প্রাচীন আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক উপায়ে সৌন্দর্যচর্চা নিয়ে যাদের ঝোঁক আছে, মুলতানি মাটি তাদের কাছে নতুন কিছু নয়! রূপচর্চায় বহু আগের থেকেই মুলতানি মাটির ব্যবহার হয়ে আসছে। এর বহুবিধ উপকার ও গুনাগুণের জন্য এটি সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। কোমল ও সতেজ ত্বক পাওয়া থেকে শুরু করে মুখের অবাঞ্ছিত কালো দাগ এবং রোদে পোড়া ত্বক ঠিক করতে দারুণ কার্যকরী এই মুলতানি মাটি। কিন্তু ভেজালের এই যুগে বিশুদ্ধ ও অরগানিক মুলতানি মাটি কোথায় পাবো, সেটা নিয়েই ভাবছেন তো? চিন্তা নেই, সেটাও কিন্তু এখন আমাদের হাতের নাগালেই আছে। তার আগে চলুন জেনে নেই, ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটির ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে!
নিরাপদ সৌন্দর্যচর্চায় মুলতানি মাটির ব্যবহার
কোথা থেকে এলো মুলতানি মাটি? একটু ইতিহাস দিয়ে শুরু করা যাক তাহলে। আঠারশো শতাব্দীতে মুলতান শহরে মাটি খুঁড়তে যেয়ে চুনযুক্ত কাদামাটির দলা পাওয়া গেলো। স্থানীয় লোকজন একটু অবাকই হলো কারণ এটা পরিষ্কারক হিসাবে দারুণ কাজ করছিলো। এটি মুখে মাখলে ত্বক পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি গায়ের রং উজ্জ্বল হয়, তেলতেলে ভাব গায়েব হয়ে যায়, এমন অনেক গুণাবলি তারা লক্ষ্য করলো। ব্যস, তখন থেকেই মুলতানি মাটি ব্যবহারের প্রচলন শুরু!
ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটি এর উপকারিতা
কেন ব্যবহার করবো মুলতানি মাটি? কী কী বিশেষ গুণ আছে এর? জানি, এই প্রশ্নটা অনেকের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে! সাধারণত ফেইসপ্যাকে মুলতানি মাটির ব্যবহার বেশি হয়। চলুন একনজরে দেখে নেই ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটি এর উপকারিতাগুলো!
১) অয়েলি স্কিন ভালো রাখার জন্য যতগুলো প্রাকৃতিক উপাদান আছে, তার মধ্যে মুলতানি মাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
২) এটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ ত্বকে জমে থাকা ডেড সেলস, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।
৩) ব্রণের দাগ, সানট্যান, ব্লেমিশসহ যেকোনো কালো দাগ সারিয়ে তুলতে মুলতানি মাটির জুড়ি নেই।
৪) ত্বকের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে এই মুলতানি মাটি। সেই সাথে হেলদি গ্লো নিয়ে আসে এবং ত্বকের রং উজ্জ্বল করে।
কিভাবে ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহার করবো?
স্কিনের টাইপ অনুযায়ী ফেইস প্যাক অ্যাপ্লাই করলে সেটা থেকে আপনি হাইয়েস্ট বেনিফিট পাবেন। ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটির ব্যবহার সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকরী। চলুন তাহলে জেনে নেই কোন ধরনের ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি কিভাবে ব্যবহার করবেন।
ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটি তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে
মুলতানি মাটির সাথে গোলাপ জল ও শসার রস মিশিয়ে ফেইস প্যাক তৈরি করে নিন। এই প্যাকের প্রতিটি উপকরণই অয়েলি স্কিনের জন্য ভালো। ১০ থেকে ১৫ মিনিট মুখে রেখে ধুয়ে ফেলবেন। সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করতে পারেন এই প্যাকটি। হাতের কাছে যদি অ্যালোভেরা জেল, এসেনশিয়াল অয়েল বা গোলাপের পাপড়ি গুঁড়ো থাকে, তাহলে সেগুলোও মিলিয়ে দিতে পারেন। কোনো উপাদানে যদি আপনার এলার্জি থেকে থাকে, তাহলে সেটা বাদ দিতে হবে।
ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটি নরমাল টু ড্রাই স্কিনের যত্নে
দই কিংবা দুধের সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। মধু, বেসন, অ্যালোভেরা জেল এগুলোও প্যাকে যোগ করতে পারেন। সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করুন এই প্যাকটি। এক্সফোলিয়েশনের জন্য আলতো হাতে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনি নিজেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
রাজকন্যা মুলতানি মাটি নিয়ে আমার এক্সপেরিয়েন্স
প্রথমেই বলেছিলাম যে খাঁটি জিনিস খুঁজে পাওয়াটা একটু কঠিনই! সাজগোজ থেকে পেলাম রাজকন্যা মুলতানি মাটি। এটা সম্পূর্ণ অরগানিক ও প্যাকেজিংটাও আকর্ষণীয়। প্রথমবার ব্যবহার করেই বুঝতে পারবেন যে এটা কতোটা পিউর। বাড়তি কোনো রং ও ফ্লেবার মুক্ত, তাই নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়! আমার ত্বক যেহেতু অয়েলি, আমি রোজ ওয়াটার ও অ্যালোভেরা জেলের সাথে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নেই। মুখ ধোয়ার পর স্কিন অনেক বেশি ফ্রেশ ও সফট লেগেছে। তাছাড়া ত্বকের তেলতেলে ভাবটাও কমিয়ে ফেলে এটি। অভারঅল এই প্রোডাক্টটি আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। দামটাও কিন্তু একদম হাতের নাগালে!
তাহলে জেনে নিলেন, ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটির ব্যবহার ও কার্যকারীতা সম্পর্কে! সব ধরনের ত্বকে নিশ্চিন্তে এটি ব্যবহার করা যায়। আমরা যতই আধুনিক হই না কেন, প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহারের উপকারিতাকে কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না!
আপনি চাইলে অনলাইনে অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। তাছাড়া, সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপে নিজে গিয়েও কিনতে পারেন, যা যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত।
ছবি- সাজগোজ
The post ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটির ব্যবহার | সুন্দর ত্বক পান প্রাকৃতিকভাবেই! appeared first on Shajgoj.