সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য তেলের উপকারিতা ঠিক কতটা, সেটা আমরা সবাই জানি। সাধারণত আমরা নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টার অয়েল এগুলোর সাথে ভালোভাবেই পরিচিত। কিন্তু অ্যাভোকাডো অয়েল ও অ্যাভোকাডো ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে জানি কি? মজবুত ও লম্বা চুল পেতে অ্যাভোকাডো অয়েলের ম্যাজিকাল সল্যুশন অনেকেরই অজানা! চলুন আজ আমরা জেনে নিবো, হেয়ার কেয়ারে অ্যাভোকাডো অয়েল ঠিক কতটা কার্যকরী আর কোন কোন উপায়ে এই তেলটি আপনি চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। সেই সাথে অ্যাভোকাডো ফ্রুট দিয়ে দারুন কিছু হেয়ার মাস্ক সম্পর্কেও আজ জানবো।
অ্যাভোকাডো অয়েল সম্পর্কে কিছু কথা
অ্যাভোকাডো অয়েল তৈরি করা হয় ফ্রেশ অ্যাভোকাডো ফল দিয়ে কোল্ড প্রেসড পদ্ধতিতে। এই উদ্ভিজ্জ তেলে আছে প্রচুর পরিমাণে মনো ও পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, ফ্যাট সল্যুবল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ডি, ই, পটাসিয়াম এবং লেসিথিন।
এই তেল ব্যবহারের উপকারিতা
অ্যাভোকাডো তেল খুবই হালকা, ব্যবহার করা যায় নানান উপায়ে আর চুলের জন্য খুবই উপকারী। আর মোটেও এর চিটচিটে ভাব নেই। এই তেল চুলে কীভাবে বেনিফিট দেয়, সেটা আগে জেনে নেওয়া যাক!
১. চুলকে মজবুত করে
অ্যাভোকাডো অয়েলে আছে ওলিক এসিড ও মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যেটা চুলের গভীরে গিয়ে চুলকে পুষ্টি যোগায়। হালকা হওয়ার কারণে খুব সহজেই মাথার তালুর ত্বকে মিশে যায়। তাছাড়া এই ফ্যাটি এসিডের আরেকটি গুন হলো, চুলকে মজবুত বানানোর পাশাপাশি এটি চুলের ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ চুলের আগা ফাটা ও ভেঙ্গে যাওয়া ঠেকাতে এই তেল দারুন কার্যকরী।
২. চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে
আমরা চুল নিয়ে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় ভুগি সেটা হলো চুল পড়া। অ্যাভোকাডো অয়েলের একটি বিশেষ গুন হলো এটি চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে ভূমিকা রাখে। কেননা এতে আছে ভিটামিন ই, যেটা স্ক্যাল্পের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়। আর এটি চুলের গোড়া শক্ত করে। ফলে চুল পড়ার পরিমাণ কমে যায়। নতুন হেয়ার ফলিকল মজবুত করতে ভিটামিন ডি এর ভূমিকা অপরিসীম। সুতরাং ভিটামিন ই আর ডি এর উপকারিতা আপনি পাবেন একসাথেই, যদি নিয়মিত অ্যাভোকাডো অয়েল দিয়ে স্ক্যাল্পে সঠিকভাবে ম্যাসাজ করেন!
৩. ড্যানড্রাফ থেকে সুরক্ষা দেয়
চুলের খুশকি বা ড্যানড্রাফ, এমন একটি সমস্যা যেটি চুলের গোড়া দূর্বল করে আর চুল পড়ার হার বাড়িয়ে দেয়। অ্যাভোকাডো অয়েলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর লিনোলেয়িক এসিড শুধু খুশকিই নয়, মাথার ত্বকের অন্যান্য সমস্যা প্রতিহতও করে।
৪. মাথার ত্বকে কোলাজেন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য হেলদি স্ক্যাল্প খুবই জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন স্ক্যাল্পে কোলাজেন বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে অ্যাভোকাডো অয়েল কিন্তু দারুন কাজ করে। এটি স্ক্যাল্পের কোলাজেন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৫. লম্বা চুলের সুরক্ষা নিশ্চিত করে
আমরা অনেকেই চাই খোলা চুলে স্টাইল করতে। কিন্তু বাইরের ধুলাবালি, পল্যুশন আর সূর্যের আলট্রাভায়োলেট- রে এসব থেকে চুলকে রক্ষা করা যেন রীতিমতো যুদ্ধ! কিন্তু আপনি যদি অ্যাভোকাডো অয়েল ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে চুল থাকবে মজবুত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। আপনার ড্যামেজড চুলকেও রিপেয়ার করে। যারা চুল বড় করতে চাইছেন, কিন্তু একটু লম্বা হলেই আগা ফেটে যাচ্ছে বা চুলের আগা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে; তাদের জন্য এই তেলটি কিন্তু মাস্ট হ্যাভ!
৬. চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
যদি আপনি ন্যাচারাল শাইনি চুল পেতে চান, তাহলে অ্যাভোকাডো অয়েলেই পাবেন ম্যাজিকাল সল্যুশন। কারণ এর ফ্যাটি এসিড চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং শাইনি লুক দেয়। আর চুলকে ময়েশ্চারাইজড করে।
মজবুত ও লম্বা চুল পেতে অ্যাভোকাডো ফলের মাস্ক
তেলের গুণগান তো করলাম, এখন আসি অ্যাভোকাডো ফল কীভাবে চুলের যত্নে ব্যবহার করবেন সেই বিষয়ে। উপকারিতা তো অনেক জানা হলো, চলুন এবার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই। হাতের কাছে থাকা সহজলভ্য কিছু উপকরণ দিয়েই আপনি বানাতে পারেন বিভিন্ন হেয়ার মাস্ক। এই ফলটি কিন্তু এখন সুপারশপে পাওয়া যায়। হেয়ার কেয়ার রুটিনে অ্যাভোকাডোর ব্যবহার আপনাকে কম পরিশ্রমে দিবে ঘন, মজবুত ও উজ্জ্বল চুল।
১) মেয়োনিজ, কলা এবং অ্যাভোকাডো হেয়ার মাস্ক
মেয়োনিজে আছে ডিম এবং ভিনেগার, যেটা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আর অ্যাভোকাডোর ভিটামিন ডি নতুন হেয়ার ফলিকল্ তৈরিতে সাহায্য করে। কলা আর মধু চুলের ময়েশ্চার রিস্টোর করতে হেল্প করে।
এজন্য আপনার লাগবে
- ১ কাপ মেয়োনেজ
- ১/২ কাপ পাকা মিডিয়াম সাইজের অ্যাভোকাডো
- মধু ও একটা কলা
ব্যবহার বিধি
- অ্যাভোকাডো ফল থেকে বিঁচি বের করে স্মুথভাবে ম্যাশ করে নিন। তাতে মেয়োনিজ, কলা ও মধু মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিবেন, যাতে কোনো লাম্পস অবশিষ্ট না থাকে।
- চুল এবং স্ক্যাল্পে মিশ্রণটি লাগান। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- ঠান্ডা পানি এবং পছন্দসই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, শেষে কন্ডিশনার লাগান। সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করুন। চুল হবে মজবুত ও কোমল।
২) অ্যাভোকাডো এবং ডিমের মাস্ক
ডিম এমন একটি উপাদান যেটি চুলের বৃদ্ধির জন্য ম্যাজিকের মতো কাজ করে। অ্যাভোকাডোর লেসিথিন চুলের ফলিকলকে দৃঢ়তা প্রদান করে। আর টকদই এই মাস্কে অ্যাড করতে পারেন, কেননা ড্রাই হেয়ারের যত্নে টকদই খুব ভালো কাজ করে। এই উপাদানগুলোর কম্বিনেশন নতুন চুল গজাতে হেল্প করার পাশাপাশি চুলকে করে শাইনি ও ময়েশ্চারাইজড।
যা যা লাগবে
- অর্ধেকটা পাকা অ্যাভোকাডো
- ১টা ডিমের কুসুম
- টকদই
ব্যবহার বিধি
- একটা বোলে ডিমের কুসুম খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন যাতে কিছুটা ঘন হয়। টকদই অ্যাড করুন।
- এখন অন্য একটি বোলে অ্যাভোকাডো ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এখন তাতে ডিমের মিশ্রণ দিয়ে আবার ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- এবার ভেজা চুলে স্ক্যাল্প থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ হেয়ারে লাগিয়ে নিন।
- স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন ৫ মিনিট।
- হালকা কুসুম গরম পানি অথবা ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। পছন্দসই শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। ব্যস, চুলের গ্রোথ বাড়বে, চুল হবে মোলায়েম ও কোমল! ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ১/২দিন ব্যবহার করুন।
৩) অ্যাভোকাডো, কোকোনাট অয়েল এবং অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের মাস্ক
চুলের গ্রোথে আরেকটি উপকারী মাস্ক এটি। যারা চুল লম্বা রাখতে চান, তাদের জন্য এই প্যাকটি দারুন কাজ করবে। কোকোনাট অয়েলের উপকারিতা তো জানাই আছে। সেই সাথে রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল স্ক্যাল্প স্টিমুলেটর হিসাবে কাজ করে। চুল পড়া কমায় আর চুলকে হেলদি রাখে। হেয়ার গ্রোথ বাড়াতে এই তেলের জুড়ি নেই।
উপকরণসমূহ দেখে নিন
- একটি পাকা অ্যাভোকাডো
- দুই টেবিল চামচ কোকোনাট অয়েল
- ৪/৫ ফোঁটা রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
ব্যবহার বিধি
- সবগুলো উপকরণ ব্লেন্ডারে এমনভাবে মিশান যাতে একটি স্মুথ ক্রিমি পেস্ট হয়।
- ব্রাশের বা হাতের সাহায্য পুরা চুলে লাগিয়ে নিন। স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে ভুলবেন না কিন্তু!
- শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। ড্যামেজড চুলে একটু বেশি সময় রাখুন।
- ঠান্ডা পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুলকে বাতাসে শুকিয়ে নিন। চুল এত সফট হবে যে, চুলে বারবার হাত দিতে মন চাইবে।
অ্যাভোকাডো অয়েলের ব্যবহার
হাতের কাছে অ্যাভোকাডো ফল নেই? তাতে কী হয়েছে, অ্যাভোকাডো তেল তো অ্যাভেলেবল! বিভিন্ন DIY হেয়ার মাস্কের সাথে এই তেল ইউজ করা যায়। অ্যাভোকাডোর মাস্ক সম্পর্কে তো জানলাম, এখন জেনে নেই মজবুত ও লম্বা চুল পেতে অ্যাভোকাডো অয়েলের ব্যবহার নিয়ে।
১) অয়েল ম্যাসাজে
চুলের গোড়া শক্ত করার জন্য অয়েল ট্রিটমেন্ট বা তেল মালিশ করা একটি বেস্ট সল্যুশন। আর তাতে যদি অ্যাভোকাডো অয়েল ব্যবহার করা হয়, তাহলে তো কথাই নেই! অ্যাভোকাডো অয়েল carrier oil হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ এটি অ্যাসেনশিয়াল অয়েলের এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুল হয় ঘন ও মজবুত। চুল অনুযায়ী পরিমানমতো অ্যাভোকাডো অয়েল নিয়ে পছন্দের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন। চিটচিটে ভাব না থাকায় এই তেলটি আমার ভীষণ পছন্দের।
২) হেয়ার কন্ডিশনিংয়ে
জেনে অবাক হবেন, এই তেলটি দিয়ে ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক বানিয়ে নেওয়া যায়। চলুন জেনে নেই এর জন্য কী কী লাগবে-
১. দুই টেবিল চামচ অ্যাভোকাডো অয়েল
২. একটি কলা
৩. এক টেবিল চামচ মধু
৪. দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
৫. পরিমাণমতো চায়ের লিকার
ব্যবহার বিধি
প্রথমে উপকরণগুলো মিশিয়ে নিয়ে স্মুথ পেস্ট বানান। সম্পূর্ণ চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে কমপক্ষে ২০ মিনিট রাখুন। আর ভালো ফল পেতে চাইলে মোটামুটি ১ ঘন্টার মত রাখলেই হবে। হালকা কুসুম গরম পানি আর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এতক্ষণে আপনারা জেনে গিয়েছেন, মজবুত ও লম্বা চুল পেতে অ্যাভোকাডো অয়েলের ম্যাজিকাল সল্যুশন সম্পর্কে! কতভাবে এটি আপনার চুলের জন্য বেনিফিসিয়াল, সেটাও জানা হয়ে গেলো। আমরা যখন ডায়েটে পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল অ্যাড করি, তখন তার ফলাফল কিন্তু চুল এবং ত্বকেও কিন্তু লক্ষ্য করা যায়। সেক্ষেত্রে ফলাফল দ্বিগুণ হবে যদি সেটা বাহ্যিকভাবেও আমরা ব্যবহার করি। চুলের যত্নে এই তেলটি এখন আমার হলিগ্রেইল প্রোডাক্ট। আমি হেয়ার প্যাক, অয়েল ম্যাসাজ সবভাবেই অ্যাভোকাডো অয়েল ইউজ করি।
স্কিন ক্যাফে ন্যাচারাল অ্যাভোকাডো অয়েল আমি পেয়েছি সাজগোজে। অথেনটিক প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ
The post মজবুত ও লম্বা চুল পেতে অ্যাভোকাডো অয়েলের ম্যাজিকাল সল্যুশন! appeared first on Shajgoj.