প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে শামুক। আর বর্তমানে শামুকের ব্যবহার পেয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে স্নেইল ফেসিয়াল বা স্পা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুখের ত্বকের ওপর কিছু সময়ের জন্য জীবন্ত শামুক ছেড়ে এ ফেসিয়ালটি করা হয়। আর শামুক থেকে বের হওয়া স্নেইল এক্সট্রাক্ট, অর্থাৎ বিশেষ আঠালো পদার্থটি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দারুণ কাজ করে। স্নেইল এক্সট্রাক্ট বা মিউসিনে রয়েছে প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও হায়ালুরনিক অ্যাসিডের মিশ্রণ, যা ত্বককে করে সুন্দর এবং সতেজ। আর এই উপাদানগুলো ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায়, সানট্যান কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে করে সুন্দর।
এখন অনেকেই ভাবছেন, শামুকের এত গুণ কিন্তু যারা এই ফেসিয়াল বা স্পা নিতে ভয় পান তারা কী করবেন? তাদের জন্য বাজারে আছে শামুকের এক্সট্রাক্ট বা মিউসিন সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট। ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, এসেন্স, টোনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিটমাস্কে শামুক ব্যবহার হয়ে আসছে। আর আজকে আমরা জানবো, ত্বকের জন্য উপকারী এই স্নেইল এক্সট্রাক্ট বা মিউসিন নিয়ে।
শামুকের মিউসিন কী?
শামুক থেকে নির্গত জেলকে বলে স্নেইল এক্সট্রাক্ট বা মিউসিন। অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্টেস সমৃদ্ধ একটি উপাদান হচ্ছে এই স্নেইল এক্সট্রাক্ট বা মিউসিন। স্নেইল মিউসিনে আছে গ্লাইকোপ্রোটিন, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এবং গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতো আরও অনেক উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলো আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। আর সব সব ধরনের ত্বকেই শামুকের মিউসিন ব্যবহার করা যায়। এমনকি সেন্সেটিভ ত্বকেও কোনো সমস্যা ছাড়াই এই উপাদানটি ব্যবহার করা যায়।
কী কী ফর্মে পাওয়া যায়?
স্নেইল এক্সট্রাক্ট ব্যবহার করে এমন বিভিন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট বর্তমানে পাওয়া যায়। যেমন- মশ্চারাইজার, সিরাম, মাস্ক কিংবা ক্লিনজার। এছাড়া স্মুথিং জেল এবং আই ক্রিমও পাওয়া যায়। অনেক ক্রিমেই শামুকের মিউকিনের সাথে পেপটাইডের মতো উপাদান ব্যবহার করতে দেখা যায়।
স্নেইল এক্সট্রাক্ট বা মিউসিনের কার্যকারিতা
১। টিস্যু রিপেয়ারিং
ত্বকে যদি একনে কিংবা একজিমা থাকে তাহলে শামুকের মিউসিন ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন এর ব্যবহারে এটি ত্বকের টিস্যুকে রিপেয়ার করে থাকবে। মিউকিন ত্বকের টিস্যুগুলোকে পুনরায় জেনারেট করতে সাহায্য করে। আর এই রিপেয়ারিং এর মাধ্যমে ত্বকে ব্রণের দাগ, সানট্যান সহ বিভিন্ন সমস্যা কমে আসে।
২। অ্যান্টি এজিং এর জন্য উপকারী
বয়স বাড়ার সাথে আমাদের শরীরে কোলাজেন প্রোটিন কমতে থাকে। যার ফলে চোখের নিচে ভাঁজ বা রিংকেল, ফেইসে বলিরেখা পড়তে থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত স্ট্রেস নেয়ার ফলে, সারাদিন বাহিরে থাকার ফলে ধুলাবালি বা ক্ষতিকারক পদার্থ লেগে ত্বক আস্তে আস্তে ড্যামেজ হতে থাকে। এর জন্যই অনেকের কম বয়সেই ফাইন লাইনস ভেসে উঠে। শামুকের মিউসিন ব্যবহারে অ্যান্টি-এজিং এর বেনিফিট পাওয়া যায়। চোখের নিচে ভাঁজ, ফেইসে বলিরেখা কমিয়ে আনতে স্নেইল মিউসিন খুবই কার্যকরী।
৩। স্ট্রেচ মার্কস কমিয়ে আনে
আমাদের ত্বকের বিভিন্ন অংশে স্ট্রেচ মার্কস থাকে। শামুকের এই মিউসিন স্ট্রেচ মার্কসগুলো দূর করতে খুব উপকারী।
৪। ইলাস্টিন ধরে রাখে
