বায়ো অয়েল নামক এই হালকা কমলাভ ধাঁচের রঙের তেলটা যখন প্রথমবার মার্কেটে আসে, তখন এটা নিয়ে খুব বেশি শোরগোল হয় নি, মানুষ অন্য যেকোনো অয়েল ব্র্যান্ডের মতই একেও একটা বডি অয়েল হিসেবেই নিয়েছিল। কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় ইউজারদের রিভিউ!! কারণ স্ট্রেচমার্কস কমানো, পুরনো কাঁটাছেড়ার দাগ কমানো, ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা কমানো, অ্যান্টি এজিং… এসবের জন্য এই অয়েল সত্যিই লক্ষ্যণীয়ভাবে কাজ করে।
বায়ো অয়েল আমি ফার্স্ট ট্রাই করি প্রায় মাস চারেক আগে… শীতের মাঝামাঝি সময়ে। তো ভাবলাম এই চারমাসের অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি নিয়ে একটা রিভিউ লিখেই ফেলি।
বায়ো অয়েল কী ও এতে কী আছে?
সাউথ আফ্রিকায় তৈরি এই অয়েল ব্লেন্ড অতিরিক্ত কোলাজেন প্রোডাকশন থেকে তৈরি হওয়া স্কার টিস্যু একটু লাইট করতে হেল্প করে। কাজেই স্কিনের অ্যাকসিডেন্টের কাঁটা-ছেড়া, অপারেশনের কাঁটা দাগ বা আগুনে পোড়া দাগ থাকলে সেই দাগ হালকা করতে বায়ো অয়েল কাজে লাগবে।
এছাড়াও বায়ো অয়েল স্ট্রেচ মার্কস, বলিরেখা, অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ ত্বকের রঙ, ত্বকের বিভিন্ন অবাঞ্ছিত দাগ অনেকটা হালকা করতে সাহায্য করবে। এটা খুব ময়েশচারাইজিং হওয়ায় ডিহাইড্রেটেড স্কিনে ময়েশ্চার বজায় রাখতেও হেল্প করবে, সেই সাথে সেটা অ্যান্টি এজিং-এর কাজও করে।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে তাদের সৎ দাবি প্রকাশ করার কারণে। বায়ো অয়েল কখনই দাবি করে না যে সে পুরনো স্কার টিস্যু বা স্ট্রেচ মার্কস একদম ‘দূর’ করে দেবে!! কারণ আমি যতটুকু জানি একমাত্র স্কিন-গ্রাফটিং সার্জারি ছাড়া এইসব রিমুভ করা সম্ভবও না!! নিয়মিত ব্যবহার করার মাধ্যমে দাগের উপস্থিতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
দেখতে কেমন?
বায়ো অয়েল সাদা কার্ডবোর্ড বক্সে করে আসে। বক্সের দুই সাইডে প্রোডাক্টের বিবরণসহ সব উপাদানের নাম ইংরেজিতে এবং বাকি দুই পাশে যে দেশে এটা বাজারজাত করা হচ্ছে সেই দেশের ভাষায় সব বিবরণ আরেকবার দেয়া থাকে। যেন সবাই সব তথ্য ভালোভাবে বুঝতে পারে। বাংলাদেশের অয়েলের দুই পাশে বাংলায় ডেসক্রিপশন যেমন লেখা তেমনি চায়নার বায়ো অয়েলে লেখা ম্যানডারিনে (চীনা ভাষা)!
আবার অনলাইনে দেখলাম, বায়ো অয়েলের তেলটা সবসময়ই সাউথ আফ্রিকাতেই বানানো হয়, শুধু প্যাকেটজাত করা হয় যে দেশের অয়েল সেই দেশে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বায়ো অয়েলটাও আসলে এদের মেইন সাউথ আফ্রিকান ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টেই তৈরি করা হয়েছে।
দামটা কেমন?
বায়ো অয়েলের ৩টা সাইজ মার্কেটে পাওয়া যায়।
২০০ মিলির বোতলের প্রাইস ১,৮০০/- টাকা, ১২৫ মিলির বোতলের দাম ১,২০০/- টাকা এবং ৬০ মিলির বোতল পাওয়া যায় ৭০০/- টাকায়।
আমি প্রথমবার ৬০ মিলি-এরটা কিনেছিলাম, এখন ২০০ মিলির বোতলটা ব্যবহার করছি।
টেক্সচার
অয়েলটা খুব হালকা কমলা ধাঁচের রঙের, কিন্তু হাতে নিলে রঙটা তেমন একটা বোঝা যাবে না। স্বচ্ছ দেখাবে। এটা খুব হালকা টেক্সচারের, কারণ অয়েলটার বেইজ খুব হেভি কিছু নয়। তাই স্কিনে অ্যাপ্লাই করার ৫-১০ মিনিটের ভেতরেই বেশ ভালোভাবে শুষে নেয়। স্কিন চিটচিটে লাগে না বা “তেল মেখে বসে আছি” ধরনের অনুভূতি থাকে না!
উপাদান
প্রোডাক্টের গায়ে ফুল উপাদান লিস্ট দেয়া আছে। উপরের ছবিতে দেখতেই পাচ্ছেন।
বায়ো অয়েলের ট্রেডমার্ক অয়েল ব্লেন্ড হচ্ছে পারসেলিন অয়েল (Purcellin oil)। এই ব্লেন্ডের কারণে এই তেলটা নরমাল বডি অয়েলের মতো চিটচিটে লাগে না এবং খুব সহজে এটা ত্বকে বসে যায়।
আমার কেমন লাগলো?
আমি আসলে শীতে বডি অয়েল কেনার সময় এটা দেখে এটা কিনে ফেলেছিলাম! ভাবলাম বডি অয়েল ব্যবহারতো করবোই, আর যেহেতু বায়ো অয়েল আগে কখনও ইউজ করি নি, এটাই বরং এবার ট্রাই করি। তো এভাবেই প্রায় ৪ মাস ধরে এটা ব্যবহার করলাম। আমি রোজ একবার এই তেলটা ফুল বডিতে গোসলের পড়ে ইউজ করি। যেহেতু দাগ কমাতে এটা সাহায্য করে, তো আমার কনুইয়ের ঠিক নিচে একটা অ্যাক্সিডেন্টের পুরোনো কাঁটা দাগ আছে ঐটার উপরে আর আমার টিনএইজ-এ ওজন বাড়ার কারণে বাহুমূলের কাছে এবং উরুতে কিছু স্ট্রেচ মার্কস হয়ে আছে ওগুলোর উপরে ভালোভাবে ম্যাসাজ করি।
বায়ো অয়েলের বোতলে এরপর একদিন দেখলাম লেখা আছে বেস্ট রেজাল্টের জন্য দিনে এটা দুবার করে ব্যবহার করাটা বেস্ট! কমপক্ষে তিন মাস একটানা নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে এবং কাঁটা থাকা অবস্থায়, মানে ত্বক আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় থাকলে সেটা না শুকানো পর্যন্ত এটা ব্যবহার করা যাবে না।
তাই এরপর থেকে আমি গোসলের পর একবার আর রাতে ঘুমানোর আগে একবার করে তেলটা আমার দাগগুলোর উপরে ব্যবহার করা শুরু করি। গত চার মাস ধরে নিয়মিত ব্যবহার করে মোটামুটি দেখলাম আমার পুরোনো কাঁটা দাগ আর হাত-পায়ের কালচে ভাব অনেকটাই কমেছে।
ট্যানের উপরে ইফেক্ট সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, ট্যান প্রায় নেই, এরপর স্পট বেশ খানিকটা লাইট হয়েছে। স্ট্রেচ মার্কস লাইট করার জন্য আরও বেশ কিছুদিন রেগ্যুলার ইউজ করতে হবে বলে আমার ধারণা।
আমার আম্মুর স্কিন অনেক ড্রাই এবং এজিং হওয়ায় উনি আমার কাছ থেকে বায়ো অয়েল নিয়ে মুখে বেশ কিছুদিন ইউজ করেছেন, তার থেকে জানলাম, তার কাছে মনে হচ্ছে তার কপালের বলিরেখা একটু হালকা হয়েছে। চোখের আশেপাশের বলিরেখায় এখনও আমার মা তেমন চেইঞ্জ দেখেন নি।
কিন্তু আমি খুব অয়েলি একনে প্রন স্কিনে এটা ডেইলি ইউজ করতে বলব না, যেহেতু শত হলেও এটা একটা অয়েল ! যদি ফেসিয়াল স্কিনে কথাও কোনও স্পট/ কাঁটা দাগ থাকে শুধু ঐ স্পটে এই অয়েলটা ডেইলি দুবার ইউজ করতে পারেন। আশা করি মাস তিনেক গেলে পরিবর্তনটা তখন দেখতে পাবেন।
বিঃদ্রঃ – শেষ কথা
বায়ো অয়েল ইউজারদের সাথে এই ব্র্যান্ড যে স্বচ্ছতা বজায় রাখে এই বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে! খুব স্পষ্টভাবে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং-এ সব তথ্য স্পষ্টভাবে দুটো ভাষায় লিখে দেয়া, খুবই তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট এবং নিজের প্রোডাক্ট আসলে কতটুকু কাজ করতে সক্ষম সেটা পরিষ্কারভাবে কোনও যদি, অথবা, নতুবা, কিন্তু- ছাড়া বলার সাহস, খুব বেশি ম্যাস মার্কেট (Mass Market) ব্র্যান্ডের থাকে না।
এই সাত দিনে ফর্সা হওয়ার চ্যালেঞ্জের যুগে, বায়ো অয়েলের এই অ্যাপ্রোচ আমার সত্যি বলতে প্রোডাক্টের পারফরম্যান্স-এর চেয়েও বেশি পছন্দ হয়ে গেছে… তাই আমি আবারও কিনবো।
আপনারা যদি এই প্রোডাক্টটা ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনাদের কেমন লেগেছে সেটা আমাকে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। আজ এটুকুই, ভালো থাকবেন।
ছবি- সাজগোজ.কম
The post বায়ো অয়েল | স্ট্রেচমার্কস ও প্রিম্যাচিউর এজিং দূরে রাখতে কতটা কার্যকরী? appeared first on Shajgoj.