Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

নবজাতকের জন্ডিস |প্রকারভেদ, কেন হয় ও করণীয় কী?

$
0
0

জন্মের পরপর অনেক সময়ই ছোট্ট সোনামণির তুলতুলে গোলাপি শরীরটাতে হলুদাভ আভা দেখা যায়। এটা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের চিন্তার অন্ত থাকে না। একে আলাদাভাবে নবজাতকের জন্ডিস বলা হয়। জন্মের পর থেকেই অনেক শিশু জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়। সঠিক পরামর্শের অভাবে এবং সঠিক চিকিৎসা না পেলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। তাই নবজাতকের জন্ডিস নিয়ে কিছু কথা বলবো আজ। দেখুন তবে!

নবজাতকের জন্ডিস কী, কত প্রকার ও কেন হয়?

জন্ডিস কী?

জন্ডিসে শিশুর হাত হলুদ হয়ে আছে - shajgoj.com

আমাদের শরীরে যে রক্ত তৈরী হয়, প্রতিনিয়ত সে রক্তটা ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে গিয়ে নতুন রক্ত তৈরি হয়। এখান থেকে বিলুরুবিন বের হয়। এর রংটা হলুদ। এর পরিমাণ যখন বেড়ে যায় তখনই জন্ডিস হয়।

কেন হয় নবজাতকের জন্ডিস?

নবজাতকের ক্ষেত্রে এই জন্ডিস-এর  কারণ এবং চিকিৎসা বড়দের থেকে ভিন্ন। নবজাতকের জন্ডিস বলতে আমরা সাধারণত ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস-কেই বুঝি।

নবজাতকের লোহিত কণিকা - shajgoj.com

নবজাতকের লোহিত কণিকায় যে হিমোগ্লোবিন থাকে, তা বড়দের থেকে গুণগতভাবে আলাদা এবং পরিমাণেও বেশি থাকে। এই হিমোগ্লোবিন-এর আয়ুষ্কাল কম। তাই এরা তাড়াতাড়ি ভাঙে এবং অধিক পরিমাণে বিলিরুবিন তৈরি করে। এই অতিরিক্ত বিলিরুবিন নবজাতকের অপরিণত ও অপরিপক্ব লিভার দ্রুত নিষ্কাশন করতে পারে না। এতে রক্তে এই মাত্রা বেড়ে যায়। আবার লিভার-এর কার্যক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে এবং সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়।

এ ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত হিমোগ্লোবিন ভেঙে বিলিরুবিন বা হলুদ রঙের যে বর্ণ কণিকা তৈরি হয় সেটা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকাতে তার হলুদ রংটি চোখে ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা যায় এবং এর মাত্রা ১০-১২ মিলিগ্রাম-এর বেশি থাকে। সাধারণত জন্মের ৪৮ ঘণ্টা পর পর এটা দেখা যায়।

নবজাতকের জন্ডিসের প্রকারভেদ

একে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা যায়।

১)  ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস বা সাধারন জন্ডিস

২)  ক্লিনিক্যাল জিন্ডিস

এই ক্লিনিক্যাল জন্ডিস-এর আবার প্রকারভেদ আছে। যেমন-

১. জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে হলে বুঝতে হবে, মা ও নবজাতকের রক্তের ভিন্নতাজনিত সমস্যা, মায়ের পেটে থাকাকালীন সময়ে কোন ইনফেকশন ( পক্সরুবেলাসিফিলিস), গ্লুকোজ সিক্স ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেস ডেফিসিয়েন্সি বা স্বল্পতা ইত্যাদি কারণে হতে পারে।

নবজাতকের হাইপোথারমিয়া - shajgoj.com

২. জন্মের ২৪-৭২ ঘন্টার মধ্যে হলে বুঝতে হবে, যদি প্রিম্যাচিওর বা অপরিণত শিশু হয়, জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট, এসিডেসিস, হাইপোথারমিয়া বা শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া, হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা, শিশুর কোন ইনফেকশন ইত্যাদি থাকে তবে হতে পারে।

৩. আর যদি জন্মের ৭২ ঘন্টা পর হয় তবে বুঝতে হবে, সেপ্টিসেমিয়া বা রক্তের ইনফেকশন, নিওন্যাটাল হেপাটাইটিস, ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস বা মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে জন্ডিস, হাইপোথাইরয়েড, বিলিয়ারি এন্ট্রিসিয়া, গ্যালাকটোসিমিয়া, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, কনজেনিটাল হাইপারট্রফিক পাইলোরিক স্টেনোসিস ইত্যাদি কারণে হয়েছে। এগুলো জন্মগত ত্রুটি ও রোগের নাম যার সঠিক চিকিৎসা রয়েছে।

কীভাবে বোঝা যাবে নবজাতকের জন্ডিস আছে?

১) নবজাতকের শরীর হলদেটে হয়ে যাবে।

২) প্রথমে মুখ হলুদাভ হয়। আস্তে আস্তে শরীর হলুদ হবে, এমনকি হাত ও পায়ের তালু পর্যন্ত হলুদ হয়ে যাবে।

৩) শিশু দুধ খেতে চাইবে না।

৪) পেট ফুলে যাবে।

নবজাতকের জন্ডিসে পেট ফুলে গিয়েছে - shajgoj.com

৬) নড়াচড়া কম করে।

৭) শরীরে তীব্র জ্বর থাকতে পারে। আবার শরীর অতিরিক্ত ঠাণ্ডাও হয়ে যেতে পারে।

৮) কোনো কোনো ক্ষেত্রে খিঁচুনিও হতে পারে।

জন্ডিস-এর মাত্রা ও কারণ নির্ণয়ের জন্য শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে নবজাতকের রক্তের প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। যেমন-রক্তে বিলিরুবিন-এর মাত্রা এবং তা প্রত্যক্ষ না পরোক্ষ তা নির্ণয়, মা ও নবজাতকের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা।

নবজাতকের জন্ডিস হলে কী ঝুঁকি হয়?

নবজাতকের জন্ডিস, এমন একটি বিষয় যে, এটা কখনোই অবহেলা করা যাবে না। জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি হলুদভাব চলে আসে শরীরে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়া খুব দ্রুত জন্ডিস বাড়ছে এমন মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ, জন্ডিসের যে বিলিরুবিন-টা, এটা মস্তিষ্কের যে বেরিয়ার আছে একে খুব সহজে পার করে যায়। গিয়ে এটি মস্তিষ্কে জমা হয়। একবার যদি সেখানে জমা হয়, তাহলে সেখান থেকে আর কিছুতেই বিলিরুবিন বের করা সম্ভব হয় না। সেই ক্ষেত্রে, এ থেকে ভবিষ্যতে শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে।

নবজাতকের জন্ডিস চিকিৎসা

নবজাতকের জন্ডিস চিকিৎসা ফটোথেরাপি - shajgoj.com

সাধারণত জন্মগত কারণে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জন্ডিস পরিলক্ষিত হয়। এসবের বেশির ভাগই ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস বা সাধারণ জন্ডিস। ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস-এর ক্ষেত্রে নবজাতককে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে ১০ দিন সূর্যের আলোতে রাখলেই ভালো হয়ে যায়। তবে জন্ডিস-এর মাত্রা বেশি মনে হলে (বিলিরুবিন ১৪ বা তার বেশি হলে) হাসপাতালে এনে ফটোথেরাপি দিতে হয়। নবজাতকের রক্তে বিলিরুবিন-এর মাত্রা কেমন, শিশু কত সপ্তাহে জন্ম গ্রহণ করেছে, বিলিরুবিন কী পরিমাণে বাড়ছে তার ওপর চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে। ফটোথেরাপি হল এক ধরনের বেগুনি আলোর মধ্যে, হালকা গরম আবহাওয়ায় শিশুটিকে কিছু সময়ের জন্য রাখা। বেশির ভাগ শিশু এক থেকে দুই দিন ফটোথেরাপি পেলেই ভালো হয়ে যায়। তবে নবজাতকের বিলিরুবিন যদি অতিমাত্রায় বাড়তে থাকে, তবে হাসপাতালে চিকিৎসা করানো উচিত। এ সময় শিশুকে রক্ত দেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।

নবজাতকের জন্ডিস হলে কি বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে?

নবজাতককে কোনো অবস্থায়ই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা যাবে না। শিশুকে নিয়মিত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এতে বারবার পায়খানা হয়, পায়খানার মাধ্যমে শরীরে জমে থাকা বিলিরুবিন বের হয়ে যায়। বিশেষ করে ফিজিওলজিক্যাল অর্থাৎ স্বাভাবিক জন্ডিসের মূল চিকিৎসাই হচ্ছে শিশুকে ঠিকমতো মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো।

তাহলে জানলেনতো নবজাতকের জন্ডিস হলে কী করতে হবে? ঘাবড়ে না গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর আশা করি সব মায়েদের এই আর্টিকেল-টি ভালো লাগবে।

 

ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ

The post নবজাতকের জন্ডিস | প্রকারভেদ, কেন হয় ও করণীয় কী? appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles