ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম-এর এ যুগে আমরা সবাই পিকচার পারফেক্ট মেকআপ করতে চাই। আমরা সবাই কালার কসমেটিক্স নিয়ে যতটা অবসেসড, স্কিনকেয়ার নিয়ে ততটাই উদাসীন। আমরা সবাই কিন্তু কুইক আর ইনস্ট্যান্ট রেমেডি চাই। আর এই কুইক রেমেডি-এর চিন্তায় আমরা অনেক সময় ভালো প্রোডাক্ট ইউজ না করে, যাচ্ছেতাই স্কিনকেয়ার-এর প্রোডাক্ট ইউজ করে ফেলি, আর সাইড ইফেক্ট-এ স্কিনের অবস্থা আরো খারাপ করে দেই।
আজ যে প্রোডাক্ট-এর রিভিউ নিয়ে এসেছি, সেটা অনেক বেশি হাইপড একটা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট। অনেক নামী স্টার, ইউটিউবার, বিউটি ব্লগার এই প্রোডাক্ট ইউজ করে ভালো রিভিউ দিয়েছেন। স্কিন-এর গেইম চেইঞ্জার-ও বলা হয়ে থাকে একে। সেটা হলো অ্যাজটেক সিক্রেট ইন্ডিয়ান হিলিং ক্লে (Aztec Secret Indian Healing Clay), আর এই প্রোডাক্ট-এর ট্যাগলাইন হচ্ছে, “World’s Most Powerful Facial” যেটাতে ১০০% ক্যালসিয়াম বেনটোনাইট ক্লে আছে। বেনটোনাইট ক্লে টক্সিন অ্যাবসর্ব করে।
এক্ষেত্রে আমি আমার কলিগ-এর স্টোরি নিয়ে বলতে চাই। একটু ওর স্কিন সম্পর্কে বলে নেই। ওর স্কিন সারাজীবনই ভালো ছিল। কোন দাগ নেই, মেছতা বা তিল কিছুই নাই। মাঝেমাঝে পিরিয়ডের আগে এক-আধটা ব্রণ। গত বছর ওর স্কিন-এ হঠাৎ করে ভয়াবহ ব্রেক আউট হয়। ভয়াবহ মানে, সেই লেভেলের ভয়াবহ। নিচের ছবিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।
কি? দেখলেন তো? ওর দুটো গালে ব্রণ ওঠার জন্য আর নতুন করে কোন জায়গাই ছিল না। ওর নাকি অফিসে যেতে ইচ্ছে হতো না! রাস্তায় বের হতে ইচ্ছে হতো না! যেখানেই যেতো, সবাই-ই কমবেশি ওকে কোন না কোন ম্যাজিকাল ব্রণ দূর করার সাজেশন দিতো। ও অলরেডি তিনজন ডাক্তারও চেইঞ্জ করে ফেলেছিল। কারো ট্রিটমেন্টেই ওর ব্রেক আউট বন্ধ হচ্ছিল না। তারচেয়ে বড় কথা, ওর পিরিয়ড সাইকেল ও উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছিল। ও সিরিয়াস ডিপ্রেশন-এ চলে যাচ্ছিল। হঠাৎই একদিন ইউটিউব-এ এক ইন্টারন্যাশনাল বিউটি ব্লগার-এর ভিডিওতে ও অ্যাজটেক-এর রিভিউ দেখে। ইন্টারেস্টেড ফীল করায়, ও গুগল-এ সার্চ করে আরো কিছু রিভিউ দেখে এবং শেষমেষ সিদ্ধান্ত নেয় যে এটা কিনে দেখবে। শেষ চেষ্টা টাইপ সিচুয়েশন আর কী!
