মাথার স্ক্যাল্পে ইচিনেস এবং বাজে স্মেল নিয়ে বেশ ভুগছে চাকুরীজীবী নাফিসা। গতকালই সে শ্যাম্পু করলো! অথচ, আজই আবার মাথার স্ক্যাল্প চুলকাচ্ছে আর বাজে স্মেলও সে ফিল করছে। আর এই কারনে বেশ অস্বস্তিতে ভোগে নাফিসা। কারন, অফিসে কত লোকের সাথে তার ওঠাবসা, তারা যদি তার থেকে এমন বাজে স্মেল পায়, তখন ব্যাপারটা বেশ বিব্রতকর হবে। স্ক্যাল্পের ইচিনেস ও স্মেল অনেক বিরক্তিকর বটে! নাফিসা চিন্তায় পরে গেলো, কেন এমন হচ্ছে আর এর থেকে পরিত্রানের কী উপায়! কি? নাফিসার সাথে আপনাদের অনেকেরই মিলে গেলো, তাই না? স্ক্যাল্পের ইচিনেস এবং স্মেলের সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগি। এর অবশ্য বিভিন্ন কারন রয়েছে। আজকে আমরা সেই সম্পর্কেই জানবো। আর সাথে জেনে নিবো, স্ক্যাল্পের ইচিনেস ও স্মেল দূর করার কার্যকরী সল্যুশন। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই।
স্ক্যাল্পের ইচিনেস ও স্মেল দূর করার উপায়
প্রথমেই আমরা স্ক্যাল্প স্মেলি হওয়ার কারনগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো। এর পরে মাথার ত্বকের ইচিনেস-এর কারনও জানবো। কারনগুলো জেনে নিলে সেটার সমাধানও অনেক সহজেই করা যাবে। তাই না?
স্ক্যাল্পে স্মেল কেন হয়?
স্ক্যাল্প থেকে ব্যাড স্মেল বের হবার বেশ কিছু কারন রয়েছে। যেমন-
১. চুল ঠিকমতো পরিষ্কার না করা বা চুল ওভারওয়াশ করা।
২. চুলের গোঁড়াতে প্রচুর পরিমানে অয়েল প্রোডাকশন।
৩. হরমোনাল ইমব্যালেন্স।
৪. বিভিন্ন মেডিকেল প্রবলেম, যেমন- psoriasis, contact dermatitis, seborrheic dermatitis, craniofacial hyperhidrosis ইত্যাদি।
৫. এনভায়রনমেন্টাল কন্ডিশন যেমন – পল্যুশন, হাই হিউমিডিটি ইত্যাদি।
৬. ক্যামিকেল বেইজড হেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহার করা।
৭. হেলদি ডায়েট ফলো না করা। ডেইরি প্রোডাক্টস, অ্যালকোহল, পেঁয়াজ ইত্যাদি খাবার অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহন করলে।
৮. এগ-বেইজড হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে।
৯. অত্যাধিক ঘাম।
১০. ফাংগাল ইনফেকশন যেমন – খুশকি, একজিমা ইত্যাদি।
১১. হ্যাট, স্কার্ফ বা হিজাব অনেক লম্বা সময় ধরে ব্যবহারের ফলে।
১২. রেগুলার লাইফের স্ট্রেস ও যত্নের অভাবে।
স্ক্যাল্পের গন্ধ দূর করার উপায়
১. নিয়মিত চুল পরিষ্কার করুন
সপ্তাহে ২-৩ দিন অবশ্যই মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করবেন। আর হ্যাঁ, কোনো কারনে প্রচুর ঘাম হলে বা ওয়ার্কআউট করার পরে চুল পরিষ্কার করে নিতে ভুলবেন না। সেক্ষেত্রে, অল্প পরিমানে শ্যাম্পু নিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে চুল ধুয়ে নিবেন।
২. ক্যামিকেল বেইজড হেয়ার প্রোডাক্টস এড়িয়ে চলুন
অবশ্যই ক্যামিকেল বেইজড প্রোডাক্ট অ্যাভয়েড করবেন। বিশেষ করে যে সকল প্রোডাক্টে alcohol, parabens, formalin, formaldehyde, and silicone রয়েছে। তার বদলে চুলের জন্য আমলকি, নিম, অ্যালোভেরা, লেমন, টি ট্রি ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ হেয়ার প্রোডাক্টস সিলেক্ট করুন।
৩. স্ক্যাল্পে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করবেন না
কন্ডিশনার মূলত চুলের মাঝখান থেকে আগা পর্যন্ত ব্যবহার করা উচিত। মাথার স্ক্যাল্পে কখনোই কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করবেন না। এতে স্ক্যাল্পে প্রোডাক্ট বিল্ড আপ হয়ে স্মেলের সৃষ্টি করতে পারে।
৪. চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন
ভেজা চুল বাঁধবেন না। গোসলের পর একটা সফট টাওয়েলের সাহায্যে চুলগুলো জেন্টলি মুছে বাতাসে শুকিয়ে নিন। কারন ভেজা চুল ফাংগাল গ্রোথকে প্রোমোট করে।
৫. মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এবং ডায়েট
যদি সমস্যা না কমে বা কোনো মেডিকেল প্রবলেমের কারনে আপনার স্ক্যাল্প স্মেলি হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। সবসময় হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করার চেষ্টা করবেন।
৬. হেয়ার এক্সেসরিজ পরিষ্কার রাখুন
ফাংগাল গ্রোথ রোধ করতে অবশ্যই আপনার টাওয়েল, হেয়ার ব্যান্ড, পিলো কেইস, কম্ব, হিজাব, হ্যাট, স্কার্ফ ইত্যাদি পরিষ্কার রাখুন।
স্মেলি স্ক্যাল্প থেকে মুক্তি পেতে কিছু ন্যাচারাল হোম রেমেডি
১. অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
স্মেলি স্ক্যাল্প দূর করতে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল জাদুর মতো কাজ করে। আপনি যেকোনো ধরনের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল যেমন – ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল, টি ট্রি অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এই অয়েলের সুন্দর স্মেলের কারনে আপনার মাথার বাজে স্মেল চলে যাবে। এখানে আমি একটি পদ্ধতি বলে দিচ্ছি-
- এক টেবিল চামচ সুইট আমন্ড অয়েলের সাথে ৪ ড্রপস টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি মাথার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে নিন। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
২. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিস স্ক্যাল্পে স্মেল তৈরী করা ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে।
- দুই কাপ ওয়ার্ম ওয়াটার নিয়ে এর মধ্যে হাফ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিক্স করুন।
- শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নেওয়ার পর এই পানিটা দিয়ে আবার চুল ধুয়ে নিন। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আবার নরমাল পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
৩. লেবুর রস
যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েল, যেমন নারকেল তেল বা বাদাম তেল ২ টামচ নিয়ে এর সাথে ১ চামচ লেবুর রস মেশান। এটি আপনার মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন এবং ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর, সাধারণ পানি ব্যবহার করে এটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।
স্মেলি স্ক্যাল্পের জন্য হেয়ার মাস্ক
এখানে আমি একটি হেয়ার মাস্কের রেসিপি দিচ্ছি, যেটা এই ধরনের স্ক্যাল্পের জন্য বেশ কার্যকরী হবে।
১) একটি পাকা টমেটো নিয়ে ডাইস করে কেটে নিন। এবার ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে পাল্পটুকু ছেঁকে নিন।
২) টমেটোর রসের মধ্যে হাফ চা চামচ দারুচিনির গুড়া, ১ চা চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল যোগ করুন। সবকিছু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
৩) এই হেয়ার মাস্কটি আপনার মাথার স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন এবং ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
মাথার ত্বকে বা তালুতে ইচিনেসের কারন
স্মেলি স্ক্যাল্পের মতোই ইচি স্ক্যাল্পও বেশ বিরক্তিকর। দুইটা জিনিস আবার কিছুটা রিলেটেডও বটে। এতক্ষন তো স্মেলি স্ক্যাল্প নিয়ে অনেক কথা হলো। এবার আসি ইচি স্ক্যাল্পের কারন সম্পর্কে।
১. স্ক্যাল্পে ইচিনেসের মেইন কারন হচ্ছে স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত ময়েশ্চার। বিশেষ করে, যাদের স্ক্যাল্প অয়েলি তারা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। এছাড়া চুল ভালোভাবে না শুকিয়ে বাঁধার ফলে ভেজা চুলের স্যাঁতস্যাঁতেভাব আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। তাই গোসলের পরে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে তারপরে বাঁধবেন। বেশি ব্যস্ততা থাকলে হেয়ার ড্রাইয়ার ব্যবহার করবেন।
২. স্মেলি স্ক্যাল্পের মতই ইচি স্ক্যাল্পের আরেকটি কারন হচ্ছে, চুলের গোঁড়া পরিষ্কার না রাখা। স্ক্যাল্পের ঘাম, ধুলোবালি, অয়েল জমতে জমতে এক পর্যায়ে ইচিনেস শুরু হয়। তাছাড়াও যারা হ্যাট, হিজাব, হেয়ার এক্সটেনশন ব্যবহার করেন, তাদের মাথার ত্বক দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা থাকে। এসময় ঘাম ও অয়েল জমে স্ক্যাল্পে ইচিং হতে পারে।
৩. চুলে অনেকেই তেল দিয়ে রেখে দেন অনেকটা সময় ধরে। এটা করা মোটেও সঠিক নয়। যাদের স্ক্যাল্পে ইচিনেসের প্রবলেম আছে, তারা তেল দেবার পর ২-৩ ঘন্টার মধ্যেই শ্যাম্পু করে নিবেন। নয়তো এতে ইচিনেসের প্রবলেম আরো বেড়ে যেতে পারে।
৪. কখনোই আপনার হেয়ার ক্লিপস, হিজাব, ক্যাপ, টাওয়াল, চিরুনি ইত্যাদি কারো সাথে শেয়ার করবেন না। এতে একজনের ইচি স্ক্যাল্পের প্রবলেম থাকলে অন্যজনেরও হতে পারে।
স্ক্যাল্পের ইচিনেস ও স্মেল দূর করতে রেমেডি
১. ইচি স্ক্যাল্পের জন্য নিমপাতা বেশ ভালো কাজ করে। নিমে রয়েছে অ্যান্টি ফাংগাল ও অ্যান্টি সেপটিক এজেন্টস, যা স্ক্যাল্পের ইচিনেস, ব্যাড স্মেল এবং ড্যানড্রাফ দূর করতে সাহায্য করে। প্রসেসটা দেখে নিন।
- ১৫-২০ টা নিম পাতা এবং ২ টেবিল চামচ কোকোনাট অয়েল নিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে পেস্টের মতো বানিয়ে নিন।
- এটি স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করুন এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
২. মেথি স্ক্যাল্পের ইচিনেস দূর করতে বেশ ভালো কাজ করে। টকদইতে থাকা ল্যাকটিক এসিড মাথার স্ক্যাল্প ক্লিন রাখতে হেল্প করে। কীভাবে প্যাক বানিয়ে নিতে হবে সেটা দেখে নিন!
- একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ মেথি নিয়ে সারারাত অল্প পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানিসহ মেথি বেটে নিন।
- এর মধ্যে ১/৩ কাপ টক দই, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
- প্যাকটি মাথার ত্বকসহ পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ৪০ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু করে নিন।
এইতো জেনে নিলেন, স্ক্যাল্পের ইচিনেস ও স্মেল দূর করার উপায় সম্পর্কে। অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। অনলাইনে প্রোডাক্ট পারচেজ করার সুযোগ তো আছেই, এছাড়া সাজগোজের দুইটা আউটলেট আছে, যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। নিজের যত্ন নিন, ভালো থাকুন।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক
The post স্ক্যাল্পের ইচিনেস ও স্মেল নিয়ে চিন্তিত? জেনে নিন কার্যকরী সল্যুশন! appeared first on Shajgoj.