ত্বকের সমস্যা হলে আমরা কারণ খুঁজে বের করি। ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ হোক বা অল্প বয়সের বুড়িয়ে যাওয়া- একটু খেয়াল করে দেখবেন যে সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাবের ফলেই ত্বকে বেশির ভাগ সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। দিনের বেলায় স্কিন কেয়ার রুটিনে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা ইম্পরট্যান্ট একটি স্টেপ। টিনেজ থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক, ছেলে কিংবা মেয়ে, সবারই স্কিন কেয়ারে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বকের প্রোটেকশন হওয়ার সাথে সাথে আমরা চাই স্কিনটা ফ্রেশ থাকুক, ঘেমে না যাক এবং স্কিনে সানস্ক্রিন ভেসে ভেসে না থাকুক। তাই না? আজকে আমি ৫টি সানস্ক্রিন সম্পর্কে জানাবো।
সানস্ক্রিন কী এবং কেন ইউজ করবো?
সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বককে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এই আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে নিজের ত্বককে সুরক্ষা দিতে আমরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন? সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাবে আমাদের ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন দিন দিন কমতে থাকে, ফলে কম বয়সেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। এছাড়া র্যাশ, রেডনেস, স্কিনে ইরিটেশন হওয়া, স্কিন টোনের তারতম্য, মেলাজমা বা মেসতার মত সমস্যাও দেখা দেয়। এর থেকেও বড় সমস্যা হচ্ছে ক্যান্সার। হ্যাঁ, ঠিক পড়ছেন! সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে স্কিন ক্যান্সার হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে প্রতিদিন সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা কতটা জরুরী। সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে সূর্যের তাপ ও ইউ ভি রে থেকে সুরক্ষিত রাখবে। জেল, ক্রিম, পাউডার, লোশন বিভিন্ন ফর্মেই সানস্ক্রিন পাওয়া যায়।
সানস্ক্রিন কেনার আগে জেনে নিন কিছু বিষয়
ইউ ভি রে(UV Ray)- আমাদের স্কিনের ভিতর দুইধরনের রশ্মি পোঁছাই, একটি ইউ ভি এ (UVA), অপরটি ইউ ভি বি (UVB)। ইউ ভি এ ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন কমিয়ে দেয় মানে বয়সের ছাপ দেখা দেয়। আর ইউভি বি রশ্মির ফলে ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়, যাকে আমরা বলি সানবার্ন।
এসপিএফ (SPF)- এসপিএফ মানে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (sun protection factor)। এসপিএফ (SPF) এর উপরেই নির্ভর করে আপনার সানস্ক্রিন সান ড্যামেজ থেকে আপনার স্কিনকে কত সময়ের জন্যে সুরক্ষা দিতে পারবে। এজন্যেই সানস্ক্রিন বাছাই করার সময় অনেকেই বেশি এসপিএফ (SPF) যুক্ত সানস্ক্রিন প্রেফার করে থাকে।
পিএ+++ (PA+++)- সানস্ক্রিনের প্যাকেজিংয়ে পি এ প্লাস (PA+) থেকে পি এ প্লাস প্লাস (PA++) এবং পি এ প্লাস প্লাস প্লাস (PA+++) পর্যন্ত দেখা যায়। যত বেশি প্লাস তত বেশি ইউ ভি এ (UV A) রশ্মি থেকে প্রটেকশন পাওয়া যায়, মানে ডীপ লেয়ারে যেয়ে কাজ করে।
সেরা ৫টি সানস্ক্রিন সম্পর্কে জেনে নিন
স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিন (Skin Cafe Sunscreen SPF 50 PA+++ Lightweight & Non-Greasy)
সানস্ক্রিনের চিটচিটেভাব পছন্দ না? বাজেটের মধ্যে ভালো সানস্ক্রিন চায়? তাহলে স্কিন ক্যাফে সানস্ক্রিন একদম পারফেক্ট একটি চয়েজ।
(১) ইউ ভি এ এবং ইউ ভি বি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ফলে সানবার্ন এবং বয়সের ছাপ পরা প্রতিহত হয়।
(২) এই সানস্ক্রিনে এসপিএফ ৫০ রয়েছে, যা সূর্যের ইউ ভি রে থেকে ৯৮% পর্যন্ত সুরক্ষা করতে পারে।
(৩) সানস্ক্রিনটিতে পিএ+++ রয়েছে, যা স্কিনকে হাই প্রোটেকশন দিয়ে থাকে।
(৪) নন কোমেডোজেনিক হওয়ায় একনে-প্রন স্কিনে ব্যবহারযোগ্য। আর এটি সব টাইপের স্কিনে ইউজ করা যায়।
(৫) খুব লাইট ওয়েট হওয়ায় সানস্ক্রিনটি সহজে স্কিনে মিশে যায়। স্কিনে তেলতেলে ফিল হয় না, ফলে অয়েলি স্কিনেও ইজিলি ব্যবহার করতে পারবেন।
মিশা অল এরাউন্ড সেইফ ব্লক ফিনিস সান মিল্ক (Missha All Around Safe Block Soft Finish Sun Milk SPF50+ Or PA+++)
এই সানস্ক্রিনটি স্কিনকে সান প্রোটেক্টেড করার পাশাপাশি ইন্সট্যান্ট ব্রাইটও করে থাকে। কারণ এতে ফ্রুট আর থানাকা এক্সট্র্যাক্ট রয়েছে। এই সানস্ক্রিনের আরও কিছু বেনিফিটস রয়েছে।
(১) ডাবল লেয়ারে স্কিনকে প্রোটেক্ট করতে এই সানস্ক্রিনটি বেশ কার্যকরী।
(২) অনেক সময় রিঅ্যাপ্লাই করলে স্কিন ভারী হয়ে যায়। লাইট এবং সফট টেক্সচারের হওয়ায় ইজিলি স্কিনের সাথে মিশে গিয়ে স্কিনকে সফট করে রাখে। রিঅ্যাপ্লাই করলেও স্কিন ভারী ফিল হয় না।
(৩) স্কিনের ব্যারিয়ার ঠিক রাখে, সানস্ক্রিনটি রিঅ্যাপ্লাই করার পরও ঘাম হয় না।
(৪) থানাকা এক্সট্র্যাক্ট স্কিনকে লং টার্মের জন্য হাইড্রেশন দিয়ে স্কিনকে রিফ্রেশড রাখে।
(৫) প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী কারণ সানস্ক্রিনটিতে এসপিএফ ৫০+ এবং পিএ+++ রয়েছে।
(৬) এতে গ্লাইকোফ্লিম ১.৫পি রয়েছে, যা প্রিম্যাচিউর এজিং প্রিভেন্ট করতে বেশ ভালো কাজ করে।
নিউট্রোজিনা আল্ট্রা সির ড্রাই- টাচ সান ব্লক (Neutrogena Ultra Sheer Dry-Touch Sunblock SPF50+)
আরেকটি বেস্ট সানস্ক্রিন হচ্ছে নিউট্রোজিনা আল্ট্রা সির ড্রাই-টাচ সান ব্লক এসপিএফ ৫০+। ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করার সাথে সাথে ত্বককে সফট ও স্মুথ করে। বেশ পপুলার এই ব্র্যান্ডটি, অলরেডি অনেকেই হয়তো ইউজ করছেন।
(১) সানস্ক্রিনটির বেস্ট পার্ট হচ্ছে এটি ওয়াটারপ্রুফ বা সোয়াটপ্রুফ, পানি লাগলেও স্কিনকে ৮০ মিনিটের মত সূর্যের রশ্মি থেকে রক্ষা করতে পারে।
(২) এই সানস্ক্রিনটি সব ধরণের ত্বকে ব্যবহারযোগ্য। আর অয়েল ফ্রি হওয়ায় অয়েলি স্কিনেও ব্যবহার করা যাবে। পোরস ক্লগ করে না, ফলে ব্রেকআউটসের টেনশন নেই!
(৩) সেনসিটিভ স্কিনে ব্যবহার করা যায়।
(৪) লাইটওয়েট এবং ক্রিমি ফর্মুলার একটি সানস্ক্রিন, এমন ফর্মুলা অনেকেই প্রেফার করেন।
(৫) ম্যাট ফিনিশিং দেয়, সাদা সাদা হয়ে ভেসে থাকে না। ম্যাট লুকের পাশাপাশি স্কিনকে সফট এবং স্মুথ রাখে।
নিউজিন- সারমেডিক সুপার সিরামাইড ১০০টিএম প্রোটেকশন পারফেক্ট সান স্টিক (NEOGEN – Surmedic Super Ceramide 100TM Protection Perfect Sun Stick)
সান প্রোটেকশন দেয়ার সাথে সাথে এই সানস্ক্রিনের Ceramide উপাদানটি স্কিনের অনেকগুলো প্রবলেমের সল্যুশন দিয়ে থাকে। আরও আছে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, পার্ল ইত্যাদি। অ্যান্টি এজিংয়ের জন্য বেশ ভালো কাজ করে।
(১) Ceramide এক ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিড যা লিপিড যা আমাদের শরীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে, তাই বয়স বাড়লে ত্বক পাতলা হয়ে যায়। এই উপাদানটি স্কিনের উপরিভাগের ব্যারিয়ার শক্তিশালী করে।
(২) এই উপাদানটি চোখের নিচের ভাঁজ, ফাইন লাইন্সও কমিয়ে আনে।
(৩) হায়ালুরোনিক অ্যাসিড স্কিনের ময়েশ্চার লক করে, ফলে ড্রাইনেস কমে।
(৪) সানস্ক্রিনটিতে এসপিএফ ৫০+ পিএ++++ থাকায় স্কিনের ডাবল লেয়ার পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়, তাও দীর্ঘ সময়ের জন্য।
(৫) পার্ল পাউডার ব্যবহার করায় ন্যাচারালি গ্লো করে।
(৬) পাউডারি টেক্সচারের জন্য স্কিন স্মুথ থাকে, চিটচিটে লাগে না।
ফার্ম স্টে গ্রীন টি সিড ময়েশ্চার সান ক্রিম (FARM STAY GREEN TEA SEED MOISTURE SUN CREAM)
যারা মেকআপ বেইজড সানস্ক্রিন খুঁজছেন, তাদের জন্য এই সানস্ক্রিনটি খুব ভালো চয়েজ। এই সানস্ক্রিনটি এসপিএফ ৫০+ পিএ+++ রয়েছে, যার মানে স্কিন বেশ ভালো প্রোটেকশন পেয়ে থাকে।
(১) এই সানস্ক্রিনটি স্কিনকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি লাইট মেকআপের কভারেজ দেয়।
(২) সানস্ক্রিনটি আরোমা রিফ্রেশিং একটি ফিল দেবে, যেটা গরমকালে বেশ ভালো লাগে।
(৩) গ্রিন টি সিড নির্যাস থাকায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রভাইড করবে আপনার ত্বকে।
(৪) ফ্রি রেডিকেলস থেকে স্কিনকে প্রোটেক্ট করে।
(৫) কোন ধরণের ইরিটেশন, রেডনেস বা এই ধরনের প্রবলেম থাকলে অনেকটাই কমিয়ে আনে।
সানস্ক্রিন নিয়ে কিছু প্রশ্ন
(১) সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই কী বাহিরে গেলেই করবো?
বাইরে গেলে তো বটেই, আপনি ঘরে থাকলেও সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে। রান্না ঘরে চুলার সামনে কাজ করতে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন যাতে স্কিনে অ্যাপ্লাই করা থাকে, এতে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে। আর বাহিরে যাওয়ার ১৫ মিনিট আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে।
(২) শুধু ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলে হবে না?
না, শুধু ফেইস ওয়াশ দিয়ে ক্লিন করলে সেটা ফেইস থেকে সব ময়লা বা প্রোডাক্ট ক্লিন করতে পারে না। আর বাহিরে থাকলে বার বার রিঅ্যাপ্লাই করা হয়। সানস্ক্রিন ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে স্কিন থেকে। তাই অয়েল ক্লেঞ্জার দিয়ে প্রথমে স্কিন পরিষ্কার করে তারপর ফেইস ওয়াশ দিয়ে ক্লিন করুন। এতে ত্বক ভালোভাবে ক্লিন হয়।
(৩) কেন রিঅ্যাপ্লাই দরকার?
সানস্ক্রিন যেইটাই হোক না কেন, অ্যাপ্লাই করার পর আসতে আসতে এর কার্যকরীতা হারাতে থাকে। তাই ৩-৪ ঘন্টা পর পর রিঅ্যাপ্লাই করুন।
(৪) কারা ব্যবহার করবে?
টিনেজ থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক সবারই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিৎ। সানস্ক্রিন কিন্তু মহিলা পুরুষ সবার জন্যই ব্যবহার করা দরকার। যারা বাইরে বের হচ্ছেন, বা বাসাতে থাকছেন দিনের বেলায়, এমনকি মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন ইউজ করা মাস্ট!
অথেনটিক সানস্ক্রিন ও স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমার সবসময়ই ভরসা শপ.সাজগোজ.কম। অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে যায়। তাছাড়া সাজগোজের দুইটা আউটলেট আছে, যেটা যমুনা ফিউচার পার্ক আর সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। আপনার প্রয়োজনমতো স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট সবই পেয়ে যাবেন সাজগোজে। তাহলে আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ
The post সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বকের প্রোটেকশনে সেরা ৫টি সানস্ক্রিন appeared first on Shajgoj.