বিয়ের শাড়ি… আহা! কী সুন্দর! ইশ না জানি কত দাম! কোত্থেকে কিনেছে?…… এমন বহু কথা মাথায় ঘুরতে থাকে যখন একটা সুন্দর সাজুগুজু করা কনেকে দেখি!
আচ্ছা, বিয়ের কেনাকাটায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মজার কিন্তু ঝক্কির জিনিস কোনটি বলেন তো? সবার চোখ চকচক করার কথা!
জ্বি, এই ‘শাড়ি’!
বিয়ের শাড়ি কেনাটা ঝক্কির কেন?
বিয়ের শাড়ি কিনতে গিয়ে যেই দু’টো ব্যাপার প্যারাদায়ক হয় সেটা হল- পছন্দসই রঙ ও ডিজাইনের এবং মনমত দামের হওয়া! কতোগুলো শাড়ি যে কিনতে হয় রে বাবা! মেইন প্রোগ্রাম, হলুদ, রিসেপশন, বৌভাত… এছাড়াও আছে মেহেদি, বাগদান, শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিনের জন্য, তারপর ম্যারাথন দাওয়াত… উফফফ! ঝক্কির নয় তো কী বলুন?
তাই আজ বিয়ের শাড়ি নিয়েই না হয় হোক কথোপকথন!
যেহেতু আমি শাড়ি-পাগল, তাই কিচ্ছুটি ভাবি নি! সোজা চলে গেছি ঢাকার সবচেয়ে বড় শাড়ির বাজার বেনারসি পল্লীতে। ঘুরলাম, দেখলাম, দুনিয়ার ভাবনা-চিন্তা, বাসায় এসে হুড়াহুড়ি-দৌড়াদৌড়ি… অতঃপর আমার লেখা শুরু!
আপনাদের কাছে ৭ ধরনের বিয়ের শাড়ি এবং তাদের দাম, ধরন, রং, ইত্যাদি নিয়ে এখন একটু ঝেড়ে কাশি… কেমন?
১. জামদানী
‘জামদানী’-এর নাম শুনে সেই ছোট্টবেলায় ভাবতাম এ ছাড়া বুঝি আর কোন শাড়ি নেই! কিন্তু যখন বড় হলাম, আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলাম… দেখলাম, কত শত ধরনের শাড়ি যে আছে!
এই জামদানী আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। বাংলাদেশেই যে এর শুরু! হাফ সিল্ক এবং ফুল কটন- দু’ধরনেরই ৫০০-২০০০০/- টাকার মধ্যে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, মেরুন, গোলাপি, সাদা, কালো… মোটামুটি সব রঙেরই নাকি পাওয়া যায়! আর নকশা অনুযায়ী কত নাম এর, শুনবেন? দুবলাজাল, বলিহার, শাপলা ফুল, আঙ্গুরলতা, ময়ূরপ্যাচপাড়, কলমিলতা, চন্দ্রপাড়, ঝুমকা, বুটিদার, ঝালর, ময়ূরপাখা, পুইলতা, কল্কাপাড়, কচুপাতা, তেরছা, জলপাড়, পান্না হাজার, করোলা, প্রজাপতি, জুঁইবুটি, শবনম, ঝুমকা, জবাফুল… আরও অনেক অনেক নাম!
পরের লাইন-টা পড়ে আমাকে মনে মনে বকবেন না প্লিজ… আমার ব্যক্তিগতভাবে জামদানী খুব একটা পছন্দের নয়, কারণ পরার পর খুব অস্বস্তি লাগে গায়ে গুটি গুটি লাগার জন্য! তবে খারাপও কিন্তু লাগে না!
২. বেনারসি
বেনারসি শাড়ি সবচেয়ে বেশি পরা হয় বিয়েতে। সিঁদুর লাল, মরিচ লাল, মিষ্টি লাল, কালো, লালচে মেরুন, কালচে মেরুন, রয়াল ব্লু, রাণী ম্যাজেন্ডা, ডিপ ম্যাজেন্ডা, গাঢ় গোলাপি, মিষ্টি গোলাপি, সি-গ্রিন, ফিরোজা, পেস্ট কালার… আরও কত রঙের যে হয়! আর সাথে কপার-গোল্ডেন সুতার কাজ, পাথর বসানো বা ধরুন ফ্লোরাল প্রিন্ট বা কলকির মাঝে মাল্টি কালার-এর সুতা দিয়ে মিনা করা… আর নকশাগুলো থাকে পিটানো বা লকড, যার জন্য শাড়ি যত্নে রেখে বহুদিন পরা যায়। একটু ভারি হয় যদিও। জাঁকজমকপূর্ণ বলে কথা! আর দাম? স্টোন বাদে পাবেন ৩৫০০-৩০০০০/-টাকার মধ্যে এবং স্টোনসহ হায়েস্ট রেঞ্জ উঠবে ৮০০০০-৯০০০০/- টাকা পর্যন্ত!
৩. কাঞ্জিভরম
আমি দেখেছি কাশ্মীরি আর কাতান স্টাইল কাঞ্জিভরম। এই কাঞ্জিভরম হয় ডিপ পেস্ট, ডিপ ম্যাজেন্ডা, লাইট ম্যাজেন্ডা, লাইট অ্যাশ, ব্ল্যাক, স্কাই ব্লু, সি গ্রিন ইত্যাদি কালার বেইজ-এ কুঁচি স্টাইলে বা নরমালি গিনি গোল্ড, কপার গোল্ডেন সুতার পিটানো কাজে স্মুথ টেক্সচার-এর অদ্ভুত সুন্দর শাড়ি। আর দামের রেঞ্জ-টাও কিন্তু মনমতোই, ২৫০০-৫০০০০/- টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
৪. কাতান
সুতার কাজসহ পাথর বসানো, কলকি ও ফ্লোরাল প্রিন্টে, লাল, সবুজ, পেস্ট, রাণী ম্যজেন্ডা, সাদা, গোল্ডেন, ক্রিম, সবুজ, ডিপ ব্লু, মেরুন, কালো, হলুদ, বাসন্তি, কমলা ইত্যাদি রঙের বেইজ এবং সাথে বিভিন্ন মনকাড়া রঙের পাড়ের দারুণ কম্বিনেশন-এ তৈরি হয় কাতান শাড়ি! নানান ধরনের কাতান আছে যেমন- কাতান জর্জেট, মিরপুরীয় কাতান, অপেরা কাতান, পাছারা কাতান, তসর কাতান , মসলিন কাতান, স্বর্ণকাতান, ভেলভেট কাতান, চুন্দ্রি কাতান, পিওর কাতান, ফুলকলি কাতান, জুট কাতান, চেন্নাই কাতান ইত্যাদি। ১৫০০-২০০০০/- টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন! আর মিরপুরীয় কাতানগুলো কিন্তু দেশী সুতায় তৈরি।
৫. পাকিস্তানি বারিশ
২৭০০-৫০০০/- টাকার মধ্যে সাদা, পেয়াজি, মিষ্টি লাল, ক্রিম, ওশান গ্রিন, পেস্ট, প্যারট গ্রিন, ফিরোজা ইত্যাদি রঙে লক করা কাজ হয় এই পাকিস্তানি বারিশ-এ। ফেব্রিক-টাও হয় অনেক স্মুথ এবং শিফনের উপর সুতার কাজ করা। এক্ষেত্রে বলে রাখি, শিফন হয় বেসিক্যালি ৩ ধরনের- ৩০-৪০ গ্রাম (ওয়েটলেস), ৬০ গ্রাম এবং ৮০-৯০ গ্রাম (পিওর)। আর ৮০-৯০ গ্রাম-এ ৩০% বেশি সুতার কাজ (মিনা করা) থাকে।
৬. সফট সিল্ক
১৫০০০-২০০০০/-টাকায় সি গ্রিন-গোল্ডেন, রয়াল ব্লু-কপার, প্যারট গ্রিন-ফিরোজা, রাণী ম্যাজেন্ডা-বটল গ্রিন, পেস্ট-মেরুন… এমন আরও নানান কম্বিনেশনে সুতার কাজে পাবেন এই শাড়িগুলো। দেশী সুতায় তৈরি সফট সিল্ক শাড়িগুলো ম্যাট ফিনিশিং হয় আর দেখতেও খুবই সুন্দর ও গরজিয়াস। অপরদিকে রেপ্লিকাগুলো হয় চকচকে।
৭. মসলিন
এই মসলিন জামদানীগুলো ১০০% পিওর মসলিনে তৈরি! হ্যাঁ, যদিও প্রাচীন মসলিনের মত দেশলাই-এর বক্সে ভরা সম্ভব নয়, কিন্তু তার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা কিন্তু ছাড়েন নি শাড়ির কারিগররা! মিষ্টি, ব্রাইট আর লাইট কালার-এরই হয় এই শাড়িগুলো। স্যুটকেসে দেয়ার জন্য শাড়ি চাইলে এই মসলিন শাড়ি হতে পারে দারুণ একটি চয়েস। দামটাও সাশ্রয়ী, ৩৫০০-৫৫০০/-টাকা!
এছাড়াও আছে টিস্যু, টাঙ্গাইল-এর, ধুপিয়ান, বালুচুরি তাঁত, জয়পুরি, পিতম্বুরি, লিলেন, মেঘদূত… এমন হাজারো ধরনের শাড়ির মেলা! আসলে একবারে বলে শেষ করা সত্যিই সম্ভব নয়! চেষ্টা করলাম বেসিক কয়েকটি শাড়ি নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য আপনাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। আর বিয়ের শাড়ি কিনতে গিয়ে রিসার্চ করতে, দামাদামি করতে, এবং পেটিকোট ও ওড়নাসহ কিনতে ভুলবেন না যেন! চেষ্টা করবেন ‘বউনি টাইম’-এ যেতে, কেমন?
শুভ কামনা রইলো সুন্দর জীবনের।
ছবি- রুবাইদ মেহেদী অনীক
শাড়ি- বেনারসি ওয়ার্ল্ড এবং এস.এস শাড়ি ওয়ার্ল্ড
The post বিয়ের শাড়ি কেনাকাটা | ৭ ধরনে নানান রঙে সাজবে বউ! appeared first on Shajgoj.