মেকআপ ট্রেন্ডে এই সময়ে লিড দিচ্ছে ডিউয়ি বা গ্লোয়ি লুক। স্টাইল ম্যাগাজিনে অথবা ইন্সট্রাগ্রাম, ফেইসবুক স্ক্রল করলে বিভিন্ন সেলিব্রেটির সফট গ্ল্যাম ডিউয়ি লুকে চোখ যেন আটকে যায়। ব্রাইডাল আর পার্টি মেকওভারেও এই টাইপের লুক এখন বেশী প্রাধান্য পাচ্ছে, যেমন স্কিনটোন ঠিক রেখে ন্যাচারাল বেইজ, ইল্যুমিনেটিং (Illuminating) বা লাইট রিফ্লেক্টিং ফিনিশিং অর্থাৎ চোখের মেকআপে বা ঠোঁটে রঙের তেমন প্রাধান্য না থাকলেও গালে আর কপালে চকচকে ভাব। কিন্তু মেকআপের মাধ্যমে কিভাবে এই ইফেক্টটা আনা যায়, আমরা অনেকেই সেটা জানি না। গ্লোয়ি লুক বলতে কিন্তু তেলতেলে মেকআপ না! এটাকে শিশিরস্নিগ্ধ সাজ বলা যেতে পারে। সিম্পল কিছু টিপস ফলো করে আপনিও ডিউয়ি লুক ক্রিয়েট করতে পারেন। কিন্তু কিভাবে? চলুন তাহলে জেনে নেই ট্রেন্ডি এই মেকআপ লুক সম্পর্কে এবং এই ধরণের মেকআপের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
ডিউয়ি মেকআপ কি?
আর্দ্র বেইজ, পরিমিত হাইলাইটারের ব্যবহার, গ্লোয়ি ফিনিশিং এসব কিছু মিলিয়ে ডিউয়ি লুক। শাইনি বলতে একগাদা শিমার পাউডার মুখে মেখে চাকচিক্য আনা কিন্তু ডিউয়ি মেকআপ না। হাইড্রেটেড আর ইয়ুথফুল মেকআপ সবারই পছন্দ, বিশেষ করে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের অধিকারীরা এই লুকটি বেশি প্রিফার করে। এর জন্য যেমন আপনার ত্বক স্বাভাবিকভাবে সুস্থ ও সুন্দর থাকা জরুরি তেমনি প্রয়োজন সঠিক পণ্য ব্যবহারের। সাধারনত যে প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করা হয় তাতে ময়েশচার কনটেন্ট থাকায় হেলদি রেডিয়েন্স চোখে পড়ে। কোরিয়ানদের ফ্ললেস স্কিনের সিক্রেট এখন সমগ্র বিউটি ওয়ার্ল্ডের জানা, তাদের স্টেপ-ওয়াইজ স্কিন কেয়ার রুটিন আর বৈচিত্র্যময় প্রোডাক্ট রেঞ্জ অলরেডি পপুলার। সেই সাথে গ্লাস স্কিন, হানি স্কিন, ডিউয়ি লুক এই কনসেপ্টগুলোও তারাই ইসটাব্লিস করেছে। আমাদের দেশেও অলরেডি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ট্রেন্ডটি।
মেকআপকে ডিউয়ি করে তুলতে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন?
১) ত্বকের মসৃণতার উপর মেকআপের ফিনিশিং অনেকটাই ডিপেন্ড করে। অবশ্যই মেকআপের আগে প্রোপারলি ক্লেনজিং আর টোনিং করে নিবেন। সপ্তাহে ২ দিন স্ক্রাবিংয়ের মাধ্যমে ডেড সেল আর ব্ল্যাকহেডস পরিষ্কার করে ফেলা উচিত।
২) ডিউয়ি মেকআপের মূলমন্ত্র হলো ময়েশ্চারাইজড স্কিন। সঠিক মাত্রার আর্দ্র ত্বকে যখন ডিউয়ি মেকআপের ট্রিকস ফলো করা হয়, তখন ফাইনাল আউটকাম খুব ভালো আসে। তাই ডীপ নারিশমেন্ট আর ময়েশ্চারাইজিং পার্টটা বাদ দিলে চলবে না। মেকআপের সময় অনেকে লিকুইড হাইলাইটার ফাউন্ডেশন বা ময়েশ্চারাইজারের সাথে মিক্স করে অ্যাপ্লাই করে গ্লোয়ি বেইজের জন্য।
৩) মেকআপ শুরু করতে বেইজ হিসেবে সঠিক প্রাইমার বেছে নিন। স্কিনকে পোরলেস দেখানোর জন্য, মেকআপ ঠিকমতো বসাতে আর অক্সিডাইজ হওয়া থেকে রক্ষা করতে ঠিকঠাক প্রাইমার অ্যাপ্লাই করা জরুরি। ইলুমিনেটিং প্রাইমারও অনেকে পছন্দ করে। অয়েল ফর্মেও ইদানিং প্রাইমার পাওয়া যায় যেটা সিরামের মত ত্বককে আর্দ্র রাখে আর ডিউয়ি ফিনিশিং দেয়।
৪) চোখের নিচের কালো দাগ কিংবা পিম্পলের দাগ হাইড করতে অরেঞ্জ অথবা পিচ কালারের কনসিলার (concealer) ইউজ করুন। মেকআপ ব্রাশ বা ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে সুন্দর করে মিলিয়ে দিন। রোজ ওয়াটার স্প্রে করে নিন মুখে। এতে বেইজ মেকআপ শুষ্ক হয়ে যাবে না।
