চকচকে ও মসৃণ ত্বক, মানে কাঁচের মতো ঝকঝকে ত্বক! কোরিয়ান সুন্দরীরা তাদের চকচকে, পোরলেস, নিদাগ ত্বকের জন্য বরাবরই প্রশংসা পেয়ে আসছে। নতুন নতুন মেকআপের পদ্ধতি, নানারকম স্কিন কেয়ার স্টেপ এগুলোর মাধ্যমে বিউটি ওয়ার্ল্ডে তারা অলরেডি নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছে। কাঁচের মতোই স্বচ্ছ ত্বকই নাকি কোরিয়ানদের কাছে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি! একদম কাঁচের মতো স্বচ্ছ ত্বক পাওয়া তো আর সত্যিকারের সম্ভব না। আমাদের দেশের আবহাওয়া, লাইফস্টাইল, দূষণ এগুলোর জন্য স্কিনে বেশ ইমপ্যাক্ট পরে। কিন্তু চেষ্টা করলে ইয়াংগার-লুকিং, ফ্ললেস আর ময়েশ্চারাইজড স্কিন পাওয়া কঠিন কিছু না। ফ্ললেস ত্বকের সিক্রেটটা আসলে কী? চলুন কীভাবে ঘরে বসেই চকচকে ও মসৃণ ত্বক পাবেন, সেটা আজ জেনে নিই।
আদৌ সম্ভব কি একদম ঝকঝকে চকচকে ত্বক পাওয়া?
ঝকঝকে আর দাগহীন ত্বক সবারই কাম্য। আপনি হয়তো ভাবছেন কতশত বিউটি টিপস ফলো করে, দামি প্রোডাক্ট ইউজ করে, পার্লারে অজস্র সময় নষ্ট করেও তো পায়নি একদম ঝকঝকে স্কিন! আগেই বলে রাখি, কোনো চটকদার বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হবেন না, কোনও ক্রিমই রাতারাতি আপনাকে ফরসা করে দিতে পারবে না। এটা তো নিশ্চয়ই মানবেন যে ডীপ লেয়ার থেকে স্কিনকে হেলদি আর উজ্জ্বল করে তুলতে সময়, অধ্যবসায় আর সঠিক নিয়মে পরিচর্যার প্রয়োজন। কিন্তু রাতারাতি হওয়া সম্ভব নয়! প্রোপার কেয়ার, পরিমিত ঘুম, হেলদি লাইফ স্টাইল এ সবকিছু মিলিয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত স্কিন পাওয়াটা অসম্ভব কোনো ব্যাপার না।
কীভাবে পেতে পারি সুন্দর, কোমল আর মসৃণ ত্বক?
সুন্দর ত্বকের সিক্রেট হচ্ছে সঠিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট দিয়ে ত্বকের নিয়মিত যত্ন করা। জেনেটিক্যালি হয়তো আপনার স্কিন সুন্দর হতে পারে, তবে সেটা মেনটেইন করতেও পরিচর্যা করতে হবে। মূলত ত্বকের নারিশমেন্ট-এর দিকে নজর দিন। নিয়ম করে একটা নির্দিষ্ট স্কিন কেয়ার রুটিন যদি মেনে চলেন আর একবার যদি আপনি আপনার ত্বকের জন্যে সঠিক জিনিসগুলি বেছে ফেলতে পারেন, তাহলেই আপনার অর্ধেক কাজ খতম। মেকআপ ছাড়াই মুখে চকচকে আভা আনতে স্কিন কেয়ারে এমন প্রোডাক্টগুলি বেছে নিন যেগুলো আপনার ত্বকের যথার্থ বন্ধু হয়ে উঠতে পারে এবং ভেতর করে কাজ করে ত্বককে হাইয়েস্ট বেনিফিট দেয়।
শুরু করুন আজই
স্কিন কেয়ার রুটিনে কোন বিষয় গুলো মেনে চলা উচিৎ সেটা পর্যায়ক্রমে বলে দিচ্ছি, আশা করি এটা আপনাদের জন্য হেল্পফুল হবে।
১) ডাবল ক্লিনজিং প্রসেস ফলো করুন। এই প্রক্রিয়ায় ত্বকের গভীর থেকে ময়লা, দূষণ, ঘাম, অতিরিক্ত অয়েল ও মেকআপ রিমুভ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন ক্লিনজিং অয়েল আর জেল। শুধুমাত্র ফোম ক্লিনজার দিয়ে ত্বকের গভীর থেকে ময়লা রিমুভ হয়না। অয়েল ক্লিনজার ত্বকের অতিরিক্ত সিবাম আর পলুটেন্ট বের করে আনে আর ফোম বা জেল ক্লিনজার ত্বকের উপরিভাগের ময়লা রিমুভ করে স্কিন কে পরিস্কার রাখে। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে ত্বক ক্লিন করবেন।
২) এক্সফোলিয়েট হলো মোলায়েম ত্বক পাবার গোপন রহস্য! ত্বকের ডেড সেল, ব্লাকহেডস না রিমুভ করলে আপনার ত্বক মসৃণ হয়ে উঠবে না আর স্বাভাবিক কোষ পুনর্গঠনও বাঁধা পাবে। নিউট্রিয়েন্ট রিচ ইনগ্রিডিএন্স, ন্যাচারাল এক্সট্রাক্ট আর নারিশিং অয়েল সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট বাছুন। সপ্তাহে ২ বার এক্সফোলিয়েট করাই যথেষ্ট।
৩) একটি রিফ্রেশিং বা হাইড্রেটিং টোনার আপনার ডেইলি স্কিন কেয়ারে যোগ করুন। চাইলে রোজ ওয়াটার স্প্রে করতে পারেন, এতে পোর মিনিমাইজের পাশাপাশি স্কিনে ইনস্ট্যান্ট ফ্রেশনেস আসবে। ক্লেনজিং করার পর কটোন প্যাড বা তুলা দিয়ে টোনার ফেইসে অ্যাপ্লাই করে নিন অথবা হাতের সাহায্যেও লাগিয়ে নিতে পারেন। ত্বকের পি এইচ ব্যালেন্স আর ফার্মনেস ঠিক রাখতে টোনার যথেষ্ট ভুমিকা রাখে।
৪) ২০-২২ বছরের পর থেকে ক্লিনজিং আর টোনিং এর পাশাপাশি সিরাম যোগ করে নিন, কিন্তু অবশ্যই সঠিক নিয়ম জেনে অ্যাপ্লাই করবেন। ফেইস ওয়াশ > টোনার > ফেসিয়াল সিরাম– এই ক্রমটা মেনে চলবেন। বিভিন্ন স্কিন প্রবলেমকে টার্গেট করে সিরামের ভ্যারাইটি আছে যেমন হাইপারপিগমেনটেশন, ফ্রেকলসের জন্য নিয়াসিনামাইড, আরবুটিন, ভিটামিন সি। আবার পিম্পলের সমস্যা থাকলে স্যালিসিলিক এসিড, ডিহাইড্রেটেড স্কিনের জন্য হায়ালুরোনিক এসিড আর অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্য রেটিনল। আপনার বয়স, ত্বকের প্রবলেম, ধরন সবকিছু বুঝে সিরাম সিলেক্ট করুন।
৫) শিট মাস্ক ব্যবহার করুন সপ্তাহে ১ বার। শিট মাস্ক মুলত প্যাকেটজাত ফেসিয়াল মাস্ক যার ব্যবহার নিমিষেই আপনার ত্বককে ডিউয়ি আর গ্লোয়িং এপেয়ারেন্স দেবে। এটা আপনার টায়ার্ড লুকিং স্কিনকে রিফ্রেশ করে তুলবে, ত্বককে স্মুথ আর সফট ফিলিং দেবে, ইনস্ট্যান্ট ময়েশ্চার রিস্টোর করবে। তাই সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ারে এই প্রোডাক্টটি ইনক্লুড করে নিন।
৬) ময়েশ্চারাইজার ইউজ করা মাস্ট, হোক সে মেকআপের আগে বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। ফেসিয়াল অয়েল, ওভার-নাইট মাস্ক, ডীপ নারিশিং ক্রিম এগুলো থেকে আপনার স্কিনের ধরন বুঝে সঠিক পণ্যটি বেছে নিন। আগে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার ত্বকের ধরন ও চাহিদাটা ঠিক কী। ত্বককে মসৃণ করতে ময়েশ্চার লেভেল ঠিক রাখা খুবই প্রয়োজন। তৈলাক্ত ও ড্রাই স্কিনের জন্য আলাদা প্রোডাক্ট, আপনার বয়স, ত্বকের ধরন, বাজেট সবকিছু মিলিয়ে বেস্ট প্রোডাক্ট সিলেক্ট করুন।
৭) নাকের কালো কালো দানা বা ব্ল্যাকহেডস আপনার সুন্দর চকচকে ত্বকের একটি খুত, তাই না? সপ্তাহে ১ দিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় দিন আর পেয়ে যান ব্ল্যাকহেডস থেকে মুক্তি! জাস্ট নাকের এরিয়া পানি দিয়ে ভিজিয়ে নোস পোর স্ট্রিপ লাগিয়ে রাখুন আর ১০ মিনিট পর টান দিয়ে উঠিয়ে ফেলুন। খুব সহজেই ব্ল্যাকহেডস রিমুভ করতে পারবেন নোস পোর স্ট্রিপ দিয়ে।
ব্যস, চকচকে ও মসৃণ ত্বকের সিক্রেট অর্থাৎ বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন জানা হয়ে গেলো। বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন লাগাবেন, সময়মত রেস্ট নিবেন, স্ট্রেস ফ্রি থাকার চেষ্টা করবেন আর সঠিক ডায়েট চার্ট মেনে চলবেন। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত পরিচর্যায় ত্বক হয়ে উঠবে তারুণ্যোজ্জ্বল। আপনি অনলাইনে আপনার জন্য অথেকটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। তাছাড়া, সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপে নিজে গিয়েও কিনতে পারেন, যা যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত।
ছবি- সাজগোজ
The post চকচকে ও মসৃণ ত্বকের সিক্রেট জানা আছে কি? appeared first on Shajgoj.