নিজেকে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা আমরা সবসময়ই করে যাই। সেজন্যই কিন্তু সেই ছোট থেকে মা সুন্দর করে চুল আঁচড়ে সিঁথি করে দুই ঝুঁটি বা বেণীর মাধ্যমে পরিপাটীভাবে সাজিয়ে দিত। তখন প্রথম প্রথম এমন হেয়ার স্টাইলে কত খুশিই না হতাম! চুল সিঁথি করে চুল আঁচড়ে রাখলে ভালোতো লাগেই, তবে কথায় আছে না- “বেশি ভালো, ভালো নয়”। যদি প্রতিদিন একইভাবে চুল সিঁথি করা আপনার অভ্যাস হয়ে যায় তবে তা হেয়ারফলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর ফলাফলে ক’দিন বাদেই দেখতে পাওয়া যায় স্ক্যাল্প। যাকে খাঁটি বাংলায় বলতে পারেন- চুল পড়ে ফাঁকা মাথার তালু দেখা যায়। সিঁথি করলে চুলের জন্য ভালো খারাপ উভয় প্রভাবই পরে। তবে আজ চলুন জেনে নেয়ে যাক প্রতিদিন একইভাবে চুল সিঁথি করলে কী কী সমস্যা হয়ে থাকে!
চুল সিঁথি করা থেকে সমস্যা সমূহ
১) চুলের একই অংশে প্রেশার
প্রতিদিন একইদিকে সিঁথি কেটে হেয়ার স্টাইল করলে চুলের একই অংশে প্রেশার পরে। ডেইলি একদিকে সিঁথি কাটায় অতিরিক্ত প্রেশারের ফলে সেই অংশের চুলের গোড়া দূর্বল হয়ে পরে। এ কারণে ক্রমেই ঝরতে থাকে চুল। আর তারপর দেখা মেলে টাক মাথার। তাই কয়েকদিন পর পর সিঁথি কাটার অবস্থান পরিবর্তন করুন।
২) মাথার ত্বকের রঙ পরিবর্তন
প্রতিনিয়ত একদিকে সিঁথি কাটার ফলে আরও যেটি খারাপ হয়, তা হলো স্ক্যাল্পের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। অবাক হচ্ছেন? কারণ বলছি তবে। সূর্যরশ্মি সরাসরি আমাদের মাথার ত্বকে পরে। যার ফলে মাথার ত্বক কালো হয়ে যায়। এছাড়াও মাথার ঐ অংশে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায়। আর স্ক্যাল্পের ড্রাইনেস চুল ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ।
৩) এক সাইডের চুল বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়
যারা একদিকে সিঁথি করে চুল আঁচড়ান, তারা যত ধরনের হেয়ার স্টাইলই করতে যান না কেন সিঁথি কিন্তু চেঞ্জ করেন না তেমন। কারণ এতে প্রবলেম ফেইস করেন অনেকে। সিঁথি অনেক দিন থেকে একই দিকে করার ফলে চুলের গোড়ার বিন্যাসও তেমন হয়ে যায়। এতে করে বিপরীত দিকে সিঁথি করতে গেলেই অনেক বেশি উঁচু হয়ে থাকে যা দেখতে ভালো লাগে না। আমাদের প্রতিদিনকার হেয়ার স্টাইলের মধ্যে চুল স্ট্রেইট করা সবচেয়ে কমন। তাই দেখা যায় যে, যেদিকে সিঁথি কাটা থাকে, অন্য কোথাও স্ট্রেইটনার বা ড্রায়ার ব্যবহার না করলেও সেদিকে অল্প করে হলেও স্ট্রেইটনার বা ড্রায়ার ব্যবহার করা হয়ই! ফলাফলে ঐ অংশের চুল আদ্রতা হাড়ায় ও সেই সাথে হেয়ার ড্যামেজ দেখা দেয়।
চুল সিঁথি করা থেকে সমস্যা পরিত্রাণের উপায়
১) চুলের সিঁথি পরিবর্তনের সময়
চেষ্টা করুন অন্তত ৩/৪ দিন পরপর চুলের সিঁথি চেঞ্জ করার। এতে করে সবসময় একদিকের চুল কম ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
২) হেয়ার স্টাইল পরিবর্তন করুন
সম্ভব হলে প্রতিদিন হেয়ার স্টাইল পরিবর্তন করুন। চাইলে চুল সামনে কিছুটা পাফ করে নিতে পারেন। কখনো একটি সিম্পল পনিটেইল করতে পারেন।
৩) ছুটির দিন কেয়ারফুল থাকুন
আপনি যদি রেগ্যুলার অফিস করে থাকেন আর একই রকম হেয়ার স্টাইল করেন, তবে চাইলে ছুটির দিনে বাসায় থাকলে সিঁথি পরিবর্তন করে নিন বা সিঁথি ছাড়া খোঁপা বা পনিটেইল অর্থাৎ ঝুঁটি করে রাখুন।
চুল সিঁথি করতে কিছু টিপস
১) কার্বন টেইল চিরুনি ব্যবহার
চুলের সিঁথি চেঞ্জ করার জন্য আপনি কার্বন টেইল চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন। হেয়ার স্টাইলিস্টরা চুল দু’ভাগ করতে এই চুরুনি ব্যবহার করে থাকেন। বিভিন্ন শপিং মল ও অনলাইন শপগুলো থেকে কিনতে পারেন।
২) হেয়ার ক্লিপ
সিঁথি পরিবর্তন করতে অর্থাৎ বিপরীত দিকে সিঁথি কাটলে যদি চুল ঠিক করে বসতে না চায়, তবে হেয়ার ক্লিপ দিয়ে চুল আটকে নিতে পারেন। এতে করে সিঁথি চেঞ্জও হলো আবার স্টাইলও!
৩) ড্রাই টেক্সচার হেয়ার স্প্রে
ক্লিপ ব্যবহার করা ছাড়াও আপনি আরেকটি উপায়ে চুলের সিঁথি পরিবর্তন করতে পারেন। হেয়ার স্প্রে নরমালি চুলে দিলে তা সেট হয়ে থাকে সুন্দরভাবে। তবে ড্রাই টেক্সচার হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করলে চুল কিন্তু ঝরঝরে থাকে আবার আপনি সুন্দর করে চুল ম্যানাজও করতে পারবেন।
আশা করি লেখাটি আপনাদের উপকারে আসবে। চুল সিঁথি করার ফলে অকালে আর ঝরবে না চুল। ভালো থাকুন, আপনার দিনগুলো সুন্দর হোক আপনার সুন্দর চুলের প্রশংসায়!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; উইকিহাও.কম; নিউজ মেডিকেল.নেট
The post চুল সিঁথি করা থেকে হেয়ারফল বাড়ছে কি? appeared first on Shajgoj.