সত্যি করে বলুনতো? এমন হলে কেমন হতো যদি ইচ্ছেমতো স্কিন ক্লক ঘুরিয়ে দেয়া যেতো? অর্থাৎ আপনার স্কিন একবার বুড়িয়ে যেতে শুরু করলেও আপনি আবার আপনার ইচ্ছেমতো স্কিন টোন ফিরে পেতে পারতেন! আসলে সবাই এমনটা চাইলেও প্রাকৃতিক উপাদান ছাড়া এমন কোন ম্যাজিক ল্যাম্প নেই যার সাহায্যে আমরা আমাদের দ্রুত ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া অথবা অ্যান্টি এজিং থেকে রক্ষা পেতে পারি। তাই আজ আমরা এমন কিছু জাদুকরী প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে হাজির হলাম যেগুলো ত্বকের অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। তাহলে চলুন কিছু অ্যান্টি এজিং সুবিধাযুক্ত উপকারী ভেষজ এর কার্যকারিতা এবং সেগুলোর ব্যবহারবিধি দেখে নেয়া যাক।
অ্যান্টি এজিং সুবিধাযুক্ত উপকারী ভেষজ
১. তুলসি
তুলসী পাতায় আছে এমন কিছু সিক্রেট উপাদান যা ত্বকের তারুণ্য বেশিদিন ধরে রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ইউভি এক্সপোজার (UV exposure) আপনার ত্বকের ক্ষতি করে এবং কোলাজেন (Collagen) হ্রাস ঘটায়। কোলাজেন এমন একটি যৌগিক উপাদান যা আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় গবেষকরা বিষয়টি সাময়িকভাবে আবিষ্কার করেছেন যে, ত্বকে তুলসীর প্রয়োগ ত্বকের আর্দ্রতা স্তর ধরে রাখে, ত্বকের রুক্ষতা হ্রাস করে, ত্বক স্ক্যালিনেস (Scaliness) করে ত্বকের বলিরেখা দূর করে ও ত্বক করে তোলে মসৃণ।
উপকরণ
- কচি তুলসী পাতা
- ময়দা
- মধু
পদ্ধতি
২. দারুচিনি
দারুচিনি আয়ুর্বেদিক ঔষধে বহুল ব্যবহৃত হয় এর বিশেষ নিরাময়যোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য। এটিও এক ধরনের কোলাজেন প্রতিরোধকারী উপাদান বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত। এতে থাকা অ্যান্টি-এজিং উপাদানগুলো ত্বকের ভাঙ্গন এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা জনিত ক্ষতি রোধ করে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে এটি কোলাজেন সংশ্লেষণকেও বাড়িয়ে তোলে এবং বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো প্রতিরোধ করে। চলুন তাহলে দেখে নিই অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্য দারুচিনি কীভাবে ব্যবহার করবেন।
উপকরণ
- ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো
- ১ টেবিল চামচ কাঁচা মধু
পদ্ধতি
৩. অশ্বগন্ধা
অশ্বগন্ধা একটি বহুল ব্যবহৃত ও অত্যন্ত জনপ্রিয় ঔষধি গাছ। এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (Antibacterial) বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আরো রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল (Anti-fungal) বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের কোষকে রক্ষা করে ক্ষারযুক্ত পদার্থ থেকে। এটি আপনার ত্বকের কোষকে স্বাস্থ্যকর রাখে ও ত্বক থেকে বয়সের লক্ষণগুলোকে ধীরে ধীরে কমিয়ে তুলতে সাহায্য করে। অ্যান্টি এজিং এর জন্য এটি কীভাবে ব্যবহার করবেন চলুন দেখে নেই।
উপকরণ
- ১ চা চামচ অশ্বগন্ধা গুঁড়ো
- ১ চা চামচ শুকনো আদা গুঁড়ো
- ১ চা চামচ লেবুর রস
পদ্ধতি
৪. লবঙ্গ
লবঙ্গের রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য সুবিধা। লবঙ্গ তেল অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য আয়ুর্বেদে বহুল ব্যবহৃত একটি নাম। একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে লবঙ্গতে রয়েছে ফ্রি র্যাডিকাল স্ক্যাভেনগিং (Free radical scavenging) বৈশিষ্ট্য এবং এতে রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট(Antioxidant) যা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো কমিয়ে দেয়। অ্যান্টি এজিং বেনিফিটস পেতে এটি কীভাবে ব্যবহার করবেন একনজর দেখে নেয়া যাক।
উপকরণ
- ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল
- ৩-৪ ফোঁটা লবঙ্গ তেল
পদ্ধতি
৫. আদা
হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভেষজ উপাদানটি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একাধিক রোগের ঔষধ তৈরিতেও এর ব্যবহার তুমুল জনপ্রিয়। এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (Anti-inflammatory) বৈশিষ্ট্য যা বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো প্রতিরোধে সহায়তা করে। একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে আদা ফ্রি র্যাডিকেল (Free radical) উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যা বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি করে যার দ্বারা আপনার ত্বকের ক্ষতিসাধন হয় সেগুলো থেকে ত্বক কে রক্ষা করে। অ্যান্টি এজিং সুবিধার জন্য আদা কীভাবে ব্যবহার করবেন চলুন দেখে নিই।
উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- ৪ টেবিল চামচ ব্রাউন সুগার
- ১ টেবিল চামচ আদা বাটা
পদ্ধতি
৬. অরিগানো
এই ভেষজটি কেবল আপনার খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এটি আপনার ত্বকের বার্ধক্য কমাতে সহায়তা করে কারন অরিগানো হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর একটি স্টোরহাউস এবং এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডগুলো ফ্রি র্যাডিক্যাল এর ক্ষতি রোধ করে এবং বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলোর প্রকাশ বিলম্বিত করে। তাহলে চলুন দেখে নেই অ্যান্টি এজিং এর জন্য অরিগানো কীভাবে ব্যবহার করবেন।
উপকরণ
- ১ চা চামচ অরিগানো পেস্ট
- ১০-১৫ ড্রপ অ্যাসেনসিয়াল অয়েল বা প্রয়োজনীয় তেল
- ১ টেবিল চামচ অলিভ, নারকেল বা জোজোবা তেল
পদ্ধতি
১. প্রথমে সবগুলো উপাদান মিশ্রিত করুন।
২. তারপর আপনার মুখে ও ঘাড়ে ঘুমানোর আগে মালিশ করুন এবং সারারাত রেখে দিন।
৩. পরের দিন ধুয়ে ফেলুন।
৭. হলুদ
হলুদ এমন একটি উপকারী ভেষজ যা বিভিন্ন সংক্রমণের চিকিৎসায়, কাটা-ছেড়া, ক্ষত সারাতে বা শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে হলুদের জুড়ি নেই। হলুদ সবকিছুর জন্য একটি যাদুকরী সমাধান। তবে আপনি কি জানেন এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ফ্রি র্যাডিকেলস স্ক্যাভেঞ্জিং এবং এন্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা আপনার ত্বককে রক্ষা করে বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো থেকে। এখন অ্যান্টি এজিং এর জন্য হলুদ কীভাবে ব্যবহার করবেন চলুন জেনে নেই।
উপকরণ
- আধা চামচ হলুদ
- ১ টেবিল চামচ কাঁচা মধু
- ১ -২ ফোটা প্রয়োজনীয় তেল (ঐচ্ছিক)
পদ্ধতি
কখনও কখনও, ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া আপনার জিনের উপর নির্ভর করে। কারো কারো বয়স চল্লিশের কাছাকাছি বা চল্লিশ পার হলেও তাদের কম বয়সী দেখায় আবার অন্যদের বয়স দ্রুত বেড়ে যায়। এই ভেষজগুলো আপনার ত্বককে হয়তো চিরসবুজ করে তুলতে পারবে না তবে আপনার ত্বকের কোষগুলো সুস্থ রাখতে ও তারুণ্যদিপ্ত রাখতে সাহায্য করবে। সুতরাং, রাসায়নিকের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন আর ত্বককে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করুন।
ছবি- সংগৃহীত: ইমেজেসবাজার.কম
The post অ্যান্টি এজিং সুবিধাযুক্ত ৭টি উপকারী ভেষজ সম্পর্কে জানা আছে কি? appeared first on Shajgoj.