আমাদের মধ্যে অনেকের স্কিনে দু’ একটা একনে দেখা যায়, আবার অনেকের দেখা যায় মুখভর্তি একনে! কখনো ব্রণ হয়নি, এমন ভাগ্যবান মানুষ খুব কমই আছেন। আর এই একনের ট্রিটমেন্ট করতে করতে আমরা কত কি না করি! কিন্তু একসময় ক্লান্ত হয়ে যাই। না জেনে বুঝে মেডিসিন, হোম রেমেডি, ক্রিম, জেল ইত্যাদি কত কি না ইউজ করেছি এই ব্রণ দূর করতে। এক্সপেরিমেন্টের পর এক্সপেরিমেন্ট! তাই না? লাভ কতটুকু হয়েছে?
এবার আসি মেইন কথাতে, রেটিনলের তো নাম কমবেশী আমরা শুনেছি যে, এটা অ্যান্টি এজিং এর ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজ করে। তবে, একনে প্রন স্কিনে রেটিনল এর কার্যকরীতার কথা কি জানা আছে? জ্বি হ্যাঁ! রেটিনল কিন্তু একনে প্রন স্কিনেও খুব ভালো কাজ করে, আপনার স্কিন প্রবলেম দূর করতে অনেকটাই সাহায্য করে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আসলেই এটা কাজের কি না? বা কোনো সাইড এফেক্ট আছে কি না? জ্বি, এই সব প্রশ্নের উত্তরই আজ আমরা জানবো। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে একনে প্রন স্কিনে রেটিনল ব্যবহারের আগে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন সেগুলো জেনে নেই।
আসলেই কি রেটিনল একনে প্রন স্কিনের জন্যে ভালো?
এই প্রশ্নের উত্তর হলো, হ্যাঁ ভালো। রেটিনল হচ্ছে এক ধরনের রেটিনয়েড, ন্যাচারাল ভিটামিন এ ডেরিভেটিভ। রেটিনল এবং রেটিনয়েডকে কেমিক্যালি সেইম জিনিসই বলা যায়। রেটিনয়েড সিস্টিক একনে, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস এর সাথে লড়াই করে। এটি ডেড স্কিন সেলস দূর করা, সেবাম প্রডিউসিং কমানো এবং পোর ক্লগ হওয়া বন্ধ করার মাধ্যমে একনে দূর করে। এছাড়াও এটি একনের দাগ ফেড করতে হেল্প করে। পরোক্ষভাবে এটি আপনার স্কিনকে দারুন বেনিফিট দিতে পারে।
কোন ধরনের রেটিনল একনে প্রন স্কিনের জন্য উপযোগী?
রেটিনয়েড ক্রিম এবং জেল ব্রণ ও স্পট দূর করার জন্য বেশ ইফেক্টিভ। রেটিনয়েড কিন্তু একনে দূর করতে রেটিনলের থেকে বেশ ভালো কাজ করে। যদিও দুটি একই জিনিস। স্কিন বিশেষজ্ঞরাও রেটিনয়েডকেই সাজেস্ট করে থাকেন একনের ক্ষেত্রে। বেশ কয়েক রকম রেটিনয়েড রয়েছে – adapalene, tretinoin এবং tazarotene. যদি আপনার স্কিন সেনসিটিভ হয়, এবং রেটিনলের মত অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট আপনার স্কিনে অ্যাপ্লাই করতে ভয় পান, তবে আপনি adapalene (a prescription-based drug) অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। এটি সেনসিটিভ স্কিনের জন্য উপযোগী।
কীভাবে এবং কখন ব্যবহার করবেন?
আমরা জানি যে, রেটিনল একটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। তাই যখন এটি ব্যবহার শুরু করবেন, তখন স্কিনে একটু ইরিটেশন অনুভব হবে। এটা যদিও তেমন বড় কিছুই নয়। এটা আপনাকে খুব দ্রুত কোনো রেজাল্ট হয়তো দিবে না। তবে স্কিনের নানা রকম সমস্যা দূর করতে অবশ্যই সাহায্য করবে। তাই দ্রুত রেজাল্ট পেতে অনেক বেশী পরিমানে রেটিনল ব্যবহার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে হ্যাঁ, রেটিনল ব্যবহারের আগে আপনার ডার্মাটোলোজিস্টের সাথে কথা বলে নেয়া ভালো। আপনার স্কিন যদি সেনসিটিভ হয়, তবে একটা মাইল্ড ডোজই আপনার জন্য যথেষ্ট। সপ্তাহে ৩-৪ দিন রাতে ঘুমানোর আগে আপনি এটি স্কিনে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রথমে সপ্তাহে ১/২ দিন করে রেটিনল সিরাম ইউজ করা শুরু করুন। রেটিনয়েড রাতে স্কিনে ব্যবহার করা যাবে এবং পি সাইজেরও কম পরিমানে অ্যাপ্লাই করবেন। এতেই আপনি বেনিফিট পাবেন।
একনে প্রন স্কিনে রেটিনল ব্যবহারের আগে যে সব বিষয় মনে রাখবেন
রেটিনল ব্যবহারের আগে কিছু বিষয় মনে রাখা ভালো। স্কিন কেয়ার রেটিনল অ্যাড করার আগে বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ভালোভাবে ফলো করা উচিত। আরও কিছু বিষয় আছে, চলুন সেগুলো জেনে আসি।
১. আগেই বলেছি, রেটিনল একটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। তাই এটি ব্যবহারের পর স্কিন সান এক্সপোজড হলে, সেটা স্কিনকে সেনসিটিভ করে দিতে পারে। তাই দিনের বেলা আপনাকে অবশ্যই এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে।
২. অন্যান্য অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট থেকে স্কিনকে দূরে রাখতে হবে। একই দিনে রেটিনলের সাথে অন্যান্য অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত হলে সেটা স্কিনের ক্ষতি করে দিতে পারে। তাই সেইম ডে স্কিন কেয়ার রুটিনে রেটিনলের সাথে AHAs, BHAs এবং অন্যান্য কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর রাখবেন না।
৩. অনেকেই বলে থাকেন রেটিনল স্কিনকে ড্রাই করে দিচ্ছে। রেটিনল সিরাম অ্যাপ্লাই করলে অবশ্যই একটা ভালোমানের লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। সব থেকে ভালো হয় জেল বা লোশন বেইজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা। এতে করে স্কিনের ড্রাইনেস দূর হবে। একনে প্রন স্কিনের জন্য নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করুন।
৪. লাস্টে যেটা বলবো, সেটা হচ্ছে ধৈর্য ধরে ব্যবহার করতে হবে। এটা কোনো ম্যাজিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট না যে ২-৩ দিনের মধ্যেই একনে দূর করে দিবে, স্পট রিমুভ করে দিবে আর বয়সের ছাপ কমিয়ে ফেলবে। তাই ধৈর্য ধরুন। রেটিনল অবশ্যই আপনার স্কিনের নানা প্রবলেমের সল্যুশন দিবে, তবে রাতারাতি নয়!
সতর্কতা
প্রেগনেন্সিতে স্কিন কেয়ারে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ইউজ না করাই বেটার। এটা সরাসরি প্লাসেন্টা দিয়ে পাস হয়, যা গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আর একনে ট্রিটমেন্টে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বেশিরভাগই এই সময়ে সেইফ না। তাই এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখুন এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এই তো জেনে নিলেন, একনে প্রন স্কিনে রেটিনলের ব্যবহার সম্পর্কে। আশা করছি, এই বিষয়ে একটু হলেও আপনাদের ধারনা দিতে পেরেছি। রেটিনল ব্যবহারের একদম শুরুর জন্যে লাইলাক রেটিনল সিরামটি হতে পারে রাইট চয়েজ। পারসেন্টেজ কম দিয়েই ত্বকের যত্নে এটি অ্যাপ্লাই করা শুরু করতে পারেন। লাইলাক রেটিনল সিরামটিতে ১% রেটিনল থাকায় এই সিরামটি আপনার জন্য বেস্ট অপশন। আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। ভালো থাকুন, নিজের যত্ন নিন।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক, শপইফাই
The post একনে প্রন স্কিনে রেটিনল ব্যবহারের আগে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন? appeared first on Shajgoj.