই। তবে, যারা রাতে কাজ করেন, তাদের ডে সাইকেল শুরু হয় ডিনার দিয়ে। তাই সন্ধ্যা থেকে শিফট শুরু হলে আপনার ডিনার মিড নাইটে করলে চলবে না । খাবার খেয়ে তারপর কাজ শুরু করুন। ৭/৮ টার মধ্যে ডিনার সেরে নিন। অনেকে হেভি ডিনার এড়িয়ে যেতে চান এই ভেবে যে খাবার খাওয়ার পরে তাদের ঘুম ঘুম লাগবে, কিন্তু এটা ভালো অভ্যাস নয়। সঠিক মাত্রায় ক্যালোরি ইনটেক না হলে শরীর দুর্বল লাগবে।
৫) মিড নাইটে হালকা নাস্তা করুন
নাইট শিফটে ডিউটি থাকলে অনেকে প্রচুর চা/কফি পান করে থাকেন, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। কাজের ফাঁকে খিদে লাগলে বাদাম, সল্টেজ বিস্কুট, ব্রেড, ছোলা এগুলো খেতে পারেন। কল সেন্টারে এক নাগাড়ে কথা বলতে হয়, সার্ভিস দিতে হয়। এই সময়ে চিনি ছাড়া ফ্রেশ ফলের জুস পান করলে আরাম পাবেন। ট্রাই করে দেখতে পারেন, এটা আসলেই কার্যকর। তৈলাক্ত খাবার এড়াতে চেষ্টা করুন, কেননা এতে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা থাকে।
৬) রিফ্রেশমেন্টের জন্য কাজের ফাঁকে বিরতি নিন
একটানা অনেকক্ষণ কাজ করলে শরীর ও মনে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়ে। তাই মাঝে মধ্যে একটু বিরতি নিন, কলিগদের সাথে গল্প করুন বা নিজের মতো করে একটু সময় কাটান। অফিসের মধ্যেই একটু হেঁটে নিতে পারেন। ১০ মিনিটের ছোট্ট বিরতি নিয়ে গান শুনতে পারেন। আর অনলাইন ভিত্তিক কাজ হলে মাঝে মধ্যে ৫ মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে রেস্ট নিয়ে নিন, কারণ একটানা স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে মাথা ব্যথা বা অন্যান্য হেলথ প্রবলেম হতে পারে।
নাইট শিফটে ডিউটি থাকলে করণীয় কী কী, সেটা জেনে নিলেন। যেকোনো কাজই আনন্দের, যদি সেটা আপনি মন দিয়ে করেন! তাই মানসিকভাবে আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন। ঘুমের রুটিন ও হেলদি ডায়েট, এই দু’টো বিষয়কে প্রাধান্য দিন। মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে আপনি শারীরিকভাবেও ফিট থাকবেন। আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকুন। সবার জন্য শুভ কামনা।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ
The post নাইট শিফটে ডিউটি? মেন্টালি ও ফিজিক্যালি ফিট থাকুন ৬টি উপায়ে! appeared first on Shajgoj.