Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

ফ্যাশনে নাকফুল |জানুন অলংকরণের ইতিহাস ও ৯ ধরনের নোজ পিন সম্পর্কে!

$
0
0

নাকফুল নারীদের পছন্দের গয়নাগুলোর মধ্যে অন্যতম। নাকে এক টুকরো গয়না যেন নারীর সৌন্দর্য অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে। আকৃতি, নকশা বা রং বদলে নাকফুল বারবার ঠাঁই করে নিয়েছে মেয়েদের সাধের গয়নার তালিকায়। বর্তমানে মেয়েদের ফ্যাশনে নাকফুল খুবই পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে। আজকে আমরা আমাদের নাকফুল সমাচার সাজিয়েছি ইতিহাসের পাতা এবং নাকফুলের বিভিন্ন ধরন আলোকপাত করে।

নাকফুলের ইতিহাস

বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় যে নবম এবং দশম শতাব্দী থেকে জনপ্রিয় হতে শুরু করে নাকফুল। ধারণা করা হয়, নারী প্রথম যে অলঙ্কার ব্যবহার করেছিল সেটি ছিল নাকফুল। কিন্তু ইতিহাসে নাকফুল নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এখানে আমরা কিছু টুকরো ইতিহাস আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।

ইসলামিক ইতিহাসের দিকে নাকফুল নিয়ে আলোকপাত করলে দেখা যায় নাকফুলের চল মুসলিম নারীদের মধ্যে অনেক আগ থেকেই রয়েছে।

কথিত আছে, ইব্রাহিম (আঃ) এর প্রথম স্ত্রী ছিলেন বিবি সারা। বিবি সারার কোন সন্তান হতো না তাই তিনি নিজের ইচ্ছায় বিবি হাজেরার সাথে ইব্রাহীম (আঃ) এর বিয়ে দেন। ইব্রাহীম (আঃ) বিবি হাজেরার প্রতি অনেক ভালোবাসায় মগ্ন ছিলেন। তাই বিবি সারা রেগে গিয়ে হাজেরার নাক কান ফুটা করে দেন। ইব্রাহিম (আঃ) হাজেরাকে পছন্দ যেন না করেন তাই তিনি এ কাজ করেন। কিন্তু ইব্রাহিম (আঃ) যখন বিবি হাজেরার নাক কানে গহনা পরিয়ে দেন তখন তাকে আরও বেশি সুন্দর দেখায়!

ফ্যাশনে নাকফুল এর ব্যবহার - shajgoj.com

আবার, অনেক অনেক আগে ফেরাওউনের স্ত্রী আসিয়া এর সময়ের কথা। ফেরাওউনের স্ত্রী আসিয়া দেখতে সবচেয়ে বেশি সুন্দর ছিলেন তাই অন্যান্য স্ত্রীরা হিংসার বশবর্তী হয়ে তার নাক এবং কান ফুটা করে দেয় যাতে তাকে দেখতে অসুন্দর লাগে। কিন্তু এতে হয় হিতের বিপরীত। নাক এবং কান ফুটা করার পর তাকে আরও বেশি সুন্দর লাগে। তখন থেকেই মেয়েরা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে নাক কাট ফুটা করছে।

আবার হিন্দু রীতিতে নাকফুলের ব্যবহারের প্রথার প্রমাণ মেলে তাদের প্রতিমা দেখলেই। হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরাও সেই আদিকাল থেকেই নাকফুল ব্যবহার করে আসছে।

খৃষ্টানদের বাইবেলে লেখা আছে, ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলে ছেলের বউ রেবেকাকে স্নেহ এবং ভালবাসার চিহ্ন স্বরূপ নাকফুল উপহার দেন আব্রাহাম। এর কিছুদিন পর থেকেই বেদুইন এবং যাযাবরদের মাধ্যমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে নাকে গয়না পড়ার রীতি।