ওর মুখেই তো শুনছিলাম! সত্যি কথা বলতে, ও আসলে খুব বেশি আশাবাদী ছিল না এই প্রোডাক্ট নিয়ে। ওর ছবি দেখেতো বুঝতেই পারছেন, কী কন্ডিশন-টাই না ছিল! আসলে ছবিটা দেখে আমিও হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম! অফিস থেকে ফিরে প্রথম এক সপ্তাহ প্রতিদিন এটা ইউজ করে ও। তারপর একদিন পরপর। ওর এখনকার মেকআপ ছাড়া গালের ছবি, এই যে দেখুন।
এ দেখে আমিও শুরু করে দেই অ্যাজটেক ব্যবহার করা! Believe me, it’s worth it! আমি গত ৩ মাস ধরে এই প্রোডাক্ট ইউজ করছি এবং আজীবন করবো।
প্যাকেজিং, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান
এর প্যাকেজিং খুব একটা আহামরি আকর্ষণীয় না। সাদা রঙের প্লাস্টিক কনটেইনার-এ লাল সবুজ ডিজাইন। কিন্তু প্যাকেজিং দেখে ঘাবড়াবেন না। এই প্রোডাক্ট এতটাই দারুণ যে প্যাকেজিং-এর ব্যাপারটা আপনার অতটা চোখে লাগবে না।
দাম- ২২৫০/- টাকা। সবসময় কিনি শপ.সাজগোজ.কম-এর অনলাইন-এ থেকে। এছাড়াও পাবেন যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার-এ অবস্থিত শপ.সাজগোজ.কম-এর ফিজিক্যাল শপ-এ।
পরিমাণ
পরিমাণের কথা আর কিইবা লিখবো, আমি কখনো কোন ফেইসপ্যাক কিনে দেখি নাই যে এই দামে পুরো এক পাউন্ড প্রোডাক্ট দেয়! আর এটা পরিমাণে এত কম লাগে, আমি একটা কন্টেইনার কিনলে অনায়াসে ৩-৪ মাস চলে যায়।
প্রোডাক্ট হিস্ট্রি, কনসিসটেন্সি, স্মেল, টেক্সচার
অ্যাজটেক ক্লে টা ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি থেকে বেনটোনাইট ক্লে সংগ্রহ করে সূর্যের প্রখর তাপে শুষ্ক করা হয়। এতে কোন প্রকার অ্যাডিটিভ, ফ্র্যাগরেন্স বা এনিমেল রিলেটেড কোনকিছুই দেয়া নেই। এতে পৃথিবীতে উপস্থিত প্রায় সবরকম মিনারেলস-ই আছে। আমাদের ত্বকের উপরের লেয়ার, অর্থাৎ এপিডার্মিস-এ যে টক্সিন থাকে, সেটায় পজিটিভ ইলেকট্রন চার্জ থাকে। আর ক্লে মাস্কে থাকে নেগেটিভ ইলেকট্রন চার্জ। এই পজিটিভ আর নেগেটিভ যখন এক হয়, তখনই স্কিনের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে স্কিনটা ক্লিয়ার আর প্রবলেম ফ্রি হয়।
কিভাবে ব্যবহার করি
১) আমি সবার আগে মুখটা ভালোভাবে “টু স্টেপ ক্লেঞ্জিং মেথড” ফলো করে পরিষ্কার করে নেই। টু স্টেপের প্রথম স্টেপ হলো অয়েল ক্লেঞ্জিং মেথড। আমি নারকেল তেল দিয়ে মুখটা ভালোভাবে ম্যাসাজ করে তারপর ওয়াইপ অথবা ওয়াশক্লথ দিয়ে মুখটা ভালোভাবে মুছে নেই। এরপর সেকেন্ড স্টেপ ক্লেঞ্জিং-এর জন্য আমি দ্য বডি শপের টি ট্রি স্কিন ক্লিয়ারিং ফেসিয়াল জেল দিয়ে ভালোভাবে গলাসহ মুখ ধুয়ে নেই।
২) ফেইসপ্যাকের পূর্ণ উপযোগিতা পেতে সবার আগে কিন্তু পোরস ওপেন করাটা জরুরী। আমাদের সবার স্কিনেই ছোট ছোট অসংখ্য রোমকূপ বা পোরস আছে। এই পোরস ওপেন হলেই ফেইসপ্যাকটা ভালোভাবে স্কিনে প্রবেশ করবে এবং ইফেক্টিভনেস পাবে। কাজেই আমি সবসময় এই প্যাকটা ইউজ করার আগে একটা হাঁড়িতে সামান্য পানি ভালো করে গরম করে তাতে দুই ফোঁটা স্কিন ক্যাফে ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে স্টিম নেই। হাঁড়ি থেকে মুখের দূরত্ব থাকে কমপক্ষে ১০ ইঞ্চি। আর একটা টাওয়েল দিয়ে আমি মাথা নিচু করে মাথাটা ঢেকে নেই।
