নিউট্রজিনা সানব্লক রিভিউ লেখার আগে সানস্ক্রিন ইউজ করাটা যে কতটা জরুরী সেটা যখন ভালোভাবে বুঝতে পারি তখন আমি পড়ি ক্লাস নাইনে! সেইবার প্রথম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনগুলোয় সানস্ক্রিন ইউজ করি। সেবারই প্রথম দেখি আমার স্কিন (যা কিনা ৩০ মিনিট রোদে থাকলেও ৫ শেড ট্যান হয়ে যায়) সে বলতে গেলে তেমন ট্যান হয় নি!!
সেবার কোন সানস্ক্রিন যে ইউজ করেছিলাম মনে নেই! মনে আছে শুধু যে ওটা এক বিদেশফেরত আত্মীয় গিফট করেছিল। বলাই বাহুল্য তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব আজীবন!
এরপর দেশে অ্যাভেইলেবল অনেক সানস্ক্রিন ট্রাই করলাম। কিন্তু ঐ ম্যাজিকাল ট্যান প্রিভেনশনের টিকির দেখাও পেলাম না! দুঃখের ব্যাপার হল, এখন আমি জানি যে ঐ ২-৩ বছর যেসব সানস্ক্রিন ইউজ করেছি তার মধ্যে ৯০%-ই প্রপারলি টেস্টেড ছিল না (আমি জানি অনেকেই এখনও সেই সব ব্র্যান্ড ইউজ করেন)।
অর্থাৎ যে টিউবের গায়ে এসপিএফ ৫০ লেখা আছে সে কি সত্যিই এসপিএফ ৫০ প্রোটেকশন দিচ্ছে? সেটা কোনও ট্রাস্টেড অথরিটি প্রুভ করে নি!!! তাই কিভাবে আমি বুঝব যে “হ্যাঁ, টিউবের গায়ে সব ১০০% ল্যাব টেস্টেড ক্লেইম লেইখা আছে??”
বোঝার কোনও উপায় নেই। এরপরই অ্যাকচুয়ালি আমি নিউট্রজিনার দিকে ঝুঁকি। এই ব্র্যান্ড নিয়ে নতুন করে কিছুই বলার নেই!! এটা ওয়ার্ল্ড ফেমাস ডারমাটলোজিক্যালি টেস্টেড, হাইপোঅ্যালার্জেনিক ব্র্যান্ড এটা সবাই জানে! আর এর প্রতিটা সানস্ক্রিন USFDA (The Food and Drug Administration of the United States)-এর মাধ্যমে পরীক্ষিত।
অর্থাৎ- নিউট্রজিনা যখন বলে যে তার সানস্ক্রিন এসপিএফ ১৫/২০/৩০/৪০/৫০/৭০ ব্রড স্পেকট্রাম প্রোটেকশন দেয়, তার মানে আসলেই এই ক্লেইম “১০০% সত্যি”!!! আমি এমন কিছুই চাচ্ছিলাম। সানস্ক্রিন নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে আমি রাজি না।
অনেক কথা হলো। এখন চলে যাই নিউট্রজিনা আলট্রা শিয়ার ড্রাই টাচ সানব্লক এসপিএফ ৫০+ (Neutrogena Ultra Sheer Dry Touch Sunblock SPF 50+)-এর রিভিউতে।
নিউট্রজিনা সানব্লক প্যাকেজিং
নিউট্রজিনা সানব্লক টিউবটা ওপেক (Opaque), ভেতরে কতটুকু বাকি আছে বোঝা মুশকিল। অবশ্য সব সানস্ক্রিনই এমন। তাই এটাকে দোষ বলব না। সানস্ক্রিন টিউবের ক্যাপটা স্ক্রু টাইপের। আমার মনে হয় ফ্লিপটপ হলে ইউজ করা ইজি হত কিন্তু ব্যাগে ক্যারি করা আবার রিস্কি হয়ে যেত। তাই এই জাজমেন্টটা পারসন টু পারসন ভ্যারি করবে বলে আমার মনে হয়! এমনিতে এটা খুবই ট্র্যাভেল ফ্রেন্ডলি।
উপাদান
ফুল লিস্টটা নিচে দিয়ে দিচ্ছি-
Water, Homosalate, Ethylhexyl Salicylate, Benzophenone-3, Octocrylene, Butyl Methoxydibenzoylmethane, Silica, Styrene/Acrylates Copolymer, Potassium Cetyl, Phosphate, Beeswax, Glyceryl Stearate, PEG-100 Stearate, Cetyl Dimethicone, Caprylyl Methicone, Dimethicone, Ethylhexyglycerin, Behenyl Alcohol, Sodium Polyacrylate, Xanthan Gum, Dimethicone/PEG-10/15 Crosspolymer, Acrylates/C12-22 Alkyl Methacrylate Copolymer, Fragrance, Disodium EDTA, Ethylhexyl Stearate, BHT, Trideceth-6, Polyaminopropyl Biguanide, Methylisothiazolinone, Diethylhexyl 2, 6-Naphthalate.
নিউট্রজিনা-এর সানস্ক্রিন ব্লেণ্ড মানে ফিজিকাল আর কেমিক্যাল সানস্ক্রিন উপাদানের পেটেন্ট মিক্সচারকে হিলিওপ্লেক্স (Helioplex) বলে। এই নামটাও ট্রেডমার্কড। এই ব্র্যান্ডের সব সানস্ক্রিন টিউবের উপরে আপনি এটা লেখাও দেখবেন।
ক্লেইম
নিউট্রজিনা সানব্লক দাবি করে-
১) এই সানস্ক্রিন ফর্মুলা আলট্রা লাইট, একদম অয়েলি না।
২) ট্রেডমার্কড হিলিওপ্লেক্স দেয় সূর্যের এজিং UVA এবং বারনিং UVB থেকে কমপ্লিট ব্রড স্পেকট্রাম প্রোটেকশন।
৩) এটা ওয়াটার রেসিস্টান্ট, হালকা ঘামে প্রোটেকশন নষ্ট হবে না।
৪) এটা স্কিনের পোর ক্লগ করবে না।
দেখি আমার এক্সপেরিয়েন্স কী বলে!
দাম এবং প্রাপ্তিস্থল
৮৮ মিলির টিউব পাবেন ১২৩০/- টাকায়। আমি আমার রিসেন্ট টিউবগুলো শপ.সাজগোজ.কম থেকে নিয়েছি। তাছাড়া এদের যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার-এ অবস্থিত ফিজিক্যাল শপ দুটো এবং অনলাইন ওয়েবসাইটেও অর্ডার করে পাবেন।
নিউট্রজিনা সানব্লক টেক্সচার
টেক্সচার একটু ক্রিমি। জাপানিজ সান্সক্রিনের মতো লাইট জেল টাইপ নয়। আমার স্কিনে এই সানস্ক্রিনটা ১০-১৫ সেকেন্ডে ব্লেণ্ড হয় এবং ৪-৫ মিনিট লাগে পুরোপুরি ম্যাট হয়ে অ্যাবজর্ব হতে। আমার স্কিন প্রচণ্ড অয়েলি, বলে নিলাম।
নিউট্রজিনা সানব্লক কিভাবে অ্যাপ্লাই করবেন?
অনেকেই সানস্ক্রিন ঠিকমত স্কিনে অ্যাপ্লাই করতে হিমশিম খান। অনেকের মুখে গ্রে কাস্ট থেকে যায়, সাদাটে হয়ে থাকে জায়গায় জায়গায় আবার অনেকের স্কিনে পুরোটা অ্যাবজর্ব হয় না। এমন হলে প্রপারলি ১ চা চামচ সানস্ক্রিন ফেইস ও কানের আশেপাশে মেখে ফুল প্রোটেকশন পাওয়া টাফ। এজন্য আমি যা করি-
১. ১ চা চামচ সানস্ক্রিন ২ ভাগে ভাগ করে অ্যাপ্লাই করি। প্রথমে হাফ চা চামচ নেই, ফেইস-এ আর কানের আশেপাশে অ্যাপ্লাই করি এবং তারপর ২ মিনিট ওয়েট করি।
২. এরপর আরও হাফ চা চামচ মতো সানস্ক্রিন নিয়ে বার পুরো ফেইসে সেকেন্ড লেয়ার অ্যাপ্লাই করি। এর ২-৩ মিনিটের ভেতরে স্কিনে পুরো সানস্ক্রিন সোক করে নেয়। এভাবে ইউজ করলে সানস্ক্রিন সাদাটে হয়ে থাকা, তেলতেলে হয়ে থাকা এসব প্রবলেম অনেক কমে যাবে বলে আমার ধারণা।
নিউট্রজিনা সানব্লক নিয়ে আমার এক্সপেরিয়েন্স
আগে ভালো কিছু পয়েন্ট বলে দেই-
১) আমি গত ৩-৪ বছর ধরেই এই সানস্ক্রিনটা ইউজ করছি। আমার স্কিন প্রচণ্ড অয়েলি এবং সেন্সিটিভ। এরপরেও কখনও এই সানস্ক্রিন আমার স্কিনে নতুন ব্রেকআউট তৈরি করে নি (বলে রাখি, আমি সবসময় সানস্ক্রিন দিনের শেষে ক্লিনজিং অয়েল দিয়ে ক্লিন করি)।
২) এজন্য আমি বেশ কনফিডেন্টলি সিমিলার অয়েলি একনেপ্রন স্কিনের সবাইকে এই সানস্ক্রিনটা সাজেস্টও করেছি। তাদের ভেতরেও কেউ এটা সম্পর্কে ব্যাড রিভিউ আমাকে দেয় নি।
৩) তাই ধরে নেয়া যায় অয়েলি একনে প্রন স্কিনে এটা ভালো কাজ করে। যদিও নিউট্রজিনা দাবি করে এটা সব ধরনের স্কিনের জন্যই ভালো কাজ করে।
এবার দেখি খারাপ কোনও পয়েন্ট পাই কিনা-
খারাপ দিক যে নেই তা বলবো না। যারা জাপানিজ শিসেইদো বা বায়রে-এর সানস্ক্রিন ইউজ করেন তারা জানেন ১০০% কেমিক্যাল সান্সক্রিনের লাইট জেল টেক্সচার অয়েলি স্কিনে কতটা ভালো কাজ করে। আবার ঐ সানস্ক্রিনগুলো রি-অ্যাপ্লাই করাও ইজি। তাই যারা জাপানিজ সানস্ক্রিন ইউজ করে অভ্যস্ত তাদের ইম্প্রেস করা নিউট্রজিনার কাজ নয়!
এখানে একটা ‘কিন্তু’ আছে। একেতো জাপানিজ সানস্ক্রিন সহজে পাওয়া যায় না, তার উপরে অগুলোর দাম হয় আকাশছোঁয়া। আর পরিমাণে পাওয়া যায় খুবই কম। ৫০ মিলির বেশি সানস্ক্রিন আপনি খুব কম টিউবেই পাবেন, যেখানে নিউট্রজিনায় আপনি খুব ইজিলি ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন এবং অনেক কম দামে ৮৮ মিলি প্রোডাক্ট পাচ্ছেন!!
তাই আমার শেষ কথা, আপনি যদি ৫০ মিলি জাপানিজ সান্সক্রিনের পেছনে অতো খরচ না করতে চান তবে, নিউট্রজিনাই আপনার জন্য পারফেক্ট!!
যারা অলরেডি এই সানস্ক্রিনটা ইউজ করেছেন। তারা অবশ্যই কমেন্টে শর্ট রিভিউ দেবেন, হয়ত অনেকের হেল্প হবে। আজ এটুকুই, চেষ্টা করবো ফিউচারে আমার ফেভারিট আরও কিছু সানস্ক্রিন নিয়ে রিভিউ লিখতে।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ
The post নিউট্রজিনা সানব্লক রিভিউ | কড়া রোদের অত্যাচার থেকে বাঁচার উপায়! appeared first on Shajgoj.