শীত আসার আগে থেকেই ত্বকের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। কারণ শীতকালে ত্বকে দেখে দেয় নানান রকম সমস্যা। ঠোঁট ফাটা থেকে শুরু করে, হাত-পা ফাটা আর শুষ্কতা তো আছেই। শীত বাড়তে থাকে, আর পাল্লা দিয়ে কমতে থেকে ত্বকের আর্দ্রতা। এই সময় ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে গ্লিসারিনের কোনো জুড়ি নেই। তবে চলুন আজকে জেনে নেই, আমাদের ত্বকের যত্নে গ্লিসারিন ব্যবহার ও এর উপকারিতা সম্পর্কে।
ত্বকের বিভিন্ন যত্নে গ্লিসারিন ব্যবহার
ঠোঁটের যত্নে
ঠোঁটে ব্যবহারের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই গ্লিসারিন ব্যবহার হয়ে আসছে। ঠোঁট ফাটা দূর করতে রাতে ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে উঠে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া স্ক্রাবিং এর জন্য গ্লিসারিন খুবই কার্যকরী। চিনির দানার সাথে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করলে ঠোঁট ফাটা দূর হবে, সেই সাথে ঠোঁট হবে নরম। অনেক সময় গ্লিসারিনের টেক্সচার একটু ভারী হয়। সেক্ষেত্রে গোলাপজলের সাথে গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
হাত-পায়ের যত্নে
শীতকালে ত্বকের প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্নের। আর গ্লিসারিন দিয়ে করতে পারেন ত্বকের এই এক্সট্রা কেয়ার। হাত-পায়ের যত্নে হালকা কুসুম গরম পানিতে হাফ চামচ গ্লিসারিন দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে হাত-পা নরম থাকবে, সেই সাথে চামড়া ওঠা কিংবা গোড়ালি ফাটার মত সমস্যার সমাধান দিবে গ্লিসারিন।
শীতকালে একটি কমন সমস্যা হচ্ছে গোড়ালি ফেটে যাওয়া। সেক্ষেত্রে ঘুমানোর আগে পা ভালো করে ধুয়ে গোড়ালি পরিষ্কার করে নিন। এরপর গ্লিসারিন লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। একটু লাইট গ্লিসারিন হলে সাথে অলিভ অয়েল সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহার করলে পা ফাটা সমস্যা দূর হবে এবং গোড়ালি হবে মসৃণ।
প্যাক ব্যবহারে
ফেইস প্যাক ব্যবহারে ত্বক স্বভাবতই একটু টানটান করে কিংবা ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। আর শীতে তো কথাই নেই! কিন্তু তাতে কি রূপচর্চা বন্ধ থাকবে শীতে? অবশ্যই না। শীতকালে ত্বকে ফেইসপ্যাক বিশেষ করে ক্লে-মাস্ক ব্যবহারে করতে হলে প্যাকটিতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে দিন। গ্লিসারিনে অতিরিক্ত তেল থাকে না কিন্তু এটি ত্বকে ময়েশ্চার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আর প্যাক ব্যবহারের পরেও ত্বক থাকবে ডিহাইড্রেটেড ও কোমল।
টোনার হিসেবে
গ্লিসারিন কিন্তু টোনার হিসেবেও বেশ কাজ করে। দিনের শুরুতে গ্লিসারিনের সাথে হালকা গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করুন আপনার ফেইসে। যারা সারাদিন বাহিরে থাকেন, তারা চাইলে ব্যাগেও ক্যারি করতে পারেন। এতে সারাদিন জুড়ে বেশ রিফ্রেশিং এবং হাইড্রেটেড মনে হবে ত্বককে।
মেকআপের বেইজ হিসেবে
শীতকালে যেহেতু ত্বক একটু ড্রাই হয়ে যায়, তাই মেকআপের আগে দরকার একটি ময়েশ্চারাইজার। তাই মেকআপের আগে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বককে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার মেকআপ খুব সুন্দর করে ত্বকে বসে যাবে।
ক্লিনজার
একনে প্রোন ত্বকে কিংবা নরমাল স্কিনে গ্লিসারিন ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে। গ্লিসারিন যুক্ত ফেসিয়াল ক্লিনজারগুলো ত্বক শুকিয়ে না ফেলে ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আর শীতে যদি আপনার ক্লিনজারটি ব্যবহার করে স্কিন ড্রাই ফিল হয়, তবে আপনার রেগুলার ব্যবহারের ফেসওয়াশের সাথে দুই ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বক আর শুষ্ক হচ্ছে না।
কোন ধরনের ত্বকে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারবেন?
স্কিন ড্রাই হোক কিংবা অয়েলি সব ধরনের ত্বকের জন্যই গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারবেন। অনেকের ভাবতে পারেন, একনে প্রোন স্কিনে কি গ্লিসারিন ব্যবহার করা যাবে? হ্যাঁ, অবশ্যই যাবে। গ্লিসারিনে যেহেতু এক্সট্রা অয়েল নেই, তাই এটি ত্বকে পোরস ক্লগ করেনা। আর এজন্য গ্লিসারিন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই যেকোনো ত্বকেই ব্যবহার করতে পারবেন। সুতরাং সব ধরনের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে গ্লিসারিন দারুণ কাজ করবে।
কখন ব্যবহার করবেন?
গোসলের পর গ্লিসারিন ব্যবহার করা সব থেকে ভালো। এই সময় ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং অনেক বেশি শুষ্কও থাকে। তাই এ সময় গ্লিসারিন ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। আর যেসব স্থান বেশি শুষ্ক হয়, যেমন- হাতের কনুই,পায়ের গোড়ালি, ঠোঁট এইসব স্থানে দিনে কয়েক বার গ্লিসারিন অ্যাপলাই করতে পারেন।
কোন বয়সে ব্যবহার করতে পারবে?
গ্লিসারিন ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই ব্যবহার করতে পারবেন। এতে কোনো রকম আর্টিফিশিয়াল পদার্থ ব্যবহার করা হয়না। তাই সব বয়সের মানুষের জন্য এটি একটি সেইফ অপশন।
আশা করছি, আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন। যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম তো আছেই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
The post ত্বকের যত্নে গ্লিসারিন ব্যবহার এবং এর উপকারিতা appeared first on Shajgoj.