মেকআপ করতে গেলে একটি প্রসাধনী নাম প্রায়ই শোন যায় তা হলো “কনসিলার”। আইশ্যাডো, লিপস্টিক এমনকি বেইজ মেকআপটা ঠিক থাকলেও মনে হয় কিছু একটা বাদ পড়েছে। মেকআপ-এর কোথাও জানি অপূর্ণতা রয়ে গেছে। মেকাআপে পূর্ণতা এনে দিবে কনসিলার। চোখের নিচের কালো দাগ কিংবা পিম্পলের দাগ অথবা বড় লোমকূপ যাই হোক না কেন, সবকিছু ঠিক করে দিতে পারে কনসিলার। শুধু ভারী মেকআপ নয়, নিয়মিত হালকা মেকআপেও কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন। শুধু তাই নয়, কনসিলার ফেইস পাউডার এবং লিপস্টিক দিয়ে শেষ করতে পারেন প্রতিদিনের অফিস লুক। এই যে এত গুণের কনসিলার, এই কনসিলারটা কী? আর ব্যবহার কী? এইসব কিছু নিয়ে আজকের ফিচারটি। কনসিলারের আদ্যপ্রান্ত জানতে আমাদের সাথে থাকুন!
কনসিলার কী?
চোখের নিচে কালো দাগ, ব্রণের কালো দাগ কিংবা ত্বকের অন্য কোনো দাগ ঢাকতে কনসিলার (concealer) ব্যবহার করা হয়। কিছুটা ঘন এবং ভারী কভারেজের হয়ে থাকে কনসিলার। দাগ ঢাকা ছাড়াও নিখুঁত বেইজ মেকআপের জন্য ব্যবহার করতে পারেন এটি। মূলত দুই ধরনের কনসিলার পাওয়া যায়। এক, ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা ঢাকার জন্য ব্যবহার করা হয়, এই কনসিলারকে কালার কারেকটিং কনসিলার (color correcting concealer) বলা হয়। দুই, নাকের দুইপাশে রঙের ভিন্নতা ঠিক করতে কিংবা চিবুকের রঙ পরিবর্তন করতে এই ধরনের কনসিলার ব্যবহার করা হয়।
সাধারণ চোখের নিচের কালো দাগ, ব্রণের দাগ ইত্যাদি ঢাকতে অন্য একটি কনসিলার ব্যবহার করা হয়। সাধারণ মেকআপে এই ধরনের কনসিলার বেশি ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের কনসিলারগুলো তরল, ক্রিম বা স্টিক আকারে বাজারে পাওয়া যায়। এই কনসিলার ত্বকের যেকোনো কালো দাগ ঢাকতে সাহায্য করে।
কীভাবে কনসিলার পছন্দ করবেন?
কনসিলারের টেক্সচার এবং শেইড উভয় গুরুত্বপূর্ণ পারফেক্ট কনসিলার পছন্দ করার জন্য। কনসিলার দিয়ে ত্বকের কালো দাগ, চোখের নিচের কালো দাগ, ব্রণের দাগ সব ঢাকা সম্ভব। তবে এরজন্য প্রয়োজন কনসিলার পারফেক্টলি পছন্দ করা। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য কিছুটা কমলা বা পিচ রঙের কনসিলার ব্যবহার করা উচিত।
সঠিক কনসিলার পছন্দ করার টিপস
১) দোকান থেকে নমুনা কনসিলার নিজের ত্বকের সাথে মিলিয়ে নিন। পর্যাপ্ত আলোর মাঝে এই পরীক্ষাটি করুন।
২) চোখের নিচে ব্যবহারের জন্য ত্বকের রঙের চেয়ে এক বা দুই শেইড হালকা কনসিলার পছন্দ করুন। এছাড়া কিছুটা কমলা বা পিচ কালারের কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন। পারফেক্ট কনসিলার হাইলাটার হিসাবেও কাজ করে থাকে।
৩) প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য কনসিলারের টেক্সচার হওয়া উচিত হালকা থেকে মাঝারির মধ্যে এবং কম ঘনত্বের। এই কনসিলারগুলো ত্বকে একটি আরামদায়কভাব তুলে ধরে এবং লোমকূপ বন্ধ করা থেকে বিরত থাকে।
কীভাবে কনসিলার ব্যবহার করবেন?
এতক্ষনতো কনসিলার নিয়ে জানলেন, এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক কনসিলার ব্যবহার করার পারফেক্ট নিয়ম!
১) ক্লিন স্কিন
যেকোনো মেকআপ ব্যবহার করার আগে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ত্বক ক্লিন, এক্সফলিয়েট এবং হাইড্রেটিং করে অল্প পরিমাণ প্রাইমার (primer) লাগিয়ে নিন। তারপর কনসিলার ব্যবহার করুন।
২) চোখের নিচে ব্যবহার
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য কনসিলার ব্যবহার করুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন ত্বকের কালার থেকে খুব বেশি হালকা যেন না হয়। সাধারণত কমলা অথবা হলুদ কালারের স্কিন কারেক্টর নিয়ে চোখের নিচে এবং চারপাশে লাগাবেন। এছাড়া পিচ টোন কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন। চোখের নিচে কনসিলার দিয়ে ত্রিভুজ আঁকুন তারপর ব্রাশ বা বিউটি স্পঞ্জ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।
৩) নাকের চারপাশে রেডনেস দূর করতে
নাকের চারপাশে যদি লালভাব থাকে তাহলে অল্প পরিমাণ কনসিলার নিয়ে নাকের চারপাশে ম্যাসাজ করে ব্যবহার করুন।
৪) ব্রণ বা ত্বকের কালো দাগ
ব্রণ কিংবা ত্বকের কালো দাগ কনসিলার দিয়ে ঢাকার জন্য আপনি ছোট কনসিলার ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। কালো দাগের উপর অল্প পরিমাণে কনসিলার লাগিয়ে ছোট কনসিলার ব্রাশ দিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। গ্রিন কনসিলার দিয়ে দাগ ত্বকের কালো দাগ ঢাকতে পারেন।
৫) ত্বকে কনসিলার সেট আপ
ত্বকে কনসিলার ভালোভাবে সেট করার জন্য পাউডার স্পঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। স্পঞ্জে সামান্য পাউডার নিয়ে নিন, তারপর সেটি কনসিলার লাগানো স্থানগুলোতে ব্যবহার করুন। আর বাকি ত্বকে ব্রাশ দিয়ে পাউডার ব্যবহার করুন। এটি মেকআপে একটি ম্যাট ফিনিশিং (mat finishing) দিতে সাহায্য করবে।
কনসিলার ব্যবহার করতে কিছু টিপস
কনসিলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই টিপসগুলো মাথায় রাখুন।
১) ত্বকে কনসিলার অ্যাপ্লিকেশন
ত্বকে ফাউন্ডেশন ব্যবহারের আগে বা পরে কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পরে কনসিলার ব্যবহার করা বেশি ভালো। যদি পরে ব্যবহার করেন তাতে ফাউন্ডেশন লাগানোর সময় কনসিলার ছড়িয়ে যাওয়ার বা বেশি ব্লেন্ড হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
২) ব্র্যান্ড কনসিলার ব্যবহার করুন
কনসিলার অব্যশই ব্র্যান্ড দেখে কেনার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, এটি আপনার ত্বকে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, যার কারণে একটি ভালো মানের কনসিলার ব্যবহার করা খুব প্রয়োজন।
৩) লিপস্টিক ও আইশ্যাডো দীর্ঘস্থায়ী করতে
আইশ্যাডোকে দীর্ঘসময় স্থায়ী করার জন্য চোখে কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন। লিপস্টিককে দীর্ঘস্থায়ী করতে ঠোঁটে কনসিলার ব্যবহার করতে পারেন।
তাহলে জানলেনতো মেকআপ করার সময় কনসিলার কেন, কিভাবে ব্যবহার করতে হবে! এবার কনসিলার আপনার মেকআপকে আরো বেশি সহজ এবং সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করবে।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; অ্যালিউর.কম; এফ্যামিলি.ভিএন
The post কনসিলার ব্যবহার করার পারফেক্ট নিয়ম জানেন কি? appeared first on Shajgoj.