Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

ব্রণের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পান নিমিষেই!

$
0
0

অ্যাকনে বা ব্রণ, র‍্যাশ এগুলো কমন স্কিন প্রবলেম যাতে সব বয়সী ছেলেমেয়েরা কম বেশি ভুগে থাকে। কিন্তু আমরা কি জানি যে বয়স অনুযায়ী স্কিনকেয়ার টেকনিক ও স্টেপস কিন্তু আলাদা হয়ে থাকে? একটা টিনেজ মেয়ের যখন মুখে ব্রণ উঠছে, সেটার কারন ও যত্ন নেয়ার ধরন কিন্তু মধ্যবয়সী নারীর থেকে আলাদা হবে। ব্রণ দূর করতে আমরা কতরকম ক্রিম, মেডিকেটেড ফেইস ওয়াশ, ঘরোয়া ফেইসপ্যাক ব্যবহার করে থাকি। কাউকে হুট করে কোনো ট্রিটমেন্ট বা টোটকা বলার আগে তার এই স্কিন প্রবলেম কেন হচ্ছে, বয়স কেমন, কী কী প্রোডাক্ট দিয়ে ফেইসের যত্ন নেওয়া হয় এই বিষয়গুলো জানা ও বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রণের ভোগান্তি থেকে বাঁচতে আর ব্রণ চিরতরে দূর করতে ইফেক্টিফ কোনো উপায় আছে কি আদৌ? চলুন আজ আমরা সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিবো।

ব্রণ কেন হয়?

আমাদের ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবাম নামের একধরনের তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসৃত হয়, এটা ন্যাচারালি হয়ে থাকে। এই গ্রন্থি নালির মুখ কোনভাবে বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা জমে ফুলে ওঠে, তখন এটাকেই ব্রণ বলা হয়। জীবাণুর সংক্রমণ হলে এটা বেশ বড় হয়ে যায়, ভেতরে পুঁজজাতীয় জিনিস দেখা যায়, এটা থেকে ইচিনেস ও লালচে ভাব হতে পারে। প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামের একধরনের জীবাণু এর জন্য দায়ী হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। সাধারণত মুখের রোমকুপে ময়লা জমে, হজমের সমস্যা থেকে, ভুল স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের রিএকশনে, বংশগতভাবে কিনবা হরমোনাল কারনে ব্রণ হয়ে থাকে। ফেইস ছাড়াও বুকে, পিঠে, উরুতে পিম্পল হতে পারে।

টিনেজে ব্রণ ওঠার কারনগুলো কী

ট্রপিক্যাল অ্যাকনে ও প্রিমেন্সট্রুয়াল অ্যাকনে কিশোর বয়সে বেশি হতে দেখা যায়। ট্রপিক্যাল অ্যাকনে আবহাওয়ার জন্য হয়ে থাকে, দূষণ আর অতিরিক্ত গরমের জন্য অনেকেই এই প্রবলেমটা ফেইস করেন। ১২-১৮ বছর বয়সে অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের হটাত বেড়ে যাওয়া ব্রণের অন্যতম প্রধান কারন, এটা ন্যাচারাল। এই বয়সে স্কিন কেয়ার সম্পর্কে খুব একটা ধারনা থাকে না। ত্বক ঠিকমতো ক্লিন না করলে ধুলোময়লা জমে সহজেই ব্রণ ওঠে।

টিনেজে ব্রণ দূরীকরণে কী করা যেতে পারে? 

১) বয়ঃসন্ধিকালে কোনরকম অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্স যেমন- কজিক এসিড, বেনজোন, নিয়াসিনামাইড ইত্যাদি স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখা যাবে না। এই বয়সে সেরাম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

২) সিম্পল এবং বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করবেন।

৩) অয়েল ক্লেনজার ও ফোম বেসজড জেন্টাল ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ভালোভাবে ক্লিন করতে হবে।

৪) ফেইসে অ্যাকটিভ পিম্পল থাকলে স্ক্রাবিং করা যাবে না।

৫) রোজ ওয়াটার স্প্রে করে নিতে পারেন টোনার হিসাবে। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে স্কিনের ধরন বুঝে। অয়েলি ক্রিম এড়িয়ে চলে লাইট, জেল টাইপের ফর্মুলার ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করলে সেটা পিম্পলপ্রবণ স্কিনের জন্য ভালো।

৬) বাইরে যাওয়ার আগে সান প্রোটেকশন মাস্ট, এস পি এফ ৫০ যুক্ত সানস্ক্রিন ইউজ করা যাবে। বাসায় ফিরে স্কিন ভালোভাবে ডাবল ক্লেনজিং করে নিতে হবে। তা না হলে পোর ক্লগড হয়ে স্কিনে আরও বেশি ব্রণের ভোগান্তি দেখা দেবে। অপরিস্কার স্কিন নিয়ে কিন্তু ঘুমিয়ে পরা যাবে না!

টিনেজে হরমোনাল কারনে ব্রণ হলে সেটা সময়ের সাথে সাথে চলে যাবে, তাই চিন্তার কোনো কারন নেই! প্রচুর পানি পান করবেন, ব্রণ খোঁটাখুঁটি করা একদমই নিষেধ। তেল জাতীয় খাবার একটু এড়িয়ে যাবেন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করবেন, সময়মতো রেস্ট নিবেন। ১২-১৪ বছর পর্যন্ত বেবি প্রোডাক্ট ইউজ করা যেতে পারে।

তরুন বয়সে ব্রণের কারন 

১৮ বছরের পর থেকে স্বাভাবিকভাবে ব্রণের প্রকোপ অনেকটাই কমে যায়, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। অ্যাকনে কসমেটিকা মানে কোনো প্রসাধনী ট্রায়ালের কারনে এই ধরনের পিম্পল দেখা যায়। অ্যাকনে ডিটারজিনেকস মানে সোপজাতীয় জিনিস দিয়ে অতিরিক্ত মুখ ধোঁয়ার ফলে হয়ে থাকে। এই বয়সে মেয়েরা সাধারণত বান্ধবির থেকে শুনে হুটহাট স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনে ইউজ করে ফেলে, সেটা স্যুট না করলে ব্রণ দেখা দিতে পারে। স্ট্রেস, পড়াশুনার প্রেশার, ঠিকমতো ত্বকের যত্ন না নেওয়া, রোদে ঘোরাঘুরি, পানি কম খাওয়া, হজমের সমস্যা, অতিরিক্ত তেলতেলে ত্বক ইত্যাদি কারনে এই বয়সে ব্রণ হতে পারে।

এই বয়সে ব্রণ দূরীকরণের উপায়গুলো কী কী? 

১) স্কিন কেয়ারে স্যালিসাইলিক এসিড ইনক্লুড করতে হবে। স্যালিসাইলিক এসিড হচ্ছে এক ধরণের বেটা হাইড্রক্সি এসিড যেটা স্কিনের ডিপে যেয়ে অতিরিক্ত সেবাম প্রোডাকশন কমিয়ে ফেলে, ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমে আসে।

২) বেসিক স্কিন কেয়ার ঠিক রেখে সেরাম ইউজ করতে পারেন ২০ বছরের পর থেকে। সেরামের মাধ্যমে প্রবলেমটা পিন পয়েন্ট হয়ে খুব দ্রুত সল্ভ হয়ে যায়, দাগ থাকলে সেটাও কমে যায়, সেই সাথে স্কিন এক্সফোলিয়েট হয়। পিম্পল থাকলে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ইউজ করা যায় না, মানে হার্শ স্ক্রাব দিয়ে ঘষাঘষি করা যাবে না!

৩) গ্রিন টি, টি ট্রি অয়েল, অ্যালোভেরা, শসার রস এই উপাদানগুলো পিম্পল কমানোর জন্য দারুন কাজ করে। ব্রণের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার সময় এই উপাদানগুলো আছে কি না সেটা দেখে নিতে পারেন।

৪) ক্লে জাতীয় মাস্কগুলো ব্রণ শুকানো ও দাগ কমাতে সরাসরি ভুমিকা রাখে। সপ্তাহে একদিন মুলতানি মাটি কিনবা হিলিং ক্লে দিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন। ব্রণের উপর টি ট্রি অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন, এতে উপকার পাবেন।

৫) কোনো রকম স্পাইস যেমন লবঙ্গ, রসুন এবং লেবুর রস ব্রণের উপর সরাসরি লাগাবেন না। এতে স্কিন সেল বার্ন হয়ে যেতে পারে।

এই বয়সে এটা ওটা ট্রাই না করে সঠিকভাবে স্কিনের যত্ন নিবেন নিজের স্কিন টাইপ ও সমস্যা বুঝে। বেশি পরিমানে ব্রণ উঠলে বা না সারলে ডাক্তার দেখাতে ভুলবেন না, কেননা হরমোনাল কারনে ব্রণ হচ্ছে কি না সেটাও দেখে নিতে হবে। ঠিকমতো ঘুমাবেন, পানি পান করবেন, ত্বক পরিস্কার রাখবেন, স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন, ব্যস!

