Quantcast
Channel: Shajgoj
Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস |বাংলার গর্বের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে!

$
0
0

সঞ্চা: আপু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবার বৃহস্পতিবার পড়লো। মজা না? একটা ছুটি বেড়ে গেল!

আনিকা: আচ্ছা! ২১শে ফেব্রুয়ারি… হুম… কী করবি ঐ দিন? নিশ্চয়ই হা করে ঘুমাবি!

সঞ্চা: এই চিনলে আমাকে! ২১শে ফেব্রুয়ারিতে সারাদিনের জন্য আমার খুব সুন্দর একটা প্ল্যান আছে। শোনো তাহলে আমার প্ল্যান। আমার অনেক পছন্দের কালো শাড়ি পরে ভোরবেলায় ছোট ভাই শাফিনকে নিয়ে প্রথমেই যাব শহীদ মিনার, তারপর খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটা, রাস্তার ধারেই নাস্তা করা,রিক্সায় ঘোরাঘুরি করে যাব খালার বাসায়, সেখানে খাওয়া দাওয়া করে কাজিনরা সহ বইমেলায় যাওয়া… এই তো!

আনিকা: বাহ! তাহলে তো তোর সাথে আমার দেখা হবে। আমি আর অনিকও বের হচ্ছি। আচ্ছা! তোর আর আমারতো অনেক প্ল্যান হলো। তাহলে চল এবার একটা নতুন প্ল্যান করি!

সঞ্চা: কী প্ল্যান?

আনিকা: সবাইকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে জানানোর ছোট্ট প্রয়াস… তুই কী বলিস?

সঞ্চা: দারুণ! তবে হয়ে যাক!

অতঃপর আমাদের লেখার শুরু…!

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও তার ইতিহাস

বাংলা ভাষার জন্মটা হল কিভাবে?

এটা ভাবলেই বহু বহু ইতিহাস চলে আসে। বাংলার পুরনো রূপের নাম জানেন?- ‘অবহট্‌ঠ’ (Abahaṭ‌ṭha)! না না, দাঁত ভাঙার কিছু নেই! এটা ‘মাগাধি প্রাকৃত’ (Magadhi Prakrit) থেকে সৃষ্ট।

বাংলার পুরনো রূপের নাম ‘অবহট্‌ঠ’ (Abahaṭ‌ṭha) - shajgoj.com

যদিও ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-এর ভাষ্যমতে মাগাধি প্রাকৃতের সাথে বাংলার সম্পর্ক অনেক বেশি দূরের। বাংলার সৃষ্টি হয়েছেই মূলত সংস্কৃত  (Sanskrit) থেকে।

বিশ্বে প্রায় ২৫০-৩০০ মিলিয়ন মানুষের মুখের ভাষা বাংলা!

পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার মানুষের সংখ্যা - shajgoj.com

আর এই বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষায় কিভাবে পরিণত হল?

১৯৪৭-এ ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হল- পাকিস্তান ও ভারত! আর পাকিস্তানের হল ২টো অংশ- পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ব বাংলা) ও পশ্চিম পাকিস্তান এবং এদের মধ্যে ছিল ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বিশাল তারতম্য। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা মাত্র পূর্ব বাংলায় অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। কারণ বাংলাভাষী জনতা তা একদমই মেনে নিতে পারেন নি এবং বাংলা ভাষাকে সমমর্যাদা প্রদানের দাবী জানিয়ে আন্দোলন করেন। অতঃপর পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে সমস্ত মিটিং, মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অতঃপর ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীরা এ ধারা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিলে নামেন।

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি আম তলায় মানুষের সমাগম -shajgoj.com

মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে আসা মাত্র পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ করে… শহীদ হন জব্বার, বরকত, রফিক, সালাম-সহ নাম না জানা আরও অনেকে। এই মর্মান্তিক ঘটনা রোষানল ছড়িয়ে দেয় সমগ্র পূর্ব বাংলায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ পোস্টারে করা হয়েছিলো - shajgoj.com