আবার এও কথিত আছে যে ষোড়শ শতাব্দিতে ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘলদের আগমনের পরই ওইসব অঞ্চলে মেয়েদের নাক ফোঁড়ানোর রেওয়াজ শুরু হয়। সে সময় সেখানে নারীরা ঢাউস আকৃতির নাকফুল পড়তো, এখন সেখানে এর আকারে এসেছে পরিবর্তন, তবে এখনও কেউ কেউ জয়পুরি বড় নাকফুল পড়তে ভালবাসেন।

ফ্যাশনে নাকফুল বা নোজপিন

একসময় বিবাহিত মেয়েরাই নাকফুল বেশি পড়তো। কিন্তু আজকাল মেয়েদের পছন্দের গয়নার মধ্যে ছোট একটি নাকফুল সবার আগেই স্থান পেয়ে গেছে। নাকফুল মেয়েদের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণী, কর্মজীবী ও সদ্য বিবাহিতা নারীদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নাকফুল। তাই বলাই চলে মেয়েদের ফ্যাশনে নাকফুল খুবই পছন্দনীয়।

নাকফুল সিলেকশন 

মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের নাকফুল ব্যবহার করে থাকে। নাকফুল নিয়ে মেয়েদের সবচেয়ে বড় সমস্যাই হচ্ছে যে সবার নাকে সব নাকফুল মানায় না। এক্ষেত্রে ফেইসের শেইপ অনুযায়ী নাকফুল সিলেক্ট করতে হবে। নাক ও মুখের আকৃতির সঙ্গে নাকফুলের সমীকরণ মেলাতে পারলেই আপনার লুক বদলানো সম্ভব। এই যেমন মুখ ছোট হলে নাকফুল ছোট হবে, মুখ বড় হলে নাকফুলও বড়। আবার কাপড় মেকআপের সাথে সামঞ্জস্য রেখেও সিলেক্ট করতে পারেন। তবে নাকফুলে বেশি ফোকাস করতে চাইলে মেকআপ হালকা করে করাই ভালো। শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ, ফতুয়া, টি-শার্ট সবকিছুর সাথেই মানিয়ে যাচ্ছে ছোট এই গয়নাটি। বিয়ে থেকে শুরু করে যেকোন অনুষ্ঠানে মেয়েরা তাদের পছন্দের গয়নার তালিকায় নাকফুলকে অবশ্যই রাখে।

নাকফুল বা নোজপিনের প্রকারভেদ   

নাকফুল এর প্রকারভেদ - shajgoj.com

 

আজকাল মেয়েদের ফ্যাশনে নাকফুল এর চাহিদা অনেক। বিভিন্ন প্রকারের নোজপিন রয়েছে। ছোট বড় পাথরের নাকফুল, স্বর্ণের, রুপার, হীরার, অ্যান্টিকের ইত্যাদি এমন অনেক ধরনের নোজপিন মেয়েরা পড়ে থাকে। এছাড়াও নথ, নোলক, নাকছাবি, নাকপাশা, ট্রাইবাল নথ, মারাঠি নথ ইত্যাদি আরও অনেক ধরনের গয়নাই শোভা পাচ্ছে মেয়েদের নাকে।

নাক ফোঁড়ানো

অনেকেই ব্যথার ভয়ে নাক ফোঁড়াতে চায় না। কিন্তু আজকাল পার্লারে খুব সহজেই ব্যথা ছাড়াই নাক ফোঁড়ানো হয়। পার্লারে পুশপিন লাগানো গানমেশিনের সাহায্যে নাকের সঠিক স্থানে ফুঁটা করা হয়। এর আগেই নাকে অ্যান্টিবায়োটিক স্প্রে করা হয় যেন ক্ষত না হয়। ৩-৪ দিন পর এই পুশপিন খুলে নিয়ে আপনার পছন্দমতো নাকফুল কিংবা নথ পড়তে পারেন। তবে নাক ফোঁড়ানোর পর সোনার নাকফুল বা নথ পড়াই ভালো এতে ফোঁড়ানো অংশ পেকে যাওয়ার আশংকা থাকবে না।

নাক ফোঁড়ানোর পর পেকে গেলে করনীয়

(১) নাক ফোঁড়ানোর পর তিন দিন পর্যন্ত লক্ষ্য রাখবেন নাকে পানি কিংবা ঘাম যেন না লাগে।

(২) পেকে গেলে প্রথমেই সেভলন বা হেক্সিসল দিয়ে আক্রান্ত স্থানটি ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

(৩) অনেক সময় নাক ফোঁড়ানোর সময় শিরায় লাগলে এমন হয়। এক্ষেত্রে এই ছিদ্র বন্ধ করে নতুন করে আবার ফোঁড়াতে হবে।

(৪) শুকনা মরিচের ভেতর সরিষার তেল দিয়ে গরম করে সে তেল লাগালে ২ দিনেই শুকিয়ে যাবে। তবে শিরায় ফোঁড়ানো হলে সেক্ষেত্রে শুকাবে না।

(৫) রসুনের কোয়া ছেঁচে একটুখানি সরিষার তেল দিয়ে গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে জলদি শুকিয়ে যাবে।

(৬) সমস্যা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের নাকফুল পরিচিতি

১) ছোট পাথরের নাকফুল

ছোট পাথরের নাকফুল - shajgoj.com

বিভিন্ন রঙের এক পাথরের নাকফুল মেয়েরা আজকাল পড়ে থাকে। রেগ্যুলার ব্যবহারের জন্য এ ধরনের নাকফুল বেছে নিতে পারেন। শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ, ফতুয়া, টি-শার্ট সবকিছুর সাথেই এক পাথরের ছোট নাকফুল মানানসই। সাধারণত মেয়েরা সাদা রঙ এর পাথরের নাকফুলই বেশি পড়ে থাকে কিন্তু বাজারে এখন বিভিন্ন রঙের পাথরের নাকফুল পাওয়া যাচ্ছে। আপনি চাইলে ড্রেসের সাথে ম্যাচ করে পছন্দের রঙ এর নাকফুলটি সিলেক্ট করে নিতে পারেন। মেয়েরা ফ্যাশনে নাকফুল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছোট পাথরের নাকফুলই বেশি পছন্দ করে।

২) নথ

ফ্যাশনে নথ - shajgoj.com

 

একসময় মেয়েরা খালি নাকফুল পড়তে সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করতো। কিন্তু আজকাল নাকফুলের পাশাপাশি নথের উপরও ঝুঁকে পড়ছে মেয়েরা। ফ্যাশনে নাকফুল এর পাশাপাশি পছন্দের তালিকায় নথও এখন অনেক আলোচনায় আছে। গোলাকার, ত্রিকোণ বা চৌকোণ বিভিন্ন ডিজাইনের নথ এসেছে বাজারে। শুধু সোনা বা সোনার মধ্যে পাথর বসানো নথেই রয়েছে বেশ কয়েকটি নকশা। এছাড়াও অ্যান্টিক, রুপা এবং ডায়মন্ডের নথও মেয়েদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

৩) নোলক

ফ্যাশনে নোলক - shajgoj.com

আগে গ্রামাঞ্চলে নোলকের চল অনেক বেশি ছিলো। আজকাল মেয়েদের তেমন একটা নোলক পড়তে দেখা যায় না। কেও কেও হয়তো নিজের ফ্যাশনের ট্রেন্ড হিসেবে নোলককে বেছে নিচ্ছেন। এছাড়া নোলক তেমন একটা পড়তে দেখা যায় না।

(৪) নাকছাবি  

ফ্যাশনে নাকছাবি - shajgoj.com

 

নাকছাবি হচ্ছে এমন একটি ফ্যাশন অ্যাকসেসরি, যা চট করে পাল্টে দিতে পারে আপনার লুকটা। নাকছাবি খুবই ফ্যাশনেবল এবং আকর্ষনীয় একটি লুক নিয়ে আসে। এটি সোনালী রঙ এর হলে সবচেয়ে ভালো। সোনার তৈরি কিংবা ইমিটেশন ও হতে পারে। তবে ট্র্যাডিশনাল সাজ, শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে সোনার নাকছাবিই বেশি মানাবে।