প্রেগনেন্সি টাইমে ব্রণ হওয়ার কারন  

গর্ভকালীন সময়ে এন্ড্রোজেন নামক হরমোন বেড়ে যায় যেটা স্কিনের সেবাম প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত তেলের সাথে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, বাইরের ধুলোময়লা জমে স্কিনের পোরস ক্লগড হয়ে যায়। এতে ব্রণের প্রকোপ বেড়ে যায়। প্রেগনেন্সিতে অনেকের হজমের সমস্যা হয়, ঘুম ঠিকমতো হয় না, এসব কারনেও পরোক্ষভাবে পিম্পল হতে পারে।

এই সময়ে করনীয় কী?

১) অনেক অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্স প্লাসেন্টা দিয়ে সরাসরি পাস হয়ে বেবির ক্ষতি করতে পারে। তাই স্কিন কেয়ারের ব্যাপারে এই সময়ে সতর্ক থাকা উচিত। ব্রণ চিকিৎসাতে যেই উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বেশিরভাগই সেইফ না এই সময়ে। তাই জেনে, বুঝে, ডাক্তারের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিবেন।

২) বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে পারেন। মাইল্ড ফেইসওয়াস, মুলতানি মাটির প্যাক, রোজ ওয়াটার, স্কিন অনুযায়ী ভালো ময়েশ্চারাইজার ইউজ করবেন।

৩) সিলিকন ফ্রি, প্যারাবেন ফ্রি, ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্সযুক্ত প্রোডাক্ট ইউজ করতে হবে। ফেইস ক্লিন রাখবেন, বেশি বেশি পানি খাবেন। ইনগ্রেডিয়েন্স লিস্ট দেখে প্রোডাক্ট কিনবেন। প্রেগনেন্সিতে যদি ব্রণের সমস্যা হয়, সেটা বেশিরভাগ সময়ে চলে যায় বেবি ডেলিভারির পর। তাই দুশ্চিন্তার কারন নেই!

মিডিল এজে বা মধ্যবয়স্কদের ব্রণের সমস্যা

হরমোনাল সমস্যা, ওভারিতে সিস্ট, পানি কম খাওয়া, আর্লি মেনোপোজ ইত্যাদি কারনে ৩৫-৪০ এর পরেও ব্রণের প্রকোপ হতে পারে। স্কিন আর হেয়ার অনেকটাই বংশগত। অনেকের দেখা যায় যে সারাবছরই পিম্পল হয়, বয়স হয়ে গেলেও সেটা কমে না। জেনেটিকাল ইস্যু তো এখানে রিলেটেড, কিন্তু তারপরও সঠিক নিয়মে স্কিনের যত্ন নিতে হবে, তাহলে অনেকটাই কন্ট্রোলে থাকবে।

এই বয়সে ব্রণ দূরীকরণে কী করা যেতে পারে?

১) ঠিকঠাক স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলুন, স্কিনের টাইপ অনুযায়ী প্রোডাক্ট বেছে নিন। ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং, সেরাম, সানস্ক্রিন, ক্লে বেইসড মাস্ক এগুলো মাস্ট। স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত স্কিন কেয়ার রেঞ্জ আপনার জন্য বেস্ট হবে।

২) বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন, প্রয়োজনে তিনি হরমোনাল টেস্ট দিতে পারেন। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

৩) ব্রণের জন্য বিশেষভাবে ফরমুলেটেড ক্লেনজার, জেল এগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো ট্রাই করতে পারেন। স্কিন কেয়ারে নতুন প্রোডাক্ট ট্রাই করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নিবেন, এতে ব্রেকআউটের ভয় থাকে না।

এই তো জেনে নিলেন, বয়স অনুযায়ী স্কিন কেয়ার কিভাবে করলে ব্রণের ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ব্রণের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেয়ে ঝকঝকে সুন্দর স্কিন পেতে এইটুকু বেসিক সেলফ কেয়ার তো করা যেতেই পারে, তাই না? রাতারাতি ব্রণ কমানো সম্ভব না, কিন্ত সঠিক নিয়মে ত্বকের যত্ন নিলে খুব তাড়াতাড়ি আপনি এর সুফল পাবেন। নিজেকে ভালোবাসুন, সুন্দর ও সুস্থ থাকুন!

ছবি- সাজগোজ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইমেজেসবাজার

 

The post ব্রণের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পান নিমিষেই! appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles