ইদানীং আয়নার সামনে গেলে মলিন ত্বক আর বয়সের ছাপ খুব বেশি করে চোখে পরছে! ত্বকের লাবণ্যটা আর আগের মতো নেই। আপনার সাথেও কি এমনটি হচ্ছে? অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ারে হয়তো অনেকরকম প্রোডাক্ট লাগানোও শুরু করেছেন। কিন্তু ভেতর থেকে সুন্দর বা ফিট থাকাটাও ভীষণ জরুরী। এখনকার দিনে ডায়েট, এক্সারসাইজ বা ফিটনেস নিয়ে আমরা অনেকেই সচেতন। ব্যস্ত জীবনে কাজ আর স্বাস্থ্য দুইটাকেই তো ব্যাল্যান্স করতে হবে। জানেন তো, এজিং রোধে সঠিক খাবার বেছে নেওয়াটা সবথেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টি এজিং ডায়েট আপনাকে সতেজ ও তারুণ্যদীপ্ত রাখতে ভেতর থেকে হেল্প করবে। তাহলে চলুন জেনে নেই, অ্যান্টি এজিং ডায়েটে কোন ১০ টি খাবার রাখা উচিত।
অ্যান্টি এজিং ডায়েট সম্পর্কে জেনে নিন
এটা ঠিক যে, সময়ের সাথে সাথে স্কিনে তো বুড়িয়ে যাওয়ার সংকেত আসবেই। এটা অবশ্যম্ভাবী হলেও নিজের বয়স বাড়ার বিষয়টি আমরা কেউই কেন জানি মেনে নিতে চাই না। যে হারে দূষণ আর স্ট্রেস বাড়ছে, তাতে আজকাল অকালেই বুড়িয়ে যাচ্ছি আমরা। তাই এমন খাবার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখা উচিত যেটা বয়স ধরে রাখতে সহায়ক হবে। শুধুমাত্র ত্বক নয়, অ্যান্টি এজিং ডায়েটের মাধ্যমে আপনার চুলের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে, নখ চকচকে হবে, রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে।
অ্যান্টি এজিং ডায়েটে প্রয়োজনীয় ১০টি খাবার
১) ডালিম
ডালিমের রস পেশীকোষের বয়স বেড়ে যাওয়া রোধ করে। ডালিমের বীজ এলাজিক অ্যাসিডের (ellagic acid) খুব ভালো উৎস। এটা ন্যাচারাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে পরিচিত। আর এতেই আপনার ত্বক থাকবে ইয়াংগার লুকিং ও গ্লোয়িং। ভিটামিন সি, ভিটামিন এ সহ আরও অনেক পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় অ্যান্টি এজিং ডায়েটে ডালিম অবশ্যই রাখতে হবে।
২) টমেটো
পাকা টমেটোতে লাইকোপিন নামের একটি উপাদান থাকে। লাইকোপিন এক ধরনের ক্যারোটিনয়েড, আর এটার জন্যই টমেটোর রঙ লাল হয়। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ভিটামিন ই এর চেয়েও বেশী কার্যকর। স্কিন কুঁচকে যাওয়া বা বলিরেখা পড়া দূর করতে পারে টমেটোতে থাকা এই উপকরণটি।
৩) বাদাম
কাঠবাদাম, কাজুবাদাম বা চীনাবাদাম, অ্যান্টি এজিং ডায়েটে সবগুলোই উপকারী। স্বাস্থ্যকর ও প্রয়োজনীয় ফ্যাট, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আমিষের খুব ভালো উৎস হচ্ছে বাদাম। টিস্যুর ক্ষয়পূরণ এবং হরমোনাল ব্যাল্যান্স ঠিক রাখতে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাদাম রাখুন।
৪) বেরি জাতীয় ফল
ভিটামিন সি, খনিজ পদার্থ এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় বেরি জাতীয় ফলগুলো ত্বকে বয়সের ছাপ পরতে বাঁধা দেয়। স্ট্রবেরি, ব্লুবেরির মত গাঢ় রঙের বেরি ফলগুলো আপনাকে তারুণ্যদীপ্ত থাকতে অনেকটাই সহায়তা করবে। তাই অ্যান্টি এজিং ডায়েটে বেরি জাতীয় ফল রাখতে ভুলবেন না।
