পিম্পল, অতিরিক্ত শুষ্কতা বা তেলতেলে ভাব, ডার্ক প্যাঁচ!!! এগুলো টিনেজে কমন সমস্যা। কিন্তু তের-চোদ্দ বছর বয়স থেকেই স্কিন কেয়ার! ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে, এই বয়সে এতকিছু মাখলে বয়স বাড়লে স্কিন খারাপ হয়ে যায়, টিনেজে শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুলেই তো চলে, আশেপাশে এমন কথা আমরা শুনেই থাকি! কিন্তু জানেন কি, এই বয়স থেকেই প্রোপারলি ফেইস ক্লিন করা, ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করা, সান প্রোটেক্টর ব্যবহার করা মানে বেসিক স্কিন কেয়ার শুরু করা ভীষণ জরুরী। কথায় আছে না, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। স্কিনকে হেলদি রাখার জন্য আগে থেকেই যদি যত্ন নেওয়া যায়, বয়স বাড়লেও তার বিরূপ প্রভাবটা স্কিনে পরবে না। চলুন তাহলে জেনে নেই টিনেজারদের স্কিন কেয়ার কেন করতে হবে এবং কিভাবে।
টিনএজে স্কিন কেয়ার কেন জরুরি?
১) স্কিনের লেয়ারগুলোতে অয়েল আর ময়েশ্চার কন্টেন্ট ঠিকমতো থাকলে স্কিন হেলদি দেখায়। ত্বকের জন্য হাইড্রেশন কতটা ইম্পরট্যান্ট এটা আমরা কম বেশী সবাই জানি। কিন্তু অয়েল ব্যালেন্সের প্রয়োজন কোথায় জানেন কি?
- স্কিন লেয়ারের অয়েল আমাদের স্কিনের সার্ফেস লেয়ার থেকে ময়েশ্চার হারিয়ে যেতে বাঁধা দেয়। এতে ত্বক ডিহাইড্রেটেড হতে পারে না।
- ত্বকের ন্যাচারাল অয়েল ইলাস্টিসিটি (Elasticity) ধরে রাখে, এতে ত্বক বাইরে থেকেও কোমল দেখায়।
- অয়েল ব্যালেন্সের কমবেশী হলে ত্বকের ব্যারিয়ার লেয়ারে সেটার প্রভাব পরে, যেমন- শুষ্কতা, একনে, রেডনেস, ফাইন লাইনস আরও কত কি!
তাই, অয়েল আর ময়েশ্চার ব্যালেন্স ঠিকমতো রাখতে এই বয়স থেকেই স্কিন কেয়ার নেওয়া জরুরী।
২) টিনেজে শরীরে বেশকিছু পরিবর্তন আসে এটা আমরা সবাই জানি। এ সময়ে হরমোনাল চেঞ্জ এর কারণেও স্কিনে অনেক রকম সমস্যা দেখা যায়, অনেকেরই পোর বড় হয়ে যায়, সেবাম নিঃসরণের হার বেড়ে যায়। স্কিনকে ঠিকমতো ক্লিন করা না করলে সেবামের সাথে ডেড সেলের স্তর জমে আরও খারাপ অবস্থা হয়ে যেতে পারে।
৩) আবার বাইরে প্রতিদিন বের হওয়ার ফলে রোদের তাপ ও ধুলোবালি স্কিনের অনেক বেশি ক্ষতি করে ফেলে। শুধুমাত্র পানি দিয়ে ধুয়ে স্কিন থেকে ইমপিওরিটিস দূর করা সম্ভব নয়। স্কিনের ডীপ লেয়ার থেকে ময়লা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
এসব কারণে টিনেজ থেকেই ঠিকমতো স্কিন কেয়ার নেওয়া উচিত।
এখন প্রশ্ন হল তাহলে স্কিনে কিভাবে যত্ন নিতে পারি?
বেশীরভাগ টিনেজাররা কনফ্যুশনে ভোগেন যে, কোনটা তাদের স্কিনের জন্য করা উচিত। ভুলভাল প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করে স্কিনের বারোটা বাজানোর থেকে আগে সঠিক স্কিন কেয়ার রেঞ্জটি বেছে নিতে হবে।
১) প্রথমেই ত্বকের ধরণ বুঝে ক্লেনজার সিলেকশন
নরমাল, ড্রাই, অয়েলি নাকি কম্বিনেশন- আপনার স্কিনের টাইপ কোনটা? স্কিনের ধরণ বুঝে মাইল্ড, লো পি-এইচযুক্ত, নন কমেডোজেনিক (non-comedogenic) ফোমিং ফেইসওয়াশ বেছে নিতে হবে। ভালোভাবে ফেইস ক্লিন না করলে যে সমস্যাগুলো হয়-
- ঘাম, ডার্ট, অতিরিক্ত সেবাম জমে পিম্পল হতে পারে।
- পোর বড় হয়ে যেতে পারে।
- স্কিনে ডেড সেলের লেয়ার জমে ডার্ক প্যাঁচ পরতে পারে।
১২-১৩ বছর পর্যন্ত ন্যাচারাল ওয়েতেই এক্সফলিয়েট হয়ে যায় মানে ফ্রি রেডিক্যাল নিউট্রিলাইজ (Free radical neutralize) হওয়ার ক্যাপাসিটি থাকায় নতুন কোষ পুনঃগঠিত হতে থাকে। কিন্তু এর পর থেকে মাইল্ড ফর্মুলার স্ক্রাব দিয়ে সপ্তাহে ১ বার ডেড সেল রিমুভ করতে হবে। যদি স্কিনে একটিভ পিম্পল থাকে, তাহলে স্ক্রাবিং না করাই ভালো।
২) একনে প্যাচ ইউজ করতে পারেন
ফেইস ক্লিন রাখার পরও হরমোনাল কারণে এই সময়টাতে অনেকের স্কিনে পিম্পলের প্রব্লেম দেখা দেয়। বয়সন্ধিকালে হরমোনাল চেঞ্জের জন্য যে পোর বড় হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে আর এক্সেস সেবাম ক্ষরণ হয়, এটার জন্য এই সমস্যাগুলো হতে পারে। ব্রণ খোঁটাখুঁটি না করে দ্রুত হিলিং এর জন্য আর ব্রণের দাগ যাতে স্কিনে না বসে যায় এজন্য একনে প্যাচ ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন।
৩) ময়েশ্চারাইজ ইউজ করা মাস্ট
প্রতিবার স্কিন ক্লিন করার পর অবশ্যই একটা ভালো ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার করে নিবেন। অয়েলি স্কিনে কোন ক্রিম ইউজ করা লাগে না! এই ধারনাটা একদমই ভুল। অয়েলি স্কিনে সেবাম বেশি থাকে, তার মানে এই নয় যে এটাই হাইড্রেটেড স্কিন। এই ধরণের স্কিনেও হাইড্রেশন প্রয়োজন। স্কিন যদি অয়েলি হয় তাহলে কোন জেল বেসড ময়েশ্চারাইজার, আবার কারও স্কিন ড্রাই হলে ক্রিমি বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
৪) সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না
এই সময়টাতে স্কিনের সান প্রটেকশন নিয়ে কেউই মাথা ঘামাই না। আর এটাই পরবর্তীতে বিভিন্ন স্কিন রিলেটেড ইস্যু তৈরি করে। যেমন সানবার্ন, পিগমেন্টেশন, ডার্ক স্পট আরও অনেক কিছু। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে সঠিক এস পি এফ যুক্ত প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে। মিনারেল বেসড সানস্ক্রিন টিনেজে নির্ভয়ে ব্যবহার করা যায়।
৫) রেগ্যুলার বেসিসে হেভি মেকআপ এড়িয়ে চলাই ভালো
মেকআপ প্রোডাক্টে অনেক সময় হেভি মেটালের মতো ক্ষতিকর এলিমেন্ট থাকে। আবার পোর ক্লগড হয়ে র্যাশ, রেডনেস এগুলোও দেখা দিতে পারে। তাই নমনীয় ত্বকে রেগ্যুলার মেকআপ না করাটাই ভালো। হেলদি স্কিন কেয়ার মেইনটেইন করলে ত্বক এমনিতেও ন্যাচারালি গ্লো করবে। টিনেজারদের স্কিন কেয়ার এর ক্ষেত্রে এই দিকটি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন।
৬) হাইড্রেশনের জন্য শিট মাস্ক অথবা হোমমেড মাস্ক
টিনেজারদের স্কিন কেয়ার এর ক্ষেত্রে বাড়িতে বানানো ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্টসের মাস্কগুলো স্কিনের জন্য বেশ ভালো হবে। সপ্তাহে একদিন বেসন এবং রোজ ওয়াটার, মধু এবং লেবু, চন্দন এবং মধু ইত্যাদি ইনগ্রিডিয়েন্টস মিলিয়ে মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ঝামেলা মনে হলে বা হাতে সময় কম থাকলে শিট মাস্ক মাসে এক/দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। কোনো ইনগ্রিডিয়েন্সে অ্যালার্জির সমস্যা আছে কিনা শুধু এটা একটু লক্ষ্য রাখবেন।
তাহলে টিনেজারদের স্কিন কেয়ার রুটিন সম্পর্কে জানা হয়ে গেল। পাশাপাশি পরিমিত ঘুম, সুষম খাদ্যতালিকা, দৈনিক ৮ গ্লাস পানি খাওয়া, স্ট্রেস ফ্রি থাকা এগুলো কিন্তু মাস্ট। ইনগ্রিডিয়েন্টস চেক না করে হুটহাট কোন প্রোডাক্ট মেখে ফেলা, পিম্পলে নখ দেওয়া, মুখ ক্লিন না করেই ঘুমিয়ে পড়া এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ;মমজাংসন.কম
The post টিনেজারদের স্কিন কেয়ার কেন করতে হবে এবং কিভাবে? appeared first on Shajgoj.