ত্বকের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ইলাস্টিন। আমাদের চোখের নিচের ভাঁজ আর ত্বকের বলিরেখা পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ত্বকে ইলাস্টিসিটি কমে যাওয়া। শামুকের মিউকিন ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে। ত্বককে বার্ধক্যের ছাপ থেকে দূরে রাখতে শামুকের মিউসিন খুবই ভালো কাজ করে।
৫। ত্বকে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড সরবরাহ করে
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড অ্যান্টি-এজিং এর জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের আরও বেশ কয়েকটি কার্যকারিতা রয়েছে। এটি ত্বকের ডেড সেল ক্লিন করে, ত্বকের টেকশ্চার মসৃণ করে, এটি হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের উৎপাদনে সাহায্য করে, ত্বকে আর্দ্রতা সরবরাহ করে এবং ত্বককে ব্রাইট করে। সুতরাং ত্বকের পরিচর্যায় এই উপাদানটি খুবই উপকারী।
৬। ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করতে
ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে বা ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে স্নেইল এক্সট্রাক্ট বা মিউসিনযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন। শামুক মিউসিনে ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের গভীরে যেয়ে স্কিনের ময়েশ্চারকে লক করে। আর একই সাথে ত্বককে করে সফট এবং স্মুথ।
৭। ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে
শামুক মিউসিন ত্বকের সেল রিপেয়ার করতে সাহায্য করে। আর ত্বকের সেল ক্লিন হলে ত্বক উজ্জ্বল হতে থাকে। তাই ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করতে স্নেইল এক্সট্রাক্ট ব্যবহার হয়ে থাকে। আর এই মিউসিন ত্বকের টোন ইভেন করে সকল ধরণের পিগমেন্টেশন দূর করতেও সাহায্য করে।
৮। ত্বকের ব্যারিয়ারকে প্রটেক্ট করে
আমাদের ত্বক বিভিন্ন কারণে দিন দিন ড্যামেজ হতে থাকে। পলিউশন, সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি প্রভাব কিংবা আবহাওয়ার প্রভাবে ত্বকের ব্যারিয়ার নষ্ট হতে থাকে। শামুকের মিউসিনে হিলিং প্রপারটিজ রয়েছে, যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি ত্বক হিল হয়ে যায়। আর সাথে ত্বকের ব্যারিয়ার হয় প্রটেক্টড।
৯। ভিটামিন এবং পানি সরবরাহ
শামুক মিউসিন প্রচুর পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি উপাদান, এতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি জিঙ্ক এবং হিলিং ম্যাঙ্গানিজ। এতে আছে কপার পেপটাইড, ভিটামিন এ এবং ই। এই সবগুলো উপাদানই ত্বকের যত্নে খুবই প্রশংসিত ।
এই ছিল ত্বকের যত্নে স্নেইল এক্সট্রাক্ট বা মিউসিনের কার্যকারিতার বিস্তারিত। এখন আরও কিছু নিয়ে বিস্তারিত বলা যাক।
অন্য কোনো উপাদান বা অ্যাসিডের সাথে কি মিক্স করা যায়?
রেটিনল, ভিটামিন সি, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, AHA, BHA এবং অন্যান্য অ্যাসিডের সাথেও স্নেইল মিউসিন ব্যবহার করা যায়। স্নেইল এক্সট্রাক্ট ব্যবহারে উপাদানগুলোর কার্যকারিতা বহুগুণে বেড়ে যায়।
সতর্কতা
আমাদের সবার ত্বক ভিন্ন। আর এই ভিন্নতার কারণেই সবার ত্বকে সব উপাদান স্যুট করেনা বা অনেক উপাদানে অ্যালার্জি থাকে। তাই প্রোডাক্ট ব্যবহার করার আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিবেন। গালের এক সাইডে অল্প প্রোডাক্ট লাগিয়ে দেখে নিতে হবে কোনো ইরিটেশন হচ্ছে কি না।
আমাদের দেশে স্নেইল ফেসিয়াল বা স্পা প্রচলন এতটা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু স্নেইল মিউসিনের বেনিফিট থেকে তাই বলে আর নিজেকে বঞ্চিত রাখতে হবে না। স্নেইল মিউসিন কেন ব্যবহার করবেন, কোন উপাদানের সাথে ব্যবহার করবেন তা তো জানতে পারলেন। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিল।
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন।
The post স্নেইল এক্সট্রাক্ট: ত্বকের যত্নে শামুক যে কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে appeared first on Shajgoj.