চুলের আগা ফাটা ও আগা পাতলা হয়ে যাওয়া, এটা মনে হয় সবচেয়ে কমন হেয়ার প্রবলেম! প্রায়ই আমরা সাজগোজের কমেন্ট বক্সে ও ইনবক্সে এই ধরনের প্রশ্ন পায়, কীভাবে আগা ফাটা রোধ করা যায়, কীভাবে সহজে ও ঝটপট হেয়ার কেয়ার করা যায়, আগা ফেটে চুলের অবস্থা খারাপ, দুর্বল হয়ে ভেঙে যাচ্ছে, এর সল্যুশন কী… এমন সমস্যা কি আপনিও ফেইস করছেন? চুলের কেরাটিন প্রোটিন যখন দুর্বল হয়ে যায় বা কমে আসে, তখন চুল ঝরে পরা বা আগা ফাটার মত সমস্যা দেখা দেয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো রেগুলার লাইফে কোন ভুলগুলোর জন্য চুলের আগা ফাটা বেড়ে যায় এবং বিজি লাইফে কীভাবে ইজি ওয়েতে হেয়ার কেয়ার করা যায় সেটা নিয়ে!
রেগুলার লাইফের কোন ভুলগুলো চুলের আগা ফাটার জন্য দায়ী?
লম্বা চুল রাখতে চায় কিন্তু আগা ফেটে চুলের অবস্থা একদম যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে! দামী শ্যাম্পু, ব্র্যান্ডের কন্ডিশনার, তেল মালিশ, প্যাক লাগানো সবই তো করছি, তাহলে চুলের আগা লালচে আর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কেন? এভাবে চুল ফেটে ফেটে থাকলে সেটা দেখতেও কিন্তু ভালো লাগে না, শেষমেশ চুল কেটেই ফেলতে হয়! হ্যাঁ, ফাটা চুল কেটে ফেলা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। পুষ্টির অভাবের পাশাপাশি রেগুলার লাইফের কোন ভুলগুলো চুলের আগা ফাটার জন্য দায়ী, সেটা কি ভেবে দেখেছেন? একনজরে আমরা দেখে আসি সেগুলো।
১) রেগুলার হিট স্টাইলিং
হিট প্রটেকটর স্প্রে ছাড়া চুলে যদি রেগুলার স্ট্রেটনার ইউজ করেন, সেটা চুলের স্বাভাবিক ময়েশ্চার লেভেল বা আর্দ্রতা অনেকটাই হ্যাম্পার করে। আর চুলের আগার অংশে সেবাম কিন্তু কম পৌঁছায়, তাই খুব তাড়াতাড়ি ড্রাই ও ফ্রিজি হয়ে যায়। যারা রেগুলার ড্রাইয়ার দিয়ে চুল শুকান, তাদের কিন্তু চুলের আগা ফাটা সমস্যা বেশি হয়। প্রয়োজনে কিংবা অকেশনালি আপনি হিট স্টাইলিং করুন। কিন্তু ভালোভাবে হিট প্রটেকটর স্প্রে ইউজ করতে হবে, এতে চুলের ক্ষতি কম হয়।
২) অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা এবং কন্ডিশনিং স্কিপ করা
চুল যখন ন্যাচারাল অয়েল হারাতে শুরু করে, তখনই আগা ফাটা, রুক্ষতা এই হেয়ার প্রবলেমগুলো বেড়ে যায়। হার্শ কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু আপনার চুলের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে আপনার অজান্তেই! আর অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা চুলের জন্য ক্ষতিকর। আবার শুধু শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেন কিন্তু কন্ডিশনার ইউজ করলেন না, এতেও চুল রুক্ষ হয়ে যায়। বিশেষ করে চুলের আগা নিষ্প্রাণ দেখায় আর আগা ফাটা শুরু হয়।
৩) তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল পেচিয়ে বাঁধা
এই অভ্যাসটা আমাদের অনেকেরই আছে। মোটা তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল পেচিয়ে রাখলে চুলের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। আর ভেজা চুল তো নরম থাকে, এই অবস্থায় গামছা বা তোয়ালে দিয়ে চুল ঝাড়লে বা মুচরালে সেটা চুল ফেটে যাওয়ার কারন হতে পারে। গেঞ্জি কাপড় দিয়ে চুল চেপে পানি ঝরাতে পারেন, চুলে জোরে ঘষাঘষি করা যাবে না!
সহজেই চুলের যত্ন
চুল হচ্ছে এক প্রকারের প্রোটিন তন্তু যার প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরাটিন। শরীরের সব চাহিদা মিটিয়ে নিউট্রিয়েন্ট এই কোষগুলোতে পৌঁছে। সুন্দর চুল পেতে হেলদি ফুড ইনটেকের সাথে সাথে বেসিক কেয়ার তো করতেই হবে, রাইট? বিজি লাইফে আমাদের চাই চটজলদি সমাধান। চুলের যত্ন নিতে খুব বেশি ঝামেলায় যেতে চায় না কেউ। কিন্তু একটু সময় বের করে সেলফ প্যামপার তো করাই যায়।
১) হেয়ার ট্রিমিং মাস্ট
ফাটা চুল রিপেয়ার করা যায় না! মানে সেটা কেটে ফেলে দিতে হবে। আস্তে আস্তে আগার ফাটা উপরের দিকে উঠতে থাকে। যাদের অলরেডি মাথায় ফাটা চুল আছে, তারা পুরো ফাটা অংশ কেটে ফেলুন। আর চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করুন। ২/৩ মাস পর পর জাস্ট আগা ট্রিম করলে চুল দেখতে হেলদি লাগে। বড় চুলের শখ থাকলেও সামান্য আগা কাটলে সেটা খুব বেশি লস হবে না! আর পাতলা দুর্বল চুলের আগা কিন্তু চুলের সৌন্দর্যটাই মলিন করে দেয়।
২) চুলে তেল দিন
চুলকে মজবুত করতে আর আর্দ্রতা ধরে রাখতে অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। শুধু স্ক্যাল্পে না, চুলেও তেল লাগিয়ে রাখুন। নারকেল তেলের সাথে আমন্ড অয়েল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন ১-২ ঘণ্টা। এরপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল সফট ও স্মুথ থাকবে।
৩) ডিপ কন্ডিশনিং করুন
চুলে যদি কালার করেন বা রিবন্ডিং করে থাকেন, তাহলে সপ্তাহে ১/২ দিন ডিপ কন্ডিশনিং করা প্রয়োজন। যাদের চুল ড্রাই ও ডিহাইড্রেটেড, তাদেরই কিন্তু চুলের আগা ফাটা সমস্যা দেখা দেয়। এখন বাজারে নানা রকম নারিশিং হেয়ার মাস্ক, ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক, হাইড্রেটিং হেয়ার মাস্ক পাওয়া যায়। চুলের ড্রাইনেস, ফ্রিজিনেস, ড্যামেজ কমাতে এই মাস্কগুলো দারুন কাজ করে।
৪) আগা ফাটা রোধে প্রাকৃতিক উপাদানের প্যাক
চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় সপ্তাহে অন্তত ১ দিন প্রাকৃতিক উপাদানের প্যাক অ্যাপ্লাই করুন। ব্রাহ্মী, রিঠা, আমলা, হেনা এগুলো চুলের জন্য খুবই ভালো কাজ করে। রাজকন্যা হেয়ার রিপেয়ার মাস্কে এই উপাদানগুলোর অসাধারণ ব্লেন্ডিং রয়েছে। আগেই বলেছিলাম এই ব্যস্ত জীবনে আমাদের চাই শর্টকাট সল্যুশন। রাজকন্যা হেয়ার রিপেয়ার মাস্ক শুধুমাত্র টকদই দিয়ে মিক্স করে চুলে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। ৩০-৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। ব্যস! চুল থাকবে নারিশড আর আগা ফাটা সমস্যাও অনেকটাই প্রতিরোধ হবে।
৫) অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ম্যাজিকাল সল্যুশন
ত্বকের যত্নে তো অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করছেন, কিন্তু চুলের জন্যেও এটা কতটা ভালো কাজ করে সেটা জানেন কি? চুলের হারিয়ে যাওয়া ময়েশ্চার রিস্টোর করতে এবং চুলের আগা মসৃন করতে অ্যালোভেরা জেল দারুন কার্যকরী। চুলের লেন্থ বুঝে অ্যালোভেরা জেল নিয়ে সেটা সমস্ত চুলে লাগিয়ে রাখুন ঘণ্টাখানিক। এরপর ধুয়ে ফেলুন। চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধে খুব সিম্পল ও ইফেক্টিভ উপায় জেনে নিলেন তাহলে!
ফুড হ্যাবিটের দিকে নজর দিন
চুল যদি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাড় করতে না পারে, তাহলে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে, তখন আগা ফাটা বেড়ে যায়। চুলের আগা ফাটা, চুলের মলিনতা, আগা পাতলা অর্থাৎ হেয়ার প্রবলেম প্রতিরোধে আপনার ফুড হ্যাবিটের দিকে নজর দিন। হেলদি ডায়েট চার্ট ফলো না করলে উপর থেকে আপনি যতই যত্ন করেন, সেটা আপনার প্রবলেমটা পুরোপুরি সল্ভ করবে না! গ্রিন ভেজিটেবল দরকারি আয়রন, বায়োটিন, ভিটামিন-এ, পটাশিয়াম ইত্যাদি খাদ্যউপাদানে ভরপুর। সবজি, ডিম, দুধ, বাদাম এগুলো খেতে হবে। প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিনযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল পেতে অনেকটাই হেল্প করবে।
তো জেনে নিলেন কীভাবে সহজেই চুলের যত্ন নেওয়া যায়। ঝলমলে ও সুন্দর চুল আপনার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ! তাহলে আজ এই পর্যন্তই। আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ, lorealparisusa
The post চুলের আগা ফাটা | ব্যস্ত জীবনে সহজেই কীভাবে চুলের যত্ন নিতে পারি? appeared first on Shajgoj.