(৫) টিপ নাকফুল 

ফ্যাশনে টিপ নাকফুল - shajgoj.com

নাকফুল পড়তে সব মেয়েরাই পছন্দ করে। বিশেষ করে ট্র্যাডিশনাল সাজ দিলে নাকফুল না পড়লে সাজটা যেন অসম্পূর্ণই থেকে যায়। কিন্তু নাক ফোঁড়াতে অনেকেই পছন্দ করে না। আবার অনেকে ব্যথা পাওয়ার ভয়েও নাক ফোঁড়ায় না। কিন্তু তাই বলে কি নাকফুল পড়বে না? তা কি হয়? আজকাল বাজারে অনেক ধরনের টিপ নাকফুল পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েরা নাক না ফোঁড়ালেও এখন খুব সহজেই নিজের নাকফুল পড়ার শখ পূরণ করে নিচ্ছে।

(৬) মারাঠি নথ

ফ্যাশনে মারাঠি নথ - shajgoj.com

এই নথটি মূলত মারাঠি মেয়েরা পড়লেও আজকাল ফ্যাশন জগতে এটি খুব ট্রেন্ডি। সাধারণ সোনা মুক্তা ও লাল-সবুজ পাথর দিয়ে তৈরি হয় এই মারাঠি নথ। এককালে নাক ফোঁড়ানো না থাকলে এই নথ পড়াটাই সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন ফলস মারাঠি নথও পাওয়া যায়। ফলে সাজতে চাইলে যখন খুশি পরতে পারেন এরকম নথ।

(৭) নাকপাশা

ফ্যাশনে নাকপাশা - shajgoj.com

এটি একটু বড় আকারের হয়ে থাকে। সাধারণত সোনালী রঙের নাকপাশাই মানানসই। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের নাকপাশা আজকাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যাদের নাক এবং ফেইস একটু বড় তাদের এই ধরনের পাশাগুলো বেশি মানাবে। ফেইস ছোট হলে এই নাকপাশাগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।

(৮) ব্রাইডাল নথ

ফ্যাশনে ব্রাইডাল নথ - shajgoj.com

বিয়ের গয়নায় নথের আবেদনই সবচেয়ে বেশি। বউ সাজবেন আর নথ পড়বেন না তা কি হয়? বিয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গয়না হচ্ছে ব্রাইডাল নথ। কনের নাকে একবিন্দু ঝকমকে নথ চারদিকের আলো আরও বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের নথ ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ওভারসাইজড নথের চাহিদা এখন একটু বেশি। হেভি নথ না পরতে চাইলে ছোট নথেও নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। তবে মুখের আকার অনুযায়ী নথ সিলেক্ট করাই সবচেয়ে ভালো।

(৯) ট্রাইবাল নথ

ফ্যাশনে ট্রাইবাল নথ - shajgoj.com

এ ধরনের নথগুলো মাল্টি কালারের পাথর এবং পার্ল দিয়ে তৈরি হয়। অনেক কালারফুল হয় এই ট্রাইবাল নথ। শাড়ি, লেহেঙ্গা ইত্যাদি যেকোন আউটফিটের সাথে মানানসই এইসব নথ। ট্রাইবাল নথ আপনাকে খুবই দারুণ একটা লুক এনে দিবে।

আজকাল মেয়েদের ফ্যাশনে নাকফুল খুবই মূল্যবান স্থান গ্রহণ করে রেখেছে। যেকোন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে কলেজ, ভার্সিটি কিংবা অফিসে মেয়েরা নোজপিন বা নাকফুল ব্যবহার করেই থাকে।

 

ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ

জুয়েলারি; ফয়সাল তুষার

The post ফ্যাশনে নাকফুল | জানুন অলংকরণের ইতিহাস ও ৯ ধরনের নোজ পিন সম্পর্কে! appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles