চুলের যেকোনো সমস্যায় সল্যুশন হিসেবে কোন বিষয়গুলো প্রথমেই মাথায় আসে, বলুন তো? চুলের ধরণ অনুযায়ী ভালোমানের একটি শ্যাম্পু, চুলে স্যুট করে এমন একটি হেয়ার কন্ডিশনার আর ভালো কোন হেয়ার অয়েল। এইতো! কিন্তু যদি, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার সব কিছু ব্যবহারের পরও চুলের রাফনেস দূর না হয় তাহলে করনীয় কী? আপনারও মনে যদি একি প্রশ্ন এসে থাকে তবে একটু খেয়াল করে দেখুনতো, আপনার রেগুলার হেয়ার কেয়ার থেকে বাদ যাচ্ছে না তো হেয়ার মাস্ক? প্রতিদিন স্কিন এবং হেয়ারের বেসিক যত্ন নেয়ার পাশাপাশি সাপ্তাহিক এবং মাসিক কিছু যত্ন নেয়া আবশ্যক। আর চুলের সাপ্তাহিক যত্নে হেয়ার মাস্ক থাকা কতটা জরুরি তা আমরা অনেকেই জানি না। আবার অনেকে জানলেও, বাসায় বসে হেয়ার মাস্ক বানানোর মত সময় করে উঠতে পারি না! অনেকে আবার কোন হেয়ার মাস্কটি ভালো হবে তা বুঝেই উঠতে পারেন না! আবার কেউ কেউ ভাবেন, এত দাম থাক বাবাহ! কি দরকার! আজকের লেখায় তাই আমরা জেনে নিবো চুলের রাফনেস এবং ফ্রিজিনেস দূর করতে হেয়ার মাস্ক এর নানাবিধ কার্যকারিতা নিয়ে।
কী কী কারণে চুলে রাফনেস দেখা দিতে পারে?
প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করা হলে
আমরা অনেকেই ভালো রেজাল্ট পাওয়ার আশায় বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিন শ্যম্পু ব্যবহার করি চুলে। কিন্তু শ্যাম্পুটি যদি চুলের সাথে স্যুট না করে তাহলেই ঝামেলা শুরু হয়। কিছুদিনের মাঝেই দেখা যাবে চুলের রাফনেস অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া এর ফলে আগা ফাটার সমস্যাও শুরু হতে পারে। তাই প্রতিদিন শ্যাম্পু করার প্রয়োজন হলে স্ট্রং শ্যাম্পুর পরিবর্তে মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন।
ভুল হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট সিলেক্ট করা হলে
যেকোনো প্রোডাক্ট সিলেক্ট করার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেটি আপনার প্রবলেম এর সল্যুশন দিতে কাজ করছে কি না। সব প্রোডাক্ট কিন্তু আমাদের সবাইকে স্যুট করে না। কারণ আমাদের প্রত্যেকেরই স্কিন টাইপ, হেয়ার টাইপ এবং কনসার্ন একজন থেকে অন্য জনের আলাদা। তাই ভুলভাল প্রোডাক্ট কিনে অনেক সময় উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হতে দেখা যায়।
বার বার চুল আঁচড়ানো হলে
আমাদের অনেকেরই দিনে বার বার চুল আঁচড়ানোর অভ্যাস রয়েছে। এর ফলে না বুঝেই আমারা চুলের ক্ষতি করি। কারণ বার বার চুলে ঘর্ষণের ফলে অনেক সময় উপকারের চেয়ে বেশি হিতে বিপরীত হতে পারে।
হেয়ার স্ট্রেইটনার বা হেয়ার ড্রাইয়ার রেগুলার ইউজ করা হলে
বিশেষ করে আমরা যারা প্রতিদিন নানা কাজে বাইরে বের হই, তাদের জন্যে স্ট্রেইটনার বা হেয়ার ড্রাইয়ার রেগুলার ইউজ করা ডেইলি রুটিনের মধ্যে পরে যায়। কিন্তু এই হেয়ার স্ট্রেইটনার বা হেয়ার ড্রাইয়ার এর হিট আমাদের চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা শুষে নেয়। যার ফলে আমাদের চুল রাফ হয়ে যায়।
হেয়ার কালারের পর চুলের প্রোপার যত্ন না নেয়া হলে
আমরা অনেকেই নিজেকে আরও সুন্দর দেখাতে আবার অনেকটা শখের বসেই হেয়ার কালার বা হেয়ার হাইলাইট করে থাকি। ঠিক কিছুদিন পরেই দেখা যায় চুলের অবস্থা খারাপ হতে থাকে এবং নিষ্প্রাণ হতে থাকে। চুলে বারবার নানা ধরনের কেমিক্যালের ব্যবহারের ফলে চুলের ড্যামেজ হতে থাকে। তাই চুলের হেয়ার কালার করার সাথে সাথে চুলের যত্ন ইনসিউর করতে হবে।
আবার অনেক সময় স্বাভাবিকভাবেই জেনেটিক্যাল কারণে আমাদের অনেকের চুলে রাফনেস দেখা দিতে পারে।
তাহলে, চুলের রাফনেস দূর করতে সহজ সমাধান কী?