২২ ও ২৩শে ফেব্রুয়ারিতেও বড় ধরনের প্রতিবাদ মিছিল হয় এবং হরতাল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ সাধারণ জনতারা। অতঃপর পুলিশের তৎক্ষণাৎ আক্রমণ… শহীদ হন শফিক, আউয়ালসহ একজন কিশোর। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মুসলিম লীগ ২২শে ফেব্রুয়ারি সংসদ দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে ছাত্ররা গড়ে তোলেন শহীদ মিনার যা কিনা ২৪শে ফেব্রুয়ারি শহীদ শফিউর রহমানের পিতার মাধ্যমে উদ্বোধিত হয়। এরপর দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।

শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ - shajgoj.com

শেষপর্যন্ত ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের কাছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার হার মানেন এবং ১৯৫৬ সালে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।

ইতিহাস শুনে অবাক হচ্ছেন? জ্বি। করুণ এই ইতিহাস অনেকেই জানেন না… কতজন তো আবার একে নিয়ে উপহাস করাতেও ব্যস্ত… তা আর নাই বা বলি!

আর হ্যাঁ, শহীদ মিনারের স্থপতি কে জানেন তো?- হামিদুর রহমান।

শহীদ মিনার - shajgoj.com

বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

মাতৃভাষা দিবস কি শুধু আমাদের দেশেই পালিত হয়? না! আমাদের ভাষা শহীদদের স্মরণে আজ মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে। মাতৃভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মান দিতে কানাডায় দুজন প্রবাসী সর্বপ্রথম এই উদ্যোগ নেন। রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে আমাদের মাতৃভাষা অর্জনের ইতিহাস তুলে ধরেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেবার আবেদন জানান। তারপর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর প্যারিস-এ অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো-এর অধিবেশনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০০০ সালের ২১শে ফেরুয়ারি থেকে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মযার্দার সহিত পালন করা হচ্ছে।

ইউ এস এ তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উজ্জাপন - shajgoj.com

অনেক বেশি গর্ব হয় কখন জানেন? যখন ভাবি জাতিসংঘের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আমাদের নিজের ভাষাকে অনেক বেশি সম্মান দেয়া হয়।

তুর্কি বাংলাদেশ এম্বাসিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উজ্জাপন - shajgoj.com

২০১০ সাল থেকে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, জার্মানি, রাশিয়া সহ  বিশ্বের ১৮৮টি দেশে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়াতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উজ্জাপন - shajgoj.com

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষাচর্চা

২১শে ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়… মাইক হাতে কোন ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে শিশু-কিশোরদের জিজ্ঞেস করছেন- “আচ্ছা, বলো তো, ২১শে ফেব্রুয়ারিতে কি হয়?” আর প্রত্যুত্তরে শুনবেন- “অ্যাঅ্যাঅ্যা… বিজয় দিবস!!!” হ্যাঁ, লজ্জার বিষয় হলেও সত্যি… ঐ যে বললাম… উপহাস ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সাথেই আজকালকার প্রজন্মে অনেকেই এদিনটিকে দেখে। শুধু ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা, সেজেগুজে সেলফি তুলে কোনো রেস্টুরেন্ট-এর স্থানটা ফেইসবুকে দেয়া কিংবা নিছক একটা ছুটির দিন বলে নিরানন্দ কাটিয়ে দেয়া… কিসের আবার এসব মাতৃভাষা দিবস রে ভাই! নিজেরই সুখ নাই! তো ওসব করে সময় নষ্ট করবো কেন রে বাপু?

তাহলে একটা কথা, এই যে নির্ভাবনায় নিশ্চিন্তে বসে বাংলায় দু’টো বকাও দিচ্ছো, ইংলিশ-বাংলার জগাখিচুড়ি মেরে বাংলিশে বাবু সাজো; আজ যদি ভাষা শহীদেরা জীবনের বিনিময়ে বাংলাকে না বাঁচিয়ে “চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা” বলে উল্টো পথে হাঁটা দিতেন, কোথায় থাকতো এসব ঠাটবাট? আত্মসম্মানটুকুও তখন জলে ভাসা পদ্ম হয়ে থাকতো রে ভাই!

না, ধিক না জানাই! শুধু কষ্ট হয় এই ভেবে… স্বভাষার মাধুর্য তাদের কপালে জুটলো না বলে…!