৩) এবার একটা প্লাস্টিকের (নন-মেটালিক হলেই চলবে, প্লাস্টিক, কাঠ অথবা কাচের/চিনামাটির বাটি ব্যবহার করতে পারেন) বাটিতে এক চা চামচ ক্লে পাউডার নিয়ে তাতে পরিমাণমত অর্গানিক অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিক্স করে নেই। কনসিসটেন্সি মিডিয়াম হলেই চলবে। অর্থাৎ খুব বেশি পাতলা ও হবে না, আবার খুব বেশি ঘন ও হবে না। আমি Bragg Organic Apple Cider Vinegar, with the “Mother” ব্যবহার করি।
৪) একটা অ্যাপ্লিকেটর ব্রাশের সাহায্যে দ্রুত হাতে পুরো মুখে এবং গলায় মাস্কটা দিয়ে নেই। এক্ষেত্রে একটা কথা অবশ্যই বলবো, আমার স্কিন অয়েলি এবং একনে প্রন, কাজেই আমি পুরো ফেইস-এ এটা অ্যাপ্লাই করি। কিন্তু কারো যদি ড্রাই স্কিন থাকে, সে শুধু একনের সমস্যা যে এড়িয়া-তে আছে, সেই এড়িয়া-তে এটা ইউজ করতে পারে, বাকি ফেইস-এর ড্রাই স্কিনের জন্য উপযোগী অন্য কোন মাস্ক ইউজ করতে পারে। এটাকে বলা হয় মাল্টি মাস্কিং। এ বিষয়ক একটি আর্টিকেল আছে। চাইলে পড়ে নিতে পারেন।
৫) এবার অপেক্ষার পালা। আমি সাধারণত স্কিনে ১৫-২০ মিনিটের মত মাস্কটা রাখি। যাদের ড্রাই এবং সেনসিটিভ স্কিন, তারা ৫-১০ মিনিটের বেশি রাখবেন না। মাস্কটা ড্রাই হতে শুরু করলে, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, স্কিনটায় একটা pulsating ফীল আসবে। অর্থাৎ আপনার পোরস যে পরিষ্কার হচ্ছে, আপনি সেটা ফীল করতে পারবেন।
৬) তারপর আমি হালকা গরম পানিতে একটা নরম কাপড় ভিজিয়ে ভালোভাবে মুখটা ক্লিন করে ফেলি এবং তারপর ঘনঘন হালকা গরম পানির ঝাপটা দিয়ে পুরো মুখ এবং গলা ধুয়ে ফেলি।
৭) মুখ ধোয়ার পরপর মুখটা হালকা লালচে হয়ে থাকে। কিন্তু ভয় পাবার কিচ্ছু নেই। এই লালচেভাব আধঘণ্টা পর দূর হয়ে যায়। চাইলে ওপেন পোরস ক্লোজ করার জন্য একটা বরফের টুকরো পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে আস্তে আস্তে স্কিনে ঘষতে পারেন।
৮) আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নিবেন। আমার অয়েলি স্কিন বলে আমি ন্যাচার্স রিপাবলিক ৯৮% অ্যালোভেরা জেল ইউজ করি। আপনারা চাইলে ওয়াটার বেইজড যেকোন ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার বা ইমালশন ইউজ করতে পারেন।
৯) অ্যালোভেরা জেল দেয়ার মিনিট দুই-তিনেক পর আমি অ্যাক্টিভ ব্রণগুলোর উপর স্কিন ক্যাফে টি ট্রি অয়েল ইউজ করি। আপনারা চাইলে অন্য কোন ব্র্যান্ডের, যেমন – দ্য বডি শপের টি ট্রি অয়েল ও ইউজ করতে পারেন।
১০) আমি সপ্তাহে দুইদিন, অর্থাৎ ৩ দিন পরপর এই মাস্কটা ইউজ করি। সাধারণত সপ্তাহে একদিন ইউজ করলেই হয়। পোরস পরিষ্কার করার পাশাপাশি পোরস টাইটেনিং করে, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, একনে দূর করে। স্কিনকে ডিপলি ক্লিন করে।
আপনার যদি আমার মত স্কিন ইস্যু থাকে এবং সবরকম প্রোডাক্ট ইউজ করে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে থাকেন, শেষ চেষ্টা হিসেবে অবশ্যই এটাকে লাস্ট ট্রাই দিতে পারেন। This product is actually worth it….!