৫) ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে লুমিনাস (luminous) ফিনিশের অথবা সেমি-ম্যাট ফাউন্ডেশন বাছুন। ত্বক বিশেষে ফাউন্ডেশনের ফর্মুলা আলাদা হয়। সাধারণত নরমাল টু ড্রাই স্কিনের জন্য লুমিনাস ক্রিমি ফরমুলার ফাউন্ডেশন সাজেস্ট করা হয়। ম্যাট ফাউন্ডেশনের সাথে এক ফোটা বেবী অয়েল মিক্স করে মুখে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন, খুব সুন্দর গ্লো আসবে। খেয়াল রাখবেন বেইজ মেকআপ যেন খুব বেশি ভারী না হয় এবং শেডটা যাতে ন্যাচারাল লাগে।
৬) পুরো মুখে অনেক ভারী করে পাউডার দিবেন না, মিনারেল বা বিবি পাউডার দিয়ে হালকা করে শুধুমাত্র ত্বকের তৈলাক্ত অংশে অ্যাপ্লাই করুন। চাইলে পাউডার ব্রাশের সাহায্যে সামান্য লুজ পাউডার নিয়ে ফাউন্ডেশন সেট করে নিতে পারেন। খুব বেশি ম্যাট ফিনিশিং যেন না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
৭) পাউডার ব্লাশের পরিবর্তে ক্রিম ফর্মুলার ব্লাশ পিক করতে পারেন। ক্রিম ফর্মুলার ব্লাশ হাতের কাছে না থাকলে গালে অল্প একটু কালার লিপগ্লস লাগিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। সাথে সাথে একটা ডিউয়ি ইফেক্ট দেবে। পিচ, লাইট কোরাল, বেবি পিঙ্ক ব্লাশের এই শেডগুলো খুব ভালো মানাবে।
৮) কন্টুরিং আর হাইলাইটার মেকআপে সিগনিফিকেন্ট চেঞ্জ আনে। কন্টুরিং এর পর লিকুইড অথবা ক্রিম হাইলাইটার দিয়ে মুখের উঁচু অংশগুলো যেমন চিক বোন, নাকের ওপরে, কপালে ও ঠোটের উপরে হাইলাইট করুন। পাউডার হাইলাইটার ব্যবহার করলে আগে ভ্যাসলিন ইউজ করে নিন, এতে হাইলাইটার সরে যাবে না এবং গ্লোয়ি লাগবে। স্কিনের আন্ডারটোন অনুযায়ী হাইলাইটার নির্বাচন করুন।
৯) ডিউয়ি মেকআপের সাথে চোখের সাজে স্মোকি ক্যাটআই কিংবা গোল্ডেন কাটক্রিস করে নিতে পারেন। আবার একদম সিম্পলও রাখতে পারেন। ডাবল কোটিং করে মাস্কারা আর কাজল লাগিয়ে নিলেই চোখ সাজানো কমপ্লিট। কালারফুল মাশকারা বা লাইনারের বৈচিত্র্যময় ব্যবহারও ডিউয়ি মেকআপের সাথে দারুণ মানিয়ে যায়। আরেকটা কথা, আইব্রোটি একটু মোটা শেপ রাখবেন।
১০) আপনার ডিউয়ি লুক-কে সম্পূর্ণ করুন স্যাটিন, গ্লসি অথবা সেমি ম্যাট বা ক্রিমি ফরমুলার লিপস্টিক দিয়ে। ম্যাট লিপস্টিক দিলে একটু লিকুইড হাইলাইটার লাগিয়ে নিন উপরে, খুব সুন্দর মানিয়ে যাবে এই লুকের সাথে। খুব বেশি উজ্জ্বল রঙয়ের লিপস্টিকের বদলে এখন একটু ন্যাচারাল শেডের চল দেখা যাচ্ছে। আপনি চাইলে বোল্ড কালার লাগাতেই পারেন। শ্যামলা ত্বকের জন্য ব্রাউন, ম্যাজেন্টা, ডাস্টি পিঙ্ক, কোরাল, ডিপ মেরুন এবং ফর্সা ত্বকের জন্য লাইট বেইজ, পিচি শেডের পিঙ্ক, অরেঞ্জ-রেড শেড ট্রাই করতে পারেন। টিনটেড লিপ বাম ময়েশ্চারাইজার যুক্ত এবং হালকা পিঙ্ক বা স্বচ্ছ রঙা কাভারেজ দেয়, চাইলে শুধু এটাও ইউজ করতে পারেন।
১১) এখন ময়েশ্চার প্রোপার্টিজ সহ সেটিং স্প্রে পাওয়া যায়। এমন প্রোডাক্ট বেছে নিতে হবে যাতে মেকআপের ম্যাট ভাব কমিয়ে ত্বককে স্বাভাবিক দীপ্তিময় দেখাবে, সেই সঙ্গে মেকআপকে দীর্ঘস্থায়ীও করবে। রোজ ওয়াটার স্প্রে করে নিলেও স্কিন হাইড্রেটেড দেখাবে। মনে রাখবেন, সেটিং স্প্রে দেয়ার পর হাই পয়েন্টগুলোতে আবার একটু হাইলাইটারের টাচআপ দিতে হবে।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
জাস্ট এই টিপসগুলো ফলো করে আপনিও ডিউয়ি লুক ক্রিয়েট করতে পারেন। সাজের ট্রেন্ডে পালাবদল চলতে থাকে বিশ্বময়। নিজের সঙ্গে মানানসই সাজ আর ফ্যাশন বেছে নিতে পারলে আপনিও হয়ে উঠবেন গ্ল্যামারাস।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ;ইউটিউব
The post ডিউয়ি মেকআপ লুক। লক্ষ্য রাখুন ১১টি বিষয় appeared first on Shajgoj.