আজকালকার সময়টাই এমন যে মানুষ যদি সুপারম্যান না হয় তবে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকাই মুশকিল…!! যেভাবেই সুগারকোট করি না কেন এটা মানতেই হবে যে নারীদের জন্য বিষয়টা আরও জটিল। কারণ এই সোসাইটি আজকাল চায় মেয়েরা হবে দশভুজা…! একই হাতে সামলাবে, পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, ঘরের কাজ, সাথে বাচ্চা থাকলেতো হয়েই গেলো!! আবার এরমধ্যেও থাকতে হবে একদম টিপটপ পরিপাটি!! আর এত ব্যস্ততায় চুলের যত্ন নেয়াটাও যেন একটা যুদ্ধজয়ের মতই!!
কিন্তু আমরাতো মানুষ রাইট? তাই দেখা যায় সব ঘড়ির কাঁটার মতো চললেও মাঝে মাঝে গুবলেট হয়ে যায়! দেখা যায় পড়ার চাপে কয়েক মাস না ঘুমিয়ে কাটালেন! এখন সমানে ঝরছে চুল!
অফিসের প্রেশারে ফাস্টফুড খেয়েই দিন পার করছেন? একদিন দেখলেন মাথার সিঁথি ফাঁকা হয়ে তালু দেখা যাচ্ছে।
যা বোঝাতে চাচ্ছি আসলে তা হচ্ছে আমাদের লাইফস্টাইল আর আমাদের স্বাস্থ্য কিন্তু ১০০% রিলেটেড। আর স্কিন ও হেয়ার- এই দুইয়ের সৌন্দর্য কিন্তু স্বাস্থ্যের ভেতরেই পড়ে! কিন্তু লাইফস্টাইলই যখন এতো হেকটিক তখন আপনি কি করবেন? যেখানে আমিও জানি আপনিও জানেন যে, “একটু কেয়ার নিন”, “সপ্তাহে ৩ বার মাথায় মেহেদি দিন”… এসব টিপস আসলে মেনে চলা অসম্ভব।
তাহলে ব্যস্ততায় চুলের যত্ন আসলে কিভাবে করা যায়? চলুন দেখি।
ব্যস্ততায় চুলের যত্ন নিতে হেয়ার কেয়ার রুটিন
১. চুলের জানি দুশমন ও প্রানের বন্ধু
শ্যাম্পু এমন এক জিনিস, যা ইউজ না করলেও চুল নষ্ট হয়, আবার করলেও হয়!! মানে অতিরিক্ত করলে হয় আর কি!! আর অতিরিক্ত শ্যাম্পুর ফাদেই পড়েন বিজি ইয়াং মেয়েরা যারা সারাদিনের ধুলা ময়লা তেল বাসায় এসেই শ্যাম্পু করে ফেলেন একটা ভয়ঙ্কর Harsh, Silicon , SLS/SLES filled শ্যাম্পু দিয়ে, যা শখের চুলগুলোকে ২ মাস পরে ঝাঁটার মতো বানায়!
তাই বলছি না যে রোজ শ্যাম্পু করবেন না! অনেকেরই দরকার হতে পারে রোজ শ্যাম্পুর, কিন্তু এমনটা হলে অবশ্যই চুজ করবেন একটা SLS/SLES, silicon free MILD শ্যাম্পু যা আপনার স্ক্যাল্প ক্লিন করবে সাথে সাথে প্রোডাক্ট বিল্ডআপ দূর করবে। কোনভাবেই যেন শ্যাম্পু ঝিকিমিকি গ্লিটার, রঙ বা পারফিউমে ভর্তি না হয়…! ওগুলো রোজ ইউজ করার জন্য নয়!
আর রোজ যদি শ্যাম্পু করতে না হয় তাহলে ম্যাক্সিমাম সপ্তাহে ২ দিন শ্যাম্পু করুন একটা ভালো ডিপ ক্লিঞ্জিং শ্যাম্পু দিয়ে।
২. সিল্কেই সিল্কি চুল
বিজি গার্লের চুল এমনিই সারাদিনের ধকলে লাইফলেস হয়ে যায়। তার উপরে চলতে থাকে ঘন ঘন শ্যাম্পু আর স্টাইলিং-এর অত্যাচার। এই অবস্থায় যদি আপনি রাতে অফিস বা ক্লাস থেকে ফিরে শ্যাম্পু করা আধা ভেজা চুল বালিশে ছড়িয়ে ঘুমিয়ে যান তবে কিন্তু নেক্সট দিনের ফ্রিজি হেয়ার সিল্কি, স্মুথ আর ম্যানেজেবল করার জন্য পরদিন আবার চুলে একগাদা সিলিকনে ভর্তি সিরাম মেখে হিট স্টাইল করতেই হবে।
সাইকেলটা কি ভয়ঙ্কর বুঝতে পারছেন? তাই অবশ্যই চুল আধা ভেজা নিয়ে ঘুমাবেন না। কুল এয়ার সেটিং-এ হেয়ার ড্রায়ার ইউজ করতে পারেন। নো হিট!! এরপর ঘুমাবেন সিল্কের কাভারের বালিশে। ঘুমাতেও আরাম আর স্মুথ সিল্ক আপনার চুলের ময়েশ্চার শুষে চুলকে এলোমেলো রুক্ষ করবে না। ভাবুনতো ঘুমের ভেতরেই চুলকে সিল্কি করে একইসাথে আপনি কত সময় আর কত চুল বাঁচাচ্ছেন?
৩. হিট স্টাইল
আরেকটা দুমুখো সাপ !! হিট স্টাইল করলে চুলগুলো দেখতে কি চমৎকার লাগে না? কিন্তু এই লোভে পড়ে রোজরোজ হেয়ার স্টাইল করলে কিন্তু চুলের আগা ফাটা থেকে শুরু করে চুল ভাঙ্গা, লালচে রুক্ষ কাকের বাসা হয়ে যাওয়া এসবই হতে পারে!
তাই চেষ্টা করুন এমন কোনও হেয়ারস্টাইল করতে যেন রোজ হিট স্টাইল করতে না হয়। স্পেশালি খুব দরকার না পড়লে চুল ব্লো ড্রাই/কারলিং/আয়রন করবেন না!
৪. স্ক্যাল্প আর চুলের খাবার
অত্যন্ত দুখের সাথে জানাচ্ছি যে এক্ষেত্রে আসলে চুলে তেল দেয়ার কোনও বিকল্পই নেই!
লাইনটা পড়েই নিশ্চয়ই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রাইট? তেল দেয়া এক বিশাল ঝক্কি ! তেল ৪-৫ টা মেশাও, মাথায় ম্যাসাজ করো, সারারাত ঐ তেল চিটচিট চুল নিয়ে ঘুমাও, সকালে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে গিয়ে সর্দি কাশি লাগাও!!! এতো ঝামেলার সময় সত্যিই আজকাল আর হয় না!! তাহলে কিভাবে পাবেন তেলের পুষ্টি, তাও আবার কম সময়ে?
এমন কোনও তেল চুজ করুন যা একইসাথে চুলের জন্য হেল্পফুল অনেক উপাদানের একটা ব্যালান্সড মিক্সচার, সেক্ষেত্রে আপনাকে নিজের হাতে তেল মিশানোর বা বানানোর ঝামেলায় যেতে হল না। আবার আজকাল এমন কিছু খুব বাজেট ফ্রেন্ডলি তেল পাওয়া যায় যা নিজে থেকেই স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করার পর একটু ওয়ার্ম হয় যেন তেলটা চুলে ভালোভাবে ঢুকে যেতে পারে। আবার এধরনের সেলফ ওয়ার্মিং হট অয়েলগুলো চুলে দিয়ে সারারাত রাখারও দরকার হয় না! ম্যাক্স ১-২ ঘণ্টা, মানে আপনি একবেলায়ই একটু তেল ম্যাসেজ করে শ্যাম্পু করে ফ্রেশ হয়ে যেতে পারেন।
উইকএন্ডে এমন অয়েল ম্যাসাজই আসলে বিজি একটা লাইফস্টাইলের জন্য পারফেক্ট! তাই যারা পড়াশোনা বা জবের চাপে ঠিকমত চুলে একবেলা তেল দেবার সময় পান না তাদের সাজেস্ট করবো আপনারা এধরনের কিছু ট্রাই করে দেখতে পারেন। স্যুট করে গেলে হলি গ্রেইল হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন। আর সাথে শত ব্যস্ততায় চুলের যত্ন হয়ে যাবে দারুণভাবে।
তো এই ছিল ব্যস্ততায় চুলের যত্ন নিয়ে কিছু টিপস। এরপর এমনই কিছু স্কিনকেয়ার টিপস নিয়ে কথা বলব ভাবছি।
ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন…!!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম
The post ব্যস্ততায় চুলের যত্ন | ৪টি কার্যকর হেয়ার কেয়ার টিপস! appeared first on Shajgoj.