এর মানে কিন্তু এই নয় যে সবাই একই পথের পথিক! ভাষাকে সম্মান করতে এখনো অনেকেই জানে। এখনো শহীদদের আত্মত্যাগের গাথায় সুর তোলে কেউ… এখনো কেউ “আমি একবার দেখি, বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ” সুরে সুখ খুঁজে পায় তার মাতৃভাষায়… তারুণ্যের দীপ্তিতে বাংলা ভাষা সবসময়ই আলোকিত রবে…। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হবে ভাষা শহীদদের প্রতি জানানো সশ্রদ্ধ সালামে।

একুশের চেতনা মননে ধরে রাখার প্রয়াস

ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উজ্জাপন - shajgoj.com

শ্রদ্ধাবোধ আসলে মন থেকে আসার ব্যাপার। তা ভাষার জন্য হোক বা মানুষের জন্যই হোক। আর চেতনায় যদি শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়, তা নিয়ে অসম্মান? ভুলেও হবে না। কিন্তু একদিন বাংলা ভাষা নিয়ে সভা-আলোচনা হলেই কি আমাদের মধ্যে একুশের চেতনা জাগ্রত হয়ে যাবে? কখনোই নাহ! তাহলে কী করতে পারি আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষাপ্রেম ধারণ করতে? পারি তো-

১) ছেলেমেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই চোখ বন্ধ করে বাংলা গল্পের বই পড়ার অভ্যাস করাতে হবে। যেহেতু প্রজন্মটাই প্রযুক্তি নির্ভর সেক্ষেত্রে বই পড়ার পাশাপাশি বেছে নিতে পারেন কিন্ডেল। এভাবেই তৈরি হবে ভাষার প্রতি প্রেম ও শ্রদ্ধা।

বাংলা গল্পের বই পড়ার অভ্যাস করছে - shajgoj.com

২) বই পড়ে, বাংলা সিনেমা দেখে, কবিতা পড়ে, মঞ্চ নাটক দেখে ভালোবেসেই থাকতে পারেন বাংলা  সাহিত্যের সংস্পর্শে।

৩) ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বছরের পর বছর একটা দিনে সীমাবদ্ধ রেখে চেতনায় বাঁচিয়ে রাখা যায় না। বাচ্চাদেরকে আমাদের মাতৃভাষার ইতিহাস শুধু পাঠ্যবইয়ের বেড়াজালে না বেঁধে জানানো যায়  ছবি এঁকে, সিনেমা দেখিয়ে, গল্প বলে এমনকি শহীদ মিনারে বেড়াতে নিয়ে গিয়েও!

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিশুর ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা - shajgoj.com

৪) কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেল-এর মতো বাংলা ভাষায় আলাদা কোনো কার্টুন চ্যানেল খোলা হয় নি। বিভিন্ন চ্যানেল-এ অল্প কয়েক ঘন্টায় বাচ্চারা অনেক সময় তাদের পছন্দের কার্টুনও দেখতে পারে না। সিসিমপুরের মতো আরো অনুষ্ঠানসহ আলাদা বাংলা কার্টুন চ্যানেল খোলাটাও কিন্তু দরকার।

৫) শুদ্ধ বাংলা চর্চার পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষার চর্চারও প্রয়োজন। কেননা নিজের শেকড়কে কখনো ভোলা উচিত নয়।

 

আনিকা: কী রে সঞ্চা, কী বুঝলি?

সঞ্চা: উফফ আপু, লেখাটা লিখতে গিয়ে অবাকই হয়েছি শুধু… মাতৃভাষা নিয়ে এতো নিখুঁতভাবে চিন্তা করাটা তো সবসময় সুযোগ হয়ে ওঠে না।

আনিকা: হুম। একদিনের বাঙালী হওয়াটা খুব সহজ রে! কিন্তু বাংলাকে বুকে লালন করে চিরদিন বীরের বেশে গর্বের সাথে বেঁচে থাকাটা নিঘাদ আনন্দের, তাই না রে?

সঞ্চা: হ্যাঁ, সত্যিই খুব আনন্দের…।  সেই চিরপরিচিত গানটা গাও না একটু!

আনিকা: চল! দু’জনেই গাই…

“আমার ভাইয়ের

রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি।

ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু

গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি।।”

 

ছবি-  অতনু কুন্ডু; সংগৃহীত: সাজগোজ

The post আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | বাংলার গর্বের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে! appeared first on Shajgoj.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 3010

Trending Articles