মালিহার বেষ্ট ফ্রেন্ড প্রিয়ন্তির বিয়ে কদিন পরেই। অনেক আগে থেকেই বান্ধবীর বিয়েতে বেশ সাজুগুজু করে যাওয়ার শখ মালিহার। কিন্তু, ফুল কভারেজ মেকআপ করলেই কিছুক্ষন পর তা তেলতেলে হয়ে যায়, গলে যায় আবার অনেক জায়গায় মেকআপ উঠেও যায় অয়েলি স্কিন হওয়ার কারনে! হুম জানি, অনেক অয়েলি স্কিনের আপুদেরই এই সমস্যাগুলো হয়। এত কষ্ট করে সুন্দর করে সেজেগুজে সেটা যদি লাস্টিং না হলো, তাহলে তখন সেটা দেখতে কিন্তু আরো বাজে লাগে। তাহলে, কি করা যায়?
ফাউন্ডেশন, কনসিলার, পাউডার, ব্লাশ ইত্যাদি লাগানো তো মেকআপের চিরপরিচিত স্টেপস। কিন্তু এই স্টেপ গুলোর মধ্যেই যদি কিছু টিপস এবং ট্রিকস ফলো করা যায়, তবে কিন্তু অয়েলি স্কিনেও ফুল কভারেজ বেইজ মেকআপ ভালো থাকবে এবং গলে যাবে না। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাবো, অয়েলি স্কিনের জন্য ফুল কভারেজ মেকআপ গাইডলাইন সম্পর্কে। তো, চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই।
অয়েলি স্কিনের জন্য স্পেশাল বেইজ মেকআপ টিপস
১. স্কিন কেয়ার :
মেকআপের ক্ষেত্রে স্কিন কেয়ার যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আপনার স্কিন টাইপ যেমন ই হোক, স্কিন কেয়ার কিন্তু মাস্ট। স্কিন কেয়ার টা শুধু মেকআপ করার আগেই না, সবসময় করলেই স্কিন ভালো থাকবে এবং মেকআপ সুন্দর বসবে। ধরুন একটা অমসৃণ সারফেসের উপরে যদি আপনি মেকআপের লেয়ার বসান তবে, সেই মেকআপের লেয়ারটাও কিন্তু অমসৃণ ভাবেই বসবে। তাই স্কিনকে সুন্দর, স্মুদ এবং অয়েল ফ্রি রাখার জন্য স্কিন কেয়ারের জুড়ি নেই।
২. প্রাইমার :
আমরা অনেকেই আছি প্রাইমারটাকে স্কিপ করে যাই। ভাবি, ওটা লাগানো অতটা দরকারি না! আসল কথা হচ্ছে, ওটা লাগানোই সবথেকে দরকারি। প্রাইমার আমাদের স্কিনে একটা স্মুদ সারফেস তৈরী করে, মেকআপ লং লাস্টিং করতে হেল্প করে। যাদের স্কিন অয়েলি, তারা অবশ্যই ম্যাটিফাইং প্রাইমার কিনবেন। এতে করে, স্কিন অয়েল ফ্রি থাকবে এবং মেকআপ গলে বা নষ্ট হয়ে যাবে না।
৩. সঠিক ফর্মুলা বাছাইকরণ :
আপনার স্কিন অয়েলি, কিন্তু আপনি যদি একটা ময়শ্চারাইজিং, ডিউয়ি ফিনিশের ফাউন্ডেশন কিনে ব্যবহার করেন, তাহলে সেটা তো আপনাকে স্যুট করবেই না, উলটা মুখ অনেক বেশী অয়েলি হবে, বেইজ লং লাস্টিং হবে না! তাই নিজের জন্য রাইট ফরমুলার প্রোডাক্ট বাছাই করা খুবই ইম্পরট্যান্ট।
যাদের অয়েলি স্কিন তারা অবশ্যই অয়েলি স্কিনের জন্য তৈরিকৃত বা ম্যাটিফাইং মেকআপ প্রোডাক্ট কিনবেন। ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে লিকুইড ম্যাট বা পাউডার ফাউন্ডেশন, যেটা ফুল কভারেজ দিবে তেমনটাই কিনবেন। যত কম প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন, দেখতে ততটাই ন্যাচারাল লাগবে এবং মেকআপ গলে বা নষ্ট হয়ে যাবে না। তবে যাদের অয়েলি স্কিন, তাদের আমি আরেকটি জিনিস কেনার কথা বলবো। সেটা হচ্ছে, ব্লটিংপেপার। সেটার কথায় আসছি পরবর্তীতে।
৪. ভালো মানের প্রোডাক্ট বাছাই করা :
যেহেতু মেকআপের পেছনে ইনভেস্ট করছেন, সেহেতু আমি বলব একটু ভালো মানের প্রোডাক্ট কিনে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভালো মানের প্রোডাক্ট বলতে আমি হাইএন্ড বা দামী প্রোডাক্টের কথা বলছি না, ড্রাগস্টোরের মধ্যেও অনেক ভালো মানের প্রোডাক্ট রয়েছে। ইন্টারনেট ঘাটলেই সে সম্পর্কে ধারনা পেয়ে যাবেন বা ইউজারদের রিভিউ পড়ে নিতে পারেন। আমার নিজেরও অয়েলি স্কিন। আমি নিজেও একটা সময়ে উলটা পালটা মানহীন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে দেখেছি এবং নিজের ভুলের জন্য নিজেই ভুগেছি। ফুল কভারেজ বেইজ পেতে ভালো মানের মেকআপ প্রোডাক্ট কেনাকে আমি খুবই গুরুত্ব দেই।
৫. অতিরিক্ত পাউডারের ব্যবহার :
অনেকেই মনে করেন, আমার যেহেতু অয়েলি স্কিন সেহেতু একগাদা পাউডার ব্যবহার করলেই আমার স্কিন অয়েল ফ্রি থাকবে, মেকআপ ভালো থাকবে! একগাদা পাউডার ব্যবহারের ফলে মেকআপ দেখতে আর ফ্ললেস লাগে না, বরং পাউডারি এবং কেকি লাগে। তাই যতটুকু পাউডার দরকার, ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করবেন।
ফুল কভারেজ মেকআপ স্টেপস
এবারে চলে যাই, অয়েলি স্কিনের জন্য ফুল কভারেজ মেকআপ স্টেপসগুলোতে। অয়েলি স্কিনের জন্য ফুল কভারেজ মেকআপ নেয়া এবং সেটা সারাদিন ভালো রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কিন্তু কিছু টিপস এবং ট্রিকস ফলো করলে তা সম্ভব। চলুন জেনে নেই সেগুলো…
১. মেকআপের জন্য স্কিনকে প্রিপেয়ার করা
আগেই বলেছি, মেকআপ তখনি সুন্দর হবে এবং ভালো বসবে যখন আপনার স্কিন ভালো হবে। রেগুলার স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি মেকআপ শুরুর আগেও স্কিন কেয়ার করে নিতে হবে।
- প্রথমেই অয়েলি স্কিনের জন্য তৈরী এমন ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ক্লিন করে নিন।
- এরপর স্কিনে এক্সফোলিয়েট করে নিন। এটা খুবই ইম্পরট্যান্ট একটা স্টেপ। এক্সফোলিয়েশনের ফলে স্কিনের ডেড সেলস গুলো চলে যাবে এবং স্কিন স্মুদ হবে। যার ফলে, মেকআপ ভালো বসবে।
- এরপর চাইলে একটা শীটমাস্ক লাগাতে পারেন। তবে এটা অপশনাল। শীট মাস্ক লাগালে তার আগে টোনার লাগিয়ে নিবেন। আর যদি শীট মাস্ক না লাগান, তবে শুধু টোনার লাগালেই হবে।
- ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন সেটা যেন ম্যাটিফাইং হয়।
- দিনের বেলা হলে এরপর সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিবেন। ব্যস!! এটুকু করলেই মেকআপের জন্য আপনার স্কিন রেডি।
২. প্রাইম করা
এরপর ম্যাটিফাইং প্রাইমার লাগিয়ে নিবেন। স্কিনে পোর থাকলে পোর মিনিমাইজিং প্রাইমারও ব্যবহার করে নিতে পারেন। অল্প একটু প্রাইমার হাতে নিয়ে স্কিনে হালকা পুশ করে করে লাগিয়ে নিবেন। আই মেকআপ করলে আইলিডে আগেই কনসিলার না লাগিয়ে অবশ্যই আই প্রাইমার লাগাবেন।
৩. ফাউন্ডেশন
এবারে চলে আসি সবথেকে ইম্পরট্যান্ট স্টেপে। অয়েলি স্কিনে আমরা যেহেতু ফুল কভারেজ মেকআপ করতে চাচ্ছি সেহেতু আমি বলব, আগে একটা কালার কারেক্টর ইউজ করতে। আপনার মুখে যে সকল জায়গায় দাগ বা ডার্ক সার্কেল আছে সেসব জায়গায় কালার কারেক্টর লাগিয়ে নিন। এতে করে দাগ ঢাকার জন্য অতিরিক্ত ফাউন্ডেশনের লেয়ার দিতে হবে না।
এবার যে সকল স্থানে কালার কারেক্টর লাগিয়েছেন, সে সব জায়গায় ডট ডট করে ফাউন্ডেশন অল্প করে এপ্লাই করুন এবং একটি ড্যাম্প বিউটি স্পঞ্জের সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু ফাউন্ডেশন দরকার ঠিক ততটুকু নিয়েই এপ্লাই করুন। সাথে ব্লেন্ড করতে থাকুন। অনেক সময় দেখা যায়, অয়েলি স্কিনে নাকের মেকআপ সবার আগে উঠে যায়। এক্ষেত্রে আমি যেটা করি, নাকে অতিরিক্ত ফাউন্ডেশন বা কনসিলার ব্যবহার করি না। বিউটি স্পঞ্জে বেঁচে যাওয়া ফাউন্ডেশনটুকুই নাকে ব্লেন্ড করে নেই।
৪. কনসিলার :
কনসিলার দিয়ে নরমালি ফেইস হাইলাইট করা হয় আজকাল। তাই না? এর ক্ষেত্রেও ম্যাট বেইজড কনসিলার ইউজ করবেন। কনসিলারও একগাদা ব্যবহার না করে জাস্ট ফেইসের হাই পয়েন্টস গুলোতে অ্যাপ্লাই করুন এবং ব্লেন্ড করে দিন।
৫. পাউডার :
যাদের স্কিন এক্সট্রিম অয়েলি তারা লুজ পাউডারের সাহায্যে ফেইস বেকিং করতে পারেন। একটি ড্রাই বিউটি স্পঞ্জে অনেকখানি লুজ পাউডার নিয়ে চোখের নিচে, কপালে, নাকে, থুঁতনিতে লাগিয়ে নিন। ৩-৪ মিনিট রেখে একটি ব্রাশের সাহায্যে এক্সট্রা পাউডার ঝেড়ে ফেলে দিন। এরপরে কন্টোর পাউডার, ব্লাশ, হাইলাইটার যা-ই লাগান না কেন, সবকিছু পাউডার বেইজড হলেই ভালো হবে।
৬. সেটিং স্প্রে :
বেইজ মেকআপের লাস্ট স্টেপ হচ্ছে সেটিং স্প্রে। সেটিং স্প্রে মেকআপকে লং লাস্টিং করতে, ফেইস থেকে এক্সট্রা পাউডারি ভাব দূর করতে হেল্প করে। এক্ষেত্রেও ম্যাট ফিনিশিং সেটিং স্প্রে ব্যবহার করবেন। বেইজ মেকআপের শেষে অবশ্যই পুরো মুখে সেটিং স্প্রে লাগিয়ে নিবেন।
অয়েলি স্কিনে মেকআপ প্রোটেকশন
বহু কসরত করে, অনেক টিপস ফলো করে মেকআপ তো করলেন। এবার সেটা যেন নষ্ট না হয় সেটার জন্যেও তো কিছু কাজ করতে হবে। তাই না? চলুন জেনে নেই, প্রোটেকশন এর জন্য কী কী করতে পারি –
১. উপরে বলেছিলাম ব্লটিংপেপার কেনার কথা। ব্লটিংপেপার আমাদের ফেইসের এক্সট্রা অয়েল শুষে নেয়। কয়েকঘন্টা পর পর যেখানে যেখানে অয়েলি মনে হবে, সেখানে একটা ব্লটিংপেপার নিয়ে হালকা চেপে নিন, তাহলেই হবে!
২. অনেকেই যে ভুল টা করে, মেকআপ করার কিছুক্ষন পর ফেইস অয়েলি লাগলেই একগাদা ফেইস পাউডার নিয়ে স্কিনে অ্যাপ্লাই করে। এতে করে আরো কেকি হয়ে যায়! এজন্য যেটা করবেন, ব্লটিংপেপার দিয়ে অয়েল দূর করে ফেলার পরে একটি পাউডার ব্রাশের সাহায্যে পাউডার নিয়ে পুরো মুখে অ্যাপ্লাই করে নিবেন। তাহলে টাচ আপ করা হবে, সেই সাথে মেকআপ লং লাস্টিং থাকবে।
এইতো জেনে নিলেন, অয়েলি স্কিনের জন্য ফুল কভারেজ মেকআপ গাইডলাইন সম্পর্কে। আশা করছি, এখন থেকে অয়েলি স্কিনে ফুল কভারেজ মেকআপ করতে আর সমস্যা হবে না। ভালো থাকুন। অথেনটিক মেকআপ প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ, ইমেজেসবাজার
The post অয়েলি স্কিনের জন্য ফুল কভারেজ মেকআপ গাইডলাইন জেনে নিন! appeared first on Shajgoj.