গরম ও আর্দ্রতার কারনে স্কিনে আর হেয়ারে বেশ ইফেক্ট পরে। বিশেষ করে এই সিজনে স্ক্যাল্প প্রচুর ঘামে, যার ফলে হেয়ার ফলের সমস্যা শুরু হয়। স্ক্যাল্প ঘেমে যাওয়ার কারনে চুলে ময়লা জমে যায় তাড়াতাড়ি এবং চুলে চিটচিটেভাব দেখা যায়। তাই এই সময়ে চুলের জন্য একটু বাড়তি যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আমাদের চুল কেরাটিন নামক প্রোটিন দিয়ে তৈরি, তাই যখন এই প্রোটিন ঘামের সংস্পর্শে আসে তখন চুল ভঙ্গুর হয়ে উঠে এবং চুল ঝরে পরে। আবার যাদের চুল ও মাথার ত্বক আগের থেকেই অয়েলি, তাদের তো গরমে চুলের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। আচ্ছা কীভাবে এই সিজনে চুলের যত্ন নিবো? কী করলে চুল পড়া কমবে? এই প্রশ্নের উত্তরই থাকছে আজকের আর্টিকেলে।
হেয়ার ফল প্রবলেম ও গরমে চুলের যত্ন
১. আরগান অয়েল ও রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ
গরমকালে চুল পড়ার প্রধান কারন হল চুলের গোঁড়া আলগা হয়ে যাওয়া। তাই এই সময়ে সাপ্তাহিকভাবে (সপ্তাহে ১/২ দিন) অয়েল ম্যাসাজ করা চুল পড়ার সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে আনবে। কেননা অয়েল ম্যাসাজ আমাদের স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, চুল মজবুত করে তোলে, সেই সাথে গোঁড়া শক্ত করে। চুলের যত্ন নিতে নারকেল তেল, ক্যাস্টর অয়েল অনেক ভালো কাজ করে, সেই সাথে হেয়ার কেয়ারে যোগ করতে পারেন আরগান অয়েল ও রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল। আরগান অয়েল ও রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা একসাথে মিশিয়ে নারকেল তেলের সাথেও চুলে লাগানো যায় বা অল্টারনেট করে সপ্তাহে ২ দিন দুই ধরনের তেল ব্যবহার করা যায়।
আরগান অয়েল
আরগান অয়েলের ব্যাপারে হয়তো আমরা অনেকেই প্রোপারলি জানি না। কিন্তু এই অয়েলটি চুলকে হেলদি রাখতে দারুন কার্যকরী। এতে আছে ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা চুল ও মাথার ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক রাখে, ড্রাইনেস কমায় এবং হেয়ার ফল কন্ট্রোল করে। খাঁটি নারকেল তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল মিক্স করে স্ক্যাল্প ও হেয়ারে লাগিয়ে রাখুন। ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল
রোজমেরি আমাদের চুলকে কতটা বেনিফিট দেয়, তা আমরা অনেকেই জানি না। এই এসেনশিয়াল অয়েলে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি প্রোপার্টিজ যা মাথার ব্লাড-সারকুলেশনে হেল্প করে চুলের গ্রোথ বাড়ায় এবং চুলকে করে তোলে শক্তিশালী। যেকোনো তেলের সাথে (নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল) কয়েক ড্রপ রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল মিলিয়ে চুলের গোঁড়ায় ম্যাসাজ করে নিন। ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. নিয়মিত শ্যাম্পু করা
স্ক্যাল্প ঘেমে যাওয়ার কারনে চুলে ময়লা জমে খুব তাড়াতাড়ি, চুলের গোঁড়াও নরম হয়ে যায়। এটা আমাদের চুলকে আরও দুর্বল করে তোলে আর হেয়ার ফল বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই প্রবলেম থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে এবং চুলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনটেইন করতে হবে। হার্শ ক্যামিকেলমুক্ত, মাইল্ড শ্যাম্পু চুলের ক্ষতি না করেই চুলকে পরিষ্কার করে।
৩. চুল আঁচড়ানো
