বর্তমান সময়ে মাস্ক ছাড়া বের হওয়ার কথা যেন চিন্তাই করা যায় না! ঘরের বাইরে সর্বক্ষণই আমরা মাস্ক ব্যবহার করছি। আমাদের মধ্যে কম বেশি সবাই এই ব্যাপারটিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও কারো কারো জন্যে কিন্তু এটি খুবই অস্বস্তিকর, বিশেষ করে যাদের ত্বক অয়েলি এবং তুলনামূলক সেনসিটিভ। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় মাস্ক পরার ফলে সত্যিই ত্বকের অনেকরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক যেমনভাবে প্রতিদিন দীর্ঘসময়ের জন্যে একটানা চশমা পরে থাকার জন্য সেই জায়গাটায় ত্বকের রঙে তারতম্য বোঝা যায়, একই সমস্যা হতে পারে একটানা মাস্ক পরলেও!
দীর্ঘ সময় মাস্ক পরার জন্য ত্বকে দেখা দিতে পারে পিমপল, র্যাশ, অ্যালার্জির মতো স্কিন প্রবলেম। এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। কিন্তু জানেন কি? আপনার হাতের কাছেই রয়েছে এর সহজ কিছু সমাধান! আজকে আমরা সে সম্পর্কেই জেনে নিবো।
মাস্কের ব্যবহার কিভাবে ত্বকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে?
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সঠিক নিয়ম অনুযায়ী যারা মাস্ক পরে থাকেন, মাস্ক পরার ফলে আমরা অনেক সময় ঠিক মতো অক্সিজেন নিতে পারছি না। আমাদের কেমন যেন সাফোকেশন এর মতো হতে থাকে। এর কারণ, যেহেতু মাস্ক নাক ও মুখকে ঢেকে রাখে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস আমাদের মুখে সরবরাহ হতে পারে না। যার ফলে খুব সহজেই মুখের ওই নির্দিষ্ট অংশে তাপমাত্রার পরিমাণ বেড়ে যায়, অনবরত মুখ ঘামতে থাকে, ত্বক লালচে হয়ে যায় এবং অনেকের ত্বকে একটা অস্বস্তিকর গরম অনুভূতি হতে থাকে।
এই তাপমাত্রার তারতম্য কিন্তু আমাদের স্কিনের জন্যে একদমই ভালো নয়। এ ধরনের সিচুয়েশন থেকে খুব সহজেই নাক-মুখে দাগ পরাসহ ব্রণও হতে পারে। তৈলাক্ত ও শুষ্ক উভয় ত্বকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে। তবে তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া অ্যাজমা রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ত্বকে মাস্কের ঘর্ষণ ও সেখানে আটকে থাকা ঘাম থেকেই ত্বকের নানা সমস্যা হয়ে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সময় মাস্কের মধ্যে গরম বাতাস আটকে সৃষ্টি হয় ‘ডেমোডেক্স’ নামক ব্যাক্টেরিয়ার, যা থেকে ব্রণের সৃষ্টি হয়।
এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে, নিজের এবং অন্যের সেফটি নিশ্চিত করার জন্যে যেখানে মাস্ক পরা অনিবার্য, তখন ত্বকের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করাই কি একমাত্র উপায়? একদমই কিন্তু এমনটা নয়! কিছু নিয়ম জানা থাকলে মাস্ক পরেই আপনি এধরণের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
দেখে নিন ত্বক ভালো রাখার জন্য টিপসগুলো
১) মুখে ঘাম হলে দ্রুত পরিষ্কার করুন
স্কিনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে যাকে বলে রোমকূপ। এই রোমকূপের মুখে তেল ময়লা জমে গেলে এর ভেতর থেকে স্কিনের ন্যাচারাল তেল যার নাম সেবাম, সেটা বের হতে পারে না। তখন এই সেবাম জমে যায় রোমকূপের ভেতরেই, এতে ইনফেকশন হয় এবং স্কিনের ওই অঞ্চলে লালচে ভাব দেখা যায়। অনেক সময় ব্যথা বা চুলকানিও শুরু হয়। যাদের এমনিতেই খুব সহজেই ব্রণ হয় তাদের এই অংশ ব্রণ হয়ে ভরে যায়, ব্যথাও হয়। তাই বাইরে থেকে ফিরে যত দ্রুত সম্ভব মুখ অয়েলফ্রি ফেইসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে হালকা ময়শ্চারাইজার লাগান।
২) মাস্ক পরার আগে মুখে সানস্ক্রিন মেখে নিন
বাইরে রোদে থাকার ফলে ত্বকে পোড়াভাব দেখা দেওয়ার পাশাপাশি লালচে ভাব, ফুসকুড়ি আর চুলকানিও হতে পারে। সূর্যরশ্মি শরীরের ভিটামিন ডি তৈরিতে করতে সহায়তা করে। তবে বেশি সময় কড়া রোদে থাকা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সানস্ক্রিন ত্বককে রক্ষা করে এবং সান ড্যামেজ থেকে স্কিনকে সুরক্ষিত রাখে। তাই মাস্ক পরার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন মেখে নিতে ভুলবেন না।
৩) মাস্ক খোলার পর যা অবশ্যই করবেন
মাস্ক তৈরিতে যেই উপাদান গুলো ব্যবহার করা হয় তার সঙ্গে ত্বকের বিক্রিয়ার ফলে, ত্বক সহজেই লাল হয়ে যাওয়ার বা র্যা শ বেরোনোর আশঙ্কা থেকেই যায়। বিশেষ করে যাদের ত্বক সেনসিটিভ, তাদের যেন সমস্যার শেষ নেই। তাই বাইরে থেকে এসে যত দ্রুত সম্ভব মাস্ক খুলে ফেলুন। ওয়ান টাইম ব্যবহার করা যায় এমন মাস্ক না হলে, মাস্কটিকে ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি সেটিকে নিয়ম মেনে ধুয়ে ফেলুন। স্কিনে লালচে ভাব থাকলে মুখ ভালো ভাবে পরিষ্কার করে দ্রুত একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার বা সুদিং জেল ব্যবহার করুন। ত্বকের লালচে ভাব দূর করতে অ্যালোভেরা জেল ম্যাজিকের মতো কাজ করে থাকে।
৪) মাস্কের ধরন বদলে ফেলুন
মাস্ক পরলেই মুখে অস্বস্তিকর গরম অনুভূতি হচ্ছে, এই ধারণাটি কিন্তু ভুলও হতে পারে। অনেক সময় মাস্ক নয়, আপনি যেই কাপড় বা মেটারিয়েল দিয়ে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করছেন তা হতে পারে আপনার ত্বকের অস্বস্তির কারণ। হতে পারে কোনও উপাদানে আপনার অ্যালার্জি রয়েছে। তাই মাস্কের ধরণ বদলে দেখুন। মানানসই এবং কমফোর্টেবল কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৫) স্কার্ফ এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন
অনেকক্ষণ একটানা মাস্ক পরে থাকার কারণে স্বভাবতই ত্বকের একেক জায়গায় রঙের তারতম্য বোঝা যায়। কোনোভাবেই যেহেতু মাস্ক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা যাবে না, তাই মাস্ক এর পাশাপাশি বাহিরে বের হওয়ার সময় স্কার্ফ এবং সানগ্লাস ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে ত্বকের অন্যান্য জায়গাগুলোও সান ড্যামেজ থেকে রক্ষা পাবে।
৬) আইস কিউব হতে পারে আপনার বন্ধু
প্রতিদিন অন্ত্যত একবার মুখে আইস কিউব দিয়ে ম্যাসাজ করতে ভুলবেন না! আইস কিউব নিয়ে খালি হাতে মুখের স্কিনে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে টোনার এবং ময়েশ্চারাইজার লাগান। চাইলে শসার রস দিয়েও আইস কিউব বানিয়ে রাখতে পারেন। এতে আপনার স্কিনে ইরিটেশন ও রেডনেস থাকলে সেতা কমে যাবে, স্কিন ফ্রেশ ও ব্রনমুক্ত থাকবে।
[shajgoj_shop columns=2 skus=’10660, 10661′]
এইতো জেনে নিলেন, কিভাবে খুব সহজেই কিছু নিয়ম মেনে চলেই দীর্ঘ সময় মাস্ক ব্যবহার করার পরও আপনার স্কিনকে রক্ষা করতে পারবেন। দিন শেষে আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যেমন জরুরি, তেমনি এই উপায়গুলোতে স্কিন কেয়ার করলে ত্বকের সৌন্দর্যও থাকবে অটুট! সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
ছবি- সাজগোজ, ইমেজেসবাজার
The post দীর্ঘ সময় মাস্ক পরার ফলে ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে না তো? appeared first on Shajgoj.