Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্টফিডিং মায়েদের কোভিড ভ্যাক্সিন গ্রহণ কতটুকু নিরাপদ?

$
0
0

সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। শুরুতে প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্টফিডিং মায়েদের উপরে কোভিডের প্রভাব ছিলো অজানা। ইংল্যান্ডের একটি সমীক্ষায় দেখা গেল যে, রিস্ক ফ্যাক্টর যেমন ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে মায়ের মৃত্যুহার বেশী। এটা যারা গর্ভবতী নন, তাদের জন্যেও প্রযোজ্য। প্রিম্যাচিউর ডেলিভারী ছাড়া বাচ্চাদের উপর তেমন কোনো প্রভাব নেই। বিশেষ করে জন্মগত ত্রুটির কোন আলামত পাওয়া যায়নি। সংক্রমণের দীর্ঘসূত্রতার জন্য পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সকল চিকিৎসা শুরু হল, টিকা উদ্ভাবন হয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা চলছে।

কিন্তু এবারকার ভ্যারিয়েন্ট আলাদা, তাই সংক্রমণের হার বেশি। মায়ের রিস্ক ফ্যাক্ট্রর থাক বা না থাক, আক্রান্ত হলে অবস্থা জটিল হয়ে যাচ্ছে। সকলের মত গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের মধ্যেও কোভিড- ১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারীদেরকে কোভিড-১৯ টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্টফিডিং মায়েদের কোভিড ভ্যাক্সিন গ্রহণ কতটুকু নিরাপদ, কখন নিতে হবে ভ্যাক্সিন, সাধারণ নির্দেশাবলি এই সবকিছুই জানতে পারবেন আজকের আর্টিকেলে।

Covid-19 Vaccine

প্রেগনেন্সিতে কখন নিবেন ভ্যাক্সিন? 

  • প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে ১৩ সপ্তাহ থেকে পরবর্তি যেকোনো সময় ভ্যাক্সিন নেয়া যাবে।
  • বাংলাদেশে এখন যেসব কোভিড ভ্যাক্সিন দেয়া হচ্ছে সবগুলোই প্রেগনেন্সিতে দেয়া যাবে, তবে mRNA ভ্যাক্সিন (মডার্না বা ফাইজার) দিতে পারলে ভালো।
  • ল্যাক্টেটিং মাদাররা ল্যাকটেশনের যেকোনো সময় আমাদের দেশে প্রচলিত যেকোনো কোভিড ভ্যাক্সিনই দিতে পারবেন। এতে কোনো রেস্ট্রিকশন নেই।

কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন গ্রহণ কতটুকু নিরাপদ?

১) ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাক্সিন দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করছে সব বড় অর্গানাইজেশনগুলো। এ পর্যন্ত যাদের দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে নবজাতকের কোনো জন্মগত ত্রুটি পাওয়া যায়নি। আমেরিকাতে এক লক্ষেরও বেশী ভ্যাক্সিনপ্রাপ্ত গর্ভবতী মহিলা এবং তাদের বাচ্চাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিলো। ভালো খবর হচ্ছে, তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।

২) অক্সফোর্ড এস্ট্রাজেনেকার ব্যাপারে বলা হয়েছে, যারা কোভিডের ইনফেকশনের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে আছে, তারা নিতে পারবে। যেমন স্বাস্থ্য সেবার সাথে জড়িত আছে এমন সবাই এই ভ্যাক্সিন নিতে পারবে। অশনাক্ত গর্ভাবস্থায় এই টিকা দিয়েও কোনো অসুবিধা হয়নি। প্রেগনেন্সিতে কোনো জটিলতা হয়েছে, এমন কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এই টিকা দিলেও অসুবিধা হয় না।

৩) সিনোভ্যাক নেয়া যাবে। এক ডোজ নেবার পরে কনসিভ হলে যথা সময়ে পরবর্তী ডোজ নিতে হবে।

ভ্যাক্সিন দেয়ার পর একজনকে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে জেয়া হচ্ছে

টিকা প্রদানের সাধারণ নির্দেশাবলি

  • গর্ভবতী নারীদেরকে সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল/অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে শুধুমাত্র হাসপাতাল বিশিষ্ট সরকারি টিকাদান কেন্দ্রে কোভিড-১৯ টিকা নিতে হবে।
  • টিকা দেয়ার পূর্বে টিকাদান কেন্দ্রের রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক কাউন্সেলিং করে গর্ভবতী নারীকে টিকা দিতে হবে।
  • টিকা গ্রহনের পর আধ ঘন্টা টিকা কেন্দ্রে বসে বিশ্রাম নিতে হবে।

যে সকল গর্ভবতী নারী কোভিড-১৯ টিকা নিতে পারবেন না

  • গর্ভবতী নারী টিকা গ্রহণের দিন অসুস্থ থাকলে তাকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করা যাবে না।
  • অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করা যাবে না।
  • কোন গর্ভবতী নারীর ভ্যাক্সিনে এলার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে তাকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করা যাবে না।
  • কোন গর্ভবতী নারীর যদি কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের ১ম ডোজ গ্রহণের পর এইএফআই (অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোইং ইমিউনাইজেশন) বা ভ্যাক্সিন পরবর্তী জটিলতা শনাক্ত হয়, তবে তাকে ২য় ডোজ প্রদান করা যাবে না।
  • সম্মতিপত্রে টিকাগ্রহীতা/আইনানুগ অভিভাবক ও কাউন্সেলিং চিকিৎসকের স্বাক্ষর ব্যতীত টিকা প্রদান করা যাবে না।

প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্টফিডিং মায়েদের জানতে হবে যেসব তথ্য

১) কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্টফিডিং মায়েদের টিকা গ্রহণের আগে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে নিতে হবে।

২) প্রেগনেন্সির লাস্ট ট্রাইমেস্টারে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে ইমার্জেন্সি সিচ্যুয়েশনে এক্সপেক্টেড ডেলিভারি ডেইটের আগেই ডেলিভারি করে ফেলতে হতে পারে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান জন্মদান নবজাতকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

৩) বয়স্ক গর্ভবতী (৩৫ বছর এর বেশী বয়স), উচ্চ বিএমআই সম্পন্ন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত নারী গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে ১ম ও ২য় ট্রাইমেস্টারে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তা মারাত্মক রুপ নিতে পারে। এক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

৪) সাধারণ নারীদের তুলনায় গর্ভবতী নারীদের কোভিড আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশংকা অনেক বেশী।

৫) করোনা আক্রান্ত ব্রেস্টফিডিং মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করবেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

কোভিড পজিটিভ মা ব্রেস্টফিডিং করাচ্ছেন

গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ টিকার সুফল

  • কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করলে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ও এর ফলে সৃষ্ট জটিলতার ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম।
  • গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ টিকা গ্রহন করলে কোভিড-১৯ এর গর্ভজনিত ঝুঁকি সমূহের সম্ভাবনা কম।
  • ভাক্সিনপ্রাপ্ত মহিলাদের ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চার শরীরেও উল্লেখযোগ্য অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। যেটা খুবই ইতিবাচক দিক।

গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ টিকার ক্ষতিকর প্রভাব

  • গর্ভবতী নারীদের কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের লাভ-ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য অপ্রতুল।
  • অন্য যেকোনো টিকার মত কোভিড-১৯ টিকার ক্ষেত্রেও টিকা পরবর্তী বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা এইএফআই হতে পারে যা অন্য নারীদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।
  • দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই।

তবে আমাদের বর্তমান উচ্চ সংক্রমণের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই সময়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সি প্ল্যান না করতে পরামর্শ দেওয়ায় হচ্ছে। আর ভ্যাক্সিনের ডোজ কমপ্লিট করে নিলে ভালো। কেননা এতে ঝুঁকির পরিমাণ কম থাকে। যতটুকু তথ্য আমরা জানতে পেরেছি, সেটার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্টফিডিং মায়েদের কোভিড ভ্যাক্সিন গ্রহণে কোনো বাঁধা নেই। ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরও সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ভবিষ্যতে আরও রিসার্চ হবে, আমরা আরও ইনফরমেশন জানতে পারবো। আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।

 

ছবি- সাটারস্টক

The post প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্টফিডিং মায়েদের কোভিড ভ্যাক্সিন গ্রহণ কতটুকু নিরাপদ? appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles