সুস্থ ঝলমলে একরাশ চুল কে না চায়। রুক্ষ, নিষ্প্রাণ চুল পুরো সৌন্দর্য ম্লান করে দেয়। আর সাথে খুশকি থাকলে অবস্থা হয় আরও ভয়াবহ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, প্রতিদিনের জীবনযাপনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুল। তাই সপ্তাহে শুধু একদিন নয় পারলে প্রতিদিনই চুলের যত্ন নিন যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে। সুন্দর চুলের পাশাপাশি মাথায় খুশকির সমস্যা এড়াতে জেনে নিন পরিত্রাণের ১৬টি উপায়।
খুশকি কী?
মাথায় কখনো খুশকি হয় নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। খুশকি আসলে ত্বকের মরা কোষ। মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প-এ নতুন কোষ তৈরির পাশাপাশি এর আবির্ভাব ঘটে। তাতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলেই মাথা চুলকায়।
খুশকির ধরন
খুশকি দু-রকম- ছোট ও বড়। ছোট খুশকি সাধারণত বোঝা যায় না। চুল আঁচড়ালে চিরুনিতে আঠার মত লেগে থাকে। মাথা খুব চুলকায়। নিয়মিত পরিচর্যা করলে এগুলো দূর হয়।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
অন্যদিকে বড় খুশকি মারাত্বক। চুলের ওপর ভেসে থাকে। এ ধরনের খুশকিতে চুল পড়ে, চোখ চুলকায়, এমনকি এগুলোর জন্য ব্রণও হয়।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
মাথায় খুশকির সমস্যা কেন হয়?
১. মাথায় ঘনঘন তেল দিলে ত্বক চিটচিটে হয়ে খুশকি জমে।
২. সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার না করলে খুশকি হয়।
৩. স্ক্যাল্প তৈলাক্ত কিংবা বেশি শুষ্ক হলেও বেশি খুশকি হওয়ার প্রবণতা থাকে।
৪. ত্বকের সমস্যা যেমন-সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন এবং অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন বা সংক্রমণ খুশকির মত মনে হতে পারে।
৫. ধুলা ময়লা চুলের ভেতর জমে খুশকিতে পরিণত হতে পারে।
৬. চুল অপরিষ্কার থাকলে খুশকি হবেই।
৭. পানি কম খাওয়ার অভ্যাস খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ।
৮. ভেজা চুল বেশিক্ষণ বেঁধে রাখলে খুশকি এবং তা থেকে পরবর্তীতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
৯. মানসিক দুশ্চিন্তাও খুশকির জন্য দায়ী।
মাথায় খুশকির সমস্যা এড়াতে কার্যকর কিছু টিপস
১) মাথায় বেশি তেল ব্যবহার বন্ধ করুন।
২) শ্যাম্পু বদলে ফেলুন। খুশকিনাশক শ্যাম্পু যেমন জেডিপিটি অর্থাৎ জিংক পাইরিথিওন (Zinc pyrithione) যুক্ত শ্যাম্পু সপ্তাহে একদিন করে একমাস ব্যবহার করুন। উপকার না হলে ১ বা ২ ভাগ কিটোকোনাজলযুক্ত (Ketoconazole) শ্যাম্পু আগের নিয়মে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩) স্ক্যাল্প শুষ্ক প্রকৃতির হলে শ্যাম্পু করার আগের রাতে অথবা শ্যাম্পু করার দুই ঘন্টা আগে অলিভ ওয়েল লাগাতে পারেন।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
৪) চুল সবসময় পরিষ্কার রাখুন। যারা সবসময় ঘরে থাকেন তারা একদিন পরপর শ্যাম্পু করতে পারেন। আর যারা বাইরে যান তাদের প্রতিদিন শ্যাম্পু করা উচিত।
৫) নারকেল তেল গরম করে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে তুলো দিয়ে চেপে চেপে স্ক্যাল্পে লাগান। ঘন্টাখানেক পর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এভাবে পরপর তিনবার করুন। তারপর তোয়ালে বরফ মেশানো ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে একই পদ্ধতিতে ৫ মিনিট রাখুন। এবার তোয়ালে খুলে চুলের গোড়ায় হেয়ার প্যাক লাগিয়ে ১ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
৬) মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে বেটে তাঁর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগান। ২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করুন।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
৭) চায়ের লিকার ঘন করে তাঁর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে আধা ঘন্টা লাগিয়ে রাখুন। তারপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করুন।
৮) ১ কাপ ঘন টক দইয়ের সঙ্গে ১ কাপ পানি ভালোভাবে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। পরের দিন শ্যাম্পু করুন।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
৯) একমুঠো নিমপাতা ৪ কাপ পানিতে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে নিন। এই পানি দিয়ে মাথা ও চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন এই পানি। এতে আপনার খুশকি অচিরেই দূর হবে।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
১০) আমলকি পাউডার ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে স্ক্যাল্পে লাগান। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
১১) ২-৩ টি আমলকি পেস্ট করে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে স্কাল্পে লাগিয়ে নিন। ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার লাগালেই খুশকি দূর হয়ে যাবে।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
১২) খুশকি ভরা মাথায় অ্যালোভেরা রস মেখে নিলে দারুণ আরাম পাবেন। খুশকির জ্বালায় দিনরাত চুলকানো থেকে খানিকটা ছুটিও দেবে অ্যালোভেরার রসের শীতল ছোঁয়া।
Image may be NSFW.
Clik here to view.
১৩) খুশকি হলে চিরুনি, ব্রাশ, তোয়ালে ও বালিশের কভার প্রতিদিন পরিষ্কার করুন। এসব জিনিস একে অন্যেরটা ব্যবহার করা উচিত নয়। চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন।
১৪) চুলে কালার করা হলে লেবুর রস ও টক দই ব্যবহার করবেন না। লেবুর রস ও টক দই সারারাত মাথায় লাগিয়ে রাখলে চুল ভালো থাকে এ কথা ভুল। এতে চুলের বেশি ক্ষতি হয়।
১৫) যারা বাসায় চুলের যত্ন নিতে পারেন না তারা ভালো কোন স্যালুনে গিয়ে মাসে অন্তত দু’বার হেয়ার ট্রিটমেন্ট বা হেয়ার স্পা কিংবা প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন। এতে চুল ঝরঝরে ও খুশকি মুক্ত থাকবে।
১৬) চুলের গোড়ায় মেহেদি জমে খুশকি হয়, তাই মেহেদির রস ব্যবহার করাই উত্তম।
এইতো জেনে নিলেন মাথায় খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তির কার্যকরী সহজ কিছু উপায়। আর হ্যাঁ, খুশকির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ছবি- সাজগোজ; সংগৃহীত
The post মাথায় খুশকির সমস্যা দূর করতে জেনে নিন ১৬টি সহজ টিপস! appeared first on Shajgoj.