৫) ডার্ক চকলেট
যারা ডার্ক চকলেট খেতে পছন্দ করেন, এটা তাদের জন্য অবশ্যই সুখবর! কোকো উচ্চ মাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রোটিন ও ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। পরিমিত পরিমাণে ডার্ক চকলেট খাওয়া আপনার স্বাস্থ্য, ত্বক, চুল সবকিছুর জন্যই কিন্তু ভালো। গবেষণায় উঠে এসেছে, ডার্ক চকলেটে অ্যান্টি এজিং প্রোপার্টিজ থাকায় এটা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং বলিরেখা কমিয়ে ফেলে।
৬) অ্যাভোকাডো
দেশীয় ফল না হলেও অ্যাভোকাডো এখন সুপারশপগুলোতে পাওয়া যায়। অ্যান্টি এজিং ডায়েটে অ্যাভোকাডো বেশ কার্যকরী। কেননা এতে ভিটামিন ই, পটাসিয়াম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে যেগুলো তারুণ্য ধরে রাখে। এটি কোষের পুনর্গঠনে সহায়তা করে, স্কিনকে কোমল রাখে, রিংকেল পরা রোধ করে, এমন আরো অনেক কার্যকারিতা আছে।
৭) কলা
ভিটামিন বি৬, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার এবং আরও অন্যান্য সব পুষ্টি উপাদানে ভরপুর হওয়ায় এই ফলটি রাখুন অ্যান্টি এজিং ডায়েটে। শরীরের জন্য বেনিফিসিয়াল ও দরকারি উপাদান থাকায় নিয়মিত কলা খাওয়া শুরু করুন।
৮) লেবু
মেদ কমাতে লেবুর কার্যকারিতা অনেকেরই জানা। কিন্তু এজিং প্রতিরোধে লেবুর ভুমিকা অনেকেই জানেন না। ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনতে ও বলিরেখা কমাতে লেবু দারুণ কাজ করে। যারা স্কিনের মলিনতা ও বয়সের ছাপ নিয়ে চিন্তিত, তারা ডায়েটে অবশ্যই ভিটামিন সি অর্থাৎ লেবুর পানিকে অন্তর্ভুক্ত করুন।
৯) আপেল
আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এছাড়াও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও খনিজ লবণ থাকায় এটা আপনার ত্বককে সতেজ রাখতে হেল্প করবে। অনেকেই বলেন যে, আপেল খেলে আপেলের মতো টসটসে গাল হবে! কথাটা যে সত্যি, নিশ্চয় এখন বুঝতে পারছেন।
১০) গ্রিন টি
তারুণ্য ধরে রাখতে দারুণ একটি কার্যকরী পানীয় হচ্ছে গ্রিন টি। অনেকেই জানেন, অসাধারন কিছু হেলথ বেনিফিটের জন্য ডাক্তাররাও নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার পরামর্শ দেন। সকালে ও বিকালে দুইকাপ গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটা শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে হেল্প করবে। সাথে ত্বকের তারুণ্য ধরে রেখে আপনাকে প্রাণবন্ত রাখবে।
তাহলে, জানা হয়ে গেল অ্যান্টি এজিং ডায়েট প্ল্যানে কোন ১০টি খাবার অবশ্যই রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন, সময়মতো ঘুমাবেন ও হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করবেন। মনে রাখবেন, রোদ আর দূষণ থেকে দূরে থাকতে হবে। ব্যস, কিছু বিষয় খেয়াল রেখে ঠিকমতো অ্যান্টি এজিং ডায়েট মেনে চললে অকালে বুড়িয়ে যাওয়া নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।
ছবি- সংগৃহীত: ইমেজেসবাজার
The post অ্যান্টি এজিং ডায়েট হোক ১০টি খাবারের সাথে! appeared first on Shajgoj.