চুলের যেকোনো সমস্যার সমাধানে বেসিক হেয়ার কেয়ার তো মাস্ট। আর চুলের রাফনেস কমাতে হেয়ার মাস্ক বা হেয়ার মাস্ক এর তুলনা নেই। তাই চলুন আগেই চট জলদি জেনে নেই, হেয়ার মাস্ক কেন ব্যবহার করবো?
হেয়ার মাস্ক কী এবং এর উপকারিতা কী?
চুলের যত্নে যেকোনো প্রোডাক্ট বাছাই করার আগে আমাদের ভাবা উচিত এটি আমাদের কীভাবে এবং কতটুকু সাহায্য করতে পারবে। তাই আগেই চলুন জেনে নেয়া যাক, হেয়ার প্যাক বা হেয়ার মাস্ক কী এবং এর উপকারিতা নিয়ে। হেয়ার মাস্ক বলতে আমরা সাধারণত দুই ধরণের হেয়ার মাস্কই বুঝে থাকি। বাসায় তৈরি হেয়ার প্যাক বা হেয়ার মাস্ক এবং বাজারজাত করা হয় বা প্রসেসড হেয়ার প্যাক বা হেয়ার মাস্ক। হেয়ার মাস্ক আমাদের চুলের নানা রকম সমস্যা সমাধানে কাজ করে। যেমন-
(১) পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সরবরাহ করে।
(২) চুলকে কোমল করে এবং শাইনি লুক দেয়। যাদের চুলের টেক্সচারে সমস্যা থাকে সেটা রিপেয়ারে সাহায্য করে।
(৩) প্রতিদিন নানা কারণে চুল ড্যামেজ হয়। যেমন, বাইরের ধুলাবালি ময়লা চুলকে নিষ্প্রাণ করে দেয়। হেয়ার মাস্ক ব্যবহারে এই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়।
(৪) মাথার স্ক্যাল্প এর বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- খুশকি এবং ইচিং জনিত সমস্যার সমাধান করে।
(৫) চুলকে স্মুথ এবং সফট করে তোলে।
ব্যস্ততার কারণে যারা বাসায় বানিয়ে হেয়ার মাস্ক লাগাতে পারেন না, আজকের লেখাটি মূলত তাদের জন্যেই। তাই, আজকে আমরা জেনে নিব, মার্কেটে পাওয়া যায় এমন সেরা কয়েকটি হেয়ার মাস্ক নিয়ে যা আমাদের চুলের রাফনেস এবং ফ্রিজিনেস কমিয়ে এনে চুলকে করবে হেলদি, সফট এবং সিল্কি।
রাফনেস কমিয়ে চুলকে সফট করতে সেরা ৫টি হেয়ার মাস্ক
(১) মামাআর্থ আরগান হেয়ার মাস্ক (Mamaearth argan hair mask with argan, avocadoo oil and milk protein for frizz-free & stronger hair)
মামাআর্থ আরগান হেয়ার মাস্কটি চুলের ফ্রিজিনেস এর সল্যুশন হিসেবে দারুণ কাজ করে। যাদের চুল অনেক রাফ তাদের জন্যে এটি হতে পারে বেষ্ট চয়েজ।
মাস্কটির বেনিফিটস কী কী?
– এটি চুলের ফ্রিজিনেস অনেকটাই কমিয়ে আনে।
– তেল চিটচিটেভাব দুর করে।
– যাদের চুলে আগা ফাটার মত সমস্যা আছে তাদের জন্যে এটি দারুণ হেল্পফুল হবে।
– চুলে কালার করা বা নানা ধরণের স্টাইল করার ফলে যাদের চুল অনেক বেশি ড্যামেজ হয়ে গেছে, তাদের চুল রিপেয়ারে কাজ করবে।
– এতে থাকা রোজমেরি অয়েল মাথার ত্বকের আর্দ্রতা পুনরায় ফিরিয়ে আনে।
– চুলের গ্রোথ বাড়ায়।
– অ্যাভোকাডো অয়েল চুলকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে চুল পড়া কমিয়ে আনে।
(২) রাজকন্যা হেয়ার রিপেয়ার মাস্ক (Rajkonna Hair Repair Mask)
আমাদের একেক জনের চুলের ধরণ বুঝে চুলের সমস্যাগুলোও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিকভাবে বিশেষ কিছু উপাদান রয়েছে যা, যেকোনো ধরণের হেয়ার ড্যামেজ এর সল্যুশন হিসেব দারুণ ভাবে কাজ করে। আর যারা চুলের যত্নে প্রাকৃতিক কিছু খুঁজছেন তারা নিশ্চিন্তে সিলেক্ট করতে পারেন রাজকন্যা হেয়ার রিপেয়ার মাস্কটি।
মাস্কটির বেনিফিটস কী কী?
– আমলা আমাদের হেয়ার ফল কমাতে সাহায্য করে এবং চুলকে করে মজবুত।
– মেহেদী গুঁড়া মাথার ত্বকের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে নারিশ করে।
– নিমপাতা গুঁড়া চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
– রিঠা গুঁড়া চুলের কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করতে রিঠা দারুণ ভাবে কাজ করে।
– এছাড়াও ব্রাহ্মী এবং ভ্রিংরাজ গুড়া চুল পড়া কমিয়ে আনে এবং চুলে একটি শাইনি লুক দেয়।
(৩) গারনিয়ার আল্টিমেট ব্লেন্ডস হেয়ার ফুড বানানা (Garnier Ultimate Blends Hair Food Banana 3-In-1 Dry Hair Mask Treatment)
মাস্কটির বেনিফিটস কী কী?
– এটি আমাদের চুলে একদম ন্যাচারাল সাইনি লুক এনে দিবে।
– চুলকে প্রপারলি নারিশড করবে।
– একি সাথে চুলের রাফনেস এবং চুলের ফ্রিজিনেস কমিয়ে আনবে।
– চুলকে হেলদি, সফট এবং সিল্কি করবে।
(৪) প্যানটিন প্রো-ভি স্মুথ এবং স্লিক মাস্ক (Pantene Pro-V Smooth & Sleek Mask)
এই হেয়ার মাস্কটির সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এটি খুব দ্রুত চুলে কাজ করে। স্পেশালি চুলের ফ্রিজিনেস কমাতে এবং চুলকে স্মুথ করতে কাজ করে।
মাস্কটির বেনিফিটস কী কী?
– চুলের ফ্রিজিনেস কন্ট্রোল করে লম্বা সময় ধরে।
– চটজলদি চুলকে শাইন এবং সফট করতে সাহায্য করে।
– চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
– তেল চিটচিটে ভাব দূর করে।
– নানা রকম স্টাইল করার ফলে চুলের যে ক্ষতি হয় তা থেকে চুল রক্ষা করে।
(৫) ট্রেসেমে কেরাটিন স্মুথ ডিপ সুদিং মাস্ক (Tresemme Keratin Smooth Deep Smoothing Mask)
মাস্কটির বেনিফিটস কী কী?
– এটি চুলকে মসৃণ করতে হেল্প করে।
– পাশাপাশি চুলে ভলিউম এনে দেয়।
– যেকোনো হেয়ার স্টাইলের জন্যে চুলকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দেয়।
– চুলের রাফনেস কমিয়ে আগা ফাটার মত সমস্যার সমাধান দেয়।
– চুলের কোঁকড়ানো ভাব দূর করে।
– চুলের ফ্রিজিনেস দূর করতেও এটি দারুণ সহায়ক।
চুল ভালো তো মন ভালো! কি? আপনিও এই কথার সাথে একমত তো? আমাদের সেলফ কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিতে সুন্দর চুলের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু কোন কিছুই আপনাআপনি হয়ে যায় না। এ বিষয়টি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তাই যারা চুলের যত্নে অবহেলা করছেন, তারা আজকে থেকেই চেষ্টা করুন চুলের বেসিক কেয়ার অন্তত মেইনটেইন করতে আর যেখানে হেয়ার মাস্ক বা হেয়ার প্যাক থাকা মাস্ট।
অলসতায় যারা হেয়ার মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন না, আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্যে হেল্পফুল ছিল। আর অবশ্যই হেয়ার এবং স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি নিয়মিত ঘুম, প্রোপার খাবার দাবার এবং বেশি করে পানি খেতে ভুলবেন না। আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ
The post রাফনেস কমিয়ে চুলকে সফট ও সিল্কি করতে সেরা ৫টি হেয়ার মাস্ক appeared first on Shajgoj.