কলকাতায় রাজারহাটের নিউ টাউন-এ ৪৮০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত অসাধারণ সুন্দর কলকাতা ইকো পার্ক-এর সৌন্দর্য সম্পর্কে আপনারা ইতোমধ্যেই পরিচিত হয়ে গেছেন আমার আগের আর্টিকেলটি পড়ে। সুবিশাল এই পার্কটিতে বিভিন্ন রকমের এত এত আকর্ষণ রয়েছে যে একটি আর্টিকেলে পুরোটা লেখা সম্ভব না। আর তাইতো এই পার্ক-এর নানান আকর্ষণগুলোর ব্যাপারে আরও অনেক কিছু জানাতে কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ২ নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম আজকে। তাহলে চলুন শুরু করি কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ২ নিয়ে কথা।
কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ২ : ভেতরের আকর্ষণ
এক কথায় পার্কের ভেতরের সমস্ত কিছুই দেখার মত। সবুজ ঘাসে ঢাকা পায়ে হাঁটা রাস্তা থেকে শুরু করে টয় ট্রেন, বিভিন্ন ধরনের থিম ফরেস্ট, আঁকাবাঁকা লেক সব কিছুই আপনাকে আকৃষ্ট করবে। ইকো পার্কের গাইড ম্যাপে ৩৭টি পয়েন্টের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এই ৩৭ টি পয়েন্ট ছাড়াও অনেক ধরনের খেলার ব্যবস্থা ও বিনোদনমূলক কাজের ব্যবস্থা আছে পার্কে।
কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ২: পার্কের ভেতরের খুঁটিনাটি
১) মজাদার ও সাশ্রয়ী ফুডকোর্ট
পার্কের ভেতরে বাইরের খাবার নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু এটা শুনে মন খারাপ করার কিচ্ছু নেই। অনেক ধরনের মজাদার খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে ৪ নং গেটের কাছেই। আর এখানে খাবারের দামও বেশ সাশ্রয়ী। তাই ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলে পেট জুড়িয়ে নিতে পারেন নিশ্চিন্তে। এসব খাবারের দোকানে বিভিন্ন রকম স্ন্যাকস, বিরিয়ানি, কোল্ড ড্রিংকস, খাওয়ার পানি, কফি সব কিছুই পাওয়া যায়। ২ নং গেটের কাছে ওয়াটার ATM আছে যেখানে আপনি ২ টাকায় ১ লিটার খাওয়ার পানি পাবেন। ২ টাকার কয়েন মেশিনের ভেতরে দিয়ে নিজেই বোতলে পানি ভরে নিতে পারবেন।
২) বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অ্যাক্টিভিটিজ
১. সাইক্লিং
এই পার্কে ছোট থেকে বুড়ো সবার জন্য রয়েছে নানান ধরনের আনন্দদায়ক কর্মকাণ্ড। ঘণ্টা হিসেবে সাইকেল ভাড়া নিতে পারেন। আধা ঘণ্টার জন্য ভাড়া ১৫০ টাকা। এখানে ২ সিটের সাইকেলও আছে। বাটারফ্লাই গার্ডেন-এর সামনে সাইকেলের টিকেট পাওয়া যায়। ছোট বাচ্চাদের সাইকেলও পাওয়া যায় আধা ঘণ্টার জন্য, ভাড়া ৫০ টাকা।
২. তীর ধনুক ছোঁড়া
৫ টি তীর ছুঁড়তে আপনাকে দিতে হবে ৫০ টাকা।
৩. প্যাডেল বোট (Paddle Boat)
আধা ঘণ্টার জন্য ভাড়া ১৫০ টাকা।
৪. শিকারা
আপনি চাইলে পরিবার নিয়ে শিকারায় করে লেকে ঘুরে আসতে পারেন বিকেলে। ৪ জনের জন্য একটি শিকারায় আধা ঘণ্টার জন্য ঘুরতে খরচ হয় ১৫০ টাকা।
৫. ওয়াটার জরবিং (Water Zorbing)
আপনি যদি একটু বেশি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হয়ে থাকেন তাহলে ওয়াটার জরবিং অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা দিতে পারে আপনাকে। ইকো পার্কের লেকে ওয়াটার জরবিং করতে খরচ হবে ১০ মিনিটের জন্য ১৫০ টাকা।
৬. গেমিং জোন (Gaming Zone)
পার্কের গেমিং জোন-এ যেয়ে ভিডিও গেমস খেলতে চাইলে আপনাকে ৩০ মিনিটের জন্য দিতে হবে ৫০ টাকা।
৭. কায়াকিং (Kayaking)
আপনি চাইলে কায়াকিং-এর অভিজ্ঞতাও নিতে পারেন। ৩০ মিনিট কায়াকিং করতে পারেন ১৫০ টাকা খরচ করে।
৮. অন্যান্য
এছাড়াও আরও অনেক রকমের অ্যাক্টিভিটিজ আছে সুবিশাল এই পার্কে। আমি সব কিছু দেখতে পারি নি সময়ের অভাবে। আপনি যদি সারাদিনের জন্য যান এবং ইকো পার্কের গাইড ম্যাপ দেখে সঠিক একটা প্ল্যান করে যান তাহলে নতুন ও আকর্ষণীয় আরও অনেক রকমের অ্যাক্টিভিটিজ-এর সন্ধান পাবেন।
৩) রবি অরণ্য
ইকো পার্কের ১নং গেটের কাছে তৈরি করা হয়েছে রবি অরণ্য। রবীন্দ্রনাথের গল্প, কবিতায় যে সব গাছের উল্লেখ পাওয়া যায় সেই সব গাছ যেমন ছাতিম, বেল, শিমূল ইত্যাদি গাছ এখানে লাগানো হয়েছে।
৪) ফ্লোটিং মিউজিক ফাউনটেইন
লেকের মধ্যে সন্ধ্যা ৬টার পর শুরু হয় এটি।
৫) রেইন ফরেস্ট
পার্কের ভেতরে এই অংশে বিশাল বড় বড় ফোয়ারা মত করা আছে যা দিয়ে ঝিরিঝিরি পানি ছিটানো হয়। এখানে আসলে এই ঝিরিঝিরি পানি আপনাকে বৃষ্টির একটা অনুভূতি দিবে।
৬। স্কাল্পচার গার্ডেন
অসাধারণ একটি জায়গা যেটির বর্ণনা দেয়া অসম্ভব। শিক্ষণীয় একটা জায়গাও যে ছোট বড় সবার জন্য এতোটা আকর্ষণীয় হতে পারে তা আমি এখানে না গেলে বুঝতাম না। বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের জীবনী, উল্লেখযোগ্য কাজ স্কাল্পচার-এর মাধ্যমে দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সত্যজিৎ রায়ের মতন ব্যক্তিদের স্কাল্পচার।
আছে নীল চাষ বিদ্রোহের মত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিবরণও। শিল্পের ছোঁয়া, জ্ঞানের বিচ্ছুরণ, রুচিশীল পরিবেশনা সব কিছু মিলিয়ে মন ছুঁয়ে যায়। আর সন্ধ্যার পরে লাইট শোর মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়। আপনার সাথে যদি কোন বাচ্চা থাকে তাহলে তো অবশ্যই অবশ্যই যাবেন এখানে। আর আপনি গেলেও নিরাশ হবেন না। বরং অদ্ভুত এক ভালো লাগা নিয়ে বের হবেন ইকো পার্কের এই স্কাল্পচার গার্ডেন থেকে এটা আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি।
ঈদের ছুটিতে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর লোক ইন্ডিয়া বেড়াতে যায়। আপনারও যদি সেরকম কোন প্ল্যান থাকে তাহলে অবশ্যই একটা দিন হাতে রাখবেন এই ইকো পার্কটি ঘুরে দেখার জন্য। খুব সুন্দর একটা অনুভূতি নিয়ে ফিরবেন আশা করি।
ইকো পার্ক সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এই ওয়েবসাইটটি দেখতে পারেন-
http://ecoparknewtown.com/index.php
অথবা ফোন করতে পারেন এই নম্বরে- (০৩৩) ২৭০৬ ৪০১০
বিঃদ্রঃ আপনার ভ্রমণ হোক আনন্দময় এবং পরিবেশবান্ধব। ঘুরতে যেয়ে আমার দ্বারা যাতে পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয় এই খেয়ালটুকু আমাদের সকলেরই রাখা উচিত। বিশেষ করে দেশের বাইরে গেলে এমন কোন কাজ যাতে না করি যে আমার দেশকে কিংবা দেশের মানুষকে কেউ খারাপ কথা বলার সুযোগ পায়।
ছবি- রিভা খান; সংগৃহীত: সাজগোজ
The post কলকাতা ইকোপার্ক পর্ব ২ | ছুটিতে ঘুরে আসার মত অসাধারণ সুন্দর জায়গা appeared first on Shajgoj.