আমাদের কারও শরীরের শেপ জন্মগতভাবে একেবারে পারফেক্ট থাকে না। অনেকের শরীরের উপরের অংশ খুব একটা মোটা না থাকলেও নিচের অংশ অর্থাৎ উরু বেশ মোটা হয়। শরীরের উপরের অংশের চেয়ে নিচের অংশে মেদ জমে বেশি। বিশেষ করে উরুর দিকে অনেক বেশি মেদ জমে শরীরের গঠন নষ্ট করে ফেলে। উরু কমাতে যেয়ে রীতিমত ঘাম ছুটে যায় সকলের। সঠিক ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আর সঠিক ডায়েট মেনে চললেই আমরা আমাদের উরুর ফ্যাট কমাতে পারি।
উরুর ফ্যাট কমাতে কার্যকরী কৌশল
প্রথমেই আসি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন নিয়ে
যতটা পারা যায় কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেতে হবে, বেশী করে ফলমূল আর শাকসবজি খেতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ফ্যাট কমানোর জন্য ভালো কাজ করে। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে আপনি যদি লো ক্যালোরি ডায়েট চার্ট ফলো করেন তাহলে অবশ্যই জেনে রাখা দরকার কোন কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ ডায়েট চার্ট মেনেও ওই সব খাবারগুলো খেলে কিন্তু কোন লাভ হবে না। যেমন রুটি, কেক, পাস্তা এগুলো বাদ দিলেই ভালো। এছাড়া প্রসেসড ফুড কম খেতে হবে। শর্করা জাতীয় সবজি যেমন আলু, বীজ এসব সবজি একটু কম খাওয়া ভালো। যতটা পারা যায় সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
নীচে কয়েকটি ডায়েট নিয়ে আলোচনা করা হলো যা আমাদের উরুর ফ্যাট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে-
(১) এটকিন্স ডায়েট (Atkins Diet): কয়েক বছর ধরে এটকিন্স ডায়েট ওজন কমানোর ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদী, সহজ এবং খুব জনপ্রিয় একটি লো-কার্ব ডায়েট এটি। এ ডায়েটে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বল্প কার্বহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণে উৎসাহ দেয়া হয়। অতিরিক্ত কার্বহাইড্রেটের (Carbohydrates) পরিমাণ মানব দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। শরীরে তখন শক্তি কমে যায় আর ফ্যাট জমতে থাকে বেশি।
এটকিন্স ডায়েট যারা গ্রহণ করবেন তারা প্রোটিন এবং চর্বিজাতীয় খাবার খেতে পারবেন কিন্তু শর্করা খাওয়া বাদ দিতে হবে। এ ডায়েট আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমায় এবং কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে চর্বি তৈরি হওয়া রোধ করে। ফলে শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে আপনার উরুর ফ্যাট কমাতেও সাহায্য করে এটকিন্স ডায়েট।
(২) কিটো ডায়েট(Keto Diet): একেবারে সীমিত মাত্রার কার্বহাইড্রেট এবং উচ্চ মাত্রার চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ এ ডায়েটের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সারাদিনে মাত্র ৫% পর্যন্ত শর্করা গ্রহণ করতে হয় এ ডায়েটে। কেবল মনে রাখতে হবে খাবারে যেন কোন চিনি বা অতিরিক্ত শর্করা না থাকে। আপনার উরুর ফ্যাট কমাতে অনেক কার্যকরী এই কিটো ডায়েট।
(৩) পালিও ডায়েট(Paleo diet): যারা প্রসেসড ফুড এর উপর নির্ভরশীল তারা যদি এসব খাবারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চান তাদের জন্য বিশেষ করে এই ডায়েট তৈরি করা হয়েছে। ফ্যাট জাতীয় খাবার কে বর্জন করে এমন খাবার এই ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাতে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। সাথে পরিমিত প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে এবং পরিমিত খাবার খেতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত অনেকেই এই ডায়েটকে আসলে ডায়েট বলে মেনে নিতে নারাজ। কেননা এই ডায়েট আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী কতটা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন আর ফ্যাটের দরকার তা বিচার করে না। এর মূল উদ্দেশ্য কেবল আপনার খাদ্য তালিকা থেকে প্রসেসড ফুড সরিয়ে প্রাকৃতিক খাবারকে একত্রিত করা। নিজের শরীর বুঝে অন্য যেকোনো ডায়েট এর সাথে এই ডায়েট-টি সমানভাবে ফলো করতে পারেন।
আসুন জেনে নেই এমন কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে, যা করলে আমরা আমাদের উরুর ফ্যাট থেকে মুক্তি পেতে পারি।
(৪) স্কোয়াট ব্যায়াম: এই ব্যায়াম পায়ের মাসলের শেপ সুন্দর করে এবং উরুর ফ্যাট কমায়। এটি একটি স্ট্রেংথ ট্রেনিং (strength training) ব্যায়াম। স্কোয়াট ব্যায়ামে পায়ের মাসল গুলোকে ব্যবহার করার পাশাপাশি কোমর, পেট, ব্যাক, ঘাড়, হাত ইত্যাদিরও ব্যবহার হয়। শরীরের এই অংশ গুলোকেও স্কোয়াট এর সময় কাজে লাগানো হয়, তাই স্কোয়াটকে এক কথায় পুরা বডির ব্যায়াম বলা হয়।
কিভাবে স্কোয়াট করবেন?
১. প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত কাঁধ বরাবর সোজা রাখুন, মাথাও একবারে সোজা রাখুন। পায়ের পাতা সোজা সামনের দিকে রাখুন, মাথা সোজা সামনের দিকে, দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে। পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখুন, হাঁটু পায়ের পাতা বরাবর একদম সোজা থাকবে।
২. এবার পা দু’টো মোটামোটি দুরত্বে রেখে দাড়ান। খুব বেশিও না বা খুব কম না, আপনার সুবিধা মতো দুরত্ব রাখুন।
৩. ধীরে ধীরে হাঁটু সামনের দিকে হিপ সহ ভাঙ্গতে থাকুন ও মেঝের দিকে নামতে থাকুন। মনে করুন আপনি পা দুরত্বে রেখে চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন। এই সময়ে শরীর থাকবে উপরের দিকে একদম সোজা, বিশেষ করে মেরুদন্ড একদম সোজা থাকতে হবে। আর হিপ ও থাই থাকবে মেঝের সাথে সমান্তরাল। এসময় জোরে নিঃশ্বাস নিতে হবে।
৪. শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য হাত দুটো সামনে শরীর থেকে বাইরের দিকে কাঁধ বরাবর রাখতে পারেন। এখন আপনার বডির পুরোটা সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে থাকবে এবং হিপ পেছনের দিকে নামবে। এই অবস্থায় কয়েক সেকেন্ড থাকুন। এখন আপনি আপনার হাঁটু থেকে হিপ পর্যন্ত স্ট্রেচ (stretch) অনুভব করবেন এসময় শ্বাস থাকবে স্বাভাবিক।
৫. এবার আস্তে আস্তে আগের অবস্থায় আসুন। মনে করুন আপনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছেন। উঠার সময় জোরে নিশ্বাস ছাড়ুন। উঠার সময়ও উরুর মাসলে চাপ অনুভব করবেন। আর উঠার সময় থাই ব্যবহার করতে হবে, চেস্ট দিয়ে উঠবেন না। পায়ের পাতায়ও সামান্য চাপ অনুভব হবে, পেট ভেতরের দিকে টানা থাকবে ও পিঠ সোজা থাকবে। সুবিধার জন্য পেছনে একটি চেয়ার দিয়ে নিতে পারেন, কিন্তু চেয়ারে বসবেন না।
৬. হাঁটুতে বেশি চাপ দিবেন না, হাঁটু পায়ের পাতার চাইতে বেশি বাইরের দিকে যাবে না বা নিচের দিকেও ঝুকবে না।
৭. নামার বা উঠার সময় দুই হাঁটুই একই ভাবে থাকবে। নামার বা উঠার সময় দুই পায়ের উপর সমান ভাবে চাপ পড়বে। বেশি তাড়াহুড়ো করতে যাবেন না, তাহলে মাসলে ব্যথা লাগবে।
সাঁতার
উরুর অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে হলে সাঁতার কাটতে পারেন। সাঁতারের মাধ্যমে যেহেতু শরীরের সব অংশেরই ব্যায়াম হয়, সেই সাথে এটি পায়ের উপরও চাপ ফেলে। ফলে এটি শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে উরুরও ফ্যাট কমায়।
এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে আপনার উরুর ফ্যাট পুরো কমে যাবে। আপনি পাবেন পছন্দমতো ফিগার।
ছবি- সংগৃহীত: ইমেজেসবাজার.কম; সিম্পলমোস্ট.কম ; লস্টবার্ড.ভিএন
The post উরুর ফ্যাট কমাতে কিছু কার্যকরী কৌশল সম্পর্কে জানা আছে কি? appeared first on Shajgoj.