আমরা অনেকেই চুল আঁচড়ানোর সময় পাই না! আর কোন চিরুনিটা চুলের জন্য ভালো হবে সেটাও খেয়াল করি না। দিনে একবার হলেও ভালোভাবে চুল আঁচড়ানো অনেক জরুরী। কারন চুল আঁচড়ালে আমাদের স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বাড়ে, হেয়ার ফলিকলস উদ্দীপিত হয়, আর জট বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কাঠের বা মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন। ডিট্যাঙ্গিলিং ব্রাশও খুব ভালো একটি অপশন।
৪. প্রাকৃতিক মাস্ক দিয়ে চুলের যত্ন নেয়া
হেয়ার ফল প্রবলেম শুরু হলে প্রাকৃতিক মাস্ক দিয়ে চুলের যত্ন নেয়াই ভালো। ঘরে বসে খুব সহজেই আমরা কিছু মাস্ক তৈরি করে ইউজ করতে পারি। গরমে চুলের যত্ন নিতে বেশ ভালো কাজ করবে এই প্যাকগুলো। আর ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্সের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। চুলের পরিচর্যায় ২টি কার্যকরী মাস্ক রেসিপি জেনে নিন এখনই।
রাজকন্যা আমলা পাউডারের মাস্ক
চুলের যত্নে আমলকী পাউডারের কদর বিপুল। কারন আমলায় আছে ভিটামিন সি, আইরন এবং ক্যালসিয়াম যা চুলের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমলা পাউডার টক দই এবং নারকেল তেলে সাথে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। পেস্ট বানিয়ে সেটা সমস্ত মাথায় লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট রেখে দিবেন। তারপর একটি শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে সেটা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এটা ১-২ বার ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো উপকারিতা পাবেন। আমলার এই প্যাকটি চুলের গোঁড়া নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে, আর চুল পড়াও কমে যাবে।
রাজকন্যা হিবিসকাস পাউডারের মাস্ক
হিবিসকাস অর্থাৎ জবা ফুল, আমাদের চুলের যত্নে অনেক উপকারিতা আছে এর। কারন এটা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর যা আমাদের চুলের রুক্ষভাব কমিয়ে আনে এবং হেয়ার গ্রোথ বাড়িয়ে দেয়। তাই হিবিস্কাস পাউডারের তৈরি মাস্ক আমাদের চুলের যত্নে বেশ কার্যকরী। জবা ফুলের গুঁড়োর সাথে ডিমের সাদা অংশ, খাঁটি নারকেল তেল ও কয়েকফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। প্রয়োজনে কিছুটা পানি যোগ করতে পারেন। এই প্যাকটি চুল পড়া কমাতে এবং হেয়ার গ্রোথের জন্য দারুন কার্যকরী। সমস্ত চুলে এই হেয়ার প্যাকটি লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১-২ বার লাগালে উপকার পাবেন। একমাস এই ম্যাজিকাল প্যাকটি ব্যবহার করলে নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন!
গরমকালে চুলের যত্ন নেয়াটা অনেক জরুরী। কেননা এই সময়ে চুলের কোমলতা খুব সহজেই হারিয়ে যায় আর চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। যত্নের সাথে সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হেলদি ডায়েট চার্ট ফলো করা। ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং মিনারেলসযুক্ত খাবার খেতে হবে ডেইলি। অন্যদিকে ডিহাইড্রেশনের কারনেও অনেক সময় চুল ও ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে এবং হাইড্রেটেড থাকতে হবে। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি-সাটারস্টক, সাজগোজ
The post গরমে স্ক্যাল্প ঘেমে বেড়ে যাচ্ছে হেয়ার ফল! এর সল্যুশন কী? appeared first on Shajgoj.