আমাদের সমাজে প্রচলিত একটা কথা হচ্ছে প্রথমে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারি। সুন্দর মুখের জয় সর্বত্রই। মানুষের সৌন্দর্যের মূলে প্রথমেই রয়েছে তার সুন্দর লাবণ্যময় মুখ। মুখ যে কেবল আপনার সৌন্দর্যের পরিচয় বহন করে তা কিন্তু না। এটা আপনার ব্যক্তিত্ব ও সকল অভিব্যক্তি প্রকাশেরও অন্যতম মাধ্যম। আর একটা আত্ববিশ্বাসী মুখ আপনার স্বকীয়তা ধারণ করে নিয়ে যেতে পারে সাফল্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুতরাং সেই মুখের ত্বকটাই যদি মসৃণ না হয়, তবে সেই মুখের সৌন্দর্য পরিপূর্ণতা পাবে না। কাজেই পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের জন্য আপনার মুখের ত্বকটা হওয়া প্রয়োজন মসৃণ, টানটান, দাগহীন ও লাবণ্যময়। প্রায় প্রত্যেকেরই ত্বকের একটা কমন সমস্যা হলো মুখের পোর বা রোমকূপের ছিদ্র বড় হয়ে যাওয়া। মুখের পোরগুলো ছোট করার উপায় তাই সবাই জানতে চায়। চলুন তবে দেখে নেই কিভাবে মুখের পোরগুলো ছোট করা যায় সে সম্পর্কে!
মুখের পোরগুলো কোন অংশে বেশি দেখা যায় ও কারণ
নাকের পাশেই সাধারণত এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বয়স বৃদ্ধি, রোমকূপ ময়লা জমা, ব্রণ উঠলে তা খোঁচানো- এসব কারণে পোরস বা রোমকূপ বড় হয়ে যায়। ত্বকে তৈরি হওয়া বড় রোমকূপ দেখতে যেমন দৃষ্টিকটু লাগে তেমনি এটি ত্বকের সৌন্দর্যও নষ্ট করে দেয় এবং যার দরুণ দেখতেও খারাপ লাগে। রোমকূপ বড় হয়ে গেলে ত্বক অমসৃণ হয়ে যায়। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের এই সমস্যাগুলো তেমন একটা হয় না। কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারিণী যারা তাদের মুখে তেল উঠার কারণে রোমকুপগুলো বড় দেখায়। আবার অনেক সময় পিরিয়ডের পরেও মেয়েদের রোমকূপ বড় হয়ে যায়। কারণ এসময় মেয়েদের শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোন বেশি থাকে এবং ত্বকে প্রাকৃতিক তেল; সিবাম বেশি উৎপাদন হয়। যার কারণে মুখে তেল উঠে এবং রোমকূপ বড় হয়ে যায়। কাজেই রোমকূপ সবসময় পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন যেন তেল উঠে ময়লা জমে বন্ধ না হয়ে যায়। আমাদের নাকের চারপাশে রোমকূপ বেশি থাকে তাই নাকের চারপাশ সবসময় পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। ঠিকমতো পরিষ্কার রাখা না হলে ব্রণ, ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডসের সৃষ্টি হয় এবং এতে মুখের পোরস বড় হয়ে যায়। বড় রোমকূপের এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে বাইরের রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার না করে ঘরোয়াভাবে প্রাকৃতিক উপাইয়েই আমরা আমাদের মুখের পোরগুলোকে ছোট রাখতে পারি। এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে না ও ত্বকের কোন ক্ষতিও হয় না।
মুখের পোরগুলো ছোট করার উপায়
১) প্রতি রাতেই মুখ ধোয়া
যতই কাজের চাপ থাকুক আর ক্লান্ত থাকেন না কেন, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে ঘুমাতে যান। মুখে মেকআপ নিয়ে কখনোই ঘুমাতে যাবেন না। মুখের মেকআপ ভালোভাবে তুলে পরিষ্কার করে ঘুমাবেন। এতে মুখে জমে থাকা ময়লা ও তেল পরিষ্কার হয়ে যাবে।
২) এক্সফলিয়েট
রোমকূপের ছিদ্র বা পোরস প্রতিহত করার প্রধান উপায় হলো এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব। ভালো মানের স্ক্রাব দিয়ে এক্সফলিয়েট করলে ত্বকের মৃতকোষ দূর হয় এবং রোমকূপে জমে থাকা সব ময়লা পরিষ্কার হয়। এক্সফলিয়েট করার সময় নাক ও থুতনিতে বেশি করে ঘষবেন। কারণ এ জায়গাগুলোতেই রোমকূপের পরিমাণ বেশি থাকে। আপনার ত্বকে যদি ব্রণ বেশি থাকে তাহলে বিটা এসিড বা স্যালিসাইলিক এসিড আছে এমন ধরনের এক্সফলিয়েট বা স্ক্রাব ব্যবহার করুন।
৩) টোনার
ত্বক পরিচর্যায় টোনারের ব্যবহার খুব উপকারী। টোনার ত্বককে টানটান রাখে, যার কারণে ত্বকের পোরগুলোও ছোট থাকে। ভালোভাবে মুখ ধুয়ে তারপর টোনার লাগাবেন। টোনার কেনার আগে অবশ্যই ল্যাকটিক অথবা গ্লাইকোলিক এসিড সমৃদ্ধ উন্নতমানের টোনার দেখে কিনবেন। টোনার ত্বকের পি-এইচের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
৪) প্রাইমার
মেকআপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্রাইমার ব্যবহার করুন। অনেকে মুখের পোর ঢাকতে না বুঝেই মেকআপ করে। কিন্তু মুখের পোরস বড় থাকলে মেকআপও ঠিক মতো বসে না। প্রাইমার মূলত ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিতে সাহায্য করে। সুতরাং মেকআপের আগে মুখে ভালো করে প্রাইমার লাগিয়ে নিলে ত্বক মসৃণ ও কোমল দেখায় যা ত্বকে বিরাট পরিবর্তন আনে। প্রাইমারের কারণে মুখের পোর অনেক ছোট দেখায় ও মেকআপ ঠিকমতো বসে যায়। প্রাইমার কেনার আগে ম্যাটিফায়িং কিনা তা দেখে কিনুন। সিলিকন বা ডিমেথিকন সমৃদ্ধ প্রাইমার অধিকাংশ ত্বকেই ভালো কাজ করে।
৫) সানস্ক্রিন ব্যবহার
নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ত্বকের কোষের মারাত্বক ক্ষতি করে, যার ফলে চামড়া নমনীয় হয়ে যায় ও মুখের পোর বড় হয়ে যায়। কাজেই প্রতিবার বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই মনে করে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন।
উল্লেখিত টিপসগুলো ফলো করলে আপনার মুখের পোর ছোট করতে বা ছোট দেখাতে যথেষ্ট কাজে দিবে।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম; স্কিনক্রাফট.কম
The post মুখের পোরগুলো ছোট করবেন কিভাবে? appeared first on